আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘চরিত্রগঠনে খেলাধুলোর উপযোগিতা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

চরিত্রগঠনে খেলাধুলোর উপযোগিতা – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
স্বামী বিবেকানন্দ দেশের তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্ণের আরও নিকটবর্তী হইবে।” শুধু শুষ্ক, তার্কিক আলোচনা কিংবা পাঠাভ্যাস যে একজন ছাত্রকে পরিপূর্ণ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে না, এই বিষয়টি বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন। আমাদের চিন্তা-বুদ্ধি-স্মরণ-মনন সবেরই ধারক এই শরীর। তাই শরীরের অবনতি বা বিলোপ মানেই অস্তিত্বের বিনাশ। ক্ষয়প্রাপ্ত, রোগজীর্ণ কিংবা অপুষ্ট শরীরে মানুষ শারীরিক বা মানসিক কোনো কাজই করতে পারে না। আর তাকে সতেজ রাখতে প্রয়োজন শরীরচর্চা, যার অন্যতম উপায় হচ্ছে নিয়মিত খেলাধুলো করা।
শরীরচর্চা ও খেলাধুলো –
খেলাধুলো আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে আধুনিক নগরসভ্যতায় নগরায়ণের কারণে মাঠ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নীরোগ শরীর ও সতেজ মন তৈরিতে খেলাধুলো আজ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। অঙ্গসঞ্চালন, দৌড়ঝাঁপের মাধ্যমে মানুষের শরীরের জড়তা কাটে, সে হয়ে ওঠে তরতাজা ও প্রাণবন্ত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেনে খেলাধুলো করলে অল্প পরিশ্রমে শরীর ক্লান্ত হয় না এবং সেখানে হতাশা, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা বাসা বাঁধে না।
খেলাধুলোর প্রকারভেদ –
মূলত দুই ধরনের খেলাধুলো দেখা যায়। যথা – ইনডোর গেম এবং আউটডোর গেম। ইনডোর গেম বলতে বোঝায় যে ধরনের খেলাধুলো ঘরে বসে করা সম্ভব-যেমন লুডো, দাবা ইত্যাদি। আর আউটডোর গেম বলতে বোঝায় যে খেলাগুলি বাড়ির বাইরে মাঠেঘাটে করা হয়—যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ইত্যাদি।
চরিত্রবিকাশ ও খেলাধুলো –
খেলাধুলো, তা যে ধরনেরই হোক না কেন, সেটি দলগত বিষয়। তাই খেলার প্রথম উপযোগিতাই হল শারীরিক বিকাশসাধনের পাশাপাশি খেলাধুলো আমাদের মানসিক বিকাশেও সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কোনো কাজ করার প্রবণতা, সহমর্মিতা এবং সহানুভূতির বোধের জন্ম দেয়। খেলাধুলোর নিয়মকানুন আমাদের সংযমী হতে শেখায় এবং নিয়মনীতির চেতনায় দীক্ষিত করে। খেলাধুলোর হারজিত যে অবশ্যম্ভাবী, কখনও এক পক্ষ জয়লাভ করে তো, কখনও অন্য পক্ষ-এই ধারণা লাভ করলে আমরা বৃহত্তর জীবনেও উপকৃত হই, জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে সমানভাবে গ্রহণ করতে শিখি।
আধুনিক জীবনে খেলাধুলো –
আধুনিক সমাজে ক্রমশ ভাঙনের রোগ প্রবল হচ্ছে। যৌথ পরিবারগুলি ভেঙে ভেঙে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করছে। একত্রে মিলেমিশে বাঁচার বোধটাই হারিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খেলাধুলোই পারে আমাদের মধ্যে সকলে মিলেমিশে থাকার ইচ্ছেকে ফিরিয়ে আনতে। পাঠক্রমের চাপ, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার ইঁদুরদৌড় বর্তমান সময়ে ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে যে পর্বতপ্রমাণ বোঝা চাপিয়ে দেয়, তা থেকে বাঁচাতে পারে খেলাধুলোই। পরিবেশদূষণের ফলেও আমাদের শরীর দ্রুত ক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খেলাধুলো ও স্বাস্থ্যচর্চা এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের পথ দেখাতে পারে।
উপসংহার –
শরীর ও মনকে পরিপূর্ণরূপে উজ্জীবিত করতে খেলাধুলো অন্যতম বিষয়। এর মাধ্যমেই স্বাস্থ্য সুগঠিত হয় এবং নৈতিকতা, সহমর্মিতার মতো মানবিক গুণগুলি বিকাশ লাভ করে। আধুনিক সমাজে এর গুরুত্ব দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন – দূরদর্শনের ভালোমন্দ – প্রবন্ধ রচনা
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘চরিত্রগঠনে খেলাধুলোর উপযোগিতা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘চরিত্রগঠনে খেলাধুলোর উপযোগিতা’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন