চরিত্রগঠনে খেলাধুলোর উপযোগিতা – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আলোচনার বিষয়: খেলাধুলোর মাধ্যমে চরিত্র গঠন, এই ব্লগ পোস্টে আমরা খেলাধুলো কীভাবে চরিত্র গঠনে সহায়তা করে সে সম্পর্কে আলোচনা করবো। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুলের অন্যান্য পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। “চরিত্র গঠনে খেলাধুলোর উপযোগিতা” বিষয়টি প্রায়শই পরীক্ষার প্রশ্ন হিসেবে দেখা যায়।

এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে, আপনি ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই বিষয়ের উপর সুন্দর একটি প্রবন্ধ রচনা করতে পারবেন।

চরিত্রগঠনে খেলাধুলোর উপযোগিতা – প্রবন্ধ রচনা

চরিত্রগঠনে খেলাধুলোর উপযোগিতা – প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা –

স্বামী বিবেকানন্দ দেশের তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্ণের আরও নিকটবর্তী হইবে। শুধু শুষ্ক, তার্কিক আলোচনা কিংবা পাঠাভ্যাস যে একজন ছাত্রকে পরিপূর্ণ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে না, এই বিষয়টি বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন। আমাদের চিন্তা-বুদ্ধি-স্মরণ-মনন সবেরই ধারক এই শরীর। তাই শরীরের অবনতি বা বিলোপ মানেই অস্তিত্বের বিনাশ। ক্ষয়প্রাপ্ত, রোগজীর্ণ কিংবা অপুষ্ট শরীরে মানুষ শারীরিক বা মানসিক কোনো কাজই করতে পারে না। আর তাকে সতেজ রাখতে প্রয়োজন শরীরচর্চা, যার অন্যতম উপায় হচ্ছে নিয়মিত খেলাধুলো করা।

শরীরচর্চা ও খেলাধুলো –

খেলাধুলো আমাদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে আধুনিক নগরসভ্যতায় নগরায়ণের কারণে মাঠ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নীরোগ শরীর ও সতেজ মন তৈরিতে খেলাধুলো আজ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। অঙ্গসঞ্চালন, দৌড়ঝাঁপের মাধ্যমে মানুষের শরীরের জড়তা কাটে, সে হয়ে ওঠে তরতাজা ও প্রাণবন্ত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেনে খেলাধুলো করলে অল্প পরিশ্রমে শরীর ক্লান্ত হয় না এবং সেখানে হতাশা, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা বাসা বাঁধে না।

খেলাধুলোর প্রকারভেদ –

মূলত দুই ধরনের খেলাধুলো দেখা যায়। যথা – ইনডোর গেম এবং আউটডোর গেম। ইনডোর গেম বলতে বোঝায় যে ধরনের খেলাধুলো ঘরে বসে করা সম্ভব-যেমন লুডো, দাবা ইত্যাদি। আর আউটডোর গেম বলতে বোঝায় যে খেলাগুলি বাড়ির বাইরে মাঠেঘাটে করা হয়—যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল ইত্যাদি।

চরিত্রবিকাশ ও খেলাধুলো –

খেলাধুলো, তা যে ধরনেরই হোক না কেন, সেটি দলগত বিষয়। তাই খেলার প্রথম উপযোগিতাই হল শারীরিক বিকাশসাধনের পাশাপাশি খেলাধুলো আমাদের মানসিক বিকাশেও সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কোনো কাজ করার প্রবণতা, সহমর্মিতা এবং সহানুভূতির বোধের জন্ম দেয়। খেলাধুলোর নিয়মকানুন আমাদের সংযমী হতে শেখায় এবং নিয়মনীতির চেতনায় দীক্ষিত করে। খেলাধুলোর হারজিত যে অবশ্যম্ভাবী, কখনও এক পক্ষ জয়লাভ করে তো, কখনও অন্য পক্ষ-এই ধারণা লাভ করলে আমরা বৃহত্তর জীবনেও উপকৃত হই, জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে সমানভাবে গ্রহণ করতে শিখি।

আধুনিক জীবনে খেলাধুলো –

আধুনিক সমাজে ক্রমশ ভাঙনের রোগ প্রবল হচ্ছে। যৌথ পরিবারগুলি ভেঙে ভেঙে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করছে। একত্রে মিলেমিশে বাঁচার বোধটাই হারিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খেলাধুলোই পারে আমাদের মধ্যে সকলে মিলেমিশে থাকার ইচ্ছেকে ফিরিয়ে আনতে। পাঠক্রমের চাপ, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার ইঁদুরদৌড় বর্তমান সময়ে ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে যে পর্বতপ্রমাণ বোঝা চাপিয়ে দেয়, তা থেকে বাঁচাতে পারে খেলাধুলোই। পরিবেশদূষণের ফলেও আমাদের শরীর দ্রুত ক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খেলাধুলো ও স্বাস্থ্যচর্চা এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের পথ দেখাতে পারে।

উপসংহার –

শরীর ও মনকে পরিপূর্ণরূপে উজ্জীবিত করতে খেলাধুলো অন্যতম বিষয়। এর মাধ্যমেই স্বাস্থ্য সুগঠিত হয় এবং নৈতিকতা, সহমর্মিতার মতো মানবিক গুণগুলি বিকাশ লাভ করে। আধুনিক সমাজে এর গুরুত্ব দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুন – দূরদর্শনের ভালোমন্দ – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্যই নয়, বরং চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রেও খেলাধুলার অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে আমরা শৃঙ্খলা, নিয়ম মেনে চলা, সহযোগিতা, নেতৃত্ব, স্পর্ধাশীলতা, এবং হার-জয়ের মনোভাব গ্রহণ করতে শিখি। এছাড়াও, খেলাধুলার মাধ্যমে আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক চাপ কমে।

মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায়ই “চরিত্র গঠনে খেলাধুলার উপযোগিতা” বিষয়ে প্রশ্ন আসে। তাই, এই বিষয়ে ভালো ধারণা থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপরের আলোচনার উপর ভিত্তি করে, আমরা একটি নমুনা রচনা তৈরি করেছি যা আপনারা মুখস্থ করতে পারেন। মনে রাখবেন, কেবল মুখস্থ করার চেয়ে বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝে নেওয়া এবং নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

Share via:

মন্তব্য করুন