আজকের আর্টিকেলে আমরা সাম্প্রতিক জলসংকট নিয়ে আলোচনা করবো। জলসংকট প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বারবার দেখা যায়। এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করে রাখলে আপনি ৬ থেকে ১২ শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় জলসংকট সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।
এই প্রবন্ধে আমরা জলসংকটের কারণ, প্রভাব এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও, জল সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং আমাদের ব্যক্তিগতভাবে জল সংরক্ষণে কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারি সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
সাম্প্রতিক জলসংকট – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
‘জলই জীবন।’ কিন্তু ভারত সরকারের নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী আগামী বছর থেকে ভয়ানক জলসংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে দেশের একুশটি শহর। ২০২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মাদ্রাজ, বাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ, দিল্লির মতো শহরগুলো সম্পূর্ণ জলশূন্য হয়ে যাবে। আর ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার চল্লিশ শতাংশ মানুষের কাছে পানীয় জল পাওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না।
শেষের শুরু –
১৯ জুন, ২০১৯ চেন্নাই নগর নিগমের পক্ষ থেকে চেন্নাইকে জলশূন্য ঘোষণা করা হয়। যে চারটি জলাধার থেকে শহরে জলসরবরাহ করা হয় সেগুলো সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার কারণেই এই অবস্থা। গত বছর বৃষ্টি কম হওয়ার এর একটা বড়ো কারণ। নব্বই লক্ষ মানুষের শহরে জলের জন্য হাহাকার তীব্র হয়ে ওঠে। ভূগর্ভস্থ জলের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিপদকে ভয়াবহ করে তোলে। বেঙ্গালুরুতেও তীব্র হয় জলসংকট। ভূগর্ভের জলস্তরের অস্বাভাবিক নেমে যাওয়া, আর জনসংখ্যার অসম্ভব বেড়ে যাওয়ার কারণে নিকট ভবিষ্যতে বেঙ্গালুরু আর মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স-এর বিশেষজ্ঞরা। রাজধানী দিল্লিতেও সংকটের ছায়া ক্রমশই দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিবছর ১০ সেমি করে জলস্তর নেমে যাচ্ছে সেখানে। বদরপুর, দ্বারকা ইত্যাদি অঞ্চলে তীব্র জলকষ্ট দেখা দিয়েছে।
এই রাজ্যের কথা –
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের এক সমীক্ষা দেখিয়েছে যে, ভূগর্ভস্থ জলের নিরিখে রাজ্যে আধা সংকটজনক ব্লকের সংখ্যা ছত্রিশ থেকে বেড়ে হয়েছে সাতাত্তর। মুরশিদাবাদের একটি ব্লকে অতি সংকটজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে এই সতর্কতাও জারি করা হয়েছে যে, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জল নিয়ে আপাত নিশ্চিন্ত জেলাগুলোতেও দ্রুত নামছে ভূগর্ভের জলস্তর। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলো এমনিতেই জলসংকটে থাকে, বিশেষত গ্রীষ্মকালে। তবে সবথেকে চিন্তার কারণ অবশ্যই কলকাতা। কলকাতার জলস্তর ইতিমধ্যেই অনেকটা নেমে গেছে।
সংকটের কারণ –
নগরায়ণের কারণে পুকুর এবং জলাভূমি বোজানো হয়েছে নির্বিচারে। বন্ধ হয়েছে জলের উৎস। বৃষ্টির জলও ভূগর্ভের প্রবেশের কোনো পথ পাচ্ছে না। আর তাই জলের উপর নির্ভরতা বেড়েছে গভীর নলকূপের। নির্মাণক্ষেত্রে এবং কৃষিজমিতে মাত্রাছাড়া নলকূপের ব্যবহার ভূগর্ভের জলস্তরকে নামিয়ে দিচ্ছে। নদী মজে যাওয়া জলসংকটের আরেকটি কারণ। আর এই সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে নাগরিকদের সচেতনতার অভাব। শুধু শহর কলকাতাতেই, পুরসভার হিসেব অনুযায়ী প্রতিদিন দৈনিক ২০ লক্ষ টাকার জল অপচয় হয়।
সমাধানের লক্ষ্যে –
অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ বন্ধ করতে হবে। বিপন্ন বেঙ্গালুরু আগামী দশ বছর নতুন আবাসন তৈরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুকুর-জলাশয় বোজানো বন্ধ করতে হবে। নদীর সংস্কারও জরুরি। বৃষ্টির জলের ব্যবহারও অতি প্রয়োজনীয়। সবমিলিয়ে জলের বিকল্প উৎস খুঁজে নিতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে জলের ব্যবহার সর্বাধিক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই জল বাঁচাতে বোরো ধানের বদলে ভুট্টা চাষে জোর দিয়েছে। ২০১৮-১৯ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় বাজেটে মাটির তলায় জল ফেরানোর জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ২,১৪৬ কোটি টাকা। রাজ্য সরকার নদী সংস্কারে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সকলের আগে দরকার নাগরিক সচেতনতা। জলের অপচয় বন্ধ না হলে সকলেরই ধ্বংস নিশ্চিত।
উপসংহার –
আমাদের দেশে প্রতি ৯জন লোকের মধ্যে একজনের পরিশ্রুত পানীয় জল জোটে না। প্রাপ্ত জলের পরিমাণের নিরিখে ভারতের স্থান পৃথিবীতে ১৩২। এরপরে সেই জলটুকুও জুটবে না। আমরা বোধহয় সেই শেষের দিনের অপেক্ষায় আছি। “কোথায় লুকোবে? ধু ধু করে মরুভূমি/ক্ষয়ে ক্ষয়ে ছায়া মরে গেছে পদতলে।/আজ দিগন্তে মরীচিকাও যে নেই।” (সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)
পরিশেষে বলা যায়, জলসংকট আজকের বিশ্বের একটি জরুরী সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি, জলের অপচয় রোধ, বৃষ্টির জল সংগ্রহ, নদী ও খালগুলো পরিষ্কার রাখা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং सरकारी নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারি। মনে রাখতে হবে, জল আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। আজ যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য পানিহীন এক বিশ্ব বেঁচে থাকবে।
এই রচনাটি মুখস্ত করে লেখলে ৬ষ্ঠ থেকে ১২ষ্ঠ শ্রেণীর যেকোনো পরীক্ষায় জলসংকট প্রবন্ধ রচনায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।