আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘কোশ বিভাজন ও কোশচক্র‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

ক্রোমোজোম
ক্রোমোজোম ও DNA -এর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক কী?
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে কোশকে পর্যবেক্ষণ করলে নিউক্লিয়াসের ভিতর সূক্ষ্ম জালকাকার গঠন দেখা যায়। লক্ষ করলে বোঝা যায় যে, এগুলি প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো দ্বিতন্ত্রী গঠন – এগুলিই হল DNA। এরা বৃহৎ অণু, তাই নিউক্লিয়াসে কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় থাকে। বিভাজনের সময়ে DNA আরও কুণ্ডলীকৃত হয় ও বিভিন্ন প্রোটিনকে দৃঢ়ভাবে পেঁচিয়ে লুপ তৈরি করে। কুণ্ডলীকৃত এই গঠনকে ক্রোমোজোম বলা হয়। অর্থাৎ, প্রোটিন সমন্বিত কুণ্ডলীকৃত DNA -এই হল ক্রোমোজোম।
ক্রোমোজোম ও জিনের সম্পর্ক কী?
- ক্রোমোজোমে অবস্থিত DNA -তে সরলরৈখিক সজ্জাক্রমে জিন পরপর সজ্জিত থাকে।
- একটি ক্রোমোজোমে নির্দিষ্ট সংখ্যক জিন থাকে।
- ক্রোমোজোমে জিনগুলির প্রকৃতিও নির্দিষ্ট থাকে।
- ক্রোমোজোমীয় অংশ বিলুপ্ত হলে ওই অংশের জিনও বিলুপ্ত হয়। ফলে নানা মিউটেশন-জনিত সমস্যা দেখা দেয়।
ক্রোমাটিন জালিকা কাকে বলে? এর কাজ কী?
ক্রোমাটিন জালিকা –
কোশের নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, ক্ষারীয় রঞ্জকে রঞ্জিত, প্যাঁচানো সূত্রাকার অংশকে ক্রোমাটিন জালিকা বলে।
ক্রোমাটিন জালিকার কাজ –
ক্রোমাটিন জালিকা জিন ধারণ করে। তাই ক্রোমাটিন জালিকা জীবকোশের বংশগত বস্তু বা জেনেটিক পদার্থের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে।
ক্রোমাটিন জালিকা ও ক্রোমোজোমের সম্পর্ক কী?
DNA ও প্রোটিন সংগঠনের দুটি রূপ হল ক্রোমাটিন জালিকা এবং ক্রোমোজোম। কোশের ইনটারফেজ দশায় লম্বা সুতোর মতো কম ঘনত্বের গঠনকে বলে ক্রোমাটিন জালিকা। পক্ষান্তরে, কোশ বিভাজন দশায় দণ্ডাকার, বেশি ঘনত্বের পাকানো (coiled) গঠনকে বলে ক্রোমোজোম। অর্থাৎ, একই উপাদানের দুটি ভিন্ন দশা হল ক্রোমাটিন জালিকা ও ক্রোমোজোম।
ক্রোমোজোম কত প্রকার ও কী কী?
কাজের ভিত্তিতে ক্রোমোজোম প্রধানত দুই প্রকার – অটোজোম বা দেহ ক্রোমোজোম এবং সেক্স ক্রোমোজোম বা যৌন ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম।
অটোজোম বলতে কী বোঝ? মানুষের কয়টি অটোজোম আছে?
অটোজোম –
নিউক্লিয়াসে অবস্থিত দেহজ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ক্রোমোজোমগুলিকে অটোজোম বলে।
মানুষের অটোজোম –
মানুষের দেহকোশের 23 জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে 22 জোড়া হল অটোজোম।
অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম বলতে কী বোঝ? মানুষের অ্যালোজোম কোনগুলি?
অ্যালোজোম –
যেসব ক্রোমোজোম প্রাণীদেহের লিঙ্গ নির্ধারণ করে তাদের সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বলে।
মানুষের অ্যালোজোম –
মানুষের দেহকোশে একজোড়া অ্যালোজোম বর্তমান। মানুষের অ্যালোজোম দুই প্রকার, যেমন – X এবং Y।
হ্যাপ্লয়েড কোশ কী?
যে সকল জীবকোশে ডিপ্লয়েড সংখ্যার অর্ধেক ক্রোমোজোম থাকে, তাদের হ্যাপ্লয়েড কোশ বলে। উদাহরণ – মানুষের শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়, এদেরকে হ্যাপ্লয়েড কোশ বলে, অর্থাৎ জননকোশ হল হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমযুক্ত কোশ।
ডিপ্লয়েড কোশ কী?
যে সকল জীবকোশে বিভিন্ন রকমের ক্রোমোজোম জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে, তাদের ডিপ্লয়েড (2n) কোশ বা ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমযুক্ত কোশ বলে।
44XY এবং 44XX ক্রোমোজোম বলতে কী বোঝ?
মানুষের ক্ষেত্রে 46টি ক্রোমোজোম থাকে। এর মধ্যে পুরুষের দেহে 44টি অটোজোম এবং XY নামে দুটি যৌন ক্রোমোজোম এবং মহিলার দেহে 44টি অটোজোম এবং XX নামে দুটি যৌন ক্রোমোজোম থাকে। সুতরাং, 44A + XY বলতে পুরুষ ও 44A + XX বলতে মহিলাকে বোঝায়।
তোমার দেহত্বকে ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n = 46 হলে তোমার স্নায়ুকোশ ও জননকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে?
- স্নায়ুকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n = 46 হবে।
- জননকোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা n = 23 হবে।
ক্রোমাটিড কাকে বলে?
কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমে দুটি অনুদৈর্ঘ্য প্রতিসম অর্ধাংশ পাওয়া যায়। এরা ক্রোমোজোমের মাঝে অবস্থিত বিশেষ খাঁজ তথা সেন্ট্রোমিয়ার নামক অংশে পরস্পর যুক্ত থাকে। এদের প্রতিটিকে ক্রোমাটিড বলে।
ক্রোমোমিয়ার কাকে বলে?
ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমে বিন্যস্ত নিষ্ক্রিয় কুণ্ডলীত DNA ও প্রোটিন দিয়ে পঠিত দানাদার গঠনকে ক্রোমোমিয়ার বা ইডিওমিয়ার (idiomere) বলে। এগুলি মিয়োসিস ও মাইটোসিসের প্রোফেজ দশায় দেখতে পাওয়া যায়।
প্রাথমিক খাঁজ বলতে কী বোঝ?
সেন্ট্রোমিয়ার-যুক্ত, ক্রোমোজোমের অরঞ্জিত সংকুচিত স্থান, যেখানে ক্রোমোজোম বাহু ভাঁজ হয়, তাকে প্রাথমিক খাঁজ বা মুখ্য সংকোচন বলে।
সেন্ট্রোমিয়ার কী? এর কাজ লেখো।
সেন্ট্রোমিয়ার –
ক্রোমোজোমের প্রাথমিক খাঁজ অংশে অবস্থিত চারটি কাইনেটোকোর নিয়ে গঠিত যে অংশে বেমতন্তু যুক্ত হয়, তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে।
সেন্ট্রোমিয়ারের কাজ –
- এটিতে বেম সংলগ্ন হয় বলে অ্যানাফেজ চলন সম্ভব হয়।
- এটি ক্রোমোজোমের দুটি বাহুকে যুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
কাইনোটোকোর কাকে বলে? এর কাজ কী?
কাইনেটোকোর –
সেন্ট্রোমিয়ারে অবস্থিত চাকতির মতো যে চারটি গঠন কোশ বিভাজনের সময় স্পিন্ডিল তন্তুতে সংলগ্ন হয়, তাদের কাইনেটোকোর বলে।
কাইনেটোকোরের কাজ –
কোশ বিভাজনের সময় কাইনেটোকোর ক্রোমোজোমের সঠিক বিভাজনে সাহায্য করে।
গৌণ খাঁজ বলতে কী বোঝ?
ক্রোমোজোমে মুখ্য খাঁজ ছাড়াও এক বা একাধিক অরঞ্জিত অংশ থাকলে তাকে গৌণ খাঁজ বলা হয়। এই স্থানে নিউক্লিওলাস যুক্ত থাকে এবং স্থানটি নিউক্লিওলাসের গঠনে সাহায্য করে।
টেলেমিয়ার কী? এর কাজ লেখো।
টেলোমিয়ার –
ক্রোমোজোমের দুটি প্রান্তীয় অংশকে টেলোমিয়ার বলে।
টেলোমিয়ারের কাজ –
- টেলোমিয়ার দুটি ক্রোমোজোমের প্রান্তকে জুড়ে যেতে বাধা দেয়।
- টেলোমিয়ার কোশের বার্ধক্য ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করে।
NOR -এর কাজ লেখো।
অথবা, NOR -এর গুরুত্ব লেখো।
- NOR গৌণ খাঁজের অন্তর্গত ক্রোমোজোমীয় অংশ যা রাইবোজোমাল RNA তৈরির জিন বহন করে।
- এই অংশ থেকে টেলোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস গঠিত হয়।
নিউক্লিওজোম কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী?
নিউক্লিওজোম –
ক্রোমাটিনের গঠনগত যে গোলাকার অংশগুলি আটটি হিস্টোন প্রোটিন (H2A, H2B, H3, H4 প্রতিটি জোড়রূপে) অক্টামার ও তাকে ঘিরে DNA প্যাঁচ নিয়ে গঠিত হয় তাকে নিউক্লিওজোম বলে।
নিউক্লিওজোমের গুরুত্ব –
ইউকারিওটিক ক্রোমাটিনকে স্বল্পস্থানে প্যাকিং করতে নিউক্লিওজোম গঠনগুলি সাহায্য করে।

স্যাটেলাইট কাকে বলে?
গৌণ খাঁজের পরবর্তী ক্ষুদ্র ক্রোমোজোমীয় খণ্ডকটিকে স্যাটেলাইট বলে। মানুষের 13, 14, 15 প্রভৃতি ক্রোমোজোমে গৌণ খাঁজ থাকে বলে ওইগুলিতে প্রান্তীয় স্যাটেলাইট দেখা যায়।
স্যাট ক্রোমোজোম কাকে বলে?
যেসব ক্রোমোজোমে গৌণ খাঁজ দ্বারা পৃথকীকৃত প্রান্তীয় খণ্ডক অংশ দেখা যায় তাকে স্যাটেলাইট ক্রোমোজোম বা স্যাট ক্রোমোজোম বলে। NOR পরবর্তী অংশটিই হল স্যাটেলাইট।
ক্রোমোজোমের টেলোমিয়ারের দুইটি তাৎপর্য লেখো।
- ক্রোমোজোমের প্রান্তকে অন্য কোনো ক্রোমোজোমে সংলগ্ন হওয়া থেকে রক্ষা করে।
- টেলোমিয়ার কোশের জরা ও বয়ঃবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
DNA -এর পুরো নাম কী? এটি কোথায় অবস্থিত?
DNA -এর সম্পূর্ণ নাম –
ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
DNA -এর অবস্থান –
DNA প্রধানত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোমে অবস্থিত। এ ছাড়া মাইটোকনড্রিয়া ও প্লাসটিডেও DNA উপস্থিত।
DNA -এর উপাদান কী?
DNA -এর উপাদানগুলি হল –
- নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক-অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, থাইমিন এবং সাইটোসিন।
- ফসফেট।
- শর্করা (ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা)।

DNA -তে উপস্থিত ক্ষারের নাম লেখো।
অথবা, একটি চার্ট দ্বারা DNA -এর ক্ষারগুলির প্রকারভেদ লেখো।
DNA -তে উপস্থিত ক্ষারগুলি হল –

নিউক্লিওটাইড কী?
DNA অণুতে একটি নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক, একটি ফসফেট ও একটি পেন্টোজ শর্করা (রাইবোজ বা ডিঅক্সিরাইবোজ) দ্বারা গঠিত নিউক্লিক অ্যাসিডের গঠনগত একককে নিউক্লিওটাইড বলে। অর্থাৎ,
নিউক্লিওটাইড = নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক + ফসফেট + রাইবোজ/ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা।

নিউক্লিওসাইড কী?
DNA অণুতে একটি নাইট্রোজেন-ঘটিত ক্ষারক ও একটি পেন্টোজ শর্করা (রাইবোজ বা ডি-অক্সিরাইবোজ) দ্বারা গঠিত অংশকে নিউক্লিওসাইড বলে। অর্থাৎ,
নিউক্লিওসাইড = নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক + রাইবোজ/ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা।
RNA -এর পুরো নাম কী? এটি কোথায় অবস্থিত?
RNA -এর সম্পূর্ণ নাম –
রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
RNA -এর অবস্থান –
RNA প্রধানত নিউক্লিয়াস ও রাইবোজোমে অবস্থিত।
RNA -এর রাসায়নিক উপাদান কী?
RNA -এর উপাদানগুলি হল –
- নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক – অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, ইউরাসিল এবং সাইটোসিন।
- ফসফেট।
- শর্করা (রাইবোজ শর্করা)।
RNA -এর নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারগুলির নাম লেখো।
RNA -তে উপস্থিত ক্ষারগুলি হল –

RNA কত প্রকার ও কী কী?
RNA প্রধানত তিনপ্রকার, যথা –
- মেসেঞ্জার RNA (mRNA)।
- রাইবোজোমাল RNA (rRNA)।
- ট্রান্সফার RNA (tRNA)।
হিস্টোন প্রোটিন কী?
DNA অণুর সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রধান গঠনমূলক ক্ষারকীয় প্রোটিন হল হিস্টোন প্রোটিন। পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ হিস্টোন প্রোটিনের উপস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে। এগুলি হল – H1, H2A, H2B, H3 এবং H4।
DNA -এর হিস্টোন প্রোটিনগুলির গঠনগত অ্যামিনো অ্যাসিডের নাম লেখো।
DNA -এর হিস্টোন প্রোটিনগুলি ক্ষারীয় প্রকৃতির। ক্ষারীয় অ্যামিনো অ্যাসিড, যেমন – আরজিনিন ও লাইসিন এগুলিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
নন্-হিস্টোন প্রোটিন কী?
DNA অণুর সঙ্গে যুক্ত থাকা আম্লিক প্রোটিন হল নন্-হিস্টোন প্রোটিন। এই প্রোটিনের কাজ হল জিনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
ইউক্রোমাটিন কাকে বলে?
ক্রোমাটিন তন্তুর যে অংশগুলি সক্রিয় জিনসম্পন্ন, কম কুণ্ডলীকৃত ও ক্ষারীয় রঞ্জকে হালকাভাবে রঞ্জিত হয়, তাদের ইউক্রোমাটিন বলে। এই অংশ জিনগতভাবে সক্রিয় এবং RNA উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে।
ইউক্রোমাটিনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
- ক্রোমাটিন জালিকার ইউক্রোমাটিন অংশে DNA ও প্রোটিন আলগাভাবে আবদ্ধ থাকে।
- এই অংশে সক্রিয় জিন থাকে যা থেকে RNA উৎপাদন ও শেষে প্রোটিন উৎপাদন ঘটে।
হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে?
ক্রোমাটিন তন্তুর যে অংশগুলি স্বল্প জিনসমন্বিত, অধিক কুণ্ডলীকৃত এবং ক্ষারীয় রঞ্জকে গাঢ়ভাবে রঞ্জিত হয়, তাদের হেটেরোক্রোমাটিন বলে। মূলত জিনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা ও ক্রোমোজোমের অখণ্ডতা বজায় রাখা এর কাজ।

হেটেরোক্রোমাটিনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
- ক্রোমাটিন জালিকার অধিক কুণ্ডলীত অংশ।
- এই অংশে সক্রিয় জিন কম থাকে। এই অংশে DNA থেকে RNA উৎপাদন তথা প্রোটিন সৃষ্টি কম হয়।
স্থায়ী বা কনস্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে, ও তা কোথায় দেখা যায়? এর গুরুত্ব লেখো।
কনস্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন –
যে হেটেরোক্রোমাটিন সব কোশের নিউক্লিয়াসে সর্বদাই উপস্থিত থাকে, তাকে স্থায়ী বা কনস্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন বলে। এই হেটেরোক্রোমাটিন সেন্ট্রোমিয়ার, টেলোমিয়ার, নিউক্লিওলার অরগানাইজার অংশে দেখা যায়।
কনস্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিনেরগুরুত্ব –
এই ধরনের হেটেরোক্রোমাটিন স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে।
অস্থায়ী বা ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে ও এটি কোথায় দেখা যায়? এর গুরুত্ব লেখো।
ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন –
যে হেটেরোক্রোমাটিন বিশেষ কয়েকটি কোশে বা কোনো নির্দিষ্ট জীবদেহকোশে অল্প সময়ের জন্য উৎপন্ন হয়, তাকে অস্থায়ী বা ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন বলে। মানুষের ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহকোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত বারবডি হল অস্থায়ী হেটেরোক্রোমাটিন।
ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিনের গুরুত্ব –
এই প্রকার হেটেরোক্রোমাটিন অনেক সময় আলগা হয়ে সক্রিয় হয়। ফলে ওই অংশের DNA থেকে RNA, তথা প্রোটিন উৎপন্ন হতে পারে।
বারবডি নামকরণ কে করেন?
মানুষসহ অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্ত্রীদেহে উপস্থিত দুটি X ক্রোমোজোমের একটি হেটেরোক্রোমাটিনরূপে নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে ও গাঢ় বর্ণে রঞ্জিত হয়। বিজ্ঞানী ম্যুরে বার -এর নাম দেন বারবডি।
অটোজোম এবং অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম-এর পার্থক্য লেখো।
অথবা, নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মানুষের অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে পার্থক্য লেখো – প্রকৃতি, সংখ্যা।
অটোজোম এবং অ্যালোজোম -এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | অটোজোম | অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম |
কাজ | জীবের দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। | মূলত লিঙ্গ নির্ধারণ ও জননগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। |
সংখ্যা | এর সংখ্যা অধিক, মানবদেহে 22 জোড়া। | এর সংখ্যাকম, মানবদেহে 1 জোড়া। |
প্রকৃতি | এগুলি হোমোলোগাস জোড়ারূপে দেহকোশে বিন্যস্ত থাকে। | এগুলি হোমোলোগাস জোড়া (XX) অথবা নন-হোমোলোগাস (XY) জোড়া রূপে দেহকোশে বিন্যস্ত থাকে। |
ক্রোমোজোম ও ক্রোমাটিডের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ক্রোমোজোম ও ক্রোমাটিডের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | ক্রোমোজোম | ক্রোমাটিড |
গঠন প্রকৃতি | নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত সূত্রাকার বা দণ্ডাকার গঠন, যা বিভাজনের সময়ে দৃশ্যমান হয়। | ক্রোমোজোমে অবস্থিত দণ্ডাকার অংশ। |
সংখ্যাগত উপস্থিতি | কোশের মধ্যে দুই বা ততোধিক ক্রোমোজোম থাকতে পারে। | একটি ক্রোমোজোমে ক্রোমাটিডের সংখ্যা দুইয়ের বেশি নয়। |
প্রধান সংগঠক | ক্রোমোজোম প্রধানত ক্রোমাটিড ও সেন্ট্রোমিয়ার সহযোগে গঠিত। | ক্রোমাটিড প্রধানত ক্রোমোনিমাটা ও ক্রোমোমিয়ার সহযোগে গঠিত। |
অ্যালিলগত সাদৃশ্য | হোমোলোগাস ক্রোমোজোমে ভিন্ন অ্যালিল থাকতে পারে। | সিস্টার ক্রোমাটিড হুবহু এক অ্যালিল বহন করে। |
প্রাথমিক খাঁজ ও গৌণ খাঁজের পার্থক্য লেখো।
প্রাথমিক খাঁজ ও গৌণ খাঁজের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | প্রাথমিক খাঁজ | গৌণ খাঁজ |
খাঁজের ধরন | ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংলগ্ন খাঁজ। | প্রাথমিক খাঁজ ছাড়া ক্রোমোজোমের অন্য খাঁজ। |
বেমের সঙ্গে সম্পর্ক | কোশ বিভাজনের সময়ে বেমতন্তুর সঙ্গে এটি আবদ্ধ হয়। | বেমতন্তুর সঙ্গে সংযুক্ত হয় না। |
কাজ | সেন্ট্রোমিয়ার ধারণ করে। | নিউক্লিওলাস গঠন করে। |
সেন্ট্রোমিয়ার এবং ক্রোমোমিয়ার বা ইডিওমিয়ার -এর পার্থক্য লেখো।
সেন্ট্রোমিয়ার এবং ক্রোমোমিয়ার -এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | সেন্ট্রোমিয়ার | ক্রোমোমিয়ার/ইডিওমিয়ার |
অবস্থান | ক্রোমোজোমের দুটি বাহুর মধ্যবর্তী প্রাথমিক খাঁজ অংশ। | ক্রোমোজোমের ক্রোমোনিমাটা তন্তুতে বিন্যস্ত পুঁতির মতো দানা সদৃশ গঠন। |
সংখ্যা | একটি ক্রোমোজোমে একটি সেন্ট্রোমিয়ার থাকে। | একটি ক্রোমোজোমে অসংখ্য ক্রোমোমিয়ার থাকে। |
কাজ | ক্রোমাটিডকে সংযুক্ত রাখা, কোশ বিভাজনের সময় বেমতন্তুর সঙ্গে ক্রোমোজোমকে আবদ্ধ রাখা। | নিষ্ক্রিয় DNA যুক্ত গঠন, প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে না। |
গঠনগত ও কার্যগত পার্থক্য লেখো – DNA-RNA
DNA ও RNA গঠনগত ও কার্যগত পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | DNA (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) | RNA (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) |
গঠনগত আকৃতি | দ্বিতন্ত্রী, হেলিক্স বা সিঁড়ির মতো প্যাঁচানো গঠন। | একতন্ত্রী, সুতোর মতো গঠন। |
শর্করা | ডিঅক্সিরাইবোজ শর্করা দিয়ে গঠিত। | রাইবোজ শর্করা এর গঠনগত উপাদান। |
নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষার | পিরিমিডিন ক্ষার হল থাইমিন ও সাইটোসিন। | পিরিমিডিন ক্ষার হল ইউরাসিল ও সাইটোসিন। |
কার্যগত | বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে ও কোশের যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। | কোশে প্রোটিন সংশ্লেষে অংশ নেয়। |
নিউক্লিওটাইড ও নিউক্লিওসাইডের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
নিউক্লিওটাইড ও নিউক্লিওসাইডের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | নিউক্লিওসাইড | নিউক্লিওটাইড |
সংজ্ঞা | একটি পিরিমিডিন বা পিউরিন ক্ষারক, পেন্টোজ শর্করার সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে নিউক্লিওসাইড বলে। | ফসফোরিক অ্যাসিডের সঙ্গে নিউক্লিওসাইড যুক্ত হলে, তাকে নিউক্লিওটাইড বলে। |
গঠনগত একক | নিউক্লিওসাইড হল DNA অথবা RNA -এর অসম্পূর্ণ গঠনগত একক। | নিউক্লিওটাইড হল DNA অথবা RNA -এর সম্পূর্ণ গঠনগত একক। |
ইউক্রোমাটিন ও হেটেরোক্রোমাটিনের পার্থক্য লেখো।
অথবা, ইউক্রোমাটিন ও হেটারোক্রোমাটিনের মধ্যে নিম্নলিখিত দুটি বিষয়ে পার্থক্য লেখো – (1) কুণ্ডলী, (2) সক্রিয়তা।
ইউক্রোমাটিন ও হেটেরোক্রোমাটিনের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | ইউক্রোমাটিন | হেটেরোক্রোমাটিন |
ইনটারফেজ অবস্থায় কুণ্ডলী | কম প্যাঁচানো কুণ্ডলী গঠন করে অবস্থান করে। | দৃঢ়ভাবে পেঁচিয়ে কুণ্ডলী গঠন করে অবস্থান করে। |
রঞ্জন | হালকাভাবে রঞ্জিত হয়। | সর্বদা গাঢ়ভাবে রঞ্জিত হয়। |
সক্রিয়তা | জিনগতভাবে সক্রিয়। তাই এই অংশে DNA থেকে RNA ও RNA থেকে কার্যক্ষম প্রোটিন তৈরি হয়। | জিনগতভাবে নিষ্ক্রিয়। এই অংশে DNA থেকে RNA তথা কার্যক্ষম প্রোটিন প্রায় তৈরি হয় না। |
কোশ বিভাজন – সাহায্যকারী অঙ্গাণু, তাৎপর্য, প্রকারভেদ ও কোশচক্র
কোশ বিভাজন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে একটি মাতৃকোশ বা জনিতৃ কোশ বিভাজিত হয়ে দুই বা ততোধিক নতুন অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে কোশ বিভাজন বলে।
কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী পাঁচটি কোশীয় অঙ্গাণুর নাম লেখো।
কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী পাঁচটি কোশীয় অঙ্গাণু হল –
- নিউক্লিয়াস।
- সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল।
- গলগি বডি।
- রাইবোজোম।
- মাইটোকনড্রিয়া।
সেন্ট্রোজোমের দুটি কাজ লেখো।
সেন্ট্রোজোমের কাজ হল –
- বেমতন্তু গঠন দ্বারা কোশ বিভাজনে অপত্য কোশে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম বিন্যাসে সাহায্য করা। এটি কোশের সাইটোকাইনেসিসেও সাহায্য করে।
- সেন্ট্রোজোম কোশে মাইক্রোটিউবিউল উৎপাদন, কোশে সিলিয়া সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াস ও গলগি বডির ভূমিকা কী?
কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা –
কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াসের গুরুত্ব অপরিসীম। নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্রোমোজোম হল বংশগতি বৈশিষ্ট্যের বাহক। কোশ বিভাজনের সময়ে তা বিভাজিত হয়ে অপত্য নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে।
কোশ বিভাজনে গলগি বড়ির ভূমিকা –
উদ্ভিদকোশে কোশপ্রাচীর সৃষ্টিতে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠনের জন্য গলগি বডির ক্ষরণ সহায়তা করে থাকে।

কোশ বিভাজনে সেন্ট্রোজোম এবং মাইক্রোটিউবিউলের ভূমিকা কী?
কোশ বিভাজনে সেন্ট্রোজোমের ভূমিকা –
প্রাণীকোশের বিভাজনকালে বেম গঠনে সেন্ট্রোজোম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বেমতন্তু, ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংলগ্ন হয়ে সংকোচন দ্বারা ক্রোমোজোমের আনাফেজ দশায় মেরু চলনে সাহায্য করে। এর ফলে অপত্য কোশে ক্রোমোজোম বিন্যাস নির্দিষ্ট থাকে।

কোশ বিভাজনে মাইক্রোটিউবিউলের ভূমিকা –
এগুলি কোশীয় সাইটোস্কেলিটনের অংশবিশেষ যা উদ্ভিদকোশে বেম গঠন করে। মাইক্রোটিবিউল-নির্মিত বেম ক্রোমোজোমকে দুই মেরুতে নিয়ে যায়। ফলে কোশ বিভাজনে উৎপন্ন অপত্য কোশে ক্রোমোজোম সংখ্যা ও DNA পরিমাণ মাতৃকোশের সমান থাকে।
কোশ বিভাজনে রাইবোজোমের ভূমিকা কী?
- রাইবোজোম কোশ বিভাজনের জন্য কোশের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে (ক্রোমোজোমের গঠনগত হিস্টোন ও নন্-হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে)।
- প্রোটিন সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক সরবরাহ করে।
কোশ বিভাজনে মাইটোকনড্রিয়ার ভূমিকা কী?
কোশ বিভাজনে মাইটোকনড্রিয়ার ভূমিকা –
- মাইটোকনড্রিয়া হল কোশের শক্তিঘর। এটি কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়।
- কোশচক্র নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা রয়েছে।

কোশ বিভাজনের মূল তিনটি তাৎপর্য কী কী?
কোশ বিভাজনের প্রধান তিনটি তাৎপর্য হল –
- কোশের সংখ্যাবৃদ্ধি।
- প্রজননের জন্য জননকোশ গঠন।
- আঘাত ও ক্ষতস্থান নিরাময়।
জীবদেহে কোশ বিভাজনের উদ্দেশ্য কী?
জীবদেহে কোশ বিভাজনের উদ্দেশ্য হল নতুন কোশ উৎপাদনের মাধ্যমে পরিস্ফুরণ ও প্রয়োজনে রূপান্তরের অবকাশ সৃষ্টি করে জীবদেহের দৈর্ঘ্য ও আয়তন বৃদ্ধি করা, ক্ষয়পূরণ করা এবং জননের আগে জননকোশ বা গ্যামেটের সৃষ্টি করা।
কোশ বিভাজনের সঙ্গে বৃদ্ধির সম্পর্ক লেখো।
অথবা, ‘মাইটোসিস হল কারণ, বৃদ্ধি তার ফল’ – ব্যাখ্যা করো।
মাইটোসিস কোশ বিভাজনে সৃষ্টি হওয়া অপত্য কোশগুলি পরিণত হলে ওই কোশগুলির পুনরায় মাইটোসিস বিভাজন ঘটে। সেইজন্য একদিকে যেমন বহুকোশী জীবের দেহে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে কোশগুলি পুষ্টি সংগ্রহ করে আকারে ও আয়তনে বড়ো হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে জীবদেহেরই বৃদ্ধি হয়। সেইজন্য বলা হয় মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা জীবদেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, মাইটোসিস বিভাজন হল কারণ এবং বৃদ্ধি হল তার ফল।
কোশ বিভাজন কত প্রকার ও কী কী?
কোশ বিভাজন তিন প্রকার, যথা – অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস ও মিয়োসিস। একটি মাতৃকোশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভাজিত হতে পারে।

প্রত্যেক প্রকার কোশ বিভাজনের উদাহরণ দাও।
অ্যামাইটোসিস –
ঈস্ট, অ্যামিবা ইত্যাদিতে সম্পন্ন হয়।
মাইটোসিস –
উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকোশে সম্পন্ন হয়।
মিয়োসিস –
উদ্ভিদ ও প্রাণীর জননমাতৃকোশে সম্পন্ন হয়।
অ্যামাইটোসিস কাকে বলে?
বেম গঠন ছাড়াই মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের সরাসরি বিভাজনের দ্বারা দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টির অনুন্নত পদ্ধতিকে অ্যামাইটোসিস বলে।
অ্যামাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য কী?
- অ্যামাইটোসিসে নিউক্লীয় পর্দার বিলুপ্তি ঘটে না এবং বেমতন্তু গঠিত হয় না।
- এই বিভাজনের সময়ে কোশের নিউক্লিয়াসটি মাকু বা ডামবেলের আকার ধারণ করে এবং মাঝবরাবর স্থানে সংকুচিত হয় ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য কোশে পরিণত হয়।
পরোক্ষ কোশ বিভাজন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
পরোক্ষ কোশ বিভাজন –
যে কোশ বিভাজনে মাতৃকোশের নিউক্লিয়াসটি ক্রোমোজোম গঠন, বেম গঠন, ক্রোমোজোম বিভাজন ও বিন্যাস এবং সাইটোপ্লাজম বিভাজনের জটিল পর্যায়গুলির মধ্যে দিয়ে সমতাপূর্ণ অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে পরোক্ষ কোশ বিভাজন বলে।
উদাহরণ –
মাইটোসিস ও মিয়োসিস।
মাইটোসিস কোশ বিভাজন কাকে বলে?
যে কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে দেহকোশ বেমতন্তু গঠন দ্বারা একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে সমসংখ্যক ও সমগুণসম্পন্ন ক্রোমোজোম বিশিষ্ট একই বৈশিষ্ট্যের ও একই আকৃতির দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে মাইটোসিস কোশ বিভাজন বলে।
মাইটোসিসকে সমবিভাজন বা ইক্যুয়েশনাল বিভাজন বলে কেন?
অথবা, মাইটোসিসকে সদৃশ বিভাজন বলে কেন?
- মাইটোসিসে একটি মাতৃকোশ বিভাজিত হয়ে দুটি সমআকৃতির অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। অপত্য কোশ দুটিতে মাতৃকোশের সমান সংখ্যক ক্রোমোজোম সমবণ্টিত হয়।
- সাইটোকাইনেসিসের ফলে মাতৃকোশের সাইটোপ্লাজমও উভয় অপত্য কোশে সমভাবে বণ্টিত হয়। এই কারণে মাইটোসিসকে সমবিভাজন বা সদৃশ বিভাজন বলা হয়।

মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন কোথায় হয়?
- উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গে এবং প্রাণীদের দেহকোশে মাইটোসিস হয়।
- দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধির সময়ে কাণ্ড ও মূলে মাইটোসিস হয়।
- বিভিন্ন নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীর অঙ্গজ ও অযৌন জননের সময়ে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে।
- উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভ্রূণের পরিস্ফুটনের সময়ে মাইটোসিস ঘটে।
একটি কাঁকড়ার পদ বা তারামাছের বাহু কেটে দেওয়া হলে কী হবে?
কবচী শ্রেণির প্রাণী কাঁকড়া (এ ছাড়াও চিংড়ি) ও তারামাছ জাতীয় একাইনোডার্মদের বাহু কেটে দিলে তার পুনরুৎপাদন হয়। মাইটোসিস পদ্ধতিতে দেহকোশ সংখ্যা বৃদ্ধি দ্বারা তা ঘটে থাকে।
কোনো বহুকোশী জীবের দেহে মাইটোসিস বিভাজন বন্ধ হলে কী অসুবিধা ঘটবে?
কোনো বহুকোশী জীবের দেহে মাইটোসিস বিভাজন বন্ধ হলে –
- দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ ঘটবে না।
- অঙ্গজ জননে অসুবিধা হবে।
- জীবদেহের ক্ষয়প্রাপ্ত ও মৃতকোশ পুনরায় নতুন কোশ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না।
মিয়োসিস কোশ বিভাজন বলতে কী বোঝ?
যে কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় জীবের জননমাতৃকোশের নিউক্লিয়াসের পরপর দু-বার বিভাজন ঘটার ফলে জননমাতৃকোশের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট ও জিনের পুনর্বিন্যাসযুক্ত চারটি পৃথক অপত্য জননকোশ বা গ্যামেটের সৃষ্টি হয়, তাকে মিয়োসিস কোশ বিভাজন বলে।
মিয়োসিস কোশ বিভাজনকে হ্রাস বিভাজন বলা হয় কেন?
মিয়োসিসে সৃষ্ট অপত্য কোশগুলি মাতৃকোশের তুলনায় অর্ধ-সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট হয় বলে মিয়োসিসকে হ্রাস বিভাজন বলে।

মিয়োসিস কোশ বিভাজনের দুটি তাৎপর্য উল্লেখ করো।
- মিয়োসিস কোশ বিভাজনের ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে।
- মিয়োসিসে জিনের পুনর্বিন্যাসের ফলে সৃষ্ট অপত্য কোশের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, একে প্রকরণ বলে। এই প্রকরণ জীবের বিবর্তনের সহায়ক।
একটি উদ্ভিদের দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা যদি 18 হয় তবে ওই উদ্ভিদের (1) মূলের কোশের, (2) সস্য নিউক্লিয়াসের এবং (3) নির্ণীত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে?
উদ্ভিদটির দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা 18 হলে –
- মূলের কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n = হবে।
- সস্য নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা 3n = হবে।
- নির্ণীত বা ডেফিনিটিভ নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা 2n = 18 হবে।
কোশচক্রের দশাগুলি একটি সারণি বা পর্যায়চিত্রের সাহায্যে দেখাও।
কোশচক্রের প্রধানত দুটি দশা, ইনটারফেজ বা অবিভাজন দশা ও মাইটোটিক বা বিভাজন দশা। ইনটারফেজ দশা আবার G1, S ও G2 নামক উপদশায় বিভক্ত। মাইটোটিক দশার দুটি পর্যায়, যথা –
- ক্যারিওকাইনেসিস।
- সাইটোকাইনেসিস।
ক্যারিওকাইনেসিসের চারটি দশা হল –
- প্রোফেজ।
- মেটাফেজ।
- অ্যানাফেজ।
- টেলোফেজ।

ইনটারফেজ দশা কী? এর প্রধান উপদশাগুলি কী কী?
ইনটারফেজ দশা –
কোশচক্রে একটি কোশ বিভাজনের শেষ এবং পরবর্তী কোশ বিভাজনের শুরুর অন্তর্বর্তী দীর্ঘস্থায়ী যে দশায় মাতৃকোশের মধ্যে পরবর্তী কোশ বিভাজনের প্রস্তুতি পর্ব চলে, তাকে ইনটারফেজ বা অন্তর্বর্তী দশা বলে।
উপদশা –
ইনটারফেজ -এর উপদশাগুলি হল – G1, S ও G2।

কোশ বিভাজনের পূর্বে ইনটারফেজ কেন প্রয়োজন?
ইনটারফেজ দশায় কোশ পরবর্তী বিভাজনের জন্য প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে। যেসব কারণের জন্য কোশ বিভাজনের পূর্বে ইনটারফেজ দশা প্রয়োজন হয়, তা হল –
- এই দশায় DNA, প্রোটিন ও বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গাণু দ্বিগুণিত হয়, যাতে বিভাজনের পরে সমরূপ কোশ পাওয়া যায়।
- এই দশায় কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সংশ্লেষিত ও সঞ্চিত হয়।
G0 দশা কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী?
G0 দশা –
কোশচক্রের যে নিষ্ক্রিয় দশায় প্রবেশ করলে কোশের বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়, তাকে G0 দশা বলে। সাধারণত G1 দশার মধ্যবর্তী কোনো এক নির্দিষ্ট বিন্দুতে কোশ G0 দশায় প্রবেশ করতে পারে।
G0 দশার গুরুত্ব –
এই দশায় কোশ বিভাজন ঘটে না এবং কোশটি সঞ্চয় কোশের ভূমিকা পালন করে। উপযুক্ত অবস্থা এলে এরা আবার কোশচক্রে প্রবেশ করে ও বিভাজিত হয় এবং তা না ঘটলে কোশটি পরিণতি ও মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।
কোশচক্রের চেকপয়েন্ট কাকে বলে?
কোশ বিভাজনের বিভিন্ন ত্রুটি এড়াবার জন্য কোশচক্রের বিভিন্ন স্থানে কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্তই হল কোশচক্রের চেকপয়েন্ট বা নিয়ন্ত্রণ বিন্দু। প্রধান তিনটি চেকপয়েন্ট হল – G1/S, G2/M এবং M।
টিউমার কাকে বলে?
অথবা, টিউমার কেন সৃষ্টি হয়?
কোনো কারণে কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিঘ্নিত হলে কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে। ফলে অসংখ্য কোশ উৎপাদন দ্বারা যে কোশগুচ্ছ তৈরি হয় তাকে টিউমার বলে।
বিনাইন টিউমার কী? এর গুরুত্ব লেখো।
বিনাইন টিউমার –
কোশচক্রের নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজনের ফলে স্থানীয়ভাবে যে অক্ষতিকর টিউমার তৈরি হয় তাকে বিনাইন টিউমার বলে।
বিনাইন টিউমারের গুরুত্ব –
দেহের নানা স্থানে তৈরি হলেও এগুলি ছড়িয়ে পড়ে না। ফলে দেহে ক্ষতি ঘটার সম্ভাবনা এক্ষেত্রে কম থাকে।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী?
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার –
টিউমার কোশগুলি যদি প্রাণীদেহে রক্তবাহের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং টিউমার সৃষ্টি করে, তখন তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের গুরুত্ব –
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের কোশগুলি রক্ত বা অন্য দেহতরল দ্বারা অন্যান্য দেহাংশে ছড়িয়ে পড়ে ও নতুন স্থানে টিউমার সৃষ্টি করে। একে বলে মেটাস্ট্যাটিস। মেটাস্ট্যাসিস ঘটলে তা প্রাণীর পক্ষে মারণ ক্যানসার-রূপে পরিগণিত হয়।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।
কোশের বিভাজন জিনগত বা পরিবেশগত কারসিনোজেনের প্রভাবে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়লে অসংখ্য অবাঞ্ছিত কোশ সৃষ্টি হয়। ওই কোশগুলি একত্রে টিউমার সৃষ্টি করে। কিছু টিউমার স্থানীয় যাদের বিনাইন টিউমার বলে। পক্ষান্তরে, টিউমার কোশ যদি রক্ত বা অন্য দেহতরল বাহিত হয়ে দেহের অন্যস্থানে নতুন টিউমার তৈরি করে ক্ষতিসাধন করে (বা মৃত্যুও ঘটায়), তখন সেই টিউমারকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে।
বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের পার্থক্য কী?
বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার উভয়ক্ষেত্রেই কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয় ও টিউমার সৃষ্টি হয়। বিনাইন টিউমার শল্যচিকিৎসা দ্বারা দূর করা সম্ভব, কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার শল্যচিকিৎসা দ্বারা দূর করা কঠিন। কারণ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের কোশ বা ক্যানসার কোশ সহজেই দেহের অন্যত্র গিয়ে (মেটাস্ট্যাসিস) নতুন ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তৈরি করে।
অঙ্কোজিন কাকে বলে?
স্বাভাবিক কোশকে ম্যালিগন্যান্ট কোশে পরিবর্তনের জন্য দায়ী জিন অর্থাৎ ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী জিনাটি হল অঙ্কোজিন। অঙ্কোজিন কোনো কারসিনোজেনের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে (মিউটেশন) গেলে তা কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে ও ক্যানসার সৃষ্টি করে।
ক্যানসার সৃষ্টির প্রধান দুটি পর্যায় কী কী?
- ক্যানসার সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে স্বাভাবিক কোশের মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে কোশে দ্রুত অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয় এবং সেখান থেকে টিউমার সৃষ্টি হয়।
- দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যালিগ্যান্ট টিউমারের কোশগুলির আন্তরকোশীয় সংযোগ বিনষ্ট হওয়ায় তা রক্ত বা লসিকায় বাহিত হয়ে অন্য স্থানে পৌঁছায় (মেটাস্ট্যাসিস) ও অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন শুরু করে গৌণ টিউমার তৈরি করে রোগটি দেহে ছড়িয়ে দেয়।
মেটাস্ট্যাসিস কী? এর সঙ্গে কোশচক্রের সম্পর্ক কী?
মেটাস্ট্যাসিস –
ক্যানসারের শেষ পর্যায়ে (স্টেজ IV) ক্যানসারযুক্ত কোশগুলি রক্ত বা লসিকা দ্বারা সারা দেহে ছড়িয়ে যায়। ওই কোশ অন্য কোনো অঙ্গে তখন ক্যানসার তৈরি করে। ক্যানসারের এই দশাকে মেটাস্ট্যাসিস বলে।
কোশচক্রের সঙ্গে সম্পর্ক –
কোশচক্রের চেক পয়েন্টগুলি বিঘ্নিত হলে অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন ঘটে। এর ফলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তৈরি হয় যা পরে মেটাস্ট্যাসিস ঘটাতে পারে।
অ্যামাইটোসিস এবং মিয়োসিস -এর পার্থক্য লেখো।
অ্যামাইটোসিস এবং মিয়োসিস -এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | অ্যামাইটোসিস | মিয়োসিস |
বিভাজনের প্রকৃতি | প্রত্যক্ষ ও সরল বিভাজন। | পরোক্ষ ও জটিল বিভাজন। |
DNA উপাদানের বিন্যাস | অসম বা সমবায় অপত্যে DNA বিন্যস্ত হয়। | DNA মাত্রা অর্ধেক হয়ে যায়। |
দশা | কোনো দশা থাকে না। | অনেকগুলি দশার সমন্বয়ে বিশেষ। |
বিস্তার | অ্যামিবা, ঈস্ট, ব্যাকটেরিয়া কোশে জননের সময় ঘটে থাকে। | উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণীর জননকোশ সৃষ্টির সময় ঘটে থাকে। |
মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজন
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের বিভিন্ন দশাগুলি কী কী?
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দুটি প্রধান পর্যায় হল –
- ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াস বিভাজন।
- সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজন।
ক্যারিওকাইনেসিসের বিভিন্ন দশাগুলি হল –
- প্রোফেজ।
- মেটাফেজ।
- অ্যানাফেজ।
- টেলোফেজ।

বেমতন্তু কাকে বলে? এটি কত প্রকারের?
বেমতন্তু –
কোশ বিভাজনকালে বেম বা মাকুসংগঠক যে তন্তুগুলি ক্রোমোজোমীয় সংযুক্তি ও চলনে সহায়তা করে তাদের বেমতন্তু বলে।
বেমতন্তুর প্রকার –
বেমতন্তু তিন প্রকারের, যথা – ক্রোমোজোমাল তন্তু, অবিচ্ছিন্ন তন্তু এবং ইনটারজোনাল তন্তু।
অবিচ্ছিন্ন ও ক্রোমোজোমীয় বেমতন্তু বলতে কী বোঝ?
এক মেরু থেকে অন্য মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত তন্তুগুলিকে অবিচ্ছিন্ন বেমতন্তু এবং এক মেরু থেকে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের সঙ্গে যুক্ত বাকি তন্তুগুলিকে ক্রোমোজোমীয় বেমতন্তু বলে।
মেটাফেজ প্লেট কাকে বলে?
মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমগুলি পরপর নিরক্ষীয় অঞ্চলে বিস্তৃত থেকে একটি পাত বা প্লেট -এর মতো অংশ সৃষ্টি করে। ক্রোমোজোমের এই গঠন বিন্যাসকে মেটাফেজ প্লেট বলে।
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের কোন্ দশায় ক্রোমোজোমগুলি দুটি ক্রোমাটিডযুক্ত (দ্বিতন্ত্রী বিশিষ্ট) হয় এবং কোন্ দশায় ওইগুলি আবার একটি ক্রোমোজোমে (একতন্ত্রী বিশিষ্ট) পরিণত হয়ে থাকে?
কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার শেষে ক্রোমোজোমগুলি দুটি ক্রোমাটিডযুক্ত (দ্বিতন্ত্রীবিশিষ্ট) হয় এবং অ্যানাফেজ দশায় এরা আবার একটি ক্রোমাটিডযুক্ত (একতন্ত্রীবিশিষ্ট) হয়।
মাইটোটিক অ্যাপারেটাস বা স্পিন্ডল অ্যাপারেটাস কাকে বলে?
সেন্ট্রিওল ও বেমতন্তু নিয়ে গঠিত মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময় সৃষ্ট বেম গঠনকে মাইটোটিক অ্যাপারেটাস বা স্পিন্ডল অ্যাপারেটাস বা মাইটোটিক স্পিন্ডল বলে।

অ্যাস্ট্রাল ও অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিসের সংজ্ঞা দাও।
অ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস –
যে প্রকার মাইটোসিসে বেমতন্তু সেন্ট্রিওলের অ্যাস্ট্রাল রশ্মি থেকে তৈরি হয় তাকে অ্যাস্ট্রাল মাইটোসিস বলে। প্রাণীকোশে তা দেখা যায়।
অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস –
উদ্ভিদকোশে বেমতন্তু সাইটোপ্লাজমের মাইক্রোটিবিউল থেকে তৈরি হয়। সেন্ট্রিওল না থাকায় এক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রল রশ্মি থেকে বেম গঠন হয় না। তাই উদ্ভিদকোশের মাইটোসিসকে অ্যানাস্ট্রাল মাইটোসিস বলে।
সাইটোকাইনেসিস কাকে বলে?
যে প্রক্রিয়ায় কোশের সাইটোপ্লাজম সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে। এটি ক্যারিওকাইনেসিসের ঠিক পরেই ঘটে।
সাইটোকাইনেসিস না হলে কী হবে?
কোনো কোশে সাইটোকাইনেসিস না হলে অপত্য কোশের সাইটোপ্লাজম আলাদা হবে না। ফলে বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশ তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি সাধারণ ঘটনা, যেমন – মানুষের হাড়ের অস্টিওক্লাস্ট কোশে বহু নিউক্লিয়াস থাকে। তবে অনেক সময় এটি অনিয়ন্ত্রিত কোশচক্রের জন্যও ঘটে থাকে।
ফ্র্যাগমোজোম কী? এর গুরুত্ব লেখো।
ফ্র্যাগমোজোম –
উদ্ভিদকোশে মাইটোসিসের সময় কোশের মাঝ বরাবর যে সাইটোপ্লাজমের পাতলা পটি থাকে তাকে ফ্র্যাগমোজোম বলে।
ফ্র্যাগমোজোমের গুরুত্ব –
উদ্ভিদকোশে সাইটোকাইনেসিসের সময় ওই ফ্র্যাগমোজোম অংশের উপাদান ব্যবহার করে ফ্ল্যাগমোপ্লাস্ট গঠিত হয়।
স্টেমবডি কাকে বলে?
কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার শেষে যখন দুই সেট ক্রোমোজোম বিপরীত মেরুতে পৌঁছোয়, তখন দুটি মেরুর মধ্যবর্তী ইনটারজোনাল তন্তুকে স্টেমবডি বলে।
এন্ডোমাইটোসিস কী?
কোনো কোশে DNA দ্বিগুণিত হলেও কোশটি বিভাজিত না হলে তাকে এন্ডোমাইটোসিস বলে। যেমন – মানুষের যকৃৎ কোশ। এইরকম অধিক ক্রোমোজোম সেট-যুক্ত কোশকে পলিপ্লয়েডি বলে।
সিস্টার ক্রোমাটিড ও নন্-সিস্টার ক্রোমাটিড বলতে কী বোঝ?
কোশ বিভাজনের ইনটারফেজ দশায় DNA প্রতিলিপিকরণের জন্য প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে, যারা সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে পরস্পর যুক্ত থাকে। এদের সিস্টার ক্রোমাটিড বলে। অপরপক্ষে একটি ক্রোমোজোমের প্রতিজোড়া ক্রোমাটিডকে তার সমসংস্থ ক্রোমোজোমের প্রতিজোড়া ক্রোমাটিডের সাপেক্ষে নন্-সিস্টার ক্রোমাটিড বলে।

সমসংস্থ বা হোমোলোগাস ক্রোমোজোম কাকে বলে?
ডিপ্লয়েড (2n) কোশে বিন্যস্ত সম-আকৃতি, সমদৈর্ঘ্য ও সম জিনসজ্জা-বিশিষ্ট, পিতা ও মাতা প্রত্যেকের থেকে একটি করে পাওয়া, মোট একজোড়া একই প্রকার ক্রোমোজোমকে বলা হয় সমসংস্থ বা হোমোলোগাস ক্রোমোজোম।

ডায়াড কাকে বলে? মোনাড বলতে কী বোঝ?
ডায়াড –
একটি ক্রোমোজোমে DNA রেপ্লিকেশন বা দ্বিত্বকরণের পর দুটি সিস্টার ক্রোমাটিড যুক্ত যে গঠন দেখা যায় তাকে ডায়াড বলে। এটি প্রোফেজ ও মেটাফেজ দশায় দেখা যায়।
মোনাড –
ক্রোমোজোমের একক ক্রোমাটিড গঠনকে বলে মোনাড। এটি অ্যানাফেজ দশায় দেখা যায়।
বাইভ্যালেন্ট কাকে বলে? টেট্রাড কাকে বলে?
বাইভ্যালেন্ট –
মিয়োসিস I কোশ বিভাজনের প্রোফেজ I -এ জোড়বদ্ধ সমসংস্থ ক্রোমোজোমকে বাইভ্যালেন্ট বলে।
টেট্রাড –
মিয়োসিস I কোশ বিভাজনের প্রোফেজ I -এ সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়া বা বাইভ্যালেন্টের প্রতিটি ক্রোমোজোম বিভক্ত হয়ে দুটি করে ক্রোমাটিড গঠন করলে চারটি ক্রোমাটিডসহ বাইভ্যালেন্টকে টেট্রাড বলে।
সাইন্যাপসিস বা সিনডেসিস কাকে বলে? এর গুরুত্ব কী?
সাইন্যাপসিস –
মিয়োসিসের প্রোফেজ I দশায় হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের জোড় বাঁধাকে সাইন্যাপসিস বলে। সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স এই জোড় বাঁধায় সাহায্য করে।
সাইন্যাপসিসের গুরুত্ব –
সাইন্যাপসিস -এর মাধ্যমে ‘X’ আকৃতির কায়াজমা গঠন সৃষ্টি হয় ও ক্রসিং ওভার ঘটে।
সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স কী? এর গুরুত্ব কী?
সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স –
মিয়োসিসের সময় দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের জোট বাঁধার জন্য তাদের মাঝে যে প্রোটিনযুক্ত তন্তুময় গঠন তৈরি হয়, তাকে সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স বলে।
সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স -এর গুরুত্ব –
দুটি ক্রোমোজোমের ক্রসিং ওভারের জন্য জোড় বাঁধতে এটি সাহায্য করে।
ক্রসিং ওভার কাকে বলে?
মিয়োসিসের প্রথম প্রোফেজে বাইভ্যালেন্টের নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয়ের মধ্যে ক্রোমোজোমীয় অংশের পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন জিনগত বিন্যাস সৃষ্টি হয়। এইভাবে ক্রোমোজোমীয় অংশের বিনিময় ঘটে নতুন জিন বিন্যাস সৃষ্টির ঘটনাকে ক্রসিং ওভার বলে। এই পুনর্বিন্যাস জীবের মধ্যে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব হয় যা জীবের বিবর্তনে সাহায্য করে।
ক্রসিং ওভারের গুরুত্ব লেখো।
ক্রসিং ওভারে ক্রোমাটিড অংশের খণ্ড বিনিময় ঘটে। ফলে জননকোশে ভেদ বা প্রকরণ সৃষ্টি হয়। এই কারণে জীবকে অভিযোজনে সাহায্য করে এবং জীবের অভিব্যক্তি ঘটায়।
মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস ও ক্রোমাটিডের মধ্যে খণ্ড বিনিময় ঘটে -এই ঘটনা দুটির তাৎপর্য কী কী তা বিশ্লেষণ করো।
ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসের তাৎপর্য –
মিয়োসিস কোশ বিভাজনের সময় ক্রোমোজেম সংখ্যা হ্রাস পায় বলে জননকোশে, অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক n হয়। শুক্রাণু (n) ও ডিম্বাণু (n) -এর নিষেকের ফলে জাইগোটে ক্রোমোজোম সংখ্যা পুনরায় 2n বা ডিপ্লয়েড হয়ে যায়। অর্থাৎ মিয়োসিসে ক্রোমোজোম হ্রাসকরণ বা হ্যাপ্লয়েড হয়ে যাওয়ার জন্য জীবের জীবনচক্রে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ধ্রুবক থাকে।
ক্রোমাটিডের মধ্যে খণ্ড বিনিময়ের তাৎপর্য –
ক্রসিং ওভারের ফলে নতুন জিনগত পুনর্বিন্যাস ঘটে। এর ফলে প্রকরণ সৃষ্টি হয়। ক্রসিং ওভার প্রমাণ করে যে, ক্রোমোজোমে জিন (তথা অ্যালিল) গুলি সরলরৈখিকভাবে অবস্থান করে।
নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মাইটোসিস কোশ বিভাজনের ক্যারিওকাইনেসিসের দশাগুলি শনাক্ত করো। (1) ক্রোমোজোমগুলির কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর অবস্থান ও নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জা (2) বেমতন্তুর বিলুপ্তি (3) নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ④ অপত্য ক্রোমোজোমের কোশের বিপরীত মেরুতে গমন।
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দশাগুলি হল –
বৈশিষ্ট্য | ক্যারিওকাইনেসিসের দশা |
ক্রোমোজোমগুলির কোশের বিষুব অঞ্চল বরাবর অবস্থান ও নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জা। | মেটাফেজ দশা। |
বেমতন্তুর বিলুপ্তি। | টোলোফেজ দশা। |
নিউক্লীয় পর্দা ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি। | প্রোফেজ দশা। |
অপত্য ক্রোমোজোমের কোশের বিপরীত মেরুতে গমন। | অ্যানাফেজ দশা। |
কায়াজমা কী?
ক্রসিং ওভারের সময়ে বাইভ্যালেন্ট ক্রোমোজোম জোড়ার দুটি নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডের একটি অপরটির ওপর দিয়ে যাবার সময়ে ক্রসিংওভার বিন্দুগুলিতে X আকৃতিবিশিষ্ট যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাদের কায়াজমা বলে (একবচনে কায়াজমাটা)। এদের গ্রিক বর্ণ কাই -এর মতো দেখায় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়।
ডিসজাংশন কাকে বলে? এটি কখন ঘটে?
ডিসজাংশন –
কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিডের বেমতন্তুর সংকোচনে সেন্ট্রোমিয়ার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে বলে ডিসজাংশন।
ডিসজাংশনের সংঘটনকাল –
এটি মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশার শুরুতে ঘটে থাকে।
মাইটোটিক মিয়োসিস কাকে বলে?
মিয়োসিসের দ্বিতীয় বিভাজন (মিয়োসিস II) দ্বারা প্রথম বিভাজনে (মিয়োসিস I) উৎপন্ন হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোশগুলি সমবিভাজিত হয়। এই কারণে মিয়োসিসের দ্বিতীয় বিভাজনকে মাইটোটিক মিয়োসিস বলা হয়।
মিয়োসিস I -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো।
মিয়োসিস I -এ ক্রোমোজোমের ক্রসিং ওভার ঘটে ও তারা পৃথক হয়ে বিপরীত মেরুতে গমন করে এবং n সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত দুটি নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে। ক্রোমোজোম সংখ্যার হ্রাসপ্রাপ্তি (2n → n) হল মিয়োসিস I -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
মিয়োসিস II -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো।
মিয়োসিস II প্রকৃতপক্ষে মাইটোসিসের অনুরূপ। এক্ষেত্রে n সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট দুটি কোশ থেকে দুটি করে মোট চারটি অপত্য কোশ (n) উৎপন্ন হয়। এর অন্তর্গত অ্যানাফেজ II -তে ক্রোমাটিডের পৃথককরণ ঘটে থাকে।
মিয়োসিস কোশ বিভাজনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো যা মাইটোসিস কোশ বিভাজনে অনুপস্থিত।
- মিয়োসিস কোশ বিভাজনে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পায়, মাইটোসিসে তা সমান থাকে।
- মিয়োসিস কোশ বিভাজনে ক্রসিং ওভার ঘটে যা জীবে প্রকরণ সৃষ্টি করে, মাইটোসিসে তা ঘটে না।
ইনটারকাইনেসিস কাকে বলে?
মিয়োসিস I এবং মিয়োসিস II -এর অন্তর্বর্তী ক্ষণস্থায়ী দশাকে ইনটারকাইনেসিস বলে। তবে এই দশায় ইনটারফেজের মতো DNA সংশ্লেষ ঘটে না।
একটি কোশের নিউক্লিয়াসে 24টি ক্রোমোজোম আছে। অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে – (1) মাইটোসিস কোশ বিভাজনের পরে (2) প্রথম মিয়োসিস বিভাজনের পরে (3) দ্বিতীয় মিয়োসিস বিভাজনের পরে?
কোশের নিউক্লিয়াসে 24টি ক্রোমোজোম আছে। অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা –
- মাইটোসিস কোশ বিভাজনের পরে 24টিই থাকবে।
- প্রথম মিয়োসিস বিভাজনের পরে 12টি হবে।
- দ্বিতীয় মিয়োসিস বিভাজনের পরে 12টি হবে।
প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষায় মিয়োসিসের ভূমিকা লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন, মিয়োসিস কীভাবে প্রজাতির ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক রাখে?
মিয়োসিস কোশ বিভাজনে জনন কোশ তৈরি হয়। নিষেকের পর তা নতুন বংশধর তৈরি করে। এই অপত্য বৃদ্ধি পেয়ে পরিণত হলে পুনরায় মিয়োসিস দ্বারা জনন কোশ সৃষ্টি করে, যা পুনরায় নিষেক দ্বারা নতুন বংশধর তৈরি করে। অর্থাৎ জীবের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে মিয়োসিসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোশীয় অঙ্গাণুর বংশানুশরন মাতৃকোষীয় – ব্যাখ্যা করো।
ডিম্বাণু সৃষ্টির সময় মিয়োসিসে কোশীয় অঙ্গাণুর দ্বিত্বকরণ ঘটে ও তা অপত্য ডিম্বাণু কোশে প্রবেশ করে। শুক্রাণুর কেবলমাত্র নিউক্লিয়াসের অন্তর্গত ক্রোমোজোম নিষেকের সময় ডিম্বাণুতে প্রবেশ করে। অর্থাৎ নিষেকে সৃষ্ট ভ্রূণাণু বা জাইগোটে কোশীয় অঙ্গাণু সরবরাহ করে ডিম্বাণু, শুক্রাণু নয়। তাই কোশীয় অঙ্গাণু আমরা মায়ের (ডিম্বাণু) থেকেই পেয়ে থাকি।
মাইটোসিস ও মিয়োসিস I -এর অ্যানাফেজ দশার পার্থক্য লেখো।
মাইটোসিসের অ্যানাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড বিপরীত মেরুতে গমন করে। কিন্তু মিয়োসিস I -এর অ্যানাফেজ দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোম দুটি বিপরীত মেরুতে গমন করে।
প্রোফেজ ও টেলোফেজের ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী পরিবর্তন ঘটে। – এরূপ দুটি বিপরীতধর্মী পরিবর্তন লেখো।
- প্রোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস ও নিউক্লীয় পর্দা বিলুপ্ত হয়। টেলোফেজ দশায় নিউক্লিওলাস ও নিউক্লীয় পর্দা পুনরায় আবির্ভূত হয়।
- প্রোফেজ দশায় ক্রোমাটিন জালিকা কুণ্ডলীকৃত ও ঘনীভূত হয়ে ক্রোমোজোম আবির্ভূত হয়। টেলোফেজ দশায় তা থেকে পুনরায় নিউক্লীয় জালিকা সৃষ্টি হয়।
ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস -এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | ক্যারিওকাইনেসিস | সাইটোকাইনেসিস |
বিভাজন স্থান | নিউক্লিয়াসের বিভাজন। | সাইটোপ্লাজমের বিভাজন। |
উপদশার উপস্থিতি | নিউক্লিয়াস চারটি উপদশার মাধ্যমে বিভাজিত হয়। | কোনো উপদশা থাকে না, সরাসরি বিভাজিত হয়। |
সময় ও জটিলতা | বেশি সময় লাগে ও প্রক্রিয়াটি জটিল। | কম সময় লাগে ও প্রক্রিয়াটি কম জটিল। |
ফলাফল | দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়। | দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। |
সাইন্যাপস ও সাইন্যাপসিস -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
সাইন্যাপস ও সাইন্যাপসিস -এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | সাইন্যাপস | সাইন্যাপসিস |
অবস্থান | দুটি স্নায়ুর প্রবর্ধকের মধ্যে সৃষ্টি হয়। | দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের মধ্যে মিয়োসিসের সময় সৃষ্টি হয়। |
সংস্পর্শ | স্নায়ু দুটির মধ্যে সংস্পর্শ থাকে না। | সাইন্যাপসিসে ক্রোমোজোম দুটি সংস্পর্শে আসে ও সাইন্যাপটোনিমাল কমপ্লেক্স দ্বারা সংযুক্ত থাকে। |
ক্ষরণ বস্তু | সাইন্যাপসে নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরিত হয়। | সাইন্যাপসিসে ক্ষরণগত উপাদান নেই। |
কাজ | স্নায়ু উদ্দীপনা প্রেরণে সাহায্য করে। | ক্রসিং ওভার হতে সাহায্য করে। |
মিয়োসিস I ও মিয়োসিস II -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
মিয়োসিস I ও মিয়োসিস II -এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | মিয়োসিস I | মিয়োসিস II |
ক্রোমোজোম সংখ্যা | সমসংস্থ ক্রোমোজোমের পৃথককরণ ঘটে। ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক (n) হয়ে যায়। | n সংখ্যক ক্রোমোজোমের প্রতিটির ক্রোমাটিডের পৃথককরণ ঘটে, যা পুনরায় ক্রোমোজোম তৈরি করে, ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান থাকে। |
ক্রসিং ওভার | সম্পন্ন হয়। | সম্পন্ন হয় না। |
মিয়োসিস II ও মাইটোসিস কোশ বিভাজনের পার্থক্য লেখো।
মিয়োসিস II ও মাইটোসিসের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | মিয়োসিস II | মাইটোসিস |
দশা | নিউক্লিয়াস বিভাজনের চারটি দশা, যথা – প্রোফেজ II, মেটাফেজ II, অ্যানাফেজ II ও টেলোফেজ II | নিউক্লিয়াস বিভাজনের চারটি দশা, যথা – প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ। |
ক্রোমাটিড পৃথককরণ | প্রতিটি ক্রোমোজোমের সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি অ্যানাফেজ II -তে পৃথক হয়ে গিয়ে অপত্য নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজোম রূপে বিন্যস্ত হয়। | প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডগুলি অ্যানাফেজ দশায় পৃথক হয়ে যায় ও নতুন ক্রোমোজোম সৃষ্টি করে। |
ক্রোমোজোম সংখ্যা | মিয়োসিস I -এ ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক (n) হয়ে যায়। ফলে মিয়োসিস II -তে n -সংখ্যক ক্রোমোজোম অংশগ্রহণ করে। | মাইটোসিস দেহকোশে (2n) ঘটে, ফলে এতে 2n সংখ্যক ক্রোমোজোম অংশ নেয়। |
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘কোশ বিভাজন ও কোশচক্র‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন