এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়, ‘সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)’ অধ্যায়ের কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন
ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন
Contents Show

আলেকজান্ডার কে ছিলেন? তাঁর ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

অথবা, আলেকজান্ডার কোন্ সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে অভিযান করেছিলেন এবং কেন?

আলেকজান্ডার ছিলেন গ্রিসের ম্যাসিডনের শাসক। খ্রিস্টপূর্ব 300 অব্দ নাগাদ তিনি ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন।

সম্রাট আলেকজান্ডার
সম্রাট আলেকজান্ডার

আলেকজান্ডারের অভিযান

  • ভারতীয় উপমহাদেশে অভিযান – ভারতীয় উপমহাদেশের বহু ছোটো-বড়ো শাসকদের সঙ্গে আলেকজান্ডারের যুদ্ধ হয়েছিল। এদের মধ্যে এলডার পোরোস বা রাজা পুরু ছিলেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পুরুর সঙ্গে আলেকজান্ডারের যুদ্ধ ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। পুরু রাজত্ব করতেন ঝিলাম ও চেনাব নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে। পুরু এক বিরাট বাহিনী নিয়ে আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আলেকজান্ডারের বাহিনীর কাছে তিনি পরাজিত হন।
  • আলেকজান্ডারের ফিরে যাওয়া – ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় তিনবছর আলেকজান্ডার ছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব 325 অব্দে তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান। পশ্চিম এশিয়া হয়ে গ্রিসে ফিরে যাওয়ার সময় ব্যাবিলনে তাঁর মৃত্যু ঘটে।
  • ফলাফল – ভারতীয় উপমহাদেশে আলেকজান্ডার পাঞ্জাব পর্যন্ত অগ্রসর হতে পেরেছিলেন। তবে তাঁর অভিযানের ফলে উপমহাদেশের ছোটো ছোটো রাজ্যগুলির ক্ষমতা কমে গিয়েছিল।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট বলা হয় কেন? অথবা, তাঁর রাজ্যবিস্তার নীতি সম্পর্কে কী জানো?

মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। মিলিন্দপঞ্চহো গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, তিনি কৌটিল্যকে সঙ্গে নিয়ে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং নন্দবংশের শেষ রাজা ধননন্দকে পরাজিত করে পাটলিপুত্র দখল করেন।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজ্যবিস্তার নীতি

  • রাজ্যবিস্তার – আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ ত্যাগ করে চলে গেলে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের শাসকগণ চন্দ্রগুপ্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সিংহাসনে বসেই চন্দ্রগুপ্ত এই বিদ্রোহ দমন করেন। গ্রিক সেনাপতি সেলিউকাস ভারতে আধিপত্য বিস্তারে উদ্যোগী হলে তাঁর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। যুদ্ধে সেলিউকাস পরাজিত হন। চন্দ্রগুপ্ত সেলিউকাসের কন্যাকে বিবাহ করেন। ফলে কাবুল, কান্দাহার ও হিরাটে মগধ সাম্রাজ্য বিস্তারলাভ করে।
  • রাজ্যসীমা – চন্দ্রগুপ্তের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্য পূর্বে বঙ্গদেশ থেকে উত্তর-পশ্চিমে সৌরাষ্ট্র ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা পর্যন্ত এবং উত্তরের হিমালয় থেকে দক্ষিণে তিনেভেলি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে দক্ষিণ ভারত চন্দ্রগুপ্তের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ঐতিহাসিক ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মনে করেন যে, দক্ষিণ ভারত আগে থেকেই নন্দরাজাদের অধিকারে ছিল।
মৌর্য সাম্রাজ্যের মানচিত্র
মৌর্য সাম্রাজ্যের মানচিত্র

মূল্যায়ন – এইভাবে চন্দ্রগুপ্তের বাহুবলে প্রাচীন ভারতে। সর্বপ্রথম রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই ঐতিহাসিক ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী চন্দ্রগুপ্তকে ‘ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা’ বলে অভিহিত করেছেন।

জেনে রাখো – মগধ সাম্রাজ্যের বংশকম –

বংশপ্রথম রাজাশ্রেষ্ঠ রাজাশেষ রাজা
ক. হর্যঙ্কবিম্বিসারবিম্বিসারনাগদশক
খ. শিশুনাগশিশুনাগশিশুনাগকালাশোক
গ. নন্দমহাপদ্মনন্দমহাপদ্মনন্দধননন্দ
ঘ. মৌর্যচন্দ্রগুপ্ত মৌর্যঅশোকবৃহদ্রথ
ঙ. শুঙ্গপুষ্যমিত্রদেবভূমি
চ. কাণ্ববাসুদেব
ছ. গুপ্তশ্রীগুপ্তসমুদ্রগুপ্তবিষ্ণুগুপ্ত

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কীভাবে মগধকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলেন?

অথবা, মৌর্য সাম্রাজ্য গঠনে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্ব বিশ্লেষণ করো।

মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। তিনি তাঁর বাহুবল ও বুদ্ধি দিয়ে মগধকে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্ব

  • গ্রিকদের সঙ্গে যুদ্ধ – চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সিংহাসনে বসেই গ্রিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তিনি যুদ্ধে সেলিউকাসকে পরাজিত করেন। ফলে কাবুল, কান্দাহার, হিরাট প্রভৃতি অঞ্চল মৌর্য সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এ ছাড়া তিনি সেলিউকাসের মেয়েকে বিবাহ করেন।
  • অন্যান্য রাজ্য জয় – তিনি সৌরাষ্ট্র জয় করেন। কোঙ্কনের অংশ বিশেষ তিনি জয় করেন। সম্ভবত তাঁর সাম্রাজ্য দক্ষিণে চিতল দুর্গ ও তিনেভেলি পর্যন্ত বিস্তারলাভ করেছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশেও তাঁর বিজয়রথ পৌঁছেছিল।
  • রাজ্যসীমা – এইভাবে তিনি একটার পর একটা রাজ্য জয় করে মগধকে এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে তিনেভেলি এবং পশ্চিমে গুজরাট থেকে পূর্বে বাংলাদেশ পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারলাভ করে।

মূল্যায়ন – চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য শুধু রাজ্য বিজেতাই নন, তিনি সুশাসকও ছিলেন। তিনি একটি কেন্দ্রীভূত মৌর্য। শাসনব্যবস্থাও গড়ে তোলেন। ফলে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

বংশবিন্দুসার কবে রাজা হন? অশোক কোন্ কোন্ জায়গায় সাম্রাজ্য ধরে রাখেন? অশোকের ধম্ম-এর প্রধান দিক কী কী ছিল?

বিন্দুসার রাজা হন খ্রিস্টপূর্ব 300 অব্দে।

অশোক উত্তরে আফগানিস্তান থেকে দক্ষিণে কর্ণাটক, পশ্চিমে কাথিয়াবাড় থেকে পূর্বে কলিঙ্গ পর্যন্ত সাম্রাজ্য ধরে রাখেন।

অশোকের ধম্ম – কলিঙ্গ যুদ্ধের পর সম্রাট অশোক যুদ্ধ বিজয় নীতি ত্যাগ করে মানুষের মন ভালোবাসার দ্বারা জয় করার জন্য ধর্ম বিজয় নীতি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।

  • আদর্শ – তাঁর ধম্ম বা ধর্মের মূল কথাই ছিল অহিংসা ও শান্তি। সেজন্য তিনি কলিঙ্গ যুদ্ধের পর দ্বিতীয়বার অস্ত্রধারণ করেননি।
  • পালনীয় কর্তব্য – তাঁর ধর্মের পালনীয় কর্তব্যগুলি ছিল – প্রাণী হত্যা না করা, জীবিত প্রাণীর ক্ষতি না করা, পিতা – মাতার সেবা করা, বয়স্কদের শ্রদ্ধা করা, দাসদের প্রতি উদারতা দেখানো, অল্প ব্যয় ও সঞ্চয় করা ইত্যাদি।
  • ধর্মযাত্রা – বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ ও পাটলিপুত্রে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির পর তিনি ধর্মযাত্রা শুরু করেন। দেশ-বিদেশে দূত প্রেরণ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন। অনেক স্তূপ ও বৌদ্ধমঠ নির্মাণ করেন।

এসব কারণে ঐতিহাসিক স্মিথ তাঁকে ‘মানবজাতির শ্রেষ্ঠ ধর্মগুরু’ বলে অভিহিত করেছেন।

কৌটিল্য/অর্থশাস্ত্র – টীকা লেখো।

কৌটিল্যের আসল নাম ছিল বিষুগুপ্ত। সম্ভবত তাঁর অপর নাম ছিল চাণক্য। তিনি তক্ষশিলায় এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম জীবনে তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।

নন্দবংশের উচ্ছেদ জানা যায় যে, তক্ষশিলার এই চতুর ব্রাহ্মণ মগধরাজ ধননন্দ কর্তৃক অপমানিত হলে তিনি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধননন্দকে পরাজিত করে নন্দ বংশের উচ্ছেদ করেন এবং মৌর্য রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

কৌটিল্য বা চাণক্য
কৌটিল্য বা চাণক্য

অর্থশাস্ত্র রচনা – তিনি অর্থশাস্ত্র রচনা করেন। গ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক নাগাদ গ্রন্থটির কিছু অংশ লেখা হয়েছিল। তবে খ্রিস্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতক নাগাদ এই গ্রন্থটির লেখার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল। যদিও এই গ্রন্থের রচনাকার কে ছিলেন তা নিয়ে। ঐতিহাসিক ব্যাসাম, কিথ প্রমুখ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতিতে রাজাদর্শ ছিল যে, শক্তিমান মাত্রই যুদ্ধ করবে এবং শত্রু নিপাত করবে। অর্থশাস্ত্র শুধু রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ নয় এতে সমকালীন রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজ, অর্থনীতি প্রভৃতির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

মন্তব্য – কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক তথা রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক জ্ঞানের জন্য অনেকে কৌটিল্যকে ‘ভারতের মেকিয়াভেলি’ রূপে চিহ্নিত করেছেন।

অর্থশাস্ত্রের লেখক কে? অর্থশাস্ত্র থেকে আমরা কী কী বিষয়ে জানতে পারি?

অর্থশাস্ত্রের লেখক হলেন কৌটিল্য বা চাণক্য, যাঁর প্রকৃত নাম ছিল বিষ্ণুগুপ্ত।

  • অর্থশাস্ত্র – অর্থশাস্ত্র থেকে জানতে পারি একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা কেমন হবে। রাজা কী কী কর্তব্য পালন করবেন এবং রাষ্ট্রের অর্থনীতি বিষয়ে নানান তথ্য।
  • শাসনব্যবস্থা – কৌটিল্য রাষ্ট্রের 7টি অঙ্গের কথা বলেছেন। যেমন-রাজা, আমলা, দুর্গ, অর্থভাণ্ডার ইত্যাদি। এগুলিকে সপ্তাঙ্গতত্ত্ব বলা হয়। তিনি বলেছেন রাষ্ট্র হবে। বৃহদাকার এবং তার শাসনব্যবস্থা হবে ধর্মনিরপেক্ষ। এর সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবেন রাজা।
  • রাজার কাজ – তিনি বলেছেন একজন রাজা হবেন ন্যায়পরায়ণ, তবে শত্রু দমন করার জন্য অস্ত্র ধারণ করবেন। তাঁর প্রধান কাজ হবে প্রজাকল্যাণ করা। তিনি প্রজাদের নিরাপত্তা দেবেন, পুরোহিতদের নিয়োগ করবেন, ন্যায়বিচার করবেন ইত্যাদি।
  • আর্থ-সামাজিক দিক – তিনি বলেছেন রাষ্ট্রের অর্থনীতি হবে আত্মনির্ভরশীল। রাজ্য চালানোর জন্য সরকার প্রজাদের কাছ থেকে কর আদায় করবে। রাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে উদারনীতির ভিত্তিতে। সরকার কৃষির উন্নতিতে সর্বদা সজাগ থাকবে ইত্যাদি।
  • উপসংহার – রাষ্ট্র সম্পর্কিত উন্নত চিন্তাভাবনার দরুন অনেকেই তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সেকারণে তাঁকে ‘ভারতের মেকিয়াভেলি’ বলা হয়।

সম্রাট অশোককে ভারতের শ্রেষ্ঠ সম্রাট বলা হয় কেন?

অথবা, সম্রাট অশোক ইতিহাসে মহান কেন?

অথবা, মৌর্য যুগের শ্রেষ্ঠ রাজা অশোক সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন অশোক। তিনি তাঁর নানান জনকল্যাণমূলক কাজের জন্যই এই শ্রেষ্ঠত্বের উপাধি লাভ করেন।

ভারতের শ্রেষ্ঠ সম্রাট অশোকের কৃতিত্ব

  • কলিঙ্গ যুদ্ধ – মগধের সিংহাসনে বসেই সম্রাট অশোক কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমণ ও জয় করেন। কিন্তু এই যুদ্ধে বহু মানুষ হতাহত হয়, সম্পত্তি বিনষ্ট হয়, মানুষের রক্তের স্রোত বয়ে যায়। এই বিভীষিকা দেখে অশোক দারুণ ব্যথিত হন। ঠিক করেন তিনি আর কখনও যুদ্ধ করবেন না।
  • ধর্মবিজয় নীতি – কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধ বিজয় নীতি ত্যাগ করে ধর্ম বিজয় নীতি গ্রহণ করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল অস্ত্রের বদলে মানুষের মন ভালোবাসার দ্বারা জয় করা। তাই তিনি বলেছিলেন মগধের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি যেন নির্ভয়ে রাজ্য শাসন করে। পাটলিপুত্রে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির পর তিনি দূরবর্তী রাজ্যগুলির (সিরিয়া, গ্রিস, সিংহল) সঙ্গে দূত বিনিময় করেন।
  • প্রজাকল্যাণ ব্রত – তিনি ঘোষণা করেন ‘সব মুনিষে পজা মম’ অর্থাৎ, সকল প্রজাই তাঁর সন্তান। প্রজারা যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে তার জন্য তিনি রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ করেন। রাস্তার দুধারে বৃক্ষরোপণ করেন। দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রজারা যাতে নির্বিঘ্নে ধর্মাচরণ করতে পারে তার জন্য ধর্মমহামাত্র নামক রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন।
  • সুশাসন প্রতিষ্ঠা – তিনি বিচারব্যবস্থায় ‘দণ্ড সমতা’ ও ‘ব্যবহার সমতা’ নীতি প্রয়োগ করেন। বিচারব্যবস্থা থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেন। তিনি প্রত্যেক অভিষেক বার্ষিকীতে বন্দিদের মুক্তি দেবার ব্যবস্থা নেন।
  • অন্যান্য নীতি – তিনি ছিলেন অহিংসার পূজারী। তাই তিনি পশুহত্যা ও জীবিত পশুপাখির ক্ষতি করা বন্ধ করেন। তিনি স্বয়ং শিকার অভিযান বন্ধ করেন। ধম্মপ্রচারের জন্য তিনি অনেক লিপি উৎকীর্ণ করেন, স্তূপ ও চৈত্য প্রতিষ্ঠা করেন। ‘গুরুনাম অপচিতি’ ঘোষণা দ্বারা গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কথা বলেন।

মূল্যায়ন – এইসব মানবদরদি, পশুদরদি ও শান্তিবাদী নীতির জন্য সম্রাট অশোক ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। একারণে ঐতিহাসিক স্মিথ তাঁকে ‘মানবজাতির প্রথম ধর্মগুরু’ বলে অভিহিত করেছেন।

অশোকের ধর্মবিজয় নীতি সম্পর্কে কী জানো?

অথবা, তুমি কি মনে করো ধম্ম অশোকের শাসনকে প্রভাবিত করেছিল? যুক্তি দাও।

মানবতাবাদী ও অহিংসার পূজারি সম্রাট অশোক যুদ্ধবিজয় নীতি ত্যাগ করে ধর্মবিজয় নীতি ও প্রজাকল্যাণের ব্রত গ্রহণ করেছিলেন।

  • মানসিক পরিবর্তন – কলিঙ্গ যুদ্ধের নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও স্বজনহারা মানুষের কান্না তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। তিনি অনুশোচনায় দগ্ধ হন। এরপর তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উপগুপ্তের নিকট বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন এবং তারপর থেকে অহিংসা ও শান্তির পথে হাঁটা শুরু করেন। তাই কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক আর দ্বিতীয়বার অস্ত্রধারণ করেননি, বরং ধর্মবিজয় নীতি দ্বারা তিনি মানুষের মন জয় করতে উদ্যোগী হন।
  • ধর্মবিজয় – পাটলিপুত্রে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতির পর তিনি ধর্মযাত্রা ও ধর্মবিজয় নীতি অনুসরণ করেন। পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে তিনি তাঁর ধর্মদূত প্রেরণ করেন। একই উদ্দেশ্যে সিংহলে পাঠান নিজের কন্যা সংঘমিত্রা ও পুত্র মহেন্দ্রকে সিংহলরাজ তিষ্য বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। নেপালে তিনি অনেক বৌদ্ধ মঠ নির্মাণ করেন। এ ছাড়া আফ্রিকা, সিরিয়া, ইজিপ্ট, সাইরিন ও গ্রিসে (এপিরাস) তিনি অনুরূপ ধর্মদূত প্রেরণ করেন। এ ছাড়া তিনি ভারতের মধ্যে বসবাসকারী প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে (যেমন – চের, পান্ড্য, সত্যপুত্র) অভয় দিয়েছিলেন যে, তাঁরা যেন নির্ভয়ে রাজ্যশাসন পরিচালনা করেন।

সম্রাট অশোকের জনকল্যাণমূলক কাজের পরিচয় দাও।

অথবা, অশোককে কেন প্রজাহিতৈষী সম্রাট বলা হয়?

সম্রাট অশোক তাঁর বিভিন্ন প্রজাকল্যাণমূলক কাজের জন্য ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর মানুষের মন জয় করার জন্য তিনি যুদ্ধ বিজয়নীতি ত্যাগ করে ধর্মবিজয় নীতি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন প্রজাকল্যাণমূলক কর্মসূচি নিয়েছিলেন। সেগুলি হল –

  • রাস্তাঘাট নির্মাণ – পথিকদের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি নজর রেখে তিনি বহু রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। বৃক্ষরোপণ ও সরাইখানা নির্মাণ: রাস্তার দু-ধারে বৃক্ষরোপণ, কূপ খনন, সরাইখানা নির্মাণ করেন।
  • চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা – তিনি মানুষের চিকিৎসার জন্য যেমন চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তেমনই পশুদের জন্য অনুরূপ চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। তিনি তাঁর প্রজাগণকে বলতেন “সব মানুষই আমার সন্তান”।
  • প্রাণী হত্যা বন্ধ – তিনি যথেচ্ছভাবে প্রাণী হত্যা বন্ধ করার জন্য ঘোষণা করেছিলেন – ‘অনারম্ভ প্রাণনাম’ (প্রাণী হত্যা না করা) এবং ‘অভিহিশা ভূতানম’ (জীবিত প্রাণীর ক্ষতি না করা)। তিনি স্বয়ং পশু শিকার অভিযান বন্ধ করেছিলেন।

মেগাস্থিনিসের বিবরণ বা ইন্ডিকা গ্রন্থ থেকে সমকালীন ভারতবর্ষের সমাজজীবন সম্পর্কে কী জানা যায়?

সিরিয়ার রাজা সেলিউকাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মেগাস্থিনিস মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের রাজদরবারে উপস্থিত হন। মেগাস্থিনিস ছিলেন প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রদূত।

ভারতবর্ষের সমাজজীবন সম্পর্কে ইন্ডিকা গ্রন্থের বিবরণ

ভারতবর্ষ সম্পর্কে তিনি ইন্ডিকা নামক একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থটি প্রাচীন, ভারতের একটি অমূল্য প্রামাণ্য দলিল। মৌর্য যুগের ইতিহাস জানতে গেলে এই।

গ্রন্থের ওপর বিশেষ নির্ভর করতে হয়। মৌর্য যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য এই গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়।

এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় মৌর্যদের রাজধানী পাটলিপুত্রের সমৃদ্ধির কথা। সে সময় পাটলিপুত্র ছিল ভারতের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য নগরী। সেযুগে সমাজের নৈতিকমানও ছিল খুব উঁচু। চুরি, ডাকাতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। তিনি সমাজের 7টি শ্রেণির কথা উল্লেখ করেছেন। এই সময় সমাজে নারী স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছিল বলে জানা যায়। এ ছাড়া ইন্ডিকা গ্রন্থ থেকে মৌর্য যুগের বহু তথ্য পাওয়া যায়।

টুকরো কথা – পাটলিপুত্রের নগর পরিকল্পনা মেগাস্থিনিসের চোখে ভারতে গ্রিক শাসক সেলিউকাসের দূত হয়ে মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজদরবারে আসেন। তিনি ইন্ডিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থ থেকে পাটলিপুত্র ও এই নগরের শাসন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। ইন্ডিকা থেকে জানা যায় পাটলিপুত্রে উন্নত পৌরশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। 30 জন সদস্য নিয়ে একটি পৌরবোর্ড ছিল। এর অধীন ছিল 5 জন সদস্যবিশিষ্ট 6টি দফতর। এদের কাজ ছিল শিল্প পরিচালনা, বিদেশি আপ্যায়ন, ব্যাবসাবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, জন্ম-মৃত্যুর হিসাব রাখা, শুল্ক আদায় ইত্যাদি।

অশোকের ধম্ম তাঁর শাসনব্যবস্থাকে কতটা প্রভাবিত করেছিল?

অথবা, সাম্রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে অশোক তাঁর ধম্মনীতিকে কীভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন?

অথবা, কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলাফল ছিল অশোকের ধম্ম-যুক্তিসহ মন্তব্যটি আলোচনা করো।

অথবা, কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলাফলের সঙ্গে অশোকের ধর্মের কী সম্পর্ক?

সম্রাট অশোক সিংহাসনে বসার 8 বছর পর মগধের পার্শ্ববর্তী রাজ্য কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। কিন্তু এই যুদ্ধের নারকীয় হত্যালীলা, স্বজনহারা মানুষের কান্না, যুদ্ধের ভয়াবহতা তথা তাণ্ডব লীলা দেখে তিনি অনুশোচনায় দগ্ধ হন। এই ঘটনা তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি জীবনে আর কোনো যুদ্ধ করবেন না। তাই কলিঙ্গ যুদ্ধই ছিল তাঁর জীবনের প্রথম ও শেষ যুদ্ধ।

দেশশাসনে তাঁর ধর্মনীতির প্রয়োগ

কলিঙ্গ যুদ্ধের পর সম্রাট অশোক যুদ্ধ বিজয় নীতি ত্যাগ করে ধর্ম বিজয় নীতি গ্রহণ করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মন ভালোবাসার দ্বারা জয় করা।

  • রাজাদর্শ – অশোকের শাসনব্যবস্থার ভিত্তি ছিল অহিংসা, শান্তি ও প্রজাকল্যাণ মূলক আদর্শ। তিনি প্রচার করেন, সব মুনিষে পজা মম অর্থাৎ সব প্রজাই তাঁর সন্তান।
  • প্রজাকল্যাণ – তিনি প্রজাদের মঙ্গলের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। রাস্তার দুধারে বৃক্ষ রোপণ করেন, সরাইখানা। নির্মাণ করেন। শুধু তাই নয়, প্রজাদের চিকিৎসার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য বিদেশ থেকে ঔষধি গাছগাছড়া আনয়ন করেন।
  • বিচার ব্যবস্থা – সকল প্রজা যাতে সমান বিচার পায় তার জন্য দণ্ডসমতা ও ব্যবহার সমতা নীতি প্রয়োগ করেন। তিনি বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ড রদ করে দেন। রাজবন্দিদের মুক্ত করেন।
  • রাজকর্মচারী নিয়োগ – প্রজারা যাতে শান্তিতে ধর্মাচরণ করে ও বসবাস করতে পারে তার জন্য বেশ কিছু নতুন রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন। যেমন – রাজুক, ধর্মমহামাত্র, স্ত্রীমহামাত্র, ব্রজভূমিক প্রভৃতি।

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পাটলিপুত্রকে কেন্দ্র করে বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। সম্রাট অশোকের সময়ে মৌর্য শাসনব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। কিন্তু অশোকের মৃত্যুর 50 বছরের মধ্যে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত হয়।

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ

  • ব্রাহ্মণদের বিরোধিতা – মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য অশোকের বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্রাহ্মণ্য ধর্ম বিরোধী মনোভাবকে অনেকখানি দায়ী করা হয়। ধর্মমহামাত্র নামক রাজকর্মচারী নিয়োগ, দণ্ড সমতা, ও ব্যবহার সমতানীতি প্রয়োগ করে অশোক ব্রাহ্মণদের ক্ষমতা হ্রাস করেছিলেন।
  • অশোকের অহিংস নীতি – অনেকেই মৌর্যদের পতনের জন্য অশোকের অহিংস ধর্মনীতিকে দায়ী করে থাকেন। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। সম্রাটের ধর্ম বিজয়নীতি এবং অহিংস পররাষ্ট্র নীতির ফলে মৌর্য সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • আঞ্চলিক বিদ্রোহ – প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও দুষ্ট অমত্যদের অত্যাচারে জনগণ অতিষ্ট হয়ে পড়ে। এজন্য অশোকের সময় তক্ষশীলা ও উজ্জয়িনীতে জনবিক্ষোভ দেখা দেয়। তাঁর সময় সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। অশোকের পুত্র জলৌকা কাশ্মীরে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন। ক্রমে গান্ধার, বিদর্ভ প্রভৃতি রাজ্য স্বাধীন হয়ে পড়ে।
  • অর্থনৈতিক দুর্বলতা – মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়ে থাকে। সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন কৃষি কর থেকে মেটানো সম্ভব ছিল না। অশোক স্তূপ, বিহার ও বৌদ্ধমঠ – গুলি চালানোর জন্য প্রচুর অর্থ সেখানে দান করতেন। ফলে অচিরেই মৌর্য অর্থনীতিতে দারুণ চাপ পড়ে।
  • প্রশাসনিক দুর্বলতা – আমলাতন্ত্র ছিল কেন্দ্রমুখী। রাজা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমলাদের আনুগত্যের পরিবর্তন ঘটত। এতে রাষ্ট্রের সংহতি ক্ষুণ্ণ হত।

সম্রাট কনিষ্কের অবদান/কৃতিত্ব লেখো।

কুষাণ বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন কনিষ্ক। তিনি তাঁর সামরিক প্রতিভা ও সুশাসনের জন্যে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছেন।

কনিষ্কের মস্তকহীন মূর্তি
কনিষ্কের মস্তকহীন মূর্তি

কনিষ্কের কৃতিত্ব

  • রাজ্যবিস্তার – উত্তরাধিকার সূত্রে কনিষ্ক সিন্ধু, পাঞ্জাব, ব্যাকট্রিয়া, পার্সিয়া প্রভৃতি অঞ্চলের অধিকারী ছিলেন। জানা যায়, তিনি কাশ্মীর জয় করেছিলেন। তা ছাড়া তিনি কাশগড়, খোটান, ইয়ারখন্দ প্রভৃতি রাজ্য জয় করেন। অলবিরুনির বিবরণ অনুযায়ী তিনি আফগানিস্তান জয় করেছিলেন।
  • ধর্ম – তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আমলেই পুরুষপুরে চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি আহূত হয়। তাঁর আমলে বুদ্ধের মূর্তিপুজো শুরু হয়। এ ছাড়া তিনি অশোকের মতো বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন।
  • সংস্কৃতি – শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা ছিল। এজন্য তাঁর আমলে অনেক চৈত্য ও বৌদ্ধমঠ নির্মিত হয়। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় গন্ধার শিল্পের উদ্ভব হয়। তাঁর স্থপতি ছিলেন গ্রিক শিল্পী এজেসিলাস। তাঁর রাজসভা অলংকৃত করতেন যে সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁরা হলেন – সাহিত্যিক অশ্বঘোষ (যিনি বুদ্ধচরিত রচনা করেন) এবং বসুবন্ধু (যিনি মহাবিভাষা লেখেন)।

মূল্যায়ণ – প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে কণিষ্ক তথা কুষাণ যুগ ভারতে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব, ব্যাবসাবাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি ও শিল্পসংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য কৃতিত্বের সাক্ষ্য বহন করে। ঐতিহাসিক ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী বলেছেন যে, রাজ্য বিজেতার তুলনায় বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কণিষ্ক বেশি । খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

ভারতীয় উপমহাদেশে সাতবাহনরা কীভাবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল?

মৌর্যদের পর দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

ভারতীয় উপমহাদেশে সাতবাহনদের অধিকার প্রতিষ্ঠা

  • সিমুক – সাতবাহন বংশের প্রথম শাসক ছিলেন সিমুক। প্রতিষ্ঠান ও নানাঘাট এলাকায় তাঁর শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
  • প্রথম সাতকর্ণি – প্রথম সাতকর্ণি ছিলেন সাতবাহন বংশের তৃতীয় রাজা। তাঁর আমলে এই বংশের প্রভাব-প্রতিপত্তি। বেড়ে যায়। প্রায় সমগ্র দক্ষিণ ভারতে তিনি ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এসময় শক-সাতবাহন যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে শক শাসক নহপান জয়ী হন।
  • গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি – গৌতমীপুত্র সাতকর্ণির আমলে সাতবাহনদের ক্ষমতা পুনরায় ফিরে আসে। পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত এক বিরাট অঞ্চল তাঁর দখলে ছিল। মালবেও তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসময় শক-ক্ষত্রপ রুদ্রদামনের সঙ্গে সাতবাহনদের যুদ্ধ শুরু হয়। শক-সাতবাহন লড়াইয়ের পিছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ ছিল।
রাজা প্রথম সাতকর্ণি
রাজা প্রথম সাতকর্ণি

উপসংহার – ধীরে ধীরে দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন শাসনের অবসান ঘটে। ফলে তার জায়গায় বেশ কয়েকটি ছোটো ছোটো নতুন রাজবংশ গড়ে উঠেছিল।

রুদ্রদামন কে ছিলেন? তিনি কী উপাধি গ্রহণ। করেছিলেন? শক সাতবাহন লড়াইয়ের কারণ আলোচনা করো।

শক-ক্ষত্রপ গোষ্ঠীর বিখ্যাত শাসক ছিলেন রুদ্রদামন। তিনি ‘মহাক্ষত্রপ’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।

শক-সাতবাহন দ্বন্দ্বের কারণ – শক-সাতবাহন লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ বিদ্যমান ছিল। দুটি শক্তিই পূর্ব ও পশ্চিম মালব এবং দাক্ষিণাত্য অঞ্চল দখল করতে চেয়েছিল। পূর্ব মালবে কোসা অঞ্চলে ছিল হিরের খনি। অন্যদিকে পশ্চিম মালবের মধ্যে দিয়ে সমুদ্রবাণিজ্য পরিচালিত | হত। দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম উপকূল রোম-ভারত বাণিজ্যের কারণে বিখ্যাত ছিল। ওই সমস্ত অঞ্চলের দখলকে কেন্দ্র করে শক-সাতবাহন লড়াই চলেছিল।

ভারতে সাতবাহন রাজবংশের পরিচয় দাও।

ভারতীয় রাজনীতি থেকে মৌর্যদের বিদায়ের পর ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে গ্রিক, শক, পতুব ও পরে কুষাণগণ যখন উত্তর-পশ্চিম ভারত ও উত্তর ভারতে প্রাধান্য বিস্তারে ব্যস্ত ছিল তখন দক্ষিণ ভারতে সাতবাহনগণের উত্থান ঘটে।

  • বংশ পরিচয় – সাতবাহনদের বংশ পরিচয় ও রাজত্বকাল নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে নানা মত আছে। পুরাণে এই রাজবংশকে অন্ধ্র বংশ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
  • রাজত্বকাল – পুরাণে উল্লেখিত তথ্য অনুসারে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে সাতবাহন বংশের উদ্ভব ঘটে। স্মিথ, গোপালাচারি প্রমুখ পণ্ডিতদের মতে সাতবাহনদের শাসনকাল শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব 245 অব্দ থেকে 230 খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে।
  • রাজন্যবর্গ – তাদের রাজধানী ছিল প্রতিষ্ঠান বা পৈঠান। এই বংশের প্রথম রাজা ছিলেন সিমুক। তিনি কাথদের পরাজিত করে সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি।

গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি সম্পর্কে কী জানো?

গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি ছিলেন সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি 106 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন আরোহণ করেন।

  • রাজ্যবিস্তার – নাসিক প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, তিনি শক, যবন, পহ্লব প্রভৃতি বিদেশি শক্তিকে পরাজিত করে এই বংশের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনেন। কৃষ্ণা থেকে কাথিয়াবাড় এবং বেরার থেকে কোঙ্কন পর্যন্ত বিস্তৃত ভূভাগে তিনি রাজত্ব করতেন।
  • সুশাসক – তিনি শুধু বীরযোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সুশাসক। তিনি বর্ণপ্রথা বা ধর্মীয় গোঁড়ামি পছন্দ করতেন না। তিনি বহু বৌদ্ধমঠ সংস্কার করেন এবং ভূমিদান করে বৌদ্ধদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন।
  • উপাধি গ্রহণ – ক্ষত্রিয়দের দর্প চূর্ণ করে তিনি ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করেন। তিনি ‘রাজরাজ’ উপাধি গ্রহণ করেন।

ভারতে কুষাণ যুগের বিশেষ অবদানগুলি উল্লেখ করো।

প্রাচীন ভারতের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কুষাণ রাজাদের অবদান অনস্বীকার্য।

কুষাণ যুগের অবদান

  • স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন – কুষাণগণ ভারতে প্রথম স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেন।
কুষাণ আমলের মুদ্রা
কুষাণ আমলের মুদ্রা
  • বুদ্ধমূর্তির পুজোর প্রচলন – সম্রাট কনিষ্কের আমলে সর্বপ্রথম ভগবান বুদ্ধের মূর্তিপুজোর প্রচলন হয়।
  • পোশাক ব্যবহার – কুষাণদের কাছ থেকে ভারতীয়রা টুপি, চামড়ার বুট, লম্বা কোট বা জোব্বা ও শিরস্ত্রাণের ব্যবহার শেখে।
  • শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতি – এই যুগে ভারতে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতি ঘটে; গন্ধার শিল্পের চরম উন্নতি এযুগেই হয়।
  • বিজ্ঞান ও চিকিৎসার উন্নতি – এযুগে বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। শল্যবিদ সুশ্রুত ও আয়ুর্বেদজ্ঞ চরক ছিলেন কুষাণ যুগের প্রখ্যাত চিকিৎসক।
  • মিশ্রসংস্কৃতি – কুষাণ যুগেই ভারতে সর্বপ্রথম একটি ‘মিশ্র সংস্কৃতি’ গড়ে ওঠে।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিস্তার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

অথবা, গুপ্তবংশের রাজত্বকাল সম্পর্কে যা জানো লেখো।

অথবা, গুপ্ত সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উত্তর ভারতে কুষাণ শাসন লোপ পায় আনুমানিক 262 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। তার প্রায় পঞ্চাশ বছর পর গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিস্তার

  • প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমল – 319-320 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্রথম চন্দ্রগুপ্ত শাসক হন। তাঁর আমলে মধ্যগঙ্গা উপত্যকাকে কেন্দ্র করে গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।
  • সমুদ্রগুপ্তের আমল – সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের নয় জন রাজা এবং দক্ষিণ ভারতের বারোজন রাজাকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। পূর্বে রাঢ় থেকে পশ্চিমে গঙ্গা উপত্যকার ওপরের অংশ পর্যন্ত গুপ্ত শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সুদূর দক্ষিণে তামিলনাড়ুর উত্তর-পূর্ব পর্যন্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
  • দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমল – সমুদ্রগুপ্তের পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত গুজরাট অঞ্চলে শক-ক্ষত্রপদের পরাজিত করেন।
  • প্রথম কুমারগুপ্তের আমল – প্রথম কুমারগুপ্তের আমলে গুপ্ত শাসন আগের মতোই ছিল।
  • স্কন্দগুপ্তের আমল – প্রথম কুমারগুপ্তের পুত্র স্কন্দগুপ্ত হুন আক্রমণ রুখে দিয়েছিলেন। তাই তাকে ‘ভারতের রক্ষাকারী’ বলা হয়।

শাসনব্যবস্থায় কুষাণ ও সাতবাহনদের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

মৌর্য সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর মৌর্য সাম্রাজ্য ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। মৌর্য সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপর উত্তর ভারতে কুষাণ সাম্রাজ্য এবং দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন শাসনের সূত্রপাত হয়। উভয় শাসনব্যবস্থাতেই কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

কুষাণ ও সাতবাহন শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

  • কুষাণ শাসন – কুষাণ সম্রাটরা নিজেদের ‘দেবতার পুত্র’ বলে মনে করতেন। তাঁরা দেবকুল প্রতিষ্ঠা করেন।
  • দ্বৈতশাসন – কুষাণ সাম্রাজ্যের সবচাইতে বড়ো বৈশিষ্ট্য হল দুজনে মিলে রাজ্যের শাসন পরিচালনা করা। এই শাসনব্যবস্থায় পিতা ও পুত্র একসঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
  • সাম্রাজ্যের ভাগ – শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যকে কতকগুলি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছিল। এইসব প্রদেশের শাসককে বলা হত ক্ষত্রপ।
  • সাতবাহন শাসন – সাতবাহন শাসনব্যবস্থায় প্রধান ছিলেন রাজা। তিনি সেনাবাহিনীরও প্রধান ছিলেন। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সাতবাহনরা তাঁদের শাসনাধীন অঞ্চলকে কতকগুলি ছোটো ছোটো প্রদেশে ভাগ করেছিলেন।
  • কর্মচারী – সাতবাহন প্রদেশ শাসনের দায়িত্বে থাকতেন অমাত্য নামক এক শ্রেণির কর্মচারী।
  • কর – এই রাজ্যে প্রজাদের কাছ থেকে বলি ও ভাগ নামক দুধরনের কর আদায় করা হত। বণিক, কারিগর প্রভৃতি শ্রেণির কাছ থেকেও কর আদায় করা হত। সাতবাহন শাসকরা নুনের ওপরও কর আদায় করেছিলেন। এসময় রাজতান্ত্রিক শাসনের পাশাপাশি অরাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর শাসনও বলবৎ ছিল।

জেনে রাখো – বিভিন্ন রাজবংশ ও তাদের পরিচয় –

রাজবংশপরিচয়
ক. ইন্দো-গ্রিকজন্মসূত্রে গ্রিক হলেও এরা ভারতে রাজত্ব শুরু করেছিলেন।
খ. কুষাণকুষাণ রাজারা ভারতের এক বিশিষ্ট রাজবংশ। রাজধানী ছিল পুরুষপুর।
গ. সাতবাহনএরা ছিল দক্ষিণ ভারতের অন্যতম রাজশক্তি।
ঘ. চেরএরা ছিল সুদূর দক্ষিণ ভারতের রাজশক্তি।
৫. চোলচোলরাও ছিল দক্ষিণ ভারতের রাজশক্তি।
চ. পাণ্ড্যসুদুর দক্ষিণের রাজশক্তি।
ছ. চেদিচেদি রাজবংশ ছিল দক্ষিণ ভারতে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত।

গুপ্তরাজ সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যবিস্তার নীতি সম্পর্কে কী জানো?

অথবা, সমুদ্রগুপ্তের উত্তর ও দক্ষিণ ভারত বিজয় সম্পর্কে লেখো।

অথবা, সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব লেখো।

গুপ্তবংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন সমুদ্রগুপ্ত। প্রথম চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর তিনি 335 খ্রিস্টাব্দে মগধের সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসেই তিনি রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করেন।

সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যবিস্তার নীতি

  • আর্যাবর্ত জয় – কৌটিল্যের আদর্শ ‘শক্তিমান মাত্রই যুদ্ধ করবে এবং শত্রু নিপাত করবে’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সমুদ্রগুপ্ত সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করেন। সিংহাসনে বসে প্রথমেই তিনি আর্যাবর্ত অভিযানে মনোনিবেশ করেন এবং সেখানকার নয়জন রাজা (যথা-অচ্যুত, নাগসেন, মতিল প্রমুখ)-কে পরাজিত করেন।
  • দাক্ষিণাত্য জয় – এরপর তিনি দক্ষিণ ভারত অভিযানে মনোনিবেশ করেন। এখানে তিনি মোট বারোজন রাজাকে পরাস্ত করেন। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন যেমন-কোশলের মহেন্দ্র, কোট্রুরের স্বামীদত্ত, এরন্ডপল্লের দমন প্রমুখ। এঁদের বশ্যতা আদায় করে তিনি তাঁদের রাজ্য ছেড়ে দেন। এই রাজ্যগুলিকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন।
  • অন্যান্য রাজ্য জয় – বিনাযুদ্ধে নেপাল, কর্তৃপুর, সমতট, দাভক ও কামরূপের নৃপতিগণ তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেন। এ ছাড়া তিনি নয়টি উপজাতীয় রাজ্য, (যেমন – কাক, আভীর, মদ্রক, মালব) প্রভৃতি জয় করেন।

উপসংহার – এইভাবে সমুদ্রগুপ্ত ভারতের বিশাল এলাকা জুড়ে গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এজন্য ভিনসেন্ট স্মিথ সমুদ্রগুপ্তকে ‘ভারতের নেপোলিয়ন’ বলেছেন।

সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা করো।

অথবা, গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জানো লেখো।

গুপ্ত শাসনব্যবস্থায় সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তাঁদের বলিষ্ঠ কৃতিত্বে গুপ্ত সাম্রাজ্য উন্নতির স্তরে পৌঁছায়।

উত্তর ভারত অভিযান – আর্যাবর্ত বা উত্তর ভারত অভিযান করে সমুদ্রগুপ্ত নয়জন রাজাকে পরাজিত করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন – নাগসেন, মতিল, গণপতিনাগ, বলবর্মন প্রমুখ রাজন্যবর্গ।

দক্ষিণ ভারত অভিযান – তিনি দক্ষিণ ভারতে অভিযান চালিয়ে মোট বারোটি রাজ্য জয় করেন। যেমন-কোট্রর, কাঞ্চী, অবমুক্তা, বেঙ্গী ইত্যাদি। তবে তিনি এই রাজ্যের রাজাদের রাজত্ব ফিরিয়ে দিয়ে রাজ্যগুলিকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন।

সীমান্তবর্তী রাজ্য অভিযান – তিনি সীমান্তবর্তী আরও পাঁচটি রাজ্য, যেমন – নেপাল, সমতট, দাভক, কামরূপ ইত্যাদি জয় করেন। এ ছাড়াও তিনি নয়টি উপজাতীয় রাজ্য জয় করেন।

আটবিক রাজ্য অভিযান – এ ছাড়া তিনি ভারতের আঠারোটি আটবিক রাজ্য জয় করে এক বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত-এর কৃতিত্ব

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের উপাধি ছিল ‘বিক্রমাদিত্য’।

স্বর্ণমুদ্রাই খোদিত দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
স্বর্ণমুদ্রাই খোদিত দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
  • মালব জয় – তিনি ভারতের পশ্চিমদিকে মালব জয় করেন। সৌরাষ্ট্রের শকরাজ তৃতীয় রুদ্রসিংহকে পরাজিত করে তিনি শকারি উপাধি ধারণ করেন।
  • সিন্ধু ও পাঞ্জাব জয় – তিনি খুব সম্ভবত সিন্ধু ও পাঞ্জাব জয় করেছিলেন।
  • বৈবাহিক সম্পর্ক – গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভিত্তি মজবুত করার জন্য তিনি পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি নাগবংশীয় কুবেরনাগাকে বিবাহ করেন এবং নিজের মেয়ের সঙ্গে বাকাটক রাজার বিবাহ দেন।

প্রভাবতী গুপ্তা কে ছিলেন? দাক্ষিণাত্যে বাকাটক শাসন কেমন ছিল?

প্রভাবতী গুপ্তা ছিলেন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কন্যা। তাঁর সঙ্গে বাকাটক রাজা দ্বিতীয় রুদ্রসেনের বিবাহ হয়। দ্বিতীয় রুদ্রসেনের মৃত্যুর পর প্রভাবতী গুপ্তই বাকাটক রাজ্যে শাসন পরিচালনা করেছিলেন।

দাক্ষিণাত্যে বাকটিক শাসন

  • বাকাটক শাসন – বাকাটক শাসনব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন প্রধান। তাঁরা কেবল ‘মহারাজা উপাধি নিতেন, অনেক সময় রানিরাও শাসনকার্য পরিচালনা করতেন যেমন- প্রভাবতী গুপ্তা।
  • কর্মচারী – সম্রাটকে শাসনের কাজে নানা কর্মচারী সাহায্য করতেন। যেমন – অমাত্য বা সচিব। বাকটিক আমলে প্রদেশগুলিকে বলা হত রাজ্য। রাজ্যের শাসককে বলা হত সেনাপতি।
  • জেলা – বাকাটক আমলে জেলাগুলিকে বলা হত পট্ট বা আহার।

উপসংহার – সব শেষে বলা যায় বাকাটক শাসনব্যবস্থার সঙ্গে গুপ্ত শাসনব্যবস্থার অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

গুপ্ত ও বাকাটক শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করো।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে উত্তর ভারতে গুপ্ত এবং দাক্ষিণাত্যে বাকাটক শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে। প্রশ্নানুযায়ী উভয় বংশের শাসনব্যবস্থার কিছু তুলনামূলক পার্থক্য ফুটে ওঠে।

গুপ্ত ও বাকাটক শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা

গুপ্ত শাসনবাকাটক শাসন
১। গুপ্ত শাসনে প্রদেশের থেকে ছোটো জেলা অঞ্চলগুলি বিষয় নামে পরিচিত ছিল।১। বাকাটক শাসনে জেলা অঞ্চলগুলি পট্ট বা আহার নামে পরিচিত ছিল।
২। গুপ্ত শাসনব্যবস্থা কয়েকটি স্তরে বিভক্ত ছিল।২। সমগ্র সাম্রাজ্যে সুশাসনের উদ্দেশ্যে বাকাটক শাসকরা সমগ্র সাম্রাজ্যকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেন।
৩। গুপ্ত শাসনে জেলা গ্রামস্তরের শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে অনেক জনপ্রতিনিধি ছিল।৩। বাকাটক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রেও জনপ্রতিনিধির গুরুত্ব- পূর্ণ ভূমিকা ছিল।
৪। গুপ্ত শাসনে যুবরাজ ও রানিদের বিশেষ ভূমিকা ছিল।৪। বাকাটক রাজ্যের শাসকদের বলা হত সেনাপতি।

পুষ্যভূতিরা কোথাকার রাজা ছিলেন? এই বংশের প্রথম রাজা কে ছিলেন? হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

পুষ্যভূতিরা থানেশ্বরের রাজা ছিলেন। এই বংশের প্রথম রাজা ছিলেন প্রভাকরবর্ধন।

হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব

  • পরিচয় – জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাজ্যবর্ধন মারা যাওয়ার পর 606 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ হর্ষবর্ধন অনিচ্ছাসত্ত্বেও পুষ্যভূতি বংশের শাসনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
  • যুদ্ধ – হর্ষবর্ধনের সঙ্গে অনেক রাজ্যের রাজার যুদ্ধ হয়েছিল। মগধের রাজাকে হারিয়ে তিনি ‘মগধরাজ’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি সরাসরি শশাঙ্ককে হারাতে পারেননি। চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশির সঙ্গেও তাঁর যুদ্ধ হয়েছিল। দ্বিতীয় পুলকেশির সভাকবি রবিকীর্তির আইহোল প্রশস্তি থেকে এই যুদ্ধের কথা জানা যায়।

মূল্যায়ন – হর্ষবর্ধন বহু যুদ্ধ করেও সফল হননি। তাঁকে অনেকে সকলোত্তরপথনাথ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু পুরো উত্তর ভারত হর্ষবর্ধনের অধীনে ছিল না। তাঁর অন্যতম উপাধি ছিল ‘শিলাদিত্য’। হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর পুষ্যভূতি বংশের শাসন লোপ পায়।

মৌর্য আমলের মুদ্রার সঙ্গে গুপ্ত আমলের মুদ্রার পার্থক্য কী ছিল?

মৌর্য আমলের মুদ্রার সঙ্গে গুপ্ত আমলের মুদ্রার পার্থক্য গুলি হল –

মৌর্য আমলের মুদ্রাগুপ্ত আমলের মুদ্রা
১। মৌর্য আমলের মুদ্রাগুলি ছিল ছাপযুক্ত।১। গুপ্ত আমলের মুদ্রাগুলি ছিল ছাঁচে ধাতব তরল ঢুকিয়ে ঢালাই করা মুদ্রা।
২। মৌর্য আমলের মুদ্রাগুলির ধাতু ছিল মূলত রুপো।২। কিন্তু গুপ্ত আমলের রৌপমুদ্রা ছাড়াও স্বর্ণমুদ্রার ব্যাপক প্রচলন ছিল।
৩। মৌর্য আমলের রৌপমুদ্রার মান অনুযায়ী নাম ছিল পন, অর্ধপন, পদ, অষ্টভাগ ইত্যাদি।৩। গুপ্ত আমলের স্বর্ণমুদ্রার নাম ছিল সুবর্ণ ও দিনার।
৪। মৌর্য আমলের মুদ্রায় গাছ, মানুষ পাহাড়ের প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন চিহ্ন, যেমন – বৃত্ত, গোলচিহ্ন, সূর্য, বিভিন্ন জ্যামিতির আকার ইত্যাদি ছাপানো হত।৪। গুপ্ত আমলের মুদ্রায় বিভিন্ন দেব-দেবী, যেমন – কার্তিক, লক্ষ্মী, বিন্নুসহ গুপ্ত রাজাদের প্রতিকৃতি খোদাই করা হত।
৫। মৌর্য যুগের মুদ্রাগুলির বিভিন্ন আকারের ছিল, সেগুলি দেখতেও খুব ভালো ছিল না।৫। গুপ্ত যুগের মুদ্রাগুলি দেখতে ভালো ছিল, সেগুলি মূলত গোলকাকৃতি ছিল।
মৌর্য আমলের মুদ্রার সঙ্গে গুপ্ত আমলের মুদ্রার পার্থক্য কী ছিল
মৌর্য আমলের মুদ্রার সঙ্গে গুপ্ত আমলের মুদ্রার পার্থক্য কী ছিল

হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিস্তার নীতি সংক্ষেপে লেখো।

606 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেই হর্ষবর্ধন গৌড়রাজ শশাঙ্ককে সমুচিত শাস্তি দিতে যুদ্ধযাত্রা করেন। তবে শশাঙ্কের বিরুদ্ধে তিনি কতটা সাফল্য পেয়েছিলেন তা ‘সঠিক জানা যায় না।

হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিস্তার

  • দ্বিতীয় পুলকেশির সঙ্গে যুদ্ধ – আইহোল লেখ থেকে জানা যায় যে, তিনি চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশির বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন এবং পরাস্ত হন। ফলে দক্ষিণ দিকে তাঁর সাম্রাজ্য নর্মদা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পুলকেশি ও হর্ষের দ্বন্দ্বের কারণ হল – পশ্চিম উপকূলের বাণিজ্যিক বন্দর-এর দখল দুজনেই করতে চেষ্টা করেছিলেন।
  • মগধ, উত্তরবঙ্গ, কঙ্গোদ অভিযান – হর্ষবর্ধন মগধ, উত্তরবঙ্গ, কঙ্গোদ প্রভৃতি নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
  • দ্বিতীয় ধ্রুবসেনের পরাজয় – পশ্চিম ভারতে তিনি বলভিরাজ দ্বিতীয় ধ্রুবসেনকে পরাজিত করেন এবং তাঁর কন্যাকে বিবাহ করেন।
  • সিন্ধু ও কাশ্মীর অভিযান – হর্ষচরিত থেকে জানা যায় যে, তিনি সিন্ধু ও কাশ্মীরেও অভিযান প্রেরণ করেছিলেন।
  • রাজ্য সীমানা – হর্ষবর্ধন সমগ্র উত্তর ভারতকে কনৌজের অধীনে আনতে সমর্থ হন এবং তাই তিনি সকলোত্তরপথনাথ উপাধিতে ভূষিত হন। বাণভট্টের হর্ষচরিত থেকে জানা যায় যে, তিনি পঞ্চ ভারতের অধীশ্বর হয়েছিলেন। সাধারণভাবে এই পঞ্চ ভারত বলতে বোঝায়-পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চল, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা ও ওড়িশার কঙ্গোদ অঞ্চল।

মূল্যায়ন – প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল। ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ তাঁরই প্রচেষ্টায় গুপ্তদের পর উত্তর ভারতে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

টুকরো কথা – সুয়ান-জাং-এর বর্ণনায় হর্ষবর্ধন – চিনা পরিব্রাজক সুয়ান-জাং 630 খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে ভারতে। আসেন এবং দীর্ঘ 14 বছর ভারতে কাটিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি 8 বছর হর্ষবর্ধনের রাজধানী কনৌজে অতিবাহিত করেন। স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি 76টি গ্রন্থ রচনা করেন। সি-ইউ-কি নামক গ্রন্থে তিনি ভারত ভ্রমণের ইতিবৃত্ত লিপিবদ্ধ করেন।

(ক) তাঁর বিবরণগুলি আদি-মধ্যযুগীয় ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাঁর বিবরণে তৎকালীন আর্থসামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের বহু তথ্য উল্লেখিত হয়েছে। এই গ্রন্থে সমকালীন ভারতীয়দের নৈতিক মান, সততা, নম্রতা ও আতিথেয়তার প্রশংসা করা হয়েছে।

(খ) তিনি ভারতের বহু বৌদ্ধ তীর্থস্থান ভ্রমণ করেন এবং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। তিনি সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।

(গ) তিনি হর্ষবর্ধনের রাজত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। হর্ষবর্ধনের দানশীলতা, রাজকর্তব্য, আইনশৃঙ্খলা তথা শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধ প্রচুর প্রশংসা করেছেন।

জানা যায় যে, প্রতি পাঁচবছর অন্তর সম্রাট একটি বৌদ্ধ সম্মেলন আয়োজন করতেন। এখানে 21 দিন ধরে সভা চলত। প্রত্যেক 5 বছর অন্তর তিনি প্রয়াগে সাধারণ মানুষকে নানা জিনিস দান করতেন। 8 দিন ধরে তিনি নানা জিনিস দান করতেন। সবশেষে সামান্য একটা পোশাক পরে তিনি স্থান ত্যাগ করতেন।

হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে তেমন কোনো বড়ো সাম্রাজ্য গড়ে ওঠেনি। পরবর্তীকালে পুষ্যভূতি বংশীয় হর্ষবর্ধনের উদ্যোগে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গৃহীত হয়।

হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থা

  • কেন্দ্রীয় শাসন – 606 খ্রিস্টাব্দে হর্ষবর্ধন সিংহাসনে বসেন। শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন শীর্ষে। তাঁকে সাহায্যের জন্য ছিল মন্ত্রীপরিষদ। এ ছাড়া অমাত্য নামক রাজকর্মচারীরা শাসনব্যবস্থায় রাজাকে সাহায্য করত।
  • প্রাদেশিক শাসন – প্রাদেশিক শাসনের কাজে মন্ত্রীপরিষদ তাঁকে সাহায্য করত। দূরবর্তী প্রদেশগুলি শাসন করতেন সামন্তরাজা বা রাজার কোনো প্রতিনিধি। হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থায় প্রতিটি প্রদেশ বা ভুক্তি কয়েকটি বিষয় বা জেলায় বিভক্ত ছিল। শাসনব্যবস্থার সবথেকে নীচে ছিল গ্রাম। হর্ষবর্ধন যেহেতু অনেক সামরিক অভিযান করেছিলেন তাই যুদ্ধে তাঁকে সাহায্য করার জন্য ছিল বিশাল সেনাবাহিনী।
  • কর ব্যবস্থা – রাজকোষের কথা মাথায় রেখে তিনি বাণিজ্য কর ও ভূমিরাজস্ববাদ বিশাল অঙ্কের অর্থ আদায় করতেন। তবে ভূমিরাজস্ব নীতি শোষণমূলক ছিল না। এর হার উৎপন্ন ফসলের 1/6 অংশ।

প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে জনপদ থেকে ধীরে ধীরে মগধকে কেন্দ্র করে যে সাম্রাজ্য তৈরি হল, তা তুমি নিজের ভাষায় লেখো।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর ভারত কেন্দ্রিক 16টি জনপদের উদ্ভব হয়। এগুলিকে একসঙ্গে বলা হয় ষোড়শ মহাজনপদ। এগুলির মধ্যে শেষপর্যন্ত মগধ শক্তিশালী হয় এবং এটি একটি সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।

  • জনপদগুলির অন্তর্দ্বন্দ্ব – এই জনপদগুলির মধ্যে নানা কারণে পারস্পরিক যুদ্ধবিগ্রহ শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে শক্তিশালী জনপদগুলি অন্যান্য জনপদগুলিকে পরাস্ত করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। ফলে এই সময় কোশল, বৎস, অবন্তী ও মগধ রাজ্য আরও বৃহৎ আকার ধারণ করে এবং আরও শক্তিশালী হয়।
  • চার জনপদের উদ্ভব – কিন্তু পরবর্তী সময় এদের মধ্যে লড়াই অব্যাহত ছিল। তারা নিজেদের রাজ্যের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে তৎপর হয় এবং সাম্রাজ্যবিস্তারে করতে শুরু করে। এই সময় এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় কোশলরাজ প্রসেনজিৎ, অবন্তীরাজ প্রদ্যোৎ, বৎসরাজ উদয়ন এবং মগধরাজ বিম্বিসার।
  • মগধের জয় – কিন্তু শেষপর্যন্ত সেই লড়াইয়ে মগধ জয়ী হয়। মগধের এই জয়ের পিছনে নানা কারণ ছিল, যেমন – বিম্বিসারের নেতৃত্ব। মগধের মজবুত অর্থনীতি,। তার সুরক্ষা বলয়, সামরিক দক্ষতা প্রভৃতি।
  • মগধ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা – বিম্বিসার 545 খ্রিস্টাব্দে ভারতে মগধ সাম্রাজ্যের সূচনা করেন। এরপর অঙ্গরাজ্য-সহ অন্যান্য রাজ্য দখল করে মগধের ভিত্তি মজবুত করেন। হর্যঙ্ক বংশের আর এক শাক্তিশালী রাজা ছিলেন, তিনি হলেন অজাতশত্রু তিনি লিচ্ছবি, মল্লদের পরাজিত করেন। এছাড়া তিনি কোশল ও অবন্তী রাজ্য দখল করেন। তিনি মগধের নতুন রাজধানী তৈরি করেন, যা পাটলিপুত্র নামে খ্যাত।

উপসংহার – পরবর্তী সময়ে এই মগধ সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করেই মৌর্যরা ও গুপ্তরা ভারতে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।

ফাসিয়ানের বিবরণ সম্পর্কে কী জানো?

গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজক ফাসিয়ান ভারতে আসেন। আনুমানিক 399 খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতের গন্ধার রাজ্যে উপস্থিত হন এবং সুদীর্ঘকাল ভারতের বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করে 414 খ্রিস্টাব্দে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ভারতে থাকাকালীন মথুরা, কপিলাবস্তু, কনৌজ, বারাণসী, পাটলিপুত্র, বৈশালী, কুশিনগর প্রভৃতি তীর্থস্থানগুলি পরিদর্শন করেন।

ফাসিয়ানের বিবরণ সম্পর্কে কী জানো
ফাসিয়ানের বিবরণ সম্পর্কে কী জানো

ফাসিয়ানের বিবরণ

দেশে ফিরে গিয়ে তিনি ফো-কুয়ো-কি নামক একটি অমূল্য ভ্রমণবৃত্তান্ত রচনা করেন। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এই ভ্রমণবৃত্তান্তমূলক গ্রন্থটি একটি অমূল্য সম্পদ। গুপ্ত যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করতে গেলে এই গ্রন্থের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি পাটলিপুত্র নগরীর সমৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি তাঁর উলিপুত্র নগরীর সনব্যবস্থা সম্পর্কে উচ্চপ্রশংসা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, সেযুগে জাতিভেদপ্রথা ছিল অত্যন্ত কঠোর। তবে সমাজে চোর-ডাকাতের উপদ্রব ছিল না। জনগণের সুখস্বাচ্ছ্যন্দের অভাব ছিল না। জিনিসপত্র ছিল সুলভ। তিনি গুপ্ত সম্রাটদের ধর্মীয়উদারতার কথাও এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন তাঁরা ছিলেন প্রজাদরদি। রাজকর্মচারীগণ ছিলেন সৎ ও দায়িত্বশীল।

সম্রাট কাকে বলা হয়? মৌর্য সম্রাট অশোকের শাসনব্যবস্থা সংক্ষেপে লেখো।

সম্রাট কথার অর্থ হল রাজার রাজা। তিনি হলেন একজন রাজ্য বা সাম্রাজ্যের প্রধান। তিনি একটি বিশাল অঞ্চলের ও ওই অঞ্চলের জনগণের প্রধান শাসক। তাঁর নাম অনুসারেই একটি রাজ্য বা সাম্রাজ্য চলত।

সম্রাট অশোকের শাসনব্যবস্থা

সম্রাট অশোক পূর্ববর্তী মৌর্য শাসনকাঠামোই অনুসরণ ! করেছিলেন। তবে তাতে তিনি বেশ কিছু নতুন সংযোজন করেছিলেন, যেমন-

  • তিনি তাঁর নামের আগে দেবানংপিয় বা দেবতাদের প্রিয় এই উপাধি ব্যবহার করতেন। তিনি তাঁর প্রজাদের নিজের সন্তান বলে মনে করতেন। সেকারণে তাঁর সময় শাসকের সঙ্গে পিতা পুত্রের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
  • তিনি স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। প্রজাকল্যাণই ছিল তাঁর শাসনব্যবস্থার মূল মন্ত্র। প্রজাদের সুখ-স্বচ্ছন্দের প্রতি তিনি যত্নবান ছিলেন। এজন্য তিনি নানা ধরনের রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন এবং জলকল্যাণকর কাজে অংশ নেন। যেমন –
    • রাজুক ও ধর্মমহামাত্র নিয়োগ করেন। এঁদের কাজ ছিল প্রজারা যাতে শান্তিতে জীবনযাপন করে এবং নির্বিঘ্নে ধর্মাচরণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখা।
    • পথিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। রাস্তার দুধারে বৃক্ষ রোপণ করেন। সরাইখানা তৈরি করেন এবং কূপ খনন করেন।
    • মানুষ ও পশুদের চিকিৎসার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
  • তিনি বিচারব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ড রদ করেন। তাঁর প্রত্যেক অভিষেক বার্ষিকীতে তিনি রাজবন্দিদের মুক্তি দিতেন।

মৌর্যযুগের কৃষিজীবন সম্পর্কে কী জানা যায়?

মৌর্য যুগে জমিতে নানা উপায়ে জলসেচের ব্যবস্থা করার ফলে চাষের প্রভূত উন্নতি হয় ও ফলন বৃদ্ধি পায়। তথাপি সেই সুফল কৃষিকাজে যুক্ত সকলের কাছে পৌঁছোয়নি।

  • বিভিন্ন বৌদ্ধ সাহিত্যে এর উল্লেখ আছে। কৃষিকাজ করে একশ্রেণির মানুষ প্রভূত উন্নতি করে। তারা বড়ো বড়ো ভূস্বামীতে পরিণত হয়। আর একশ্রেণির কৃষক ছোটো ছোটো কৃষকে পরিণত হয়। শেষ ধাপে ছিল ভূমিহীন কৃষক।
  • পালি সাহিত্যে বড়ো বড়ো ভূস্বামীদের বলা হয় গহপতি। ক্রমে তারা গ্রামের প্রধান বা মোড়লে পরিণত হয় এবং তারা শক্তিশালী ও পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হয়। তারাই আবার ভূমিহীন কৃষক ও অন্যান্য ছোটোখাটো কৃষকদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
  • তামিল সংগম সাহিত্যে গ্রামে বসবাসকারী বিভিন্ন কৃষক সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে। যেমন বড়ো বড়ো জমির মালিক (যাদের বলা হত ভেল্লালার), উজহাভার বা কৃষক এবং আদিমাই বা দাস।

শশাঙ্ক কে ছিলেন? তাঁর সম্পর্কে কী জানো?

শশাঙ্ক ছিলেন গৌড়ের রাজা।

শশাঙ্ক গুপ্তরাজ মহাসেনগুপ্তের একজন সামন্তরাজা। ছিলেন। রেটাসগড় লিপি থেকে জানা যায় যে, সম্ভবত তিনি 606 খ্রিস্টাব্দে গৌড়ে একটি স্বাধীন রাজ্যের সূচনা করেন। তাঁর রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ বা কানসেনা। সিংহাসনে বসেই প্রথমে তিনি গঞ্জাম, কঙ্গোদ, উৎকল, দণ্ডভুক্তি, বারাণসী প্রভৃতি রাজ্য দখল করেন। ধুবীতাম্র ফলকে কামরূপরাজ ভাস্করবর্মনের বিরুদ্ধে শশাঙ্কের সাফল্য বর্ণিত রয়েছে। জানা যায় তিনি মগধ জয় করে ছিলেন। পশ্চিমদিকে তাঁর সাম্রাজ্য বারাণসী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

ড. মজুমদার শশাঙ্ককে বাঙালি শাসকদের মধ্যে প্রথম সার্বভৌম নরপতি বলে অভিহিত করেছেন। আনুমানিক 637 খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্কের মৃত্যু হয়।

গৌতমী পুত্র সাতকর্ণি – টীকা লেখো।

অথবা, গৌতমী পুত্র সাতকর্ণির কৃতিত্ব নির্ণয় করো।

গৌতমী পুত্র সাতকর্ণি ছিলেন সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। প্রথম সাতকর্ণির মৃত্যুর প্রায় 100 বছর পর তিনি সিংহাসনে বসেন।

  • রাজ্যজয় – ‘নাসিক প্রশস্তি’ থেকে জানা যায় যে, তিনি শক, যবন (গ্রিক), পহুবদের পরাজিত করে তাঁর বংশের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনেন। জুনাগড় লেখ থেকে জানা যায়, তিনি শকরাজ নহপানকে পরাজিত করে গুজরাট, কোঙ্কন, বেরার, মালব প্রভৃতি অঞ্চল জয় করেন। যদিও পরে শক-ক্ষত্রপ রুদ্রদামন ওই অঞ্চলগুলি জয় করেন। জানা যায় যে, শকদের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে তিনি নিজপুত্র বশিষ্টর সঙ্গে রুদ্রদামনের কন্যার বিবাহ দেন।
  • রাজ্যসীমা – নাসিক প্রশস্তি অনুযায়ী আসিক (মহারাষ্ট্র), সুরথ (কাথিয়াবাড়), কুকুর, মূলক, বিদর্ভ, আকর (পূর্ব মালব), অবন্তী প্রভৃতি তাঁর প্রত্যক্ষ শাসনাধীন ছিল। এইভাবে তাঁর রাজ্যসীমা কৃষ্ণা থেকে কাথিয়াবাড় এবং বেরার থেকে কোঙ্কন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
  • অন্যান্য কৃতিত্ব – তিনি শুধু বীর যোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সুশাসক। তিনি বর্ণ প্রথা বা ধর্মীয় গোঁড়ামি পছন্দ করতেন না। তিনি বহু বৌদ্ধমঠ সংস্কার করেন এবং বৌদ্ধ মঠগুলিতে ভূমিদান করে বৌদ্ধদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছিলেন। ক্ষত্রিয়দের দর্পচূর্ণ করে তিনি ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করেন। তিনি ‘রাজরাজ’ উপাধি গ্রহণ করেন এবং নিজেকে ‘ত্রি-সমুদ্র-তোয়া-পীত বাহন’ বলে ঘোষণা করেন।

হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে আলোচনা করো।

অথবা, সম্রাট হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব নিরূপণ করো।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতে যে সমস্ত রাজশক্তির উত্থান ঘটে তাদের মধ্যে থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশ ছিল অন্যতম। হর্ষবর্ধন ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ নরপতি। 606 খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘শিলাদিত্য’ উপাধি নিয়ে সিংহাসন আরোহণ করেন।

  • হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব – সিংহাসনে আরোহণ করেই প্রথমে তিনি ভ্রাতৃহন্তা গৌড়রাজ শশাঙ্ককে সমুচিত শাস্তি দিতে যুদ্ধ যাত্রা করেন। তবে শশাঙ্কের বিরুদ্ধে তিনি কতটা সাফল্য পেয়েছিলেন তা সঠিক জানা যায় না। ‘আইহোল লেখ’ থেকে জানা যায় যে, 653 খ্রিস্টাব্দে তিনি চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। জানা যায় যে, তিনি দ্বিতীয় পুলকেশীর নিকট পরাস্ত হন। ফলে দক্ষিণদিকে তাঁর সাম্রাজ্য নর্মদা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। হর্ষবর্ধন মগধ, উত্তরবঙ্গ, কঙ্গোদ প্রভৃতি নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। পশ্চিম ভারতে তিনি বলভীরাজ দ্বিতীয় ধ্রুবসেনকে পরাজিত করেন এবং তাঁর কন্যাকে বিবাহ করেন। ‘হর্ষচরিত’ থেকে জানা যায় যে, তিনি সিন্ধু ও কাশ্মীরেও অভিযান প্রেরণ করেছিলেন।
  • রাজ্যসীমানা – এইভাবে তিনি সমগ্র উত্তর ভারতকে কনৌজের অধীনে আনতে সমর্থ হন এবং ‘সকলোত্তরপথনাথ’ উপাধিতে ভূষিত হন। বাণভট্টের ‘হর্ষচরিত’ থেকে জানা যায় যে, তিনি পঞ্চ ভারতের অধীশ্বর হয়েছিলেন। সাধারণভাবে এই পঞ্চ ভারত বোঝায় – পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চল, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা ও ওড়িশায় কঙ্গোদ অঞ্চল।
  • শাসন ব্যবস্থা ও বিদ্যোৎসাহিতা – হর্ষবর্ধন ছিলেন একজন উদার ও প্রজাহিতৈষী সম্রাট, ধর্মীয় গোঁড়ামী তাঁর ছিল না। নিজে বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাসী হয়েও পরধর্ম সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। ‘সি-ইউ-কি’ থেকে জানা যায় যে, 643 খ্রিস্টাব্দে তিনি কনৌজে একটি ধর্ম মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। তিনি প্রয়াগে কুম্ভমেলার আয়োজন করেছিলেন। বিদ্যোৎসাহিত্য ছিল তাঁর অপর একটি মহান গুণ। তাঁর সভাকবি ছিলেন বাণভট্ট, যিনি ‘হর্ষচরিত’ রচনা করেন। তিনি স্বয়ং ‘নাগনন্দ’, ‘প্রিয়দর্শিকা’ ও ‘রত্নাবলী’ নামক তিনটি নাটক লেখেন।

মূল্যায়ন – তাঁরই প্রচেষ্টায় গুপ্তদের পর উত্তর ভারতে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। সম্রাট অশোকের ন্যায় হর্ষবর্ধন ছিলেন একজন পরম প্রজাহিতৈষী ও উদার সম্রাট। তাই ড. রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় যথার্থই বলেছেন, ‘হর্ষের মধ্যে অশোক ও সমুদ্রগুপ্তের সমন্বয় লক্ষ করা যায়।’


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়, “সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন