এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক (শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্প) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায়, ‘প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক (শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্প)’ অধ্যায়ের কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক (শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্প)
প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক (শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্প)
Contents Show

বিহার বা সংঘের সঙ্গে মহাবিহারের কী সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে?

বিহার বা সংঘ এবং মহাবিহার দুটিই বৌদ্ধ স্থাপত্যের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

বিহার বা সংঘের সঙ্গে মহাবিহারের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য

সাদৃশ্য

  • বিহার এবং মহাবিহার উভয়ই শিক্ষার জায়গা ছিল।
  • বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি কৃষি, চিকিৎসা, রাজনীতি, যুদ্ধবিদ্যা, এবং ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া হত। মহাবিহারেও প্রায় একই ধরনের শিক্ষা দেওয়া হত।

বৈসাদৃশ্য

  • বিহার বা সংঘে শুধু বৌদ্ধ ভিক্ষুরা পড়াশোনা করত। কিন্তু মহাবিহারে সবাই, বিশেষ করে দেশ-বিদেশের ছাত্ররা পড়তে আসত।
  • বিহারগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি জ্যোতিষ, ব্যাকরণ, গণিতও শেখানো হত। তবে মহাবিহারে ধর্ম, জ্যোতিষ, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, শাসননীতি সব ধরনের বিষয় পড়ানো হত।

জেনে রাখো – নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দশ হাজার ছাত্র পড়াশোনা করত। সুয়ান জাং -এর সময় নালন্দার অধ্যক্ষ ছিলেন পণ্ডিত শীলভদ্র। এছাড়া ধর্মপাল, জিনমিত্র, বসুবন্ধু, প্রতামিত্র প্রমুখের নাম পাওয়া যায়।

নালন্দা কী জন্য বিখ্যাত?

অথবা, নালন্দা মহাবিহার – টীকা লেখো।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি খুব জনপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গুপ্তরাজ প্রথম কুমারগুপ্তের সময়, অর্থাৎ খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিহারের নালন্দা জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে অনেক ছাত্র এখানে পড়াশোনা করতে আসত। ছাত্রদের কোনো বেতন দিতে হতো না। বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল একটি আবাসিক শিক্ষা কেন্দ্র। সুয়ানজাং-এর লেখা থেকে জানা যায়, নালন্দায় একসঙ্গে 10000 ছাত্র পড়াশোনা করত। হর্ষবর্ধনের সময় এখানে অধ্যক্ষ ছিলেন পণ্ডিত শীলভদ্র। সুয়ানজাং নিজে এখানে পড়াশোনা করতে এসেছিলেন।

পণ্ডিত শীলভদ্র
পণ্ডিত শীলভদ্র

প্রাচীন ভারতে রচিত দুটি মহাকাব্যের নাম কী? প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মহাকাব্য দুটির গুরুত্ব কী?

প্রাচীন ভারতে রচিত দুটি মহাকাব্যের নাম হলো রামায়ণ ও মহাভারত।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মহাকাব্য দুটির গুরুত্ব

  • দুটি মহাকাব্যই আমাদের দেশীয় সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  • মহাকাব্য দুটি থেকে তখনকার সময়ের ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি জানা যায়।
  • মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রমাণ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস জানতে সাহায্য করে।
  • দুটি মহাকাব্যেই অনেক চরিত্র ও ঘটনা আছে, যা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস জানতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রামায়ণ ও মহাভারত সম্বন্ধে লেখো।

ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্য হলো রামায়ণ ও মহাভারত। দুটি মহাকাব্যই সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছে।

রামায়ণ

রামায়ণ লেখা হয় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে। এর প্রধান চরিত্র হলো রাম, সীতা ও রাবণ। রামায়ণ মূলত রাম ও রাবণের যুদ্ধের কাহিনী।

রামায়ণের নাম রামচন্দ্রের নামে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে রামায়ণ আমরা জানি, সেটিতে 24000 শ্লোক রয়েছে এবং এটি সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত। রামায়ণ রচনা করেন মহাকবি বাল্মীকি। তবে মনে করা হয়, রামায়ণের প্রথম এবং সপ্তম কাণ্ড বাল্মীকির লেখা নয়। পরবর্তীতে এই দুটি কাণ্ড রামায়ণে যোগ করা হয়।

মহাভারত

মহাভারত রচনা করেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব। এটি ভারতীয় জনগণের জীবন ও কর্মকাণ্ডের গল্প। শুরুতে মহাভারতে ছিল আট হাজার আটশো শ্লোক। কুরুপাণ্ডবদের যুদ্ধের কাহিনীই মহাভারতের মূল বিষয়। তবে মহাভারত একমাত্র ব্যাসদেবের লেখা নয়। আগে এর নাম ছিল জয়কাব্য। পরে বৈশম্পায়ন আরও কিছু শ্লোক যোগ করে এটিকে ভারত নামে পরিচিত করেন। এরপর সৌতি আরও কিছু শ্লোক যোগ করে এর নাম দেন মহাভারত। মহাভারতকে পঞ্চমবেদও বলা হয়।

মহাভারতে কৌরব ও পাণ্ডবদের যুদ্ধের কাহিনী রয়েছে, যেখানে পাণ্ডবরা জয়লাভ করে। এছাড়া মহাভারতে ভূগোল, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পুরো মহাভারত 18টি সর্গে বিভক্ত।

জেনে রাখো – দুরান হল বিশ্ব তথা ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্য। খুব সম্ভবত, এই সাহিত্যটি লেখা শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম বা চতুর্থ শতকের আগে। বর্তমানে পুরাণের সংখ্যা 18টি। যথা – বিষ্ণু পুরাণ, বায়ু পুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত্য পুরাণ ইত্যাদি। পুরাণের বিষয়বস্তু হল – প্রাচীন রাজবংশের ইতিহাস, কৃষি, পশুপালন, বানিজ্য, জ্যোতিষশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়।

সম্রাট কনিষ্কের সংস্কৃতি অনুরাগিতার পরিচয় দাও।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে কনিষ্কের শাসনকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি শুধু বীর যোদ্ধা ছিলেন না, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর ছিল গভীর ভালোবাসা।

সম্রাট কনিষ্কের সংস্কৃতি

  • সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা – কনিষ্ক ছিলেন একজন সংস্কৃতির অনুরাগী। তাঁর রাজসভায় একজন বড় সাহিত্যিক অশ্বঘোষ ছিলেন। অশ্বঘোষের বিখ্যাত বই বুদ্ধচরিত তাঁর শাসনকালেই লেখা হয়েছিল। এছাড়া, চরক ছিলেন একজন বিখ্যাত চিকিৎসক, আর নাগার্জুন ছিলেন একজন বড় গণিতবিদ।
  • কনিষ্কের শিল্পবোধ – কনিষ্কের শাসনকালে গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় শিল্পের মিশ্রণে গন্ধার শিল্প গড়ে ওঠে। তিনি অনেক চৈত্য, বিহার ও স্তূপ তৈরি করেছিলেন। গ্রিক শিল্পী এজেসিলাস পুরুষপুরে ভগবান বুদ্ধের দেহাবশেষের উপর একটি বড় চৈত্য তৈরি করেছিলেন।
  • মূল্যায়ন – কনিষ্কের আমলে বুদ্ধের মূর্তিপূজার শুরু হয় এবং বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়।

সম্রাট হর্ষবর্ধনের শিক্ষানুরাগিতার পরিচয় দাও।

সম্রাট হর্ষবর্ধন দক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য, সংস্কৃতিরও পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

সম্রাট হর্ষবর্ধনের শিক্ষানুরাগিতা

  • সাহিত্যানুরাগিতা – হর্ষবর্ধন ছিলেন একজন বিদ্বান ও সাহিত্যপ্রেমী। তিনি নিজে সংস্কৃত ভাষায় তিনটি নাটক রচনা করেন – নাগানন্দ, রত্নাবলী, ও প্রিয়দর্শিকা। তাঁর সভাকবি ছিলেন বাণভট্ট, যিনি হর্ষচরিত এবং কাদম্বরী নামক দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেছেন। হর্ষবর্ধন ছিলেন জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের সন্মানিতকারী। তাঁর রাজসভায় বাণভট্ট, দিবাকর প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি ছিল।
  • শিক্ষানুরাগিতা – হর্ষবর্ধনের পৃষ্ঠপোষকতায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তখনকার সময়ে ভারতের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। রাজকোষ থেকে তিনি প্রচুর অর্থ এই প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য ব্যয় করতেন।

প্রাচীন ভারতের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিল্পকলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ভারতবর্ষ একটি প্রাচীন দেশ। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিল্পকলা এক আলাদা মাত্রায় পৌঁছে ছিল।

প্রাচীন ভারতের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিল্পকলা

সাহিত্য-সংস্কৃতি – ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্য হল বেদ ও বৈদিক সাহিত্য। গুপ্ত যুগে অসংখ্য নাটক যেমন – কালিদাসের রঘুবংশম, মেঘদূতম, বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস প্রভৃতি রচিত হয়। অর্থশাস্ত্র, অষ্টাধ্যায়ী, মৃচ্ছকটিকম, রামচরিত, রাজতরঙ্গিনী প্রভৃতি অসংখ্য গ্রন্থ লিখিত হয়। রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্য দুটি ভারতের অমূল্য সম্পদ।

সাঁচি স্তূপ
সাঁচি স্তূপ

শিল্প –

  • মৌর্য যুগ থেকে ভারতে প্রকৃত শিল্পকলা শুরু হয়। এযুগে অসংখ্য স্তূপ, চৈত্য ও মঠ স্থাপিত হয়। যেমন – সাঁচি স্তূপ।
  • কুষাণ যুগে গন্ধার শিল্পের উদ্ভব হয়। এ যুগে কনিষ্ক বহু বৌদ্ধ মঠ, স্তূপ ও চৈত্য নির্মাণ করেন।
  • গুপ্ত যুগে স্থাপত্যশিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়। এযুগে অসংখ্য মন্দির, বিহার ও স্তূপ তৈরি হয়।

টুকরো কথা – তক্ষশীলা মহাবিহার – প্রাচীন ভারতে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল তক্ষশীলা মহাবিহার। তক্ষশীলা ছিল ষোড়শ মহাজনপদের অন্তর্গত গান্ধার জনপদের রাজধানী। এখানে বৌদ্ধ ধর্ম বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে তক্ষশীলাকে কেন্দ্র করে একটি বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। দেশবিদেশের নানা ছাত্র এখানে থেকে পড়াশোনা করেন। 16-20 বছরের ছাত্ররা সেখানে ভরতি হতেন। যোগ্যতা যাচাই করে এখানে ছাত্র নেওয়া হত। মোটামুটি 8 বছর ধরে তাঁরা এখানে শিক্ষালাভ করতেন। খুব সম্ভবত এই মহাবিহারে লিখিত পরীক্ষার প্রচলন ছিল না। জীবক, পানিনি ও চাণক্য ছিলেন এই মহাবিহারের কৃতি ছাত্র।

প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চা সম্পর্কে কী জানো তা বিবৃত করো।

বিজ্ঞান কথার অর্থ হল কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে জ্ঞানলাভ করা। ভারতীয় উপমহাদেশে সুপ্রাচীন কাল থেকেই বিজ্ঞানচর্চা অব্যাহত। পরবর্তী বৈদিক ও বৌদ্ধ সাহিত্যে বিভিন্ন ঔষধ ও অস্ত্রপ্রচারের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রায় সাতশো ঔষধি গাছপালার কথা এবং রোগের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা আছে চরক সংহিতায়। প্রাচীনকালের বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক ছিলেন শুশ্রুত। তিনি হাড় ভেঙে গেলে বা কান, নাক কেটে গেলে তা জোড়া লাগানোর কাজে দক্ষ ছিলেন। প্রাচীনকালে শারীরবিদ্যা ও শল্যচিকিৎসার ধারা অব্যাহত ছিল।

জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতিষচর্চা প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। জৈন ও বৌদ্ধরা যেমন গণিতের চর্চা করতেন তেমনই গুপ্ত যুগে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। কৃষিকাজ, গাছপালা ও পশুপাখি নিয়েও বৈজ্ঞানিক আলোচনা প্রাচীন ভারতে হত। ইট, পাথর ও ধাতুর ব্যবহারও প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেকালে কারিগরি বিজ্ঞানের উন্নতি ছিল অভাবনীয়।

কুষাণ ও গুপ্ত যুগের বিজ্ঞানচর্চা সম্পর্কে কী জানো?

অথবা, প্রাচীন ভারতে গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নতির পরিচয় দাও।

প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চার প্রকৃত ঘরানা গড়ে ওঠে কুষাণ ও গুপ্ত যুগে। এই দুই যুগে গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ভেষজ ও রসায়ন শাস্ত্রের ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।

  • কুষাণ যুগে বিজ্ঞানচর্চার জনক ছিলেন নাগার্জুন, যিনি মাধ্যমিক সূত্র নামক গ্রন্থটি রচনা করেন। অনেকে এই গ্রন্থেই ‘আপেক্ষিক তত্ত্বের’ প্রথম পাঠ খুঁজে পেয়েছেন।
  • গুপ্ত যুগে গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট ত্রিকোণমিতির সাইন ও কোসাইনের উদ্ভাবক ছিলেন। তিনি তাঁর সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পোষণ করেন।
  • আর্যভট্ট-পরবর্তী বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ হলেন বরাহমিহির। তাঁর রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ বৃহৎসংহিতা ও পঞ্চসিদ্ধান্তিকা।
  • কুষাণ যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়। এই যুগের প্রখ্যাত আয়ুর্বেদজ্ঞ ছিলেন চরক, যিনি চরক সংহিতা রচনা করেন। শুশ্রুত ছিলেন প্রাচীন ভারতের খ্যাতনামা শল্য চিকিৎসক। তিনি শুশ্রুত সংহিতা রচনা করেন।
  • ধন্বন্তরী ছিলেন গুপ্ত যুগের প্রখ্যাত চিকিৎসক।
সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থের প্রচ্ছদ
সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থের প্রচ্ছদ

মৌর্য আমলের শিল্পচর্চার বিবরণ দাও।

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকলার প্রকৃত সূচনা ঘটেছিল মৌর্য যুগে।

মৌর্য আমলের শিল্পচর্চা

  • স্তূপ – মৌর্য স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল স্তূপ। সম্রাট অশোকের আমলে প্রায় অসংখ্য স্তূপ নির্মিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সাঁচি স্তূপ। এর উচ্চতা ছিল 78ফুট। এতে চারটি তোরণ ছিল। সাঁচি স্তূপের ভিতরে দেয়ালগাত্রে বুদ্ধের ভাস্কর্য খোদিত আছে।
  • চৈত্য – অশোকের আমলে সাঁচি ও সারনাথে দুটি বিশাল চৈত্য নির্মিত হয়।
  • স্তম্ভ – মৌর্য যুগে বহু স্তম্ভ নির্মিত হয়। অশোকের আমলেই সাঁচি, সারনাথ, এলাহাবাদ, নন্দনগড় প্রভৃতি স্থানে 37টি স্তম্ভ প্রতিষ্ঠিত হয়। সারনাথের সিংহস্তম্ভটি প্রাচীন ভারতের শিল্পচেতনার এক অনন্য নমুনা। স্তম্ভগুলিতে প্রতীক হিসেবে সিংহ, বৃষ, হস্তি, অশ্ব ও চক্রের ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি স্তম্ভের উচ্চতা ছিল 30-50 ফুটের মধ্যে। এর দুটি ভাগ ছিল দন্ড ও বোধিকা (শীর্ষ)।

গুপ্ত যুগের চিত্রকলা – টীকা লেখো।

সংস্কৃতি ও শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চিত্রকলা। গুপ্ত যুগে চিত্রশিল্প সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায় বিষ্ণু ধর্মোত্তর গ্রন্থে। এই যুগের কিছু অদ্ভুত নমুনা পাওয়া যায় বেদসা, কানহেরি ও ঔরঙ্গবাদ গুহাগুলিতে। অজন্তার 30টি গুহার মধ্যে 1, 2, 16, 17 ও 19 নং গুহাচিত্রগুলি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই চিত্রগুলি গুপ্ত যুগে অঙ্কিত হয়। অজন্তার 1 নং গুহায় বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বর পদ্মপাণির চিত্রটি এই যুগের অন্যতম সেরা সৃষ্টি। এই চিত্রটি ত্রিমাত্রিক (3D) আঙ্গিকে আঁকা হয়েছে। এর অবয়ব, দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা ও বর্ণের ব্যবহার আজও আমাদের বিস্মিত করে।

শিল্পরসিক পার্সি ব্রাউন অজন্তার গুহাচিত্রগুলিকে ফ্রেস্কো বা দেয়ালচিত্র মনে করেন। ফরাসি পণ্ডিত ফার্গুসন অজন্তায় প্রায় 39টি গুহাচিত্র খুঁজে পেয়েছেন। এই চিত্রগুলির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হল মাতা ও পুত্র, হরিণ চতুষ্টয়, বোধিসত্ত্ব চক্রপাণি ইত্যাদি। এগুলি বর্ণ, শৈল্পিক রেখা ও শিল্পের সৌন্দর্যে অতুলনীয়।

পল্লব শিল্প – টীকা লেখো।

দক্ষিণ ভারতে পল্লব রাজাদের রাজত্বকাল ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পল্লব রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় খ্রিস্টীয় 6th থেকে 9th শতাব্দী পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতে পল্লব শিল্পের নতুন রীতি গড়ে ওঠে।

মহাবলিপুরমের পঞ্চপান্ডব রথ
মহাবলিপুরমের পঞ্চপান্ডব রথ

পল্লব স্থাপত্যশিল্পের বৈশিষ্ট্য –

মহেন্দ্ররীতি – মহেন্দ্র রীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল পাহাড় কেটে গুহা-মন্দির তৈরি করা।

মহামল্ল রীতি – মহামল্ল রীতির বৈশিষ্ট্য ছিল পাথর কেটে রথের আদলে মন্দির নির্মাণের কৌশল। এই ঘরানার ভালো উদাহরণ হল মহাবলিপুরমের পঞ্চপান্ডব রথ ও দ্রৌপদী রথ।

পাথর সাজিয়ে – পাথর সাজিয়ে মন্দির নির্মাণের কৌশল ছিল পল্লব শিল্পরীতির অন্যতম আকর্ষণ।

ভাস্কর্য শিল্প

পল্লব যুগ শুধু স্থাপত্যশিল্পের জন্য নয়, তার ভাস্কর্য শিল্পের জন্যও বিখ্যাত। এই যুগের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্যের নিদর্শন হল – মহাবলিপুরমের পর্বতগাত্রে খোদিত কিরাতার্জুনের কাহিনি, কৃষ্ণমণ্ডপে পশুপালকের জীবন, বরাহমণ্ডপে বিষুর বরাহ অবতারের কাহিনি ইত্যাদি।

গন্ধার শিল্প – টীকা লেখো।

গন্ধার শিল্প ভারতের প্রাচীন শিল্পকলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। খ্রিস্টপূর্ব 50 অব্দ থেকে 500 অব্দের মধ্যে জালালাবাদ, গন্ধার, বেগ্রাম, সোয়াট, তক্ষশিলা প্রভৃতি অঞ্চলে এই শিল্পের বিকাশ ঘটে। এই শিল্প কুষাণ যুগে সবচেয়ে উন্নতি লাভ করে।

গন্ধার শিল্পের বৈশিষ্ট্য

  • গন্ধার শিল্প গড়ে উঠেছিল গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় শিল্পের মিশ্রণে।
  • এর বিষয়বস্তু ছিল ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্ম ও বুদ্ধের মূর্তি।
  • বুদ্ধের মূর্তি তৈরি করতে ব্যবহার করা হতো
  • চুন, বালি, প্লাস্টার অব প্যারিস, পোড়ামাটি, কালো পাথর ও সোনালি রং।
  • মূর্তিগুলি সাধারণত তৈরি হত ভারতীয় ও গ্রিক দেব-দেবীর আদলে।
  • মূর্তিগুলির মসৃণতা, প্রাণবন্ততা ও অলংকরণ ছিল এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
  • গন্ধারের শিল্পীরা নতুন ধরনের বুদ্ধ মূর্তি তৈরি করেছিলেন, যেগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল নাক টিকালো, টানা ভুরু ও আধভোজা চোখ।
  • মার্শাল ও পার্সি ব্রাউন এই শিল্পকে ‘গ্রিক-বৌদ্ধ’ শিল্প বলে উল্লেখ করেছেন।
বুদ্ধদেবের মূর্তি
বুদ্ধদেবের মূর্তি

মথুরা শিল্পরীতি – টীকা লেখো।

কুষাণ যুগে গন্ধার শিল্পের পাশাপাশি মথুরা শিল্পও বেশ খ্যাতি লাভ করে।

মথুরা শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য

  • মথুরা শিল্প গড়ে উঠেছিল সম্পূর্ণ ভারতীয় শৈলীতে।
  • মথুরা ভাস্কর্যশিল্পের মূল বিষয় ছিল বৌদ্ধধর্ম, বিশেষ করে বুদ্ধমূর্তি।
  • বুদ্ধের মূর্তিগুলি তৈরি হত লাল চুনাপাথরে। অধিকাংশ মূর্তি ছিল দাঁড়িয়ে থাকা, মাথাহীন এবং চুলের খোঁপার ডিজাইন ছিল না।
  • মূর্তিগুলির বড় আকার এবং মোটা গঠন ছিল এই শিল্পরীতির আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

উদাহরণস্বরূপ, বলা যায়, মথুরা শিল্পের বহু ভাস্কর্যের নমুনা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, কনিষ্কের আমলে প্রতিষ্ঠিত বোধিসত্ত্বের মূর্তি এবং সম্রাট কনিষ্কের মূর্তি (যার মাথা ছিল না)।

বোধিসত্ত্বের মূর্তি
বোধিসত্ত্বের মূর্তি

গুপ্ত আমলের শিল্পচর্চার পরিচয় দাও।

গুপ্ত আমলে শিল্পচর্চার তিনটি প্রধান মাধ্যম ছিল – স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা। গুপ্ত আমলে শিল্পের সঙ্গে ধর্মীয় ধ্যানধারণার সম্পর্ক ছিল খুব স্পষ্ট।

ভাস্কর্য শিল্প – গুপ্ত যুগের ভাস্কর্যে পাথর ও পোড়ামাটির ব্যবহার ছিল অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ যুগের ভাস্কর্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো – সারনাথে পাওয়া ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ ও মথুরার দণ্ডায়মান বুদ্ধ।

স্থাপত্য শিল্প – গুপ্ত আমলে প্রথমবারের মতো ইট বা পাথর দিয়ে মন্দির নির্মাণের রীতি চালু হয়। এছাড়া পাহাড় বা পাথর কেটে মন্দির তৈরি করার প্রচলনও শুরু হয়। মন্দিরের দেয়ালে দেবদেবীর মূর্তি খোদিত থাকত। উদাহরণস্বরূপ, দেওঘরের দশাবতার মন্দিরের কথা বলা যেতে পারে।

চিত্রশিল্প – গুপ্ত যুগে চিত্রশিল্প বিশেষ করে গুহাচিত্রের অনেক উন্নতি হয়। মধ্য ভারতের অজন্তা গুহার চিত্রগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব গুহাচিত্রে বিভিন্ন গাছপালা এবং মানুষের ছবি আঁকা হয়েছিল। চিত্রগুলিতে ব্যবহৃত রং পাথর, মাটি ও গাছপালার উপাদান দিয়ে তৈরি হত। অজন্তা ছাড়াও ইলোরা ও বাঘ গুহার চিত্রও প্রশংসনীয়।

গুপ্ত ও পল্লব শিল্পের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

গুপ্ত যুগে ইট ও পাথর দিয়ে প্রথম মন্দির স্থাপত্যের শুরু হয়। গুহা স্থাপত্য আরও উন্নত হয় এবং গন্ধার শিল্পের প্রভাবমুক্ত ভাস্কর্যের সূচনা হয়।

গুপ্ত যুগের শিল্পকলার বৈশিষ্ট্য

মন্দির স্থাপত্য – গুপ্ত যুগের শেষে মন্দির স্থাপত্যের তিনটি শৈলী উদ্ভূত হয়। এগুলো হলো –

  1. নাগর (বর্গাকৃতি মন্দির ও মোচাকৃতি চূড়া)
  2. দ্রাবিড় (অষ্টকোণাকৃতি মন্দির)
  3. বেসর (বৃত্তাকৃতি মন্দির)

উদাহরণস্বরূপ, গুপ্ত যুগের সবচেয়ে ভালো মন্দির স্থাপত্যের উদাহরণ হলো – তিগোয়ার বিষ্ণুমন্দির, ভূমারের শিবমন্দির, কোটেশ্বর, মনিনাগ ও সাঁচির মন্দির। পার্সি ব্রাউন দেওঘরের দশাবতার মন্দিরটিকে গুপ্ত যুগের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম বলে মনে করেন। অজন্তা, ইলোরা ও উদয়গিরির গুহা-মন্দিরগুলো আজও আমাদের মুগ্ধ করে।ইলোরা, উদয়গিরির গুহা-মন্দিরগুলি আজও আমাদের বিস্মিত করে।

গুপ্ত যুগের শিল্পকলা
গুপ্ত যুগের শিল্পকলা

পল্লব যুগের শিল্পকলার বৈশিষ্ট্য

দক্ষিণ ভারতে পল্লব রাজাদের রাজত্বকাল ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পল্লব রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পঞ্চম শতাব্দী থেকে নবম শতকের শেষ পর্যন্ত পল্লব শিল্পের নতুন রীতি উদ্ভূত হয়। পল্লব স্থাপত্য চারটি প্রধান ঘরানায় তৈরি হয়েছিল, যা ছিল –

  1. মহেন্দ্রবর্মন রীতি – এই শৈলীতে পাথর কেটে গুহামন্দির তৈরি করা হত এবং মন্দিরের ছাদের অবলম্বন হিসেবে থামের ব্যবহার করা হত।
  2. নরসিংহবর্মন রীতি – এই শৈলীতে গ্রানাইট পাথর কেটে রথের আদলে মন্দির তৈরি করা হত। মহাবলিপুরমের ‘পঞ্চপাণ্ডব রথ’ ও ‘দ্রৌপদী রথ’ এই শৈলীর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
  3. রাজসিংহ রীতি – এই শৈলীতে পাথর সাজিয়ে মন্দির তৈরি করা হত। এর একটি উদাহরণ হল, কৈলাসনাথ মন্দির।
  4. অপরাজিত রীতি – এই শৈলীতে চোল স্থাপত্যের প্রভাব স্পষ্ট ছিল এবং এটি পল্লব স্থাপত্যের একটি বিশেষ শৈলী হিসেবে গড়ে ওঠে।

সাহিত্যে নীতিশিক্ষার বিবরণ দাও।

প্রাচীন ভারতে সঠিক ও ভুল বিচার এবং নীতির শিক্ষা দেওয়ার জন্য কিছু সাহিত্য রচিত হয়েছিল। এসব গল্পে মানুষ ও পশুপাখি প্রধান চরিত্র হিসেবে থাকে, এবং গল্পগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল আচরণ ও নীতির শিক্ষা দেওয়া। এজন্য এসব গল্পকে বলা হত “নীতিশিক্ষার সংকলন”।

প্রাচীন ভারতে এক ধরনের নীতিশিক্ষামূলক গল্প সংকলন ছিল, যার নাম পঞ্চতন্ত্র। এটি সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেছিলেন পণ্ডিত বিষ্ণুশর্মা, সম্ভবত খ্রিস্টীয় প্রথম বা দ্বিতীয় শতাব্দীতে। পঞ্চতন্ত্র ছাড়াও জৈন ও বৌদ্ধ সাহিত্যেও নীতিশিক্ষামূলক গল্প পাওয়া যায়, যেমন বৌদ্ধ জাতক গল্পগুলো। তামিল সাহিত্যেও এরকম গল্প পাওয়া যায়।

প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে তক্ষশিলার গুরুত্ব লেখো।

অথবা, তক্ষশিলা মহাবিহার সম্পর্কে কী জানো লেখো।

প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অনেক মহাবিহার গড়ে উঠেছিল। এগুলো ছিল শিক্ষার জায়গা। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল তক্ষশিলা মহাবিহার।

  • সময় – খুব সম্ভবত বৈদিক যুগে (খ্রিস্টপূর্ব 1000 অব্দ) তক্ষশীলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছিল। মৌর্য যুগেও এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
  • শিক্ষাকেন্দ্র – পরে এই মহাবিহারটি একটি শিক্ষাকেন্দ্র হয়ে ওঠে এবং এর খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এখানে চিকিৎসক জীবক, ব্যাকরণবিদ পাণিনি এবং চাণক্যের মতো পণ্ডিতরা পড়াশোনা করেছিলেন। চিনা পর্যটক ফা হিয়েন (405 খ্রিস্টাব্দ) এখানে এসেছিলেন এবং তাঁর লেখায় এর উল্লেখ রয়েছে।
  • শিক্ষাব্যবস্থা – এখানে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ছাত্ররা উচ্চ শিক্ষা লাভ করত। জানা যায়, 16 বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ছাত্ররা এখানে ভর্তি হতে পারত। এখানে 8 বছর পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল। এখানে পরীক্ষা ছিল সহজ এবং লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না।
  • পাঠক্রম – এখানে বেদ, জ্যোতির্বিদ্যা, কারিগরিবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, বাণিজ্য, কৃষি, হিসাবরক্ষণ, শিক্ষাকর্ম, অঙ্কন, যুদ্ধবিদ্যা, ভেষজশিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে পড়ানো হত।
  • অন্যান্য বিষয় – এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অবৈতনিক ছিল না। শিক্ষাব্রতী ছাত্ররা পড়াশোনা শেষ করে বা ভর্তি হওয়ার সময় কিছু বেতন দিত। সাধারণ ছাত্ররা 1000 স্বর্ণমুদ্রা বেতন হিসেবে দিত। তবে এখানে ভর্তি হওয়ার জন্য একমাত্র শর্ত ছিল যোগ্যতা।

প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সাহিত্যচর্চার পরিচয় দাও।

ভারতীয় উপমহাদেশে সাহিত্যচর্চার সূচনা হয় বৈদিক যুগে। সেই ধারা অব্যাহত ছিল গুপ্ত যুগ ও তার পরবর্তী সময়।

  • ধর্মগ্রন্থ – প্রাচীন ভারতে অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ রচিত হয়। মূলত এই সাহিত্যগুলির ভাষা ছিল সংস্কৃত। তবে বৌদ্ধধর্মগুলি লিখিত হয় পালি ভাষায়। এছাড়া বেশ কিছু গ্রন্থ প্রাকৃত ভাষায় লেখা হয়। ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- বেদ, উপনিষদ, স্মৃতি সাহিত্য, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, জাতক, ত্রিপিটক, মহাবংশ, দীপবংশ, ভগবতীসূত্র, পরিশিষ্ট পার্বণ ইত্যাদি।
  • জীবনচরিত – প্রাচীন ভারতে অসংখ্য জীবনীমূলক সাহিত্য লিখিত হয়, যথা-বাণভট্টের হর্ষচরিত, বিলহনের বিক্রমাঙ্কদেব চরিত, সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত, বাষ্পতির গৌড়বহো ইত্যাদি।
  • ব্যাকরণ গ্রন্থ – এযুগে অনেক ব্যাকরণ গ্রন্থ রচিত হয়। সেই তালিকায় রয়েছে পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী, পতঞ্জলির মহাভাষ্য ইত্যাদি।
  • নাট্যশাস্ত্র – এযুগে লিখিত বিখ্যাত নাটক ছিল শূদ্রকের মৃচ্ছকটিকম, বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস ও দেবীচন্দ্রগুপ্তম, কালিদাসের মেঘদূতম, কুমারসম্ভবম ও অভিজ্ঞানশকুন্তলম, হর্ষবর্ধনের নাগানন্দ, রত্নাবলী প্রভৃতি।
  • রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক – মৌর্যযুগে রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে গ্রন্থ লেখেন কৌটিল্য। তাঁর লেখা অমূল্য গ্রন্থটি হল অর্থশাস্ত্র।
  • চিকিৎসা বিদ্যা বিষয়ক – বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে প্রথম গ্রন্থ লেখেন চরক। তাঁর লেখা গ্রন্থটি হল চরক সংহিতা। শুশ্রুত লেখেন শুশ্রুত সংহিতা। চক্রপাণি দত্ত লেখেন আয়ুর্বেদ দীপিকা। সুরেশ্বর লেখেন লৌহপদ্ধতি ইত্যাদি।
  • গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ক – কুষাণ যুগে নাগার্জুন বিজ্ঞান বিষয়ক মাধ্যমিত্র সূত্র নামে একটি গ্রন্থ লেখেন। গুপ্তযুগে আর্যভট্ট লেখেন সূর্যসিদ্ধান্ত। জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ বৃহৎসংহিতা লেখেন বরাহমিহির। গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রহ্মগুপ্ত লেখেন ব্রহ্মসিদ্ধান্ত নামক একটি বিখ্যাত গ্রন্থ।

জীবক কে ছিলেন? তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দাও।

অথবা, জীবক – টীকা লেখো।

জীবক ছিলেন বুদ্ধের সময়কালের বিখ্যাত চিকিৎসক।

জীবক সম্পর্কিত তথ্য

প্রথম জীবন – জীবকের আসল নাম জীবক কুমার ভক্ক। সম্ভবত তিনি 540 খ্রিস্টপূর্বাব্দে মগধের রাজগৃহে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর তিনি তক্ষশিলা চলে যান। সেখানে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি গৌতম বুদ্ধের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।

জন্মকাহিনি – মগধরাজ বিম্বিসারের পুত্র অভয় কুমার শিশু জীবককে একটি বাগান থেকে উদ্ধার করেন। নবজাতক হয়েও যেহেতু তাঁর মৃত্যু হয়নি, সেহেতু তাঁর নাম রাখা হয় জীবক। তাঁর মা শালবতী ছিলেন একজন গণিকা।

শিক্ষালাভ কাহিনি – তক্ষশীলায় তিনি গুরু আত্রেয়-এর কাছে চিকিৎসাবিদ্যা ও ভেষজ বিদ্যা লাভ করেন। এ নিয়ে একটি কাহিনির প্রচলন আছে। জানা যায়, শিক্ষাশেষে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছাত্র যে কিনা গুরুর পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

কর্মজীবন – শিক্ষালাভ শেষ করে তিনি মগধে ফিরে আসেন। জানা যায়, তিনি গৌতম বুদ্ধের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। এছাড়া মগধরাজ বিম্বিসারের চিকিৎসা করতেন। তাঁর গুণের শেষ ছিল না। তিনি শল্যবিদ্যা ও ভেষজবিদ্যায় বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। ফলে দিকে দিকে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রন্থরচনা – তিনি রোগ নির্ণয় ও তার চিকিৎসা নিয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এগুলির মধ্যে অন্যতম কাশ্যপ সংহিতা।

প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসের উপাদান হিসেবে চরক সংহিতা ও শুশ্রুত সংহিতার গুরুত্ব আলোচনা করো।

প্রাচীন ভারতে, বিশেষ করে কুষাণ যুগ থেকে শুরু করে গুপ্তযুগ পর্যন্ত চিকিৎসা বিষয়ক অনেক গ্রন্থ রচিত হয়। এগুলির মধ্যে অন্যতম চরক সংহিতা ও শুশ্রুত সংহিতা।

চরক সংহিতা

চরক সংহিতা রচনা করেন আয়ুর্বেদজ্ঞ চরক। গ্রন্থটি কুষাণ যুগে লিখিত হয়। এই গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি ছিল –

  • এই গ্রন্থে প্রায় 700টি ঔষধি গাছের নাম আছে। তার গুণাগুণের কথাও বলা হয়েছে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রের এটিই ছিল প্রাথমিক গ্রন্থ।
  • এই গ্রন্থে সমকালীন মানুষের বিভিন্ন রোগের কথা বলা হয়েছে।
  • একটি আদর্শ রোগী সেবাকেন্দ্র বা হাসপাতাল কেমন হওয়া দরকার সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এসব দিক থেকে বিচার করলে বর্তমান কালেও এই গ্রন্থটি আয়ুর্বেদবিদ্যার একটি মূল্যবান দলিল।

শুশ্রুত সংহিতা

শুশ্রুত সংহিতা হল একটি চিকিৎসাশাস্ত্র। এর রচয়িতা ছিলেন শল্যবিদ শুশ্রুত। এই গ্রন্থ থেকে শল্য চিকিৎসা বিষয়ক নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানা যায়, যেমন কিভাবে শব ব্যবচ্ছেদ করা হত, শল্য চিকিৎসা করা হত, হাত ভেঙে গেলে বা কান কেটে গেলে কীভাবে সেগুলি পুনরায় জোড়া লাগান হত প্রভৃতি বিষয়।

গুপ্তযুগে বিজ্ঞানচর্চা সম্পর্কে কী জানো?

প্রাচীন ভারতে বিশেষ করে গুপ্তযুগে বিজ্ঞানচর্চার ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

  • গণিতশাস্ত্র – গুপ্তযুগে গণিতশাস্ত্রের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। আর্যভট্ট, বরাহমিহির ও ব্রহ্মগুপ্ত ছিলেন এযুগের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ। মনে করা হয় যে, আর্যভট্ট ত্রিকোণমিতির সাইন ও কোসাইন-এর উদ্ভাবক ছিলেন। আর্যভট্ট তাঁর ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা প্রকাশ করেন। 365 দিনে যে এক বছর এই হিসাব আর্যভট্টই করেছিলেন। দশমিক পদ্ধতির প্রয়োগ তিনি করেছিলেন।
  • জ্যোর্তিবিদ্যা – বরাহমিহির ছিলেন গুপ্তযুগের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ। তিনি রচনা করেন-‘বৃহৎসংহিতা’ ও ‘পঞ্চ-সিদ্ধান্তিকা’। প্রদ্যুম্ন ও বিজয়নন্দিন ছিলেন এযুগের অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ব্রহ্মগুপ্ত ‘ব্রহ্মসিদ্ধান্ত’ নামক একটি গণিত বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন।
  • চিকিৎসাবিদ্যা – জানা যায় যে, ধন্বন্তরী ছিলেন গুপ্তযুগের অপর এক বিখ্যাত চিকিৎসক। সংস্কৃতে লিখিত একটি পাণ্ডুলিপি (আনুমানিক চতুর্থ শতক) থেকে (কাশগড়ে প্রাপ্ত) কয়েকজন চিকিৎসকের নাম জানা যায়, যেমন – আত্রেয়, ক্ষারপানি, জাতুকর্ণ, পরাশর, ভেদ, হারীত এবং শুশ্রুত।
  • ধাতু বিদ্যা – গুপ্তযুগে সম্ভবত দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে তৈরি হয়েছিল মেহরৌলি স্তম্ভ। লৌহনির্মিত এই স্তম্ভটি গুপ্তযুগের ধাতু শিল্পের উন্নতির সাক্ষ্য বহন করে। বহু প্রাচীন এই লৌহস্তম্ভটি এখনও মরিচাবিহীন অবস্থায় অক্ষত হয়ে আছে।

প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার অগ্রগতি সংক্ষেপে লেখো।

অথবা, প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চার পরিচয় দাও।

বিভিন্ন প্রামাণ্য তথ্য ও লিখিত উপাদান থেকে বোঝা যায় যে, প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। এ বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল –

  • চিকিৎসা বিজ্ঞান – খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে জীবক নামে প্রথম এক চিকিৎসকের নাম পাওয়া যায়। যিনি গৌতম বুদ্ধের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। তিনি বিম্বিসারেরও চিকিৎসা করতেন। কুষাণ যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। এযুগের বিখ্যাত আয়ুর্বেদজ্ঞ ছিলেন চরক। যিনি ‘চরক সংহিতা’ রচনা করেছিলেন। প্রাচীন ভারতের অপর এক শল্য চিকিৎসক ছিলেন শুশ্রুত। তিনি রচনা করেছিলেন ‘শুশ্রুত সংহিতা’। ধন্বন্তরী ছিলেন গুপ্তযুগের বিখ্যাত চিকিৎসক। এযুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রচুর উন্নতি হয়েছিল। এ যুগের খ্যাতনামা চিকিৎসকগণ ছিলেন – ভেদ, ক্ষারপানি, পরাশর, হারীত প্রমুখ।
  • জ্যোর্তিবিদ্যা – প্রাচীন ভারতে গুপ্তযুগে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় দারুণ উন্নতি হয়। এ যুগের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিদগণ ছিলেন-আর্যভট্ট, বরাহমিহির, বিজয়নন্দিন প্রমুখ। আর্যভট্ট তাঁর সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থে 365 দিনে যে 1 বছর হয় তা বলেছিলেন। বরাহমিহির লেখেন বৃহৎসংহিতা।
  • গণিতশাস্ত্র – কুষাণ যুগে গণিতচর্চায় পথ দেখিয়েছিলেন নাগার্জুন। তিনি এ বিষয়ে মাধ্যমিক সূত্র গ্রন্থটি লিখেছিলেন। গুপ্তযুগের গণিতবিদ ছিলেন ব্রহ্মগুপ্ত। তিনি গণিত বিষয়ে। ব্রহ্মসিদ্ধান্ত নামে গ্রন্থ লেখেন। এছাড়া ছিলেন আর্যভট্ট। মনে করা হয় তিনি সাইন ও কোসাইনের জনক।
  • ধাতুবিজ্ঞান – গুপ্তযুগে তৈরি হয়েছিল দিল্লির মেহেরৌলি লৌহ স্তম্ভ। এটি সেযুগের ধাতু শিল্পের উন্নতির কথা প্রমাণ করে। বহু প্রাচীন এই লৌহ স্তম্ভটি এখনও মরিচাহীন হয়ে অক্ষত থেকে গিয়েছে।

প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পচর্চা সংক্ষেপে লেখো।

স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসে প্রাচীন ভারতের নাম খুবই উজ্জ্বল। এই শিল্পের সূচনা হয়েছিল মূলত মৌর্য যুগে এবং সেই ধারা অব্যাহত ছিল গুপ্ত পরবর্তী যুগে।

  • মৌর্যযুগে শিল্প – সম্রাট অশোকের সময় বহুচৈত্য, বিহার, স্তূপ ও স্তম্ভ নির্মিত হয়। এযুগের স্থাপত্য শিল্পের নমুনা। হল-সারনাথের একশিলা বেষ্টনী, নাগার্জুনী পর্বতের গুহা প্রভৃতি। এছাড়া ভাস্কর্য শিল্পেও এযুগ এগিয়ে ছিল। এর নমুনা হল সারনাথের সিংহস্তম্ভ, ধৌলির হস্তিমূর্তি, বুদ্ধগয়ার বৌদ্ধমন্ড ইত্যাদি।
  • মৌর্য পরবর্তী যুগ – মৌর্য পরবর্তী যুগ বলতে বোঝায় সুঙ্গ-কুষাণ ও সাতবাহন রাজত্বকালকে। এযুগেও স্তূপ, চৈত্য ও বিহার নির্মিত হয়। তবে এযুগে স্থাপত্য শিল্পে পাথরের পাশাপাশি পোড়ামাটির ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়েছিল। কুষাণ যুগেই গড়ে ওঠে গন্ধার শিল্প ও মথুরা শিল্প। গন্ধার শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বুদ্ধের প্রতিকৃতি তৈরি।
  • গুপ্ত যুগ – গুপ্ত যুগে সর্বপ্রথম ইট, কাঠ ও পাথর দিয়ে মন্দির স্থাপত্যের সূচনা হয়। এযুগে গুহা স্থাপত্য পূর্ণতা লাভ করে। অন্যদিকে গন্ধার শিল্পের প্রভাব মুক্ত হয়। এযুগে মন্দির নির্মিত হত 3টি শৈলী দ্বারা, যথা – নাগর, বেসর ও দ্রাবিড় শিল্পরীতি। এযুগে নির্মিত মন্দির স্থাপত্যগুলির মধ্যে অন্যতম তিগোয়ার বিষ্ণুমন্দির, ভূমারের শিবমন্দির, সাঁচির মন্দির ইত্যাদি। এযুগেই নির্মিত হয় অজন্তা, ইলোরার মতো গুহা স্থাপত্যগুলি। এছাড়া এযুগে অনেক ভাস্কর্য নির্মিত হয়, যেমন – সারনাথের দণ্ডায়মান বুদ্ধ ও মথুরার বুদ্ধ।
  • পল্লব যুগ – দক্ষিণ ভারতে পল্লব রাজাদের আমলে অনেক মন্দির নির্মিত হয়। তখন মন্দিরগুলি নির্মিত হত এক একটি গোটা পাহাড় কেটে। মন্দিরগুলি রথের আদলে নির্মিত হত। এগুলির মধ্যে অন্যতম মহাবলিপুরমের পঞ্চপাণ্ডব রথ, দ্রৌপদী রথ ইত্যাদি।

প্রাচীন ভারতে পরিবেশ চিন্তা বলতে কী বোঝো?

বর্তমান পৃথিবীতে পরিবেশ রক্ষার যে লড়াই শুরু হয়েছে তার সূচনা হয়েছিল প্রাচীন ভারতে। সে যুগের শাসকরা এ নিয়ে কতটা চিন্তাভাবনা করতেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল –

  • হরপ্পাবাসীর পরিবেশ ভাবনা – প্রাচীন ভারতের প্রথম সভ্যতা ছিল হরপ্পা সভ্যতা। এই সভ্যতার প্রশাসকরা পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ ছিল। তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় তাদের পরিকল্পনায়। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা এক উন্নত নিকাশী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। রাস্তাঘাটগুলিকে চওড়া করা হত। ঘরে আলো বাতাস ঢোকার জন্য জানালা ও ঘুলঘুলি রাখা হত।
  • বৃক্ষ পূজা – আমরা দেখেছি হরপ্পাবাসীদের বৃক্ষ পূজা করতে। এই ধারা অব্যাহত ছিল বৈদিক যুগ ও তারপর। এই সময় মানুষ বট, অশ্বত্থ সহ বড়ো বড়ো গাছকে পুজো করত। সম্ভবত এর উদ্দেশ্য ছিল বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করা তথা পরিবেশ বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা।
  • বনরক্ষা – মৌর্য যুগে অরণ্য রক্ষার জন্য আইনকানুন তৈরি করা হয়েছিল। এর উল্লেখ আছে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে। এযুগে অরণ্যের ক্ষতি করলে চরম শাস্তির ব্যবস্থা ছিল।
  • অশোকের পরিবেশ ভাবনা – এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিলেন সম্রাট অশোক। পরিবেশ রক্ষা করে মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ঘোষণা করেছিলেন নানান রাজকীয় আইন। যেমন – তিনি যথেচ্ছভাবে প্রাণী হত্যা বন্ধ করতে প্রচার করেন ‘অভিহিশ ভূতানাম’। বিরল প্রজাতির পাখি (যেমন – ময়ূর) হত্যা। তিনি বন্ধ করেছিলেন। পরিবেশ রক্ষার জন্য তিনি। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন।

বিহার ও স্তূপের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।

নিম্নে বিহার ও স্তূপের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হল –

বিহারস্তূপ
বিহারগুলিতে সাধারণত থাকত সারিবদ্ধ ঘর। এগুলির একাধিক তল ছিল। এই তল বা ছাদগুলি থামের ওপর প্রতিষ্ঠিত।কিন্তু বিহারের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে স্তূপস্থাপত্য শৈলীর কোনো মিল নেই। স্তূপগুলি হত সাধারণত বৃত্তাকার। এর প্রধান সারিবদ্ধ অঙ্গ ছিল বেদিকা, অন্ড, হার্মিকা ও ছতরি। এগুলি পাথরের রেলিং দিয়ে ঘেরা থাকত এবং স্তূপগুলিতে প্রবেশ করার জন্য থাকত সুদৃশ্য তোরণ।
বিহারগুলি নির্মিত হত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও ভিক্ষুদের থাকার জন্য। এখানে তারা আরাধনা করত, পড়াশোনা করত।কিন্তু স্তূপগুলিতে আরাধনা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
বিহারগুলির সঙ্গে গৌতম বুদ্ধের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল না।কিন্তু স্তূপগুলির সঙ্গে ছিল। কারণ এগুলি নির্মিত হত বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান-গুলিতে অথবা তাঁর ব্যবহৃত বস্তু ও দেহাভস্ম নিয়ে।
অনেকগুলি গুহা বা ঘর নিয়ে বিহারগুলি তৈরি হত। এগুলির আকার ছিল লম্বাকৃতি।কিন্তু স্তূপগুলির আকার ছিল অর্ধবৃত্তাকার। সেখানে ঘর তৈরি করা হত না।
বিহারগুলি নির্মিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে শুরু করে পাল যুগ পর্যন্ত।
প্রথমদিকে বিহারগুলি নির্মিত হত পাহাড় কেটে অথবা পাথর দিয়ে। পরে ইট, কাঠ প্রভৃতি উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়।কিন্তু স্তূপ স্থাপত্যগুলির মূল উপাদান ছিল পাথর।

‘মৌর্য ও গুপ্ত আমলের শিল্পচর্চার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ধারণার তফাতের ছাপ ফুটে উঠেছে।’ -উদাহরণ-সহ মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

মৌর্য ও গুপ্ত যুগে অনুসৃত শিল্পচর্চার মধ্যে ধর্মীয় ধারণার তফাত লক্ষ করা যায়, যেমন –

মৌর্য যুগগুপ্তযুগ
মৌর্যযুগের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। তাই সে যুগে তৈরি হত স্তূপ ও চৈত্য।গুপ্ত রাজারা বৌদ্ধ ছিলেন না, তাঁরা ছিলেন ব্রাহ্মণ্য ধর্মে বিশ্বাসী। তাই এযুগে গড়ে ওঠে অসংখ্য মন্দির স্থাপত্য।
বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান – গুলিতে মূলত স্তূপগুলি নির্মিত হত।মন্দির নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই ধারণা কাজ করত না।
বৌদ্ধ স্তূপগুলিতে (যেমন – ভারহুত, সাঁচি, অমরাবতী) বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন প্রতীক কাহিনি ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হত।অন্যদিকে মন্দিরগুলিতে স্থান পেত বিভিন্ন দেব-দেবতার চিত্র ও মূর্তি।
এযুগে নির্মিত স্তূপগুলিতে সরাসরি বুদ্ধের মূর্তি রাখা হত না। কারণ তখন বুদ্ধের মূর্তি পুজোর সূচনা হয়নি।কিন্তু গুপ্তযুগে নির্মিত মন্দির গুলির গর্ভগৃহে বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি দেবতার মূর্তি রাখা হত। কারণ তখন দেব- দেবতার মূর্তি পুজোর রীতি ছিল।
এযুগে চৈত্য বা কৃত্রিম গুহাগুলি তৈরি করা হত মূলত আজীবিক ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের থাকার জন্য এবং তাদের ধর্মাচরণের জন্য।কিন্তু গুপ্তযুগে মন্দিরগুলিতে থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সেখানে কেবল পূজাপাঠ হত।

স্তূপ, চৈত্য ও বিহার সম্পর্কে যা জানো লেখো।

প্রাচীন ভারতে মৌর্য যুগে প্রকৃত স্থাপত্য শিল্পের সূচনা হয়। এযুগের স্থাপত্য শিল্প বলতে বোঝায় স্তূপ, চৈত্য ও বিহারকে। তবে মৌর্য পরবর্তী যুগেও এই স্থাপত্য শিল্পের ধারা অব্যাহত ছিল।

স্তূপ – গৌতম বুদ্ধ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর শিষ্য আনন্দকে বলে যান যে, তারা যেন তাঁর মৃত্যুর পর স্তূপ তৈরি করেন। তিনি চেয়েছিলেন তারা যেন স্তূপে গিয়ে প্রার্থনা করে শান্তি পায়। এই উদ্দেশ্যে ভারতের নানা স্থানে বৌদ্ধরা স্তূপ নির্মাণ শুরু করে। সম্রাট অশোকের সময় এরূপ 84টি স্তূপ তৈরি হয়। সেযুগের বিখ্যাত স্তূপটি ছিল সাঁচির স্তূপ। স্তূপগুলি দেখতে অর্ধবৃত্তাকার। এতে থাকে তোরণ বা প্রবেশদ্বার, যেমন সাঁচিস্তূপের চারটি তোরণ আছে। স্তূপগুলি নির্মিত হত সাধারণ মানুষ, ধনী ব্যক্তি অথবা রাজার দানে। স্তূপগুলি সাধারণত তৈরি হত গৌতম বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলিতে। কয়েকটি স্তূপ হল – ভারহুত স্তূপ, অমরাবতী স্তূপ, সারনাথের ধামেকস্তূপ প্রভৃতি।

চৈত্য – বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কৃত্রিম গুহাগুলিকে বলা হত চৈত্য। মৌর্য যুগে এমন অনেক চৈত্য নির্মিত হয়। যেমন – বরাবর ও নাগার্জুনী পর্বতে নির্মিত গুহা-চৈত্য। এগুলি সাধারণত তৈরি করা হত পাহাড় কেটে। এর আকার হত লম্বাকৃতি। এর শেষ প্রান্তে থাকত একটি করে স্তূপ। সেখানে উপাসনা হত চৈত্যগুলিতে বৌদ্ধ-জৈন সন্ন্যাসী ও ভিক্ষুরা বসবাস করত, বিদ্যাচর্চা করত ও ধর্মাচরণ করত। সাতবাহন আমলে নাসিক, পিতলখোরা প্রভৃতি অঞ্চলে চৈত্য নির্মিত হয়েছিল।

বিক্রমশীল মহাবিহার
বিক্রমশীল মহাবিহার

বিহার – প্রাচীন ভারতে স্থাপত্য শিল্পের জন্য একটি নমুনা ছিল বৌদ্ধবিহার। এই বিহারগুলিতে বৌদ্ধরা বসবাস করত, পড়াশোনা করত। এরূপ বৌদ্ধবিহারের নমুনা হল সোমপুর মহাবিহার, ওদন্তপুরী মহাবিহার, বিক্রমশীল মহাবিহার। এগুলি তৈরির উপাদান ছিল ইট, কাঠ ও পাথর।

ধর্মশাস্ত্রের সঙ্গে প্রাচীন চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন সময়ে বিরোধ তৈরি হয়েছিল কেন?

অথবা, প্রাচীন ভারতীয় সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ কীভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তা আলোচনা করো।

প্রাচীন ভারতে বিশেষ করে বৈদিক যুগ ও তত্পরবর্তী সময়ে রচিত হয় নানান ব্রাহ্মণ্যশাস্ত্র। এই সমস্ত শাস্ত্র চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চার ঘোর বিরোধী ছিল। এই বিরোধিতার কারণ ছিল –

  • জন্মান্তরবাদের ধারণ – প্রাচীন ভারতের ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রে জন্মান্তরবাদের ধারণা ছিল প্রবল। এই মত অনুসারে মানুষ পূর্বজন্মে পুণ্য সঞ্চয় করলে তার ফল ভোগ করে পরজন্মে। সেই পুণ্যের জন্যই মানুষ রোগভোগের হাত থেকে রক্ষা পায়। স্বভাবতই এই ধারণা চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চার পক্ষে যায়নি।
  • খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল – প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র একজন রোগীকে খাদ্য হিসেবে যে খাদ্য তালিকা দিত তা ছিল ব্রাহ্মণ্যশাস্ত্র বিরোধী। কারণ ব্রাহ্মণ্য ধর্মে খাদ্যগ্রহণে নানান বিধিনিষেধ ছিল। ফলে ধর্মশাস্ত্রের সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চার বিরোধ দেখা দেয়।
  • শল্য চিকিৎসায় নিষেধাজ্ঞা – ব্রাহ্মণ্য ধর্মের রীতি অনুযায়ী প্রাচীন ভারতে শবদেহ ছোঁয়া বারণ ছিল। এটি ছিল ধর্ম ও সমাজ বিরুদ্ধ কাজ। কিন্তু শল্য চিকিৎসায় শবদেহ ছোঁয়া এবং শব ব্যবচ্ছেদ করা ছিল একটি প্রয়োজনীয় অঙ্গ। ফলে ব্রাহ্মণ্যশাস্ত্রের বিরোধীতা করে শল্য চিকিৎসা বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

উপসংহার

এসব কারণে প্রাচীন ভারতে শুশ্রুতের মতো চিকিৎসকের আবির্ভাব ঘটলেও এদেশের শল্য চিকিৎসা | বিজ্ঞান চর্চার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তার জ্বলন্ত উদাহরণ হল গুপ্ত যুগ। এযুগে ভারতে সুবর্ণযুগের সূচনা | হলেও শল্য চিকিৎসা চর্চা ছিল ম্রিয়মান।

বৌদ্ধ স্তূপের গঠন প্রণালী ব্যাখ্যা করো।

প্রাচীন ভারতের স্থাপত্যশৈলী গুলির মধ্যে অন্যতম হল স্তূপশৈলী। মৌর্যযুগ থেকে ভারতে প্রথম স্তূপস্থাপত্যের সূচনা হয়। এসময় ভারতে অনেকগুলি স্তূপ স্থাপিত হয়। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল সাঁচির স্তূপ।

  • উপকরণ – স্তূপ কথাটি একটি সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ ঢিপি। এগুলি অর্ধবৃত্তাকার ঢিপি হয়। এর মূল উপকরণ ছিল পাথর, বাঁশ, কাঠ ইত্যাদি। স্তূপ অন্ড (Anda) নামেও পরিচিত হয়।
  • হার্মিকা – অন্ডের ওপর স্থাপিত হয় একটি ঝুলবারান্দা, যেগুলিকে বলা হয় হার্মিকা (Harmika)। এখানে স্থাপিত হত একটি আয়তাকার ঘর, যাকে বলা হয় দেবতার ঘর।
  • ছতরি – হার্মিকার ওপর ক্রমানুসারে স্থাপন করা হয় ছতরি বা ছাতা। স্তূপের উপরিভাগে নির্মিত দেবতার ঘরের চারপাশে একটি বেড়া দেওয়া হত, যাতে এই পবিত্র স্থানটির পবিত্রতা বজায় থাকে।
  • তোরণ – সাঁচির স্তূপের চারদিকে সুদৃশ্য তোরণ গড়ে তোলা হয়েছে। পূর্বদিকের তোরণ বা প্রবেশপথ দিয়ে পুণ্যার্থীরা প্রবেশ করত এবং দক্ষিণাবর্তে স্তূপের চারপাশ প্রদক্ষিণ করত।
  • কুলুঙ্গি – পরে এই স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত হয় অনেক কুলুঙ্গি। ঝুলবারান্দার চারধারে পাথরনির্মিত বেড়ার বদলে কাঠ ও বাঁশের বেড়া ব্যবহার করা হয়।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, “প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক (শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্প)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন