আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়, সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ) অধ্যায়ের পাঠ্যাংশের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।
নীচের বাক্যগুলির কোনটি ঠিক কোনটি ভুল লেখো
সেলিউকাস ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মধ্যে চিরকাল শত্রুতা ছিল।
উত্তর – ভুল
মৌর্য আমলে মেয়েরাও মহামাত্যের দায়িত্ব পেতেন।
উত্তর – ঠিক
কুষাণরা এদেশেরই মানুষ ছিলেন।
উত্তর – ভুল
প্রথম চন্দ্রগুপ্ত গুপ্তাব্দ গোনা চালু করেন।
উত্তর – ঠিক
নীচের বিবৃতিগুলির সঙ্গে কোন্ ব্যাখ্যাটি সবথেকে বেশি মানানসই বেছে বের করো
বিবৃতি – অশোক তাঁর সাম্রাজ্যে পশুহত্যা বন্ধ করেছিলেন।
- ব্যাখ্যা – 1. তাঁর রাজ্যে পশুর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।
- ব্যাখ্যা – 2. ধন্মের অনুসরণ করার জন্য।
- ব্যাখ্যা – 3. পশুবাণিজ্য বাড়ানোর জন্য।
উত্তর – ব্যাখ্যা – 2. ধন্মের অনুসরণ করার জন্য।
বিবৃতি – কুষাণ সম্রাটরা নিজেদের মূর্তি দেবকুলে রাখতেন।
- ব্যাখ্যা – 1. তাঁরা ছিলেন দেবতার বংশধর।
- ব্যাখ্যা – 2. তাঁরা প্রজাদের সামনে নিজেদের দেবতাদের মতোই সম্মাননীয় বলে হাজির করতেন।
- ব্যাখ্যা – 3. তাঁরা দেবতাকে খুব ভক্তি করতেন।
উত্তর – ব্যাখ্যা – 2. তাঁরা প্রজাদের সামনে নিজেদের দেবতাদের মতোই সম্মাননীয় বলে হাজির করতেন।
বিবৃতি – গুপ্ত সম্রাটরা বড়ো বড়ো উপাধি নিতেন।
- ব্যাখ্যা – 1. উপাধিগুলি শুনতে ভালো লাগত।
- ব্যাখ্যা – 2. উপাধিগুলি প্রজারা দিত।
- ব্যাখ্যা -3. সম্রাটরা এর মাধ্যমে নিজেদের বিরাট ক্ষমতাকে তুলে ধরতেন।
উত্তর – ব্যাখ্যা -3. সম্রাটরা এর মাধ্যমে নিজেদের বিরাট ক্ষমতাকে তুলে ধরতেন।
বিবৃতি – সুয়ান জাং চিন থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন।
- ব্যাখ্যা – 1. ভারতীয় উপমহাদেশে বেড়ানোর জন্য।
- ব্যাখ্যা – 2. হর্ষবর্ধনের শাসন বিষয়ে বই লেখার জন্য।
- ব্যাখ্যা – 3. বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে আরও পড়াশোনা করার জন্য।
উত্তর – ব্যাখ্যা – 3. বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে আরও পড়াশোনা করার জন্য।
নিজের ভাষায় ভেবে লেখো (তিন/চার লাইন)
কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলাফলের সঙ্গে অশোকের ধম্মের কী সম্পর্ক? ধম্ম তাঁর শাসনকে কতটা প্রভাবিত করেছিল?
কলিঙ্গ যুদ্ধের ফলাফলের সঙ্গে সম্রাট অশোকের ধম্মের সম্পর্ক ছিল গভীর। কারণ এই যুদ্ধে অশোক জয়ী হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু যুদ্ধে মানুষের মৃত্যু, রক্তের স্রোত ও স্বজনহারা মানুষের কান্না দেখে তাঁর নিদারুণ কষ্ট হয়। এই যুদ্ধের জন্য তিনি অনুশোচনায় দগ্ধ হন। তাই তিনি যুদ্ধনীতি ত্যাগ করে ধর্মবিজয় নীতি অর্থাৎ, মানুষের মন ভালোবাসার দ্বারা জয় করার নীতি গ্রহণ করেন এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উপগুপ্তের নিকট বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, এবার থেকে শান্তি ও অহিংসার পথে চলবেন।
ধম্মের প্রভাব
সম্রাট অশোকের শাসনব্যবস্থায় তাঁর ধম্মের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। যেমন –
- নতুন কর্মচারী নিয়োগ – কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক যুদ্ধনীতি ত্যাগ করে ধর্মবিজয় নীতি গ্রহণ করে। এ ছাড়া প্রজারা যাতে শান্তিতে ধর্ম পালন করতে পারে তার জন্য তিনি ধর্মমহামাত্র নামে এক প্রকার নতুন রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন।
- মৃত্যুদণ্ড রদ – তিনি বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ড রদ করেন।
- বিভিন্ন কর্মসূচি – প্রজাদের কল্যাণের জন্য তিনি নানান কর্মসূচির উদ্যোগ নেন। রাস্তাঘাট, চিকিৎসালয়, সরাইখানা ইত্যাদি নির্মাণ করেন। এককথায় প্রজাকল্যাণই ছিল তাঁর শাসনব্যবস্থার মূলভিত্তি।
মৌর্য সম্রাটরা গুপ্তচর কেন নিয়োগ করতেন?
মৌর্য সম্রাটরা সাম্রাজ্যের সমস্ত খোঁজখবর পাওয়ার জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করতেন। সম্রাট অশোক সাম্রাজ্যের খবর সংগ্রহের জন্য প্রতিবেদক নামে একশ্রেণির রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন। বিদেশি বা অচেনা সন্দেহজনক লোকেদের ওপর গুপ্তচরদের তীক্ষ্ণ নজর থাকত। রাজকর্মচারী ও রাজপুত্ররাও এর বাইরে ছিলেন না। এমনকি রাজপ্রাসাদেও রাজার প্রহরী হিসেবে নারী গুপ্তচরদের নিয়োগ করা হত।
মৌর্য সম্রাট ও গুপ্ত সম্রাটদের মধ্যে ক্ষমতা ও মর্যাদার তুলনা করো।
মৌর্য ও গুপ্ত সম্রাটদের মধ্যে ক্ষমতা ও মর্যাদার তুলনা –
মৌর্য সম্রাট | গুপ্ত সম্রাট |
মৌর্য সম্রাটরা ভালোভাবে শাসনকাজ চালানোর চেষ্টা করতেন। | গুপ্ত সম্রাটরাও ভালোভাবে শাসনকাজ চালানোর চেষ্টা করতেন। |
বিচারব্যবস্থার ঊর্ধ্বে ছিলেন স্বয়ং মৌর্য সম্রাট। | বিচারব্যবস্থার ঊর্ধ্বে ছিলেন স্বয়ং গুপ্ত সম্রাট। |
দেবতাদের প্রিয় উপাধি ব্যবহার করে মৌর্য সম্রাটরা তাঁদের ক্ষমতা জাহির করতেন। | বিরাট ক্ষমতা বোঝানোর জন্য গুপ্ত সম্রাটরাও নানা উপাধি ব্যবহার করতেন। |
মৌর্য সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন মৌর্য সম্রাট। | গুপ্ত সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন গুপ্ত সম্রাট। |
হাতেকলমে করো
মৌর্য, কুষাণ ও গুপ্ত আমলের মুদ্রাগুলির তুলনা করলে কী কী মিল-অমিল দেখা যাবে?
মৌর্য, কুষাণ ও গুপ্ত আমলের মুদ্রাগুলির তুলনা –
মৌর্য আমলের মুদ্রা | কুষাণ আমলের মুদ্রা | গুপ্ত আমলের মুদ্রা |
মৌর্য আমলের মুদ্রাগুলি ছিল তামার। | কুষাণ আমলেও তামার মুদ্রা পাওয়া গেছে। | গুপ্ত আমলেও তামার মুদ্রা পাওয়া গেছে। |
মৌর্য আমলের মুদ্রাগুলি ছিল চৌকো। | কুষাণ আমলের মুদ্রাগুলি ছিল গোলাকার। | গুপ্ত আমলের মুদ্রাগুলি ছিল গোলাকার। |
মৌর্য আমলের মুদ্রায় কোনো মূর্তি পাওয়া যায় না। | কুষাণ আমলের মুদ্রায় রাজার মূর্তি পাওয়া যায়। | গুপ্ত আমলের মুদ্রায় রাজার মূর্তি পাওয়া যায়। |
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়, “সাম্রাজ্য বিস্তার ও শাসন (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ)” অধ্যায়ের পাঠ্যাংশের অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!