পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা
পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার” – সুকান্ত ভট্টাচার্য

ভূমিকা –

পারিপার্শ্বিক উদ্ভিদ ও জীবজগৎ-সহ আমরা যেখানে বাস করি, তাই হল পরিবেশ। শিল্পবিপ্লবের আগে প্রাকৃতিক নিয়মে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হতো, জীবকুল সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাস করতো। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি দহন যখন থেকে প্রকৃতির হৃৎপিন্ডে বিষবাষ্প ঢালতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে চলেছে। আজ মারাত্মক দূষিত আমাদের এই পরিবেশ। সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এই ভারসাম্য রক্ষায় ছাত্র সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

যান্ত্রিক সভ্যতা ও পরিবেশের ভারসাম্য –

দিন যত এগিয়ে চলেছে যন্ত্রসভ্যতার ততই প্রসার ঘটেছে। তাতেই বিঘ্নিত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বৃক্ষচ্ছেদন, নগরায়ন, শিল্প-কারখানা নির্মাণ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ, জনবিস্ফোরণ প্রভৃতির কারণে পরিবেশ আজ কলুষিত। আজ অবহেলিত পরিবেশ, আমরা মনযোগ দিতে পারেনি পরিবেশের ভারসাম্যের দিকে।

ভারসাম্যের সংকট –

আজ প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিটি উপাদান যথা মাটি, জল, বায়ু মারাত্মকভাবে দূষিত। কলকারখানা, যানবাহন ও জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে বাতাসে মিশছে কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস বেড়েই চলেছে। কৃষি কলকারখানা, গৃহস্থালির দূষিত বর্জ্য জল ও মাটিকে দূষিত করে চলেছে। দূষিত হচ্ছে শব্দ ও দৃশ্য। বেড়ে চলেছে দুর্যোগ ও বিপর্যয়।

ভারসাম্য রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা/পরিবেশ উন্নয়নমূলক কর্মসূচী –

ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনন্ত সম্ভাবনাকে পরিবেশের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে হবে। তাই সর্বপ্রথম তাদের মধ্যে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতার বীজ রোপণ করতে হবে। যা একসময় মূল্যবোধের মহীরুহ হয়ে উঠবে। তখন আপনা থেকেই তাদের মধ্যে পরিবেশের উন্নয়নমূলক বিষয়ে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ জন্মাবে। ছাত্র-ছাত্রীরা পরিবেশের উন্নয়নমূলক নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে।

পরিবেশ সচেতনতায় ছাত্রসমাজ –

“আমরা শক্তি আমরা বল আমরা ছাত্রদল” – নজরুলের ছাত্রদল আমরা। আমরা এই পরিবেশের সবথেকে প্রাণবন্ত, সতেজ ও বলিষ্ঠতম অংশ। ছাত্রসমাজ যদি জেগে ওঠে তারা পরিবেশকে সুস্থ স্বাভাবিক করে তুলতেই পারে। আদর্শ পরিবেশ গড়ার ব্রতে ব্রতী হয়ে পরিবেশকে কলুষতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসাবে নিরন্তর প্রচার চালিয়ে যেতে হবে ও তার ফলাফলের পর্যালোচনা করে যেতে হবে।

বৃক্ষরোপণে ছাত্রসমাজ –

পরিবেশ সুরক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। অরণ্য সপ্তাহ পালন, বছরের বিভিন্ন সময়ে গাছ লাগানো (বিশেষ করে বর্ষাকালে) জীবনের যেন একটি ব্রত হয়ে যায়। একটি গাছ, একটি প্রাণ, একটি কাটলে দশটি লাগাও স্লোগান তুলে জনগনকে সচেতন করে তুলতে হবে।

দূষণ নিয়ন্ত্রনে ছাত্রসমাজ –

বায়ু, জল, মাটি, শব্দ, দৃশ্য প্রভৃতি দূষণরোধে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যেমন –

  • নিজেদের বাড়িতে পয়ঃপ্রণালী ঠিক রাখা।
  • গৃহস্থালীর বর্জ্য পদার্থ যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা।
  • হাসপাতাল, নার্সিংহোম, স্কুল, কলেজ প্রভৃতি জায়গা সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • ধূমপান, মদ্যপান, ড্রাগ সেবন প্রভৃতি থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।

অন্যান্য কর্মসূচী –

তাছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভ্রমণ, পৃথিবীর জীব বৈচিত্রের সাথে পরিচিতি, পরিবেশ সচেতনতার প্রসারমূলক প্রচারকার্যে অংশগ্রহণ ইত্যাদিকেও পরিবেশ উন্নয়নমূলক কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। পরিবেশ সম্পর্কিত নানান তথ্য গণমাধ্যমে যাতে প্রচারিত হতে পারে, সে বিষয়ে জনশিক্ষার ব্যবস্থা যাতে গৃহীত হয় তা দেখা উচিত সরকারের। শুধু ছাত্ররা সচেতন হলে হবে না, সেই সচেতনতা যাতে বিস্তৃত হয় সেজন্য দৃঢ় পদক্ষেপ ও কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে সরকারকে এবং সেই সঙ্গে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন জনগণকে। রবীন্দ্রনাথ দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন —

“যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?”

উপসংহার –

সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই বিশুদ্ধ পরিবেশ। তাই আজকের ছাত্রসমাজকে পরিবেশ উন্নয়নে কবিগুরুর এই কথা মনে রেখে ভবিষ্যৎ সুস্থ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই বিশুদ্ধ পরিবেশ। তাই আজকের ছাত্রসমাজকে পরিবেশ উন্নয়নে কবিগুরুর এই কথা মনে রেখে ভবিষ্যৎ সুস্থ পরিবেশের স্বার্থে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে তথা পরিবেশের উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। বর্তমান বিশ্বের মানুষ ছাত্রসমাজের কাছে প্রত্যাশা করে –

“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর”


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।

আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

মঙ্গলের মাটিতে কিছুক্ষণ কাটানোর অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

মঙ্গলের মাটিতে কিছুক্ষণ কাটানোর অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণস্থল উল্লেখ করে এর প্রধান কাজগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

ইনসুলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? উদাহরণসহ হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

প্রাণীদেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

প্রাণী হরমোনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।