এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ব্যবহার উল্লেখ করো। অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ভৌত ধর্মগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ব্যবহার উল্লেখ করো।
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ব্যবহার –
- ভিনিগার প্রস্তুত করতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।
- অ্যাসিটোন, অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড প্রভৃতি প্রস্তুত করতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়।
- বিভিন্ন অ্যাসিটেট লবণ ও ওষুধ প্রস্তুতিতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হয়।
- ফটোগ্রাফিক ফিল্ম, কৃত্রিম তন্তু, সিগারেটের ফিলটার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ভৌত ধর্মগুলি লেখো।
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ভৌত ধর্ম –
- অ্যাসিটিক অ্যাসিড তীব্র গন্ধযুক্ত বর্ণহীন তরল পদার্থ।
- অ্যাসিটিক অ্যাসিড জলে দ্রাব্য। [অ্যাসিটিক অ্যাসিডের লঘু জলীয় দ্রবণকে (4-8%) ভিনিগার বলে।]
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অ্যাসিটিক অ্যাসিড কী?
অ্যাসিটিক অ্যাসিড একটি দুর্বল জৈব অ্যাসিড, যার রাসায়নিক সংকেত CH₃COOH। এটি ভিনিগারের সক্রিয় উপাদান, যা এর টক গন্ধ ও স্বাদের জন্য দায়ী। শিল্পক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক দ্রব্য।
অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও ভিনিগারের মধ্যে পার্থক্য কী?
অ্যাসিটিক অ্যাসিড ও ভিনিগারের মধ্যে পার্থক্য হল –
1. অ্যাসিটিক অ্যাসিড হল 100% বিশুদ্ধ অ্যাসিড। এটি অত্যন্ত সংকরীভবনকারী এবং সরাসরি ব্যবহারের অযোগ্য।
2. ভিনিগার হল অ্যাসিটিক অ্যাসিডের একটি লঘু জলীয় দ্রবণ (সাধারণত 4% থেকে 8%)। এটি খাদ্যে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ।
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের প্রধান ব্যবহারগুলো কী কী?
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ব্যবহার অত্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
1. খাদ্য শিল্প – ভিনিগার তৈরিতে, যা আচার, সস, সালাদ ড্রেসিং ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
2. রাসায়নিক শিল্প – অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য যেমন অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড, অ্যাসিটেট লবণ (সোডিয়াম অ্যাসিটেট), অ্যাসিটোন, পলিভিনাইল অ্যাসিটেট (PVA) প্লাস্টিক ও আঠা তৈরিতে।
3. টেক্সটাইল শিল্প – কৃত্রিম সিল্ক (রেয়ন) ও অন্যান্য সিনথেটিক তন্তু উৎপাদনে।
4. ওষুধ শিল্প – বিভিন্ন ওষুধ (যেমন – অ্যাসপিরিন) এবং ফটোগ্রাফিক ফিল্ম তৈরিতে।
5. গৃহস্থালি – একটি কার্যকরী জীবাণুনাশক ও পরিষ্কারের দ্রব্য হিসাবে।
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের কিছু ভৌত ধর্ম উল্লেখ করো।
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের প্রধান ভৌত ধর্মগুলি হল –
1. এটি একটি বর্ণহীন তরল।
2. এর একটি তীব্র ও স্বতন্ত্র (characteristic) টক গন্ধ আছে।
3. এটি জলে খুব ভালোভাবে দ্রবণীয়।
4. এর গলনাঙ্ক 16.6°C এবং স্ফুটনাঙ্ক 118°C।
5. এটি একটি হাইগ্রোস্কোপিক (আর্দ্রতা শোষণকারী) পদার্থ।
গ্লেসিয়াল অ্যাসিটিক অ্যাসিড বলতে কী বোঝায়?
99–100% বিশুদ্ধতাযুক্ত অ্যাসিটিক অ্যাসিডকে গ্লেসিয়াল অ্যাসিটিক অ্যাসিড বলা হয়। এটি একটি বর্ণহীন তরল যা 16.6°C তাপমাত্রায় বরফের মতো জমে যায়। তাই এর নাম “গ্লেসিয়াল” বা “হিমায়িত” অ্যাসিটিক অ্যাসিড।
অ্যাসিটিক অ্যাসিডকে দুর্বল অ্যাসিড বলা হয় কেন?
অ্যাসিটিক অ্যাসিড জলে দ্রবীভূত হওয়ার পর আংশিকভাবে বিয়োজিত হয়ে H⁺ আয়ন (বা H₃O⁺ আয়ন) উৎপন্ন করে। এটি সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয় না; বরং দ্রবণে অণু ও আয়নের মধ্যে একটি সাম্যাবস্থা স্থাপিত হয়। এই আংশিক বিয়োজনের কারণেই অ্যাসিটিক অ্যাসিডকে একটি দুর্বল অ্যাসিড হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।
অ্যাসিটিক অ্যাসিড থেকে কীভাবে ভিনিগার তৈরি করা হয়?
অ্যাসিটিক অ্যাসিড থেকে ভিনিগার তৈরি –
1. শিল্পোৎপাদিত ভিনিগার তৈরির জন্য অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ঘন দ্রবণকে বিশুদ্ধ জল দ্বারা পাতলা করে সাধারণত 5%–10% ঘনত্বে আনা হয়।
2. প্রাকৃতিকভাবে, ইথানলের (অ্যালকোহল) উপর অ্যাসিটোব্যাক্টর ব্যাকটেরিয়া ক্রিয়া করে গাঁজন (Fermentation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাসিটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, যা ভিনিগার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের নিরাপদ ব্যবহারবিধি কী?
অ্যাসিটিক অ্যাসিডের নিরাপদ ব্যবহারবিধি –
1. ঘন বা গ্লেসিয়াল অ্যাসিটিক অ্যাসিড ত্বক, চোখ ও শ্বাসনালীতে গুরুতর জ্বালা-পোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
2. এটি ব্যবহারের সময় সুরক্ষা চশমা, গ্লাভস ও মাস্ক পরা জরুরি।
3. শুধুমাত্র লঘু দ্রবণ (যেমন ভিনিগার) খাদ্য ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ।
4. সংরক্ষণের সময় এটি শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ব্যবহার উল্লেখ করো। অ্যাসিটিক অ্যাসিডের ভৌত ধর্মগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন