অ্যাড্রিনালিন হরমোন রক্তশর্করার মাত্রা বাড়ায় কেন? অ্যাড্রিনালিনকে ‘আপৎকালীন হরমোন’ বলে কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “”অ্যাড্রিনালিন হরমোন রক্তশর্করার মাত্রা বাড়ায়” – উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। কেন অ্যাড্রিনালিন হরমোনকে ‘আপৎকালীন হরমোন’ বলে?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

"অ্যাড্রিনালিন হরমোন রক্তশর্করার মাত্রা বাড়ায়” - উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। কেন অ্যাড্রিনালিন হরমোনকে 'আপৎকালীন হরমোন' বলে?
Contents Show

“অ্যাড্রিনালিন হরমোন রক্তশর্করার মাত্রা বাড়ায়” – উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

রক্তশর্করা বৃদ্ধিতে অ্যাড্রিনালিনের ভূমিকাগুলি হল –

  • যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে গ্লাইকোজেনোলাইসিস পদ্ধতিতে গ্লুকোজে পরিণত করে।
  • পেশির ল্যাকটিক অ্যাসিডকে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে।

কেন অ্যাড্রিনালিন হরমোনকে ‘আপৎকালীন হরমোন’ বলে?

অথবা, কোন্ হরমোনকে ‘জরুরিকালীন হরমোন’ বলা হয় এবং কেন?
অথবা, এমার্জেন্সি হরমোন কোন্ হরমোনকে বলে এবং কেন?

অ্যাড্রিনালিন 3F অবস্থায় (F-Fight/দ্বন্দ্ব; F-Fright/ভয়; F-Flight/পলায়ন) অধিক মাত্রায় ক্ষরিত হয়। জরুরিকালীন অবস্থায় এই হরমোন দ্রুত ক্রিয়াশীল হয় এবং সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে সেই মুহূর্তে অস্বাভাবিক অবস্থাগুলি মোকাবিলা করার জন্য দেহকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার উপযোগী করে তোলে। এটি সংকটজনক অবস্থায় দেহের শারীরবৃত্তীয় ও বিপাকীয় কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে দেহকে ক্রমশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাই অ্যাড্রিনালিনকে জরুরিকালীন বা আপৎকালীন হরমোন বা এমার্জেন্সি হরমোন বলে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অ্যাড্রিনালিন কী এবং এটি কোথ থেকে নিঃসৃত হয়?

অ্যাড্রিনালিন (ইপিনেফ্রিন) হল এক ধরনের হরমোন ও নিউরোট্রান্সমিটার। এটি অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডুলা অংশ থেকে নিঃসৃত হয়।

অ্যাড্রিনালিন কীভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়?

অ্যাড্রিনালিন প্রধানত দুটি উপায়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় –
1. গ্লাইকোজেনোলাইসিস – যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে।
2. গ্লুকোনিওজেনেসিস – পেশী থেকে উৎপন্ন ল্যাকটিক অ্যাসিডের মতো অগ্লাইকোজেনিক উপাদানকে গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে।

“3F অবস্থা” বলতে কী বোঝায়?

3F হল ইংরেজি তিনটি শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ, যা অ্যাড্রিনালিন নিঃসরণের প্রধান উদ্দীপক:
1. Fight (লড়াই)
2. Fright (ভয়)
3. Flight (পলায়ন)
এই চাপ বা বিপদের মুহূর্তে দেহ অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়।

অ্যাড্রিনালিনকে কেন ‘আপৎকালীন হরমোন’ বা ‘এমার্জেন্সি হরমোন’ বলা হয়?

অ্যাড্রিনালিন দ্রুত কাজ করে জরুরি অবস্থার (যেমন: ভয়, আক্রমণ, চাপ) মোকাবিলায় দেহকে প্রস্তুত করে। এটি হৃৎস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস ও রক্তচাপ বাড়ায়, পেশিতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং রক্তশর্করা বাড়িয়ে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে। এই জরুরি প্রতিক্রিয়ার কারণেই একে আপৎকালীন হরমোন বলা হয়।

অ্যাড্রিনালিনের নিঃসরণ কোন স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে?

অ্যাড্রিনালিনের নিঃসরণ সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র (Sympathetic Nervous System) দ্বারা উদ্দীপিত হয়, যা দেহের “লড়াই-বা-পলায়ন” প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

অ্যাড্রিনালিন ছাড়া অন্য কোন হরমোন জরুরি অবস্থায় কাজ করে?

হ্যাঁ, নরঅ্যাড্রিনালিন (নোরেপিনেফ্রিন)ও অ্যাড্রিনালিনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করে এবং চাপের অবস্থায় সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেয়।

অ্যাড্রিনালিনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কী?

স্বল্পস্থায়ীভাবে অ্যাড্রিনালিন উপকারী হলেও দীর্ঘ সময় ধরে এর উচ্চ মাত্রা চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকি এবং রক্তশর্করা সম্পর্কিত সমস্যা তৈরি করতে পারে।

অ্যাড্রিনালিনের কার্যকারিতা ওষুধে কীভাবে ব্যবহার করা হয়?

অ্যাড্রিনালিন ইনজেকশন (এপিপেন) অ্যানাফিল্যাক্সিস (গুরুতর অ্যালার্জি), হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়া বা গুরুতর অ্যাজমা আক্রমণের মতো জরুরি অবস্থায় জীবনরক্ষাকারী ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “”অ্যাড্রিনালিন হরমোন রক্তশর্করার মাত্রা বাড়ায়” – উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। কেন অ্যাড্রিনালিন হরমোনকে ‘আপৎকালীন হরমোন’ বলে?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের কার্যাবলি লেখো। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।

ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের কার্যাবলি লেখো। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস কি? ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস কি? এদের মধ্যে পার্থক্য

থাইরক্সিন, ইনসুলিন এবং অ্যাড্রিনালিন—এই তিনটি হরমোনের কার্যাবলি লেখো। থাইরক্সিন, ইনসুলিন এবং অ্যাড্রিনালিনের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো।

থাইরক্সিন, ইনসুলিন ও অ্যাড্রিনালিন – কাজ ও পার্থক্য

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের কার্যাবলি লেখো। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস কি? এদের মধ্যে পার্থক্য

থাইরক্সিন, ইনসুলিন ও অ্যাড্রিনালিন – কাজ ও পার্থক্য

ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের কার্যাবলি লেখো। ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের মধ্যে পার্থক্য

অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিন -এর কার্যকারিতা ও পার্থক্য লেখো।