এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিন -এর কার্যকারিতা লেখো। অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিন -এর কার্যকারিতা লেখো।
অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিন মানবদেহের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। এগুলি মূলত চাপপূর্ণ বা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে শরীরকে “লড়াই বা পালানো” প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত করে।
অ্যাড্রিনালিনের (এপিনেফ্রিন) কাজ –
একে প্রায়শই “জরুরি অবস্থার হরমোন” বলা হয়। মানুষ যখন ভয় পান, রেগে যান বা অত্যন্ত উত্তেজিত হন, তখন এটি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
- হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে – এটি হৃৎপিণ্ডকে দ্রুত ও শক্তিশালীভাবে স্পন্দিত করে, যাতে শরীরে আরও দক্ষতার সাথে রক্ত ও অক্সিজেন পাম্প করা যায়।
- শ্বাসনালী প্রসারিত করে – এটি ফুসফুসের বায়ুপথগুলিকে (ব্রঙ্কিওল) প্রসারিত করে, ফলে আপনি আরও বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেন।
- তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে – এটি যকৃৎকে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজে (শর্করা) পরিণত করার সংকেত দেয়, যা তাৎক্ষণিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়ে রক্তপ্রবাহকে ভরিয়ে তোলে।
- পেশীকে প্রস্তুত করে – এটি প্রধান পেশীগুলির দিকে রক্তপ্রবাহকে চালিত করে, সেগুলোকে দৌড়াতে বা লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করে।
নর-অ্যাড্রিনালিনের (নোরপাইনফ্রিন) কাজ –
এই হরমোনটি অ্যাড্রিনালিনের পাশাপাশি কাজ করে, তবে এটি রক্তচাপ বজায় রাখা ও মস্তিষ্ককে সতর্ক রাখার ওপর বেশি মনোযোগ দেয়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে – এর প্রধান শারীরিক ভূমিকা হলো ভাসোকনস্ট্রিকশন (রক্তনালী সংকুচিত করা), যা রক্তচাপ বাড়ায়। চাপের সময় অপরিহার্য অঙ্গগুলিতে রক্ত সরবরাহ সচল রাখার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- সতর্কতা ও মনোযোগ – এটি মস্তিষ্কের ওপর কাজ করে উত্তেজনা, সতর্কতা ও মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। এটি আপনার মস্তিষ্ককে বিপদ মোকাবিলার জন্য “জাগিয়ে” তোলে।
- অ্যাড্রিনালিনকে সহায়তা করে – এটি অ্যাড্রিনালিনের প্রভাবকে পরিপূরক করে, যাতে শরীর বিপদের প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের পার্থক্য লেখো।
অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের পার্থক্য –
| অ্যাড্রিনালিন | নর-অ্যাড্রিনালিন |
| এটি মানবদেহের সিস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে না। | এটি মানবদেহে উভয় রক্তচাপ অর্থাৎ সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। |
| জরুরিকালীন অবস্থায় বেশি ক্রিয়াশীল। | সকল সময়েই এটি ক্রিয়াশীল। |
| রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ইয়োসিনোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। | রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করলেও ইয়োসিনোফিলের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা নেই। |
| হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি করে। | অ্যাড্রিনালিনের তুলনায় হৃৎস্পন্দনের হার খুব অল্প পরিমাণে বৃদ্ধি করে। |
| শ্বাসকার্যের হারকে বৃদ্ধি করে। | শ্বাসকার্যের প্রক্রিয়াটি সংঘটনে উদ্দীপিত করে। |
| হার্দ-উৎপাদ বৃদ্ধি করে। | হার্দ-উৎপাদ বৃদ্ধিতে কোনো ভূমিকা নেই। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিন কোথায় উৎপন্ন হয়?
এই দুটি হরমোনই প্রধানত অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির মেডুলা অংশে উৎপন্ন হয়। এছাড়া, নর-অ্যাড্রেনালিন স্নায়ুতন্ত্রের কিছু স্নায়ুপ্রান্ত (সিম্যাপ্টিক এন্ডিং) থেকেও নিঃসৃত হয়ে স্থানীয়ভাবে কাজ করে।
“লড়াই বা পালানো” (Fight or Flight) প্রতিক্রিয়ায় অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের ভূমিকা কী?
“লড়াই বা পালানো” (Fight or Flight) প্রতিক্রিয়ায় অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের ভূমিকা
1. অ্যাড্রেনালিন দ্রুত শারীরিক প্রস্তুতি নেয় – হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস বৃদ্ধি করে, পেশীতে রক্ত সঞ্চালন ও শর্করা সরবরাহ বাড়িয়ে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়।
2. নর-অ্যাড্রেনালিন রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখে (ভাসোকনস্ট্রিকশনের মাধ্যমে) এবং মস্তিষ্কে সতর্কতা, মনোযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে, যা বিপদ মূল্যায়ন ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিন হরমোন দুটির নিঃসরণ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস থেকে সংকেত পেয়ে পিটুইটারি গ্রন্থি ACTH হরমোন নিঃসরণ করে। এই ACTH অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণের জন্য। সরাসরি স্নায়বিক উদ্দীপনাও (সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম) এই নিঃসরণ ত্বরান্বিত করে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের হরমোনগুলোর ব্যবহার কীভাবে হয়?
চিকিৎসাক্ষেত্রে অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের হরমোনগুলোর ব্যবহার –
1. অ্যাড্রেনালিন (এপিনেফ্রিন) – অ্যানাফাইল্যাক্সিস (তীব্র অ্যালার্জি), হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) এবং মারাত্মক হাঁপানির আক্রমণে জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
2. নর-অ্যাড্রেনালিন (নোরএপিনেফ্রিন) – আইসিইউ-তে সেপটিক শক বা অন্যান্য শকের সময় রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে তা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত “অ্যাড্রেনালিন রাশ” বলতে যে অনুভূতিকে বোঝানো হয়, তা কী?
হঠাৎ বিপদ, তীব্র উত্তেজনা বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে অ্যাড্রেনালিনের দ্রুত নিঃসরণের ফলে যে শারীরিক অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তাকে অ্যাড্রেনালিন রাশ বলা হয়। এতে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হয়, পেশীতে শক্তি সঞ্চারিত হয় এবং সচেতনতা তীব্র হয়ে ওঠে।
অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের হরমোনের মধ্যে কোনটি মনোযোগ ও স্মৃতিতে বেশি ভূমিকা রাখে?
নর-অ্যাড্রেনালিন মস্তিষ্কের বিশেষ অংশ লোকাস কোরুলিয়াস থেকে নিঃসৃত হয়ে সতর্কতা, মনোযোগ কেন্দ্রীকরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতি গঠনে (মেমোরি কনসলিডেশন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিন -এর কার্যকারিতা লেখো। অ্যাড্রিনালিন এবং নর-অ্যাড্রিনালিনের পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন