এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?
কৃষক সমাজের সার্বিক তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অহিংস অসহযোগ অন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজের সর্বভারতীর অংশগ্রহণ
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে বাংলা –
- গান্ধিজির অসহযোগের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলার কৃষক সমাজ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে।
- 1921 খ্রিস্টাব্দে বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুক মহকুমায় ইউনিয়ান বোর্ড বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
- 1921-1922 খ্রিস্টাব্দে পাবনা, বগুড়া ও বীরভূমে সরকারি জরিপের কাজে বাধা দেওয়া হয়। বীরভূমে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন জিতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায়।
- রাজশাহিতে নীলচাষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সোমেশ্বর প্রসাদ চৌধুরি।
- কুমিল্লা, রাজশাহি, রংপুর ও দিনাজপুরে মুসলিম কৃষকদের অংশগ্রহণে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে উত্তর প্রদেশ –
- গান্ধিজির নেতৃত্বে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে যুক্তপ্রদেশের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি অঞ্চলে যে কৃষক অভ্যুত্থান ঘটে, ইতিহাসে তা ‘একা’ বা একতা আন্দোলন নামে পরিচিতি পেয়েছে। আন্দোলন চলাকালে যে-কেনো অবস্থায় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নেয়। তাই এই আন্দোলনের এইরূপ নামকরণ। মাদারি পাসি নামে অনুন্নত সম্প্রদায়ের এক নেতাই ছিলেন আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি।
- বাবা রামচন্দ্র নামে জনৈক সন্ন্যাসীর নেতৃত্বে 1920 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ যুক্তপ্রদেশের প্রতাপ গড়ে ও রায়বেরিলি অঞ্চলে কৃষক অভ্যুত্থান ঘটে। ওই বছরই বাবা রামচন্দ্র প্রতাপগড়ে ‘অযোধ্যা কিষান সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন। আন্দোলনের চাপে 1921 খ্রিস্টাব্দে সরকার ‘অযোধ্যা খাজনা আইন’ পাস করে করভার কিছুটা লাঘব করতে বাধ্য হয়।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে রাজস্থান –
- নানা ধরনের উপকর ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে অসহযোগ পর্বে মেবারের বিজোলিয়া অঞ্চলে বিজয় সিং পথিক ও মানিকলাল বর্মার নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা 1922 খ্রিস্টাব্দে তাদের কিছুটা দাবি আদায়ে সক্ষম হন।
- 1921-1922 খ্রিস্টাব্দে মতিলাল তেজওয়াত মেবারের ভীল উপজাতিদের সংগঠিত করে আন্দোলনে শামিল হন।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে দক্ষিণ ভারত –
- অন্ধ্রের গুন্টুর জেলার পালনাদ তালুক ও কুড্ডাপার রায়চটি তালুকের উপজাতি সম্পদায়ভুক্ত গরিব চাষিরা তাদের অরণ্যের অধিকার রক্ষার জন্য অরণ্য সত্যাগ্রহ গড়ে তোলে।
- অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে সর্বাপেক্ষা ব্যাপক ও ভয়াবহ কৃষক আন্দোলনটি সংঘঠিত হয়েছিল 1921 খ্রিস্টাব্দে মালাবার উপকূলে, যা মোপলা বিদ্রোহ নামে পরিচিতি। অনেকক্ষেত্রে এই বিদ্রোহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় পর্যবসিত হলেও এর মূল চরিত্র ছিল সামন্ততন্ত্র-বিরোধী।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের মন্তব্য –
অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই প্রকৃতপক্ষে কৃষক আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছিল।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষকরা কেন যোগ দিয়েছিল?
কৃষকরা ব্রিটিশ শাসন, জমিদারি শোষণ, উচ্চ কর ও নানাবিধ সামন্ততান্ত্রিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনে শরিক হয়।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে বাংলায় কৃষকদের অংশগ্রহণ কীভাবে প্রকাশ পেয়েছিল?
1. মেদিনীপুরে ইউনিয়ান বোর্ড বিরোধী আন্দোলন (বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে)।
2. পাবনা, বগুড়া, বীরভূমে সরকারি জরিপ বন্ধের চেষ্টা।
3. রাজশাহিতে নীলচাষ বিরোধী সংগ্রাম (সোমেশ্বর প্রসাদ চৌধুরির নেতৃত্বে)।
4. মুসলিম কৃষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ (কুমিল্লা, রংপুর, দিনাজপুরে)।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ছিল –
1. একা আন্দোলন – হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুরে কৃষকরা ঐক্যবদ্ধভাবে শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
2. বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে অযোধ্যা কিষান সভা গঠন ও খাজনা কমিয়ে দেওয়ার দাবি।
3. মাদারি পাসি (অনুন্নত সম্প্রদায়ের নেতা) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে রাজস্থানে কৃষক আন্দোলন কেমন ছিল?
1. বিজোলিয়া আন্দোলন – বিজয় সিং পথিক ও মানিকলাল বর্মার নেতৃত্বে সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
2. ভীল উপজাতিদের সংগঠিত করেছিলেন মতিলাল তেজওয়াত।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে দক্ষিণ ভারতে কৃষকদের ভূমিকা কী ছিল?
1. মালাবার মোপলা বিদ্রোহ (1921) – মূলত সামন্তবিরোধী আন্দোলন, যদিও কিছু ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় রূপ নেয়।
2. অন্ধ্রের অরণ্য সত্যাগ্রহ – গুন্টুর ও কুড্ডাপার অঞ্চলের উপজাতি কৃষকরা বন অধিকারের দাবিতে লড়াই করে।
অসহযোগ আন্দোলনে কৃষকদের অংশগ্রহণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষকরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলধারায় যুক্ত হয় এবং স্থানীয় শোষণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রব্যাপী সংঘর্ষের সূচনা করে।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক আন্দোলনের কিছু সীমাবদ্ধতা কী ছিল?
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক আন্দোলনের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল –
1. কিছু ক্ষেত্রে সহিংসতা (যেমন মোপলা বিদ্রোহ)।
2. ব্রিটিশ ও জমিদারদের দমননীতি দ্বারা দ্রুত দমিত হয় কিছু আন্দোলন।
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল কী ছিল?
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল ছিল –
1. কৃষকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি।
2. পরবর্তীতে কিষান সভা ও অন্যান্য কৃষক সংগঠনের জন্ম।
3. ব্রিটিশ সরকারকে কিছু আইনি সংস্কারে বাধ্য করা (যেমন অযোধ্যা খাজনা আইন)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন