এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা পর্যালোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা পর্যালোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা পর্যালোচনা করো।
নারী সমাজের সক্রিয় তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত।
ভূমিকা –
গান্ধিজির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নারী সমাজ লবণ আইন ভঙ্গে সামিল হয়। গান্ধিজির ডান্ডি অভিযানের সময় যাত্রা পথে অসংখ্য নারী সত্যাগ্রহী তাঁকে সংবর্ধিত করেন। সরোজিনী নাইডুর নেতৃত্বে ধরসানায় এবং কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ওয়াদালায় সরকারি লবণগোলা আক্রান্ত হয়। শুধু তাই নয়, ইতিহাসের এই পর্বে মেদিনীপুরের কাঁথি, ঘাটাল, তমলুক সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মহিলারা আইন অমান্যে শামিল হয়।
আইন অমান্য আন্দোলনে সভা-সমিতি ও পিকেটিং-এ অংশগ্রহণ –
গান্ধিজির আইন অমান্যের আহ্বানে বাংলা, দিল্লি, বোম্বাই, লক্ষ্ণৌ, এলাহাবাদ, লাহোর প্রভৃতি অঞ্চলের নারী সমাজ আন্দোলনে যোগ দিয়ে আবগারি দোকান ও বিদেশি পণ্যাগারের সামনে পিকেটিং শুরু করেন। কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়, বাসন্তী দেবী, ঊর্মিলা দেবী, সরোজিনী নাইডু, কমলা নেহরু, গান্ধিপত্নী কস্তুরবা গান্ধি প্রমুখ নারী আন্দোলনে পুরোভাগে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ইতিহাসের এই পর্বে সভা-সমিতি, মিটিং-মিছিল, পিকেটিং-এ নারী সমাজের যোগদান ছিল চোখে পড়ার মতো।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীবাদী সংগঠন –
ইতিহাসের এই পর্বে আইন অমান্য আন্দোলনের সূত্রে বাংলা তথা ভারতে একাধিক নারীবাদী সংগঠন গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল সরোজিনী নাইডু প্রতিষ্ঠিত ‘রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ’। মাদক বিরোধী প্রচার, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, স্বদেশী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চরকা ও খাদির ব্যাপক প্রচলন প্রভৃতি কর্মসূচির রূপায়ণে ব্রতী হয় এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলি।
আইন অমান্য আন্দোলনে মুসলিম নারীসমাজের অংশগ্রহণ –
দীর্ঘ দিনের অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে যেসব মুসলিম রমণী ইতিহাসের এই পর্বে ঘর ছেড়ে প্রকাশ্য রণক্ষেত্রে আবির্ভূতা হন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সিলেটের জাবেদা খাতুন, ময়মনসিংহের রাজিয়া খাতুন ও হালিমা খাতুন, ঢাকা-বিক্রমপুরের ফুলবাহার বিবি প্রমুখ।
আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নারীদের মন্তব্য –
আইন অমান্য আন্দোলন নারী সমাজের মধ্যে প্রবল রাজনৈতিক উদ্দীপনার সঞ্চার করে। এই আন্দোলনে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে নারী সমাজের বিপুল অংশগ্রহণ ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা সংযোজিত করেছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব কী ছিল?
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। তাদের সক্রিয় ভূমিকা আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করে এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।
লবণ আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?
গান্ধিজির ডান্ডি অভিযানের সময় নারীরা লবণ আইন ভঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। সরোজিনী নাইডু ও কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নারীরা সরকারি লবণাগার আক্রমণ করেন। এছাড়া, মেদিনীপুরের মহিলারাও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীরা কী ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন?
নারীরা সভা-সমিতি, মিছিল, পিকেটিং, বিদেশি পণ্য বর্জন, আবগারি শুল্ক প্রতিরোধ ও স্বদেশী প্রচারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কমলা নেহরু, বাসন্তী দেবী, কস্তুরবা গান্ধির মতো নেত্রীরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারী সংগঠনগুলির ভূমিকা কী ছিল?
সরোজিনী নাইডুর ‘রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ’ -এর মতো সংগঠনগুলি মাদকবিরোধী আন্দোলন, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, স্বদেশী শিক্ষা ও খাদি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মুসলিম নারীসমাজ কীভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন?
জাবেদা খাতুন, রাজিয়া খাতুন, হালিমা খাতুন ও ফুলবাহার বিবির মতো মুসলিম নারীরা এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, যা সমাজে নারীদের নতুন পরিচয় গড়ে দেয়।
আইন অমান্য আন্দোলন নারীদের রাজনৈতিক চেতনায় কী প্রভাব ফেলেছিল?
এই আন্দোলন নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেছিল এবং পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের আরও সক্রিয় করে তোলে। এটি নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করেছিল।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ কেন ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
এটি প্রথমবারের মতো নারীদের গণআন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করেছিল, যা ভারতীয় সমাজে নারীদের ভূমিকা পুনর্ব্যাখ্যা করেছিল এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা পর্যালোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা পর্যালোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন