এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করতে গান্ধিজি লবণকে বেছে নিয়েছিলেন কেন? আইন অমান্য আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করতে গান্ধিজি লবণকে বেছে নিয়েছিলেন কেন? আইন অমান্য আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করতে গান্ধিজি লবণকে বেছে নিয়েছিলেন কেন?
লবণ আপাতদৃষ্টিতে একটি তুচ্ছ সাধারণ বস্তু হলেও এটি প্রতিটি মানুষেরই নিত্য ব্যবহার্য। স্বভাবতই একে কেন্দ্র করে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা সর্বস্তরের মানুষকে নাড়া দেবে বলে গান্ধিজির স্থির বিশ্বাস ছিল। তাছাড়া, লবণ ভারতীয়দের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামান্তর। দেশমাতৃকার লবণ খেয়েছে যে ভারতবাসী, সে নিশ্চিত ভাবেই দমনমূলক লবণ আইনের বিরোধীতায় যে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হবে-সে বিষয়ে নিঃসন্ধিগ্ধ ছিলেন। এই কারণেই আইন অমান্যের হাতিয়াররূপে তাঁর লবণকে নির্বাচন।
আইন অমান্য আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
গান্ধীজী নেতৃত্বে ভারতে 1930 সালে 22 শে মার্চ আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ডান্ডি অভিযানের মাধ্যমে। তাঁর নেতৃত্বে এ আইনের আন্দোলন সারাদেশে এক গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছিল কিন্তু যেরকম সাড়া জাগিয়ে এই আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল বিভিন্ন কারণে।
- গান্ধীজি উপলব্ধি করেছিলেন জনগণ সত্যাগ্রহের যথার্থ তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেনি; সেই জন্য আন্দোলনের ধাগা বাঁধেনি। তিনি গভীর বেদনা ও হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করেছিলেন যে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুচরগণ সত্যাগ্রহ ও অহিংসার আদর্শ নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এছাড়াও কংগ্রেসের মধ্যে সমাজতন্ত্র মতাদর্শের দ্রুত বিস্তার আন্দোলনের ক্ষতিসাধন করেছিল।
- সরকার যদি অনমনীয় হয় এবং দমনমূলক নীতি যদি কঠোর হয় তাহলে সেই আন্দোলন আংশিক সফল হলেও পুরোপুরি সফল হতে পারেনা। লর্ড উইলিংটনের অনমনীয় মনোভাব ও ইংল্যান্ড সরকারের পরিবর্তন আইন অমান্য আন্দোলনের সাফল্যের পথে একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নবপর্যায়ে যখন আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন সরকারি দমন্নীতি তীব্র আকার ধারণ করেছিল, সেই জন্য আন্দোলনের তীব্রতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছিল।
- দীর্ঘকাল যাবত আন্দোলন চালিয়ে যাবার মত মনোবল ও অর্থ বল কোনটাই কংগ্রেসের ছিল না। সেই জন্য 1930 খ্রিস্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে কংগ্রেসের অনেক নেতা উপলব্ধি করেছিলেন যে এই আন্দোলন আর বেশিদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। সেই জন্য গান্ধীজি এই আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। সাধারণ মানুষ মুক্ত হস্তে অর্থ সাহায্য করলেও একটা বড় আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য অতি অবশ্যই শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের উপর নির্ভরশীল হওয়া একান্তই প্রয়োজন। কিন্তু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের পিছনে সেভাবে মুক্ত হস্তে অর্থ সাহায্য করেননি। বরং শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ইংরেজ সরকারের নিকট এক গোপন বোঝা পড়া করে আন্দোলনকে দুর্বল করতে চেয়েছিলেন।
- নেহেরু চুক্তির বিফলতা, জিন্নার সংশোধনী নাকোচ হওয়ার ফলে মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও উচ্চবিত্ত মুসলিমদের বড় অংশ লীগে যোগ দেয়। জিন্না লীগের লখনৌ অধিবেশনে 14 দফা দাবি পেশ করেন। এর ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তর অংশ আইন অমান্য আন্দোলন থেকে দূরে থাকে। যদিও নিম্ন শ্রেণীর মুসলিমদের একাংশ আইন অমান্য আন্দোলনে সমর্থন জানায় এবং সীমান্ত প্রদেশে খোদাই খিদমতগার ও খান আব্দুল গাফফর খান এর প্রভাবে পাঠানরা আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেয়। সাধারণ ভাবে বেশিরভাগ মুসলিম সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিবশত এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকে।
- অসহযোগ আন্দোলনে বুদ্ধিজীবী শ্রেণী যেভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আদালত বয়কট ও স্কুল-কলেজ বয়কট করে আইন অমান্য আন্দোলনে ঠিক সেই মতো স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপক বয়কট দেখা যায়নি। গান্ধীজী লাহোর কংগ্রেসের ছাত্রদের স্কুল কলেজ বয়কটকে অবাস্তব বলে ঘোষণা করেন।
এছাড়াও আন্দোলনকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে 1932 খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করার ফলে হিন্দু সম্প্রদায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলেই আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
গান্ধিজি লবণকে কেন আইন অমান্য আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন?
1. লবণ ছিল সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ, তাই এটি সব শ্রেণীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারত।
2. ব্রিটিশ সরকারের লবণ কর ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অযৌক্তিক, যা ভারতীয়দের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
3. গান্ধিজি বিশ্বাস করতেন যে লবণ আইন ভঙ্গ করা সহজ হবে এবং এটি একটি অহিংস প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে।
ডান্ডি অভিযানের গুরুত্ব কী ছিল?
1. ডান্ডি অভিযান ছিল আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা, যেখানে গান্ধিজি 240 মাইল পথ হেঁটে লবণ তৈরি করে ব্রিটিশ আইন ভঙ্গ করেছিলেন।
2. এটি ভারতীয়দের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের নতুন প্রেরণা জুগিয়েছিল।
মুসলিম সম্প্রদায় কেন আইন অমান্য আন্দোলনে পুরোপুরি অংশ নেয়নি?
1. মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ ছিল।
2. জিন্নার 14 দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় মুসলিম নেতারা আন্দোলন থেকে দূরে থাকেন।
3. সাম্প্রদায়িক বিভেদের কারণে অনেক মুসলিম এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়নি।
গান্ধিজি কেন আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন?
1. আন্দোলনের অগ্রগতি ধীর হয়ে পড়েছিল এবং সরকারের দমননীতি তীব্র হচ্ছিল।
2. সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির (কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড) কারণে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বাড়ছিল।
3. গান্ধিজি বুঝতে পেরেছিলেন যে আন্দোলন আর সফলভাবে চালানো সম্ভব নয়।
আইন অমান্য আন্দোলনের ইতিবাচক ফলাফল কী ছিল?
আইন অমান্য আন্দোলনের ইতিবাচক ফলাফল ছিল –
1. এটি ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করেছিল।
2. ব্রিটিশ সরকারকে ভারতের স্বাধীনতা বিষয়ে আলোচনায় বসতে বাধ্য করেছিল।
3. গান্ধিজির অহিংস আন্দোলনের কৌশল বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছিল।
আইন অমান্য আন্দোলনে নারী সমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল?
নারী সমাজের সক্রিয় তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আইন অমান্য আন্দোলনের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত। তারা সভা-সমিতি, বিদেশি দ্রব্য বর্জন, পিকেটিং প্রভৃতিতে অংশ নেন। কমলা দেবী চট্টোপাধ্যায়, সরোজিনী নাইডু, কমলা নেহরু প্রমুখ নারী এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করতে গান্ধিজি লবণকে বেছে নিয়েছিলেন কেন? আইন অমান্য আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করতে গান্ধিজি লবণকে বেছে নিয়েছিলেন কেন? আইন অমান্য আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন