আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার মেলা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

বাংলার মেলা – প্রবন্ধ রচনা
“সোনালি রূপোলি মানুষের শিশু
– শক্তি চট্টোপাধ্যায়
মানুষের সঙ্গে সমুদ্রে যায়
ওদের যাওয়া দরকার।”
ভূমিকা –
মিলনের আকুতি থেকেই মেলার সৃষ্টি। ধরাবাঁধা দৈনন্দিনতা থেকে মুক্ত হয়ে সম্প্রীতির সূত্র ধরে পরস্পরের হাত ধরা, আনন্দকে ভাগ করে নেওয়া মেলার মূল কথা। বাংলা দেশের শ্যামল সবুজ জলহাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষ এমনিতেই অনুভূতিপ্রবণ। তাই এদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মেলার যোগও অত্যন্ত প্রাচীন কাল থেকে। ধর্ম, লোকাচার ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে, কখনও বা সমাজজীবনের নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলা দেশে মেলার বিস্তার ঘটেছে।
ধর্ম ও লোক-উৎসবকেন্দ্রিক মেলা –
গিরিশচন্দ্র ঘোষ বলেছিলেন — “বাংলাদেশের মর্মে মর্মে ধর্ম।” বাংলার মানুষ অসংখ্য লোকদেবতার পুজো করে। বছরের বিভিন্ন তিথিতে নির্দিষ্ট দেবতার পুজোকে উপলক্ষ্য করে বাঙালি উৎসবে মাতে। সেইসব দেবদেবীর মধ্যে শীতলা, চণ্ডী, সত্যপীর, মনসা কত কিছুই আছে। আর এই উৎসবের অঙ্গ হিসেবেই মেলার আয়োজন হয়। কোচবিহার কিংবা নদিয়ার শান্তিপুরে রাসযাত্রা উপলক্ষ্যে হয় রাসমেলা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগরে পৌষের শেষে হয় গঙ্গাসাগর মেলা। জলপাইগুড়িতে শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে হয় জল্পেশের মেলা। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় টুসু পরব উপলক্ষ্যে মেলার আসর বসে। বীরভূমের কেঁদুলিতে জানুয়ারি মাসে হয় বাউল মেলা, নদিয়ার আসাননগরের কদমখালিতে হয় লালন মেলা। এইসব মেলায় ধর্ম আচরণের থেকেও বাউল-ফকির-মুরশিদি শিল্পীদের গান এবং সম্মেলনে লোকসংস্কৃতির প্রাণবৈচিত্র্যেরই প্রকাশ ঘটে। পূর্ব মেদিনীপুরে মাঘ মাসে হয় ভীম মেলা, চৈত্রে চড়কের মেলা। পশ্চিম মেদিনীপুরে হয় গাজনের মেলা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত আর একটি মেলা হল বিষ্ণুপুর মেলা। একদা মল্লরাজাদের রাজধানী বিষ্ণুপুরে প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিষ্ণুপুর উৎসব। উচ্চাঙ্গ সংগীত সম্মেলন এবং ধ্রুপদি নৃত্যের প্রদর্শনী এর উল্লেখযোগ্য দিক। ভারত সরকার একে জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দিয়েছে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠিত হয় বিষ্ণুপুর মেলা।
নগরায়ণ ও মেলার চরিত্র বদল –
যত বেশি নগরসভ্যতার বিকাশ ঘটছে ততই মেলার নতুন নতুন আঙ্গিক সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো এলাকার জীবন ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য মেলার আয়োজন হচ্ছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে চা এবং পর্যটন উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা বসে দার্জিলিং-এ। দক্ষিণ দিনাজপুরে ফেব্রুয়ারিতে হয় তিস্তা-গঙ্গা উৎসব। 2013 খ্রিস্টাব্দে থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বর্ধমানের পানাগড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মাটি উৎসব। এটিকে কেন্দ্র করেও বসছে মেলা।
শহরের মেলা –
একুশ শতকের শহরজীবনে সবই প্রয়োজনভিত্তিক। তাই মানুষের জীবনযাপন এবং মানসিক চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বইমেলা, লিটল ম্যাগাজিন মেলা, নাট্যমেলা ইত্যাদি। নাগরিক মনন আর বুদ্ধিচর্চার আদানপ্রদানের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে এগুলি। শুধু শহরে নয়, মফসসলেও এইসব মেলার প্রসার ঘটছে।
উপসংহার –
মেলার মধ্যে মানবজীবন তার স্ফূর্তি খুঁজে পায়। তবে গ্রামীণ মেলার চরিত্র দ্রুত পালটে যাচ্ছে। সংস্কৃতির বদলের ফলে এই পালটে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবুও বাংলার প্রাণময়তার এক বিশেষ ক্ষেত্র হিসেবে মেলার গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার মেলা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘বাংলার মেলা’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন