এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা –
সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাবিদ বিদ্যাসাগর ছিলেন উনিশ শতকের একজন বিশিষ্ট গ্রন্থকার,মুদ্রক ও প্রকাশক। ছাপাখানার বিকাশে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা –
1847 সালে বিদ্যাসাগর এবং তার বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কার যৌথভাবে 62 নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিটে ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয় ৬০০ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পরে তিনি এই ছাপাখানার একক মালিক হন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছাপাখানার খ্যাতি –
অচিরেই ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ ছাপাখানার খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। 1857 খ্রিস্টাব্দে এই প্রেস থেকে 84220 কপি বই ছাপা হয়। মূলত এখানে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজই বেশি হত। স্কুলবুক সোসাইটির রিপোর্ট থেকে ‘সংস্কৃত যন্ত্র ‘ প্রেসের উচ্চ গুণমানের কথা জানা যায়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছাপাগ্রন্থ –
বিদ্যাসাগর মহাশয় এই প্রেসে নিজের এবং অন্যান্য লেখকদের বই ছাপতেন। এই প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা বই হল ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’। এর পাণ্ডুলিপি তিনি সংগ্রহ করেছিলেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকে। ‘শিশুশিক্ষা ‘ও ‘বর্ণপরিচয়’ ছিল এই প্রেস থেকে ছাপা দুটি জনপ্রিয় বই।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পুস্তক বিক্রেতা –
বিদ্যাসাগর মহাশয় 1847 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি এবং 1885 খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা পুস্তাকালয় নামে দুটি বইয়ের দোকান খোলেন। তৎকালীন সময়ে সর্বশ্রেষ্ঠ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রয় সংস্থা ছিল কলিকাতা পুস্তকালয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিদ্যাবণিকে উন্নীত হন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূল্যায়ন –
বিদ্যাসাগর মহাশয় বই লেখেন, ছাপাখানা এবং বইয়ের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রমাণ করেন, শিক্ষা সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ অসম্ভব নয়। এক কথায় তিনি আমাদের দেশের বাংলা শিক্ষার ভগীরথ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কে ছিলেন?
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন বিশিষ্ট সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ, গ্রন্থকার, মুদ্রক ও প্রকাশক। তিনি উনিশ শতকে বাংলার শিক্ষা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বিদ্যাসাগর কীভাবে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
1847 সালে বিদ্যাসাগর ও তার বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কার যৌথভাবে কলকাতার 62 নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিটে ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে বিদ্যাসাগর এককভাবে এর মালিকানা গ্রহণ করেন।
সংস্কৃত যন্ত্র ছাপাখানার বিশেষত্ব কী ছিল?
সংস্কৃত যন্ত্র ছাপাখানার বিশেষত্ব ছিল –
1. এটি উচ্চমানের পাঠ্যপুস্তক ছাপার জন্য বিখ্যাত ছিল।
2. 1857 সালে এই প্রেস থেকে 84,220 কপি বই ছাপা হয়েছিল।
3. স্কুলবুক সোসাইটির রিপোর্টে এর গুণমানের প্রশংসা করা হয়েছিল।
সংস্কৃত যন্ত্র থেকে কোন উল্লেখযোগ্য বই প্রকাশিত হয়েছিল?
1. প্রথম বাংলা বই: ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ (পাণ্ডুলিপি কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল)।
2. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বই: ‘শিশুশিক্ষা’, ‘বর্ণপরিচয়’ (বিদ্যাসাগর রচিত)।
বিদ্যাসাগর কীভাবে বই বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন?
1. 1847 সালে তিনি ‘সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি’ নামে একটি বইয়ের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন।
2. 1885 সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কলিকাতা পুস্তকালয়’, যা তখনকার সবচেয়ে বড় বই প্রকাশনা ও বিক্রয় কেন্দ্র ছিল।
বাংলা মুদ্রণ শিল্পে বিদ্যাসাগরের অবদান কী?
বাংলা মুদ্রণ শিল্পে বিদ্যাসাগরের অবদান –
1. তিনি বাংলা বই ছাপার মান উন্নয়ন করেন।
2. পাঠ্যপুস্তক সহজলভ্য করে শিক্ষার প্রসার ঘটান।
3. মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পকে একটি লাভজনক ব্যবসায়িক মডেলে পরিণত করেন।
বিদ্যাসাগরকে কেন বাংলা শিক্ষার ‘ভগীরথ’ বলা হয়?
তিনি বাংলা ভাষায় সহজবোধ্য পাঠ্যপুস্তক রচনা, ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা এবং বই বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিলেন, ঠিক যেমন ভগীরথ গঙ্গাকে মর্ত্যে এনেছিলেন।
বিদ্যাসাগরের কাজের মূল্যায়ন কী?
তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে শিক্ষা সংস্কার ও ব্যবসায়িক সাফল্য একসাথে সম্ভব। তার প্রচেষ্টায় বাংলা মুদ্রণ শিল্প ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন