এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বায়ুর সঞ্চয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “বায়ুর সঞ্চয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – বায়ুর বিভিন্ন কাজ ও তাদের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বায়ুর সঞ্চয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপসমূহ –
বালিয়াড়ি –
ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ডের মতে, মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর গতিপথে কোনো প্রতিবন্ধক ছাড়া গড়ে ওঠা সচল বা গতিশীল বালির স্তূপকে বালিয়াড়ি বলে।
শ্রেণিবিভাগ – বালিয়াড়িকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা –
- আকৃতি ও গঠন অনুসারে।
- অবস্থান অনুসারে।
আকৃতি ও গঠন অনুসারে বালিয়াড়ির শ্রেণিবিভাগ –
- অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ্ বালিয়াড়ি – যে সকল দীর্ঘ ও সংকীর্ণ বালিয়াড়ি বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে গঠিত হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ্ বালিয়াড়ি বলে। আরবি ভাষায় ‘সি’ কথার অর্থ সোজা তরবারি। সিফ্ বালিয়াড়ি 100-150 কিমি দীর্ঘ, 1 কিমির বেশি প্রশস্ত এবং উচ্চতা 100 মিটারের বেশি হয়। উদাহরণ – থর মরুভূমিতে সিফ্ বালিয়াড়ি দেখা যায়।
- বার্খান – বায়ুর গতিপথের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত অপ্রতিসম অর্ধচন্দ্রাকৃতি বিশিষ্ট বালিয়াড়িকে বার্খান বলে। এর সামনের দিক উত্তল এবং পিছনের দিক অবতল হয়। বার্খানের দুই প্রান্তে সিং -এর মতো দুটি শিরা দেখা যায়। এর উচ্চতা 10-30 মিটার এবং প্রস্থ 40-70 মিটার হয়ে থাকে। উদাহরণ – সাহারা মরুভূমিতে অসংখ্য বার্খান দেখা যায়।
- অনুপ্রস্থ বা তির্যক বালিয়াড়ি – বায়ুর গতিপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে বা তির্যকভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে তির্যক বালিয়াড়ি বলে। এগুলি দেখতে অনেকটা সমুদ্রের ঢেউ -এর মতো। উদাহরণ – কালাহারি মরুভূমিতে তির্যক বালিয়াড়ি দেখা যায়।
- অ্যাকলে বালিয়াড়ি – একাধিক বার্খান পরস্পর যুক্ত হয়ে যে দীর্ঘ আঁকা বাঁকা সাপের দেহের মতো সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে বা পিছিয়ে অবস্থান করে, একে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলে। এগিয়ে যাওয়া অ্যাকলে বালিয়াড়িকে লিংগুঅয়েড এবং পিছিয়ে যাওয়া অ্যাকলে বালিয়াড়িকে বার্খানয়েড বলে।
- নক্ষত্র বালিয়াড়ি – মরুভূমি অঞ্চলে বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় এবং সেই ক্ষেত্রে বালিয়াড়িগুলি একাধিক তলবিশিষ্ট হয়। এই বালিয়াড়ির মধ্যভাগে একটি উঁচুশৃঙ্গ দেখা যায় এবং তিন বা তিনের অধিক বালির শিরা বাইরের দিকে বিস্তৃত হয়। এই বালিয়াড়িকে বলে নক্ষত্র বালিয়াড়ি।
- অর্ধবৃত্তীয় বালিয়াড়ি – অপসারণ প্রক্রিয়ায় মরুভূমিতে সৃষ্ট গর্তগুলির প্রতিবাত ঢাল থেকে বালি অপসারিত হয়ে অনুবাত ঢালে সঞ্চিত হলে দীর্ঘ চামচের মতো বা অধিবৃত্তের ন্যায় যে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়, তাকে অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি বলে।
- হেয়ারপিন বালিয়াড়ি – বায়ুপ্রবাহের কারণে অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি প্রসারিত হতে থাকে এবং দীর্ঘ, সংকীর্ণ ও সমান্তরাল পার্শ্বযুক্ত বালিয়াড়িতে পরিণত হয়, তাকে হেয়ারপিন বালিয়াড়ি বলে।
অবস্থান অনুসারে বালিয়াড়ির শ্রেণিবিভাগ –
- মস্তক বালিয়াড়ি – বায়ুর গতিপথে কোনো প্রস্তরখণ্ড বা টিলা অবস্থান করলে তার প্রতিবাত অংশে যে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে, তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বলে।
- পুচ্ছ বালিয়াড়ি – মরু অঞ্চলে কোনো বাধার পশ্চাতে পুচ্ছর মতো বহু দূর বিস্তৃত যে বালির স্তূপ গঠিত হয়, তাকে পুচ্ছ বালিয়াড়ি বলে।
- অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি – মস্তক বালিয়াড়ির আগে ঘূর্ণিবায়ুর জন্য যে বালিয়াড়ি গঠিত হয়, তাকে অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি বলে।
- পরবর্তী বালিয়াড়ি – পার্শ্ব বালিয়াড়ির পরবর্তী পর্যায়ে এই বালিয়াড়ি গঠিত হয়।
- পার্শ্ব বালিয়াড়ি – বায়ুর প্রবাহপথে বাধার সৃষ্টি হলে বাধার দুপাশে বায়ু প্রবাহিত হলে যে বালিয়াড়ি গঠিত হয়, তাকে পার্শ্ব বালিয়াড়ি বলে।
লোয়েস –
‘লোয়েশ’ শব্দের অর্থ স্থানচ্যুত বস্তু। মরুঅঞ্চলের একস্থানের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ঈষৎ পীতাভ বালুকারাশি বায়ুর দ্বারা বাহিত হয়ে অন্যত্র জমা হলে তাকে লোয়েস বলে। উদাহরণ – মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে বালুকারাশি উড়ে চিনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমি গড়ে উঠেছে।
বালির শৈলশিরা –
বায়ুর গতিপথের সমান্তরালে বালি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্ট বাঁধের ন্যায় ভূমিরূপকে বলে বালির শৈলশিরা।
বালির তরঙ্গ –
মরুভূমি অঞ্চলের ঈযৎ অসমতল ভূভাগের উপর লম্ফদান প্রক্রিয়ায় বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বাহিত বালুকারাশি অনুবাত ঢালে কম ও প্রতিবাত ঢালে বেশি সঞ্চিত হলে তাকে বালির তরঙ্গ বলে।
বালির পাত –
মরুভূমির অত্যন্ত সমতল অংশে বালির সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্ট বালির পাতলা স্তরকে বালির পাত বলে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বায়ুর সঞ্চয়কাজ কী?
বায়ুর সঞ্চয়কাজ বলতে বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে বালি, কণিকা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র কণাগুলি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়ে সঞ্চিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
বালিয়াড়ি কী?
বালিয়াড়ি হল বায়ুর সঞ্চয়কাজের ফলে সৃষ্ট বালির স্তূপ। এটি সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়। বালিয়াড়ি বিভিন্ন আকৃতি ও আকারের হতে পারে, যেমন – বার্খান, সিফ্ বালিয়াড়ি, নক্ষত্র বালিয়াড়ি ইত্যাদি।
বার্খান কী?
বার্খান হল একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি, যা বায়ুর গতিপথের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত। এর সামনের দিক উত্তল এবং পিছনের দিক অবতল। বার্খানের দুই প্রান্তে সিং -এর মতো দুটি শিরা দেখা যায়।
সিফ্ বালিয়াড়ি কী?
সিফ্ বালিয়াড়ি হল দীর্ঘ ও সংকীর্ণ বালিয়াড়ি, যা বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে গঠিত হয়। এটি সাধারণত 100-150 কিলোমিটার দীর্ঘ এবং 100 মিটারের বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট হতে পারে।
লোয়েস কী?
লোয়েস হল মরুভূমি অঞ্চলের সূক্ষ্ম বালুকারাশি, যা বায়ুর দ্বারা বাহিত হয়ে অন্যত্র সঞ্চিত হয়। এটি সাধারণত পীতাভ রঙের হয় এবং খুব উর্বর মাটি গঠন করে। চিনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় লোয়েস সমভূমি দেখা যায়।
বালির শৈলশিরা কী?
বালির শৈলশিরা হল বায়ুর গতিপথের সমান্তরালে বালি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্ট বাঁধের ন্যায় ভূমিরূপ। এটি সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়।
বালির তরঙ্গ কী?
বালির তরঙ্গ হল মরুভূমি অঞ্চলের ঈষৎ অসমতল ভূভাগের উপর বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বাহিত বালুকারাশি সঞ্চিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট তরঙ্গের মতো ভূমিরূপ।
বালির পাত কী?
বালির পাত হল মরুভূমির অত্যন্ত সমতল অংশে বালির সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্ট বালির পাতলা স্তর। এটি সাধারণত খুবই সমতল এবং বিস্তৃত এলাকা জুড়ে দেখা যায়।
নক্ষত্র বালিয়াড়ি কী?
নক্ষত্র বালিয়াড়ি হল একাধিক দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট বালিয়াড়ি, যার মধ্যভাগে একটি উঁচুশৃঙ্গ থাকে এবং তিন বা ততোধিক বালির শিরা বাইরের দিকে বিস্তৃত হয়। এটি দেখতে নক্ষত্রের মতো বলে একে নক্ষত্র বালিয়াড়ি বলে।
অ্যাকলে বালিয়াড়ি কী?
অ্যাকলে বালিয়াড়ি হল একাধিক বার্খান পরস্পর যুক্ত হয়ে সৃষ্ট দীর্ঘ আঁকা বাঁকা বালিয়াড়ি। এটি সাধারণত সাপের দেহের মতো দেখতে হয় এবং এগিয়ে যাওয়া অ্যাকলে বালিয়াড়িকে লিংগুঅয়েড এবং পিছিয়ে যাওয়া অ্যাকলে বালিয়াড়িকে বার্খানয়েড বলে।
হেয়ারপিন বালিয়াড়ি কী?
হেয়ারপিন বালিয়াড়ি হল অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি প্রসারিত হয়ে সৃষ্ট দীর্ঘ, সংকীর্ণ ও সমান্তরাল পার্শ্বযুক্ত বালিয়াড়ি। এটি দেখতে হেয়ারপিনের মতো বলে একে হেয়ারপিন বালিয়াড়ি বলে।
মস্তক বালিয়াড়ি কী?
মস্তক বালিয়াড়ি হল বায়ুর গতিপথে কোনো প্রস্তরখণ্ড বা টিলা অবস্থান করলে তার প্রতিবাত অংশে গড়ে ওঠা বালিয়াড়ি। এটি সাধারণত বাধার সামনে গঠিত হয়।
পুচ্ছ বালিয়াড়ি কী?
পুচ্ছ বালিয়াড়ি হল মরু অঞ্চলে কোনো বাধার পশ্চাতে পুচ্ছর মতো বহু দূর বিস্তৃত বালির স্তূপ। এটি সাধারণত বাধার পিছনে গঠিত হয়।
অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি কী?
অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি হল মস্তক বালিয়াড়ির আগে ঘূর্ণিবায়ুর জন্য গঠিত বালিয়াড়ি। এটি সাধারণত বাধার সামনে গঠিত হয়।
পরবর্তী বালিয়াড়ি কী?
পরবর্তী বালিয়াড়ি হল পার্শ্ব বালিয়াড়ির পরবর্তী পর্যায়ে গঠিত বালিয়াড়ি। এটি সাধারণত বাধার পিছনে গঠিত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বায়ুর সঞ্চয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বায়ুর সঞ্চয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তার দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – বায়ুর বিভিন্ন কাজ ও তাদের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ভূমিরূপ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।