এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।
ভূমিকা –
ক্রিপস প্রস্তাব ব্যর্থ হলে সারা ভারতের তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এই তীব্র অসন্তোষের মধ্যে দিয়ে গান্ধীজী ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন। ভারতছাড়ো আন্দোলনের পেছনে যে সমস্ত কারণগুলি বিশেষভাবে দায়ী ছিল সেগুলি হল –
- ক্রিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতা – ক্রিপস প্রস্তাব ব্যর্থ হলে ভারতীয়রা বুঝতে পেরেছিল যে ভারতের স্বাধীনতা পেতে হলে ইংরেজদের সঙ্গে লড়াই করতে হবে।
- ব্রিটিশ দমন নীতি – ভারতীয়রা যেসমস্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গুলি করেছিল ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলন গুলিকে দমন করার জন্য কঠোর নীতি অবলম্বন করে। ভারতীয়রা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করে।
- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালিন ভারতে অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়তে থাকে দ্রব্যমূল্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। সেটা ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। সেকারনে ভারতীয় জনগন ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এক বৃহত্তর গন আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়।
- স্বাধিনতার আকাক্ষা – ভারতীয়রা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভারতের স্বাধিনতা আনতে চেয়েছিল। ভারতবাসী স্বাধিনতার জন্য আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না।
- ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গ্রহন – একদিকে ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামো যেমন ভেঙে পরেছিল অন্যদিকে ভারতের উপর জাপানি আক্রমনের প্রভাব ভারতীয়দের মধ্যে এক ভীত পরিবেশ তৈরি করেছিল। এই অবস্থায় গান্ধিজি তাঁর হরিজন’ পত্রিকায় ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গ্রহন করেন। 1942 সালে কংগ্রেসের এক বিশেষ অধিবেশনে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গৃহিত হয়।
- জাতীয় নেতাদের গ্রেপ্তার – প্রস্তাব গৃহিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গান্ধিজি, বল্লবভাই প্যাটেল, জহরলাল নেহে নেহেরু, মৌলনা আবুল কালাম আজাদ সহ জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করে জাতীয় কংগ্রেসের দলকে বেআইনি বলে ঘোষনা করেন। পরের দিন অর্থাৎ 1942 সালে 9ই আগষ্ট সারা ভারত জুড়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন ছিল নেতৃত্বহীন আন্দোলন।
1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব –
1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও এই আন্দোলনের গুরুত্ব কম ছিল না। যেমন –
- স্বাধিনতার সংকল্প – এই আন্দোলনের ফলে ভারতবাসী স্বাধিনতার পথ খুঁজতে শুধু করে। ব্রিটিশরা বুঝতে পেরেছিল তাদের শাসনের দিন প্রায় ফুরিয়ে আসছে।
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় – এই আন্দোলনে মুসলিম লিগ যোগ না দিলেও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানরা এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অংশগ্রহন করেছিল।
- জাতীয় বিপ্লব – এই আন্দোলনে কোনো নেত্রী না থাকলেও ভারতবর্ষব্যাপি সাধারন মানুষ ব্রিটিশ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে ছিল। এবং তাদের মধ্যে বৈপ্লবিক মনোভাব জাগ্ৰত হয়েছিল, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
- স্বাধিনতার ভিত স্থাপন – এই আন্দোলনের গভীরতা ও ব্যাপকতা ভারতের স্বাধীনতার ভিত্তি ভূমি রচনা করেছিল। এই আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের প্রশাসনিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছিল। ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় ঐক্যবোধ গড়ে উঠেছিল। এর ফলে ইংরেজরা ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
- কংগ্রেসের মর্যাদা বৃদ্ধি – এই আন্দোলনের ফলে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল ভারতে জাতীয় কংগ্রেস। এই আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসেবে কংগ্রেসের মর্যাদা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে গান্ধীজী সক্ষম হয়েছিল।
- নতুন নেতৃত্বের আবির্ভার – এই আন্দোলনের শুরুতে সরকার প্রথম শ্রেণীর নেতা-নেত্রীদের গ্রেপ্তার করলে আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য এক নতুন নতুন নেতাদের আবির্ভাব ঘটেছিল। যারা আরো ভয়ংকর ছিল যাদের মনে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রবল। যেটা দেখে ব্রিটিশ সরকার ভারতের স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়েছিল, যে কারণে এই আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারত ছাড়ো আন্দোলন কী?
1942 সালের 8ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দ্বারা শুরু হওয়া একটি গণআন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি কী ছিল?
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি ছিল –
1. ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা – ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব ভারতীয় নেতাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল।
2. ব্রিটিশ দমননীতি – শান্তিপূর্ণ আন্দোলনগুলিকে কঠোর হাতে দমন করা হয়েছিল।
3. অর্থনৈতিক সংকট – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
4. স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা – ভারতীয়রা আর ব্রিটিশ শাসন মেনে নিতে চায়নি।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারী সমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল?
নারী সমাজের সক্রিয় তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত। তারা সভা-সমিতি, বিদেশি দ্রব্য বর্জন, পিকেটিং প্রভৃতিতে অংশ নেন। অরুণা আসফ আলি, সুচেতা কৃপালনী প্রমুখের নেতৃত্বে নারী সমাজ সংগঠিত হয়। মেদিনীপুরের 73 বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী দেবী, আসামের 13 বছরে কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া প্রমুখ বীরাঙ্গনা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শহিদ হন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন কবে শুরু হয়?
1942 সালের 9ই আগস্ট (প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরদিন থেকেই)।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অন্য নাম কী?
ভারত ছাড়ো আন্দোলন “August Movement” বা “আগস্ট আন্দোলন” নামেও পরিচিত।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় জাতীয় নেতাদের কী হয়েছিল?
গান্ধীজি, নেহরু, প্যাটেল, মৌলানা আজাদসহ কংগ্রেসের প্রধান নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং কংগ্রেসকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন কি সফল হয়েছিল?
এটি তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল কারণ ব্রিটিশ সরকার কঠোর দমননীতি চালায়। তবে এটি ব্রিটিশদের বুঝিয়ে দিয়েছিল যে ভারতীয়রা আর তাদের শাসন মেনে নেবে না।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব কী ছিল?
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব ছিল –
1. ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি নড়বড়ে করে দেয়।
2. ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও বিপ্লবী চেতনা জাগ্রত করে।
3. কংগ্রেসের জনসমর্থন বৃদ্ধি করে।
4. নতুন নেতৃত্বের উত্থান ঘটায় (যেমন: অরুণা আসফ আলি, জয়প্রকাশ নারায়ণ)।
5. ব্রিটিশদের ভারত ছাড়তে বাধ্য করার পথ সুগম করে।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের স্লোগান কী ছিল?
“করো মরো, ভারত ছাড়ো” (Do or Die, Quit India) – গান্ধীজির এই স্লোগান জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভগিনী সেনার ভূমিকা কীরূপ ছিল?
তমলুক জাতীয় সরকার গঠনের পাশাপাশি সেখানকার মহিলারা ‘ভগিনী সেনা’ নামে একটি নারী সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তাঁরা মেদিনীপুরে অনেকগুলি থানা অধিকার করেন। ভগিনী সেনাদের অনেকেই পুলিশের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হলেও তাঁরা থেমে যাননি।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন