বিদ্যাসাগর – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিদ্যাসাগর’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

দ্বিশতবর্ষে বিদ্যাসাগর - প্রবন্ধ রচনা

বিদ্যাসাগর – প্রবন্ধ রচনা

“শুধু একবার একবার দ্রবণের মতো এই পরম বাংলায় স্পষ্ট বলীবর্দ এক ঈশ্বরের জন্ম হয়েছিল
উড়নি ধুতি পরা ছিল বলে
আমরা তখন তাকে ঠিকমত চিনতেই পারিনি।”

– সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত

ভূমিকা –

বিদ্যাসাগর এক বাতিঘরের নাম। উনিশ শতকে একদিকে যখন ইংরেজের অনুগ্রহভাজন হয়ে ছদ্ম-আধুনিকতার পাঠ নিচ্ছে বাঙালি, অন্যদিকে মনের ভিতরে মধ্যযুগীয় অন্ধকার-সেই সময় আত্মমর্যাদা ও শিক্ষায় জাতিকে আত্মদীপ্ত করে তুলেছিলেন বিদ্যাসাগর-বাঙালির জীবন্ত ঈশ্বর। বিদ্যাসাগর শুধু একজন ব্যক্তি নন, যুগসন্ধির ফলে তিনি বাঙালির ইতিহাসের নিয়ন্ত্রক।

জন্ম ও পরিচয় –

1820 খ্রিস্টাব্দের 26 সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্ম। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মা ভগবতী দেবী। মাত্র ন-বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন। 1829 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভরতি হন। এই কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার। সংস্কৃত কলেজে বিদ্যাসাগর বারো বছর পড়াশোনা করেন এবং ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলংকার, বেদান্ত, জ্যোতির্বিদ্যা এবং ইংরেজিতে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ছাত্র অবস্থাতে মেধাবী বিদ্যাসাগর অনেক বৃত্তি ও পুরস্কার অর্জন করেন। 1839 খ্রিস্টাব্দে তিনি আইন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। তার প্রশংসাপত্রেই প্রথম ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি ব্যবহার করা হয়। পরে সংস্কৃত কলেজের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রশংসাপত্রে ‘বিদ্যাসাগর’-এর উল্লেখ থাকে। এর মধ্যে 1834 খ্রিস্টাব্দে দীনময়ী দেবীর সঙ্গে বিদ্যাসাগরের বিবাহ হয়।

কর্মজীবন –

1841 খ্রিস্টাব্দে মাত্র একুশ বছর বয়সে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পণ্ডিতের পদে বিদ্যাসাগর যোগদান করেন। 1846 -এ সংস্কৃত কলেজে যোগ দেন সহ-সম্পাদক হিসেবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে পদত্যাগ করে ফিরে যান ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে। অল্পদিনের মধ্যেই অবশ্য সংস্কৃত কলেজে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটে অধ্যাপক হিসেবে। 1851 -তে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি সংস্কৃত কলেজের দরজা অ-ব্রাহ্মণ ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সংস্কৃতের পাশাপাশি বাংলা এবং ইংরেজিকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য বিদ্যাসাগর নর্মাল স্কুল স্থাপন করেন।

সমাজ সংস্কার –

বিদ্যাসাগর সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে নারীশিক্ষার প্রসারে বিশেষ উদ্যোগী হন। তাঁর উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় মেয়েদের জন্য পঁয়তিরিশটি স্কুল স্থাপিত হয়। মেয়েদের শিক্ষায় সাহায্য করার জন্য গড়ে তোলেন নারীশিক্ষা ভাণ্ডার। তবে বিদ্যাসাগরের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বিধবাবিবাহ প্রচলন করা। তাঁর উদ্যোগেই 1856 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার বিধবাবিবাহ আইন প্রচলন করে। নিজের একমাত্র পুত্র নারায়ণ চন্দ্রকেও তিনি একজন বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন।

সাহিত্যকীর্তি –

শিশুশিক্ষার জন্য ‘বর্ণপরিচয়’ বিদ্যাসাগরের অবিস্মরণীয় কীর্তি। এ ছাড়াও তিনি বেশ কিছু স্মরণীয় অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেন, যেমন – সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস, কথামালা, বোধোদয়, বেতাল পঞ্চবিংশতি ইত্যাদি। বিধবাবিবাহের পক্ষে এবং বহুবিবাহের বিপক্ষে তিনি একাধিক পুস্তিকা রচনা করেন। মার্শম্যানের History of Bengal অবলম্বনে রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস। তত্ত্ববোধিনী, সোমপ্রকাশ, হিন্দুপেট্রিয়ট ইত্যাদি পত্রিকাতে বিদ্যাসাগরের লেখা প্রকাশিত হত।

দ্বিশতবর্ষে বিদ্যাসাগর –

জন্মের দুশো বছর অতিক্রান্তেও বিদ্যাসাগর আজও প্রাসঙ্গিক। সে-কথা মনে রেখে রাজ্যসরকার যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের জন্মদ্বিশতবর্ষ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যালয় স্তরে প্রাকপ্রাথমিক এবং প্রথম শ্রেণিতে বিনামূল্যে বর্ণপরিচয়-কে ঐতিহ্যপূর্ণ বই হিসেবে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিদ্যাসাগরকে নিয়ে গড়ে তোলা হবে একটি মিউজিয়াম। সেপ্টেম্বরের 21 থেকে 26 তারিখ পর্যন্ত স্কুলগুলিতে বিতর্ক, আলোচনা প্রদর্শনী ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যাসাগর চর্চা হয়েছে। বিদ্যাসাগর কলেজকে হেরিটেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

উপসংহার –

বিদ্যাসাগর কোনো নাম নয়, এক জীবনচর্চা। উদারতা, প্রগতিশীলতা, সংস্কারহীনতার সমন্বয়ে তাঁর যে জীবনাদর্শ তা বাঙালিকে মেরুদণ্ড ঋজু রাখার শিক্ষা দেয়। জাতিকে তার কাছেই নতজানু থাকতে হবে। রবীন্দ্রনাথের কথায় – “তাঁহার মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয়বট তিনি বঙ্গভূমিতে রোপণ করিয়া গিয়েছেন তাহার তলদেশ সমস্ত বাঙালি জাতির তীর্থস্থান হইয়াছে।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিদ্যাসাগর’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘বিদ্যাসাগর’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।

আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা