এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্য কী ছিল? ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয়?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্য কী ছিল? ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয়?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয়?
চিত্রশিল্পের অন্যতম শাখারূপে ব্যঙ্গচিত্রে মূলত তির্যক বা ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে প্রচলিত সামাজিক রীতি-নীতি ও ত্রুটি-বিচ্যুতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়। অত্যন্ত সরস ভঙ্গিতে সমাজের পাশাপাশি রাজনীতি, অর্থনীতি এমনকি সংস্কৃতির ত্রুটিগুলিকে আক্রমণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা, ‘বাবু’ সমাজের ভণ্ডামি এবং ধর্মীয় দ্বিচারিতাকে তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্য কী ছিল?
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্য –
চিত্রশিল্পের যে শাখা ব্যঙ্গাত্মক বা অত্যন্ত সরসভঙ্গীতে প্রচলিত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এমনকি সাংস্কৃতির ত্রুটিবিচ্যুতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরে তাকে ব্যঙ্গচিত্র বা কার্টুন বলে। আধুনিক বাংলা ব্যঙ্গচিত্রের জনক গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্যগুলি ছিল –
- প্রথমত – ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের নির্মম শোষণ, অকথ্য অত্যাচার ও নিপীড়নের বিষয়টিকে ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরা। তিনি ‘প্রচণ্ড মমতা’, ‘চোর’, ‘পিস ডিক্লেয়ার্ড ইন পাঞ্জাব’ ইত্যাদি ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে তা তুলে ধরেন।
- দ্বিতীয়ত – তৎকালীন ভারতীয় সমাজের জাতপাত ও বর্ণবৈষম্যের তীর নিন্দা করার উদ্দেশ্যে গগনেন্দ্রনাথ ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করেন। ‘জাতাসুর’, ‘খলব্রাহ্মণ’, প্রভৃতি ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে তা তুলে ধরেন।
- তৃতীয়ত – গগনেন্দ্রনাথ ভারতীয়দের পরানুকরণের পাশাপাশি বাবু সম্প্রদায়ের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের নিন্দা করেছেন ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে। ‘রূপান্তর’, ‘ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট’, ‘স্বদেশী বাবুর হালচাল’ প্রভৃতি ব্যঙ্গচিত্র তার উদাহরণ।
- চতুর্থত – ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে তীব্র বিদ্রুপ করার উদ্দেশ্যে গগনেন্দ্রনাথ ‘বিদ্যার কারখানা’ মতো ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করেন।
সর্বোপরি, ব্যঙ্গ চিত্রের মাধ্যমে গগনেন্দ্রনাথ ভারতের যুবসমাজকে তথা ভারতবাসীকে জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত করে তুলতে চেয়েছিলেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কে ছিলেন?
তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় চিত্রশিল্পী ও কার্টুনিস্ট, যাকে আধুনিক বাংলা ব্যঙ্গচিত্রের জনক বলা হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কিছু ব্যঙ্গচিত্রের নাম উল্লেখ করো।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কিছু ব্যঙ্গচিত্রের নাম উল্লেখ হল –
1. ‘প্রচণ্ড মমতা’, ‘চোর’, ‘পিস ডিক্লেয়ার্ড ইন পাঞ্জাব’ (ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা)।
2. ‘জাতাসুর’, ‘খলব্রাহ্মণ’ (জাতিভেদ ও ধর্মীয় ভণ্ডামির বিরুদ্ধে)।
3. ‘রূপান্তর’, ‘ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট’, ‘স্বদেশী বাবুর হালচাল’ (পাশ্চাত্য অনুকরণের বিদ্রূপ)।
4. ‘বিদ্যার কারখানা’ (শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা)।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রের শৈলী কেমন ছিল?
তিনি Cubist (ঘনকবাদী) ও Expressionist (ভাবব্যঞ্জক) শৈলী ব্যবহার করতেন, যেখানে সরস ও অতিরঞ্জিত রেখার মাধ্যমে ব্যঙ্গ ফুটিয়ে তোলা হতো।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন ব্যঙ্গচিত্র আঁকতেন?
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্যঙ্গচিত্র আঁকতেন কারণ –
1. সমাজ ও রাজনীতির অসঙ্গতিগুলিকে শিল্পের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে।
2. ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করতে।
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্রের ঐতিহাসিক গুরুত্ব –
1. তাঁর চিত্রগুলি ঔপনিবেশিক যুগের সমাজ-রাজনীতির দলিল স্বরূপ।
2. তিনি ভারতীয় কার্টুন শিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।
ব্যঙ্গচিত্র কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
ব্যঙ্গচিত্র হল শিল্পের একটি মাধ্যম যেখানে তির্যক হাস্যরসের মাধ্যমে সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক সমস্যাগুলি ফুটিয়ে তোলা হয়। এটি সমালোচনা ও পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
আজকের যুগে গগনেন্দ্রনাথের ব্যঙ্গচিত্রের প্রাসঙ্গিকতা কী?
গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রগুলি আজও শোষণ, ভণ্ডামি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সতর্কবাণী হিসাবে প্রাসঙ্গিক।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্য কী ছিল? ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয়?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্য কী ছিল? ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।