এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “C₂H₅OH জৈবযৌগ কিন্তু Na₂CO₃ জৈব যৌগ নয়—ব্যাখ্যা করো। অথবা, Na₂CO₃ এবং NaHCO₃ -কে কি জৈব যৌগ বলা যায়—ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

C₂H₅OH জৈবযৌগ কিন্তু Na₂CO₃ জৈব যৌগ নয়—ব্যাখ্যা করো।
অথবা, Na₂CO₃ এবং NaHCO₃ -কে কি জৈব যৌগ বলা যায়—ব্যাখ্যা করো।
জৈব যৌগের মধ্যে উপস্থিত কার্বনের ক্যাটিনেশন, সমাবয়বতা ইত্যাদি ধর্মগুলি দেখা যায় এবং জৈব যৌগগুলি সমযোজী প্রকৃতির হয়।
ইথাইল অ্যালকোহল (C₂H₅OH) যৌগে কার্বনের ক্যাটিনেশন ও সমাবয়বতা ধর্ম দেখা যায় এবং এটি একটি সমযোজী যৌগ। কিন্তু Na₂CO₃ একটি আয়নীয় যৌগ। এটি জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে Na⁺ এবং CO₃²⁻ আয়ন উৎপন্ন করে। আবার Na₂CO₃ যৌগে উপস্থিত কার্বনের ক্যাটিনেশন বা সমাবয়বতা ধর্ম দেখা যায় না। এই কারণে C₂H₅OH জৈব যৌগ কিন্তু Na₂CO₃ জৈব যৌগ নয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জৈব যৌগ বলতে কী বোঝায়?
জৈব যৌগ হল মূলত কার্বন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ। এগুলো সাধারণত সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে এবং জীবন্ত বা সেসব থেকে উৎপন্ন বস্তুতে পাওয়া যায়। জৈব যৌগের প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য হলো কার্বন পরমাণুর ক্যাটিনেশন (শৃঙ্খল গঠনের ক্ষমতা), সমাবয়বতা, দাহ্যতা এবং জলে দ্রবণীয়তা কম হওয়া।
Na₂CO₃ এবং NaHCO₃ কি জৈব যৌগ?
না, Na₂CO₃ (সোডিয়াম কার্বনেট) এবং NaHCO₃ (সোডিয়াম বাইকার্বনেট) উভয়ই অজৈব যৌগ। যদিও এদের অণুতে কার্বন পরমাণু আছে, তবুও তারা আয়নীয় যৌগ এবং জলে দ্রবীভূত হয়ে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন গঠন করে (যেমন – Na⁺ ও CO₃²⁻ বা HCO₃⁻)। এদের মধ্যে জৈব যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি (যেমন – কার্বন শৃঙ্খল গঠন, সমাবয়বতা) অনুপস্থিত। তাই, এদেরকে জৈব যৌগের শ্রেণিতে ফেলা হয় না।
কার্বন থাকলেই কি সব যৌগ জৈব যৌগ হয়?
না, শুধুমাত্র কার্বনের উপস্থিতিই কোনো যৌগকে জৈব যৌগ করে না। কার্বন-ভিত্তিক কিছু যৌগ যেমন – কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂), কার্বন মনোক্সাইড (CO), সোডিয়াম কার্বনেট (Na₂CO₃) প্রভৃতি অজৈব যৌগ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত। জৈব যৌগ হতে গেলে যৌগটির মধ্যে কার্বন-কার্বন বা কার্বন-হাইড্রোজেন বন্ধন থাকা, সমযোজী বন্ধন দ্বারা গঠিত হওয়া এবং জৈব ধর্ম (ক্যাটিনেশন, সমাবয়বতা ইত্যাদি) প্রদর্শন করা আবশ্যক।
“ক্যাটিনেশন” বলতে কী বোঝায় এবং এটি কেন জৈব যৌগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম?
ক্যাটিনেশন হলো কোনো মৌলের পরমাণুর নিজেদের সাথে সংযুক্ত হয়ে শৃঙ্খল, শাখা বা বৃত্তাকার গঠন তৈরি করার ক্ষমতা। কার্বন পরমাণুর চারটি সংযোজনতা (Tetravalency) এবং C-C বন্ধনের স্থায়িত্ব -এর কারণে এর ক্যাটিনেশন ক্ষমতা অসাধারণ। এই ধর্মের জন্যই কার্বন অসংখ্য জটিল ও বিবিধ জৈব যৌগ (যেমন – DNA, প্রোটিন, পলিমার) গঠন করতে পারে। তাই, ক্যাটিনেশন জৈব রসায়নের একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম।
জৈব ও অজৈব যৌগের মূল পার্থক্য কী?
জৈব ও অজৈব যৌগের মূল পার্থক্য হল তাদের গঠন ও ধর্মে –
1. জৈব যৌগ – সমযোজী বন্ধন, কার্বনের ক্যাটিনেশন, সমাবয়বতা, জলে সাধারণত অদ্রবণীয় কিন্তু জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয়।
2. অজৈব যৌগ – প্রায়শই আয়নীয় বন্ধন, ক্যাটিনেশন ও সমাবয়বতার অভাব, জলে সাধারণত দ্রবণীয়, উচ্চ গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “C₂H₅OH জৈবযৌগ কিন্তু Na₂CO₃ জৈব যৌগ নয়—ব্যাখ্যা করো। অথবা, Na₂CO₃ এবং NaHCO₃ -কে কি জৈব যৌগ বলা যায়—ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন