শৃঙ্খলঘটিত সমাবয়বতা বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।

একই আণবিক সংকেত কিন্তু ভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট যৌগগুলিকে পরস্পরের সমাবয়বী বলে। এই ঘটনাকে সমাবয়বতা বলে।

কোনো জৈব যৌগের অণুতে কার্বন পরমাণুগুলো কীভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়ে একটি শৃঙ্খল বা কাঠামো গঠন করে, তার বিভিন্নতার কারণে সৃষ্ট সমাবয়বতাকে শৃঙ্খলঘটিত সমাবয়বতা বলে। এখানে কার্বন পরমাণুর মূল শৃঙ্খলটি সরল শৃঙ্খল, শাখিত শৃঙ্খল বা বিভিন্নভাবে শাখান্বিত হতে পারে।

কার্বন (C) মৌলটি অপরিহার্য। কার্বন পরমাণুর অনন্য ধর্ম, যেমন এটি অন্যান্য কার্বন পরমাণুর সাথে দীর্ঘ শৃঙ্খল ও শাখা-প্রশাখা তৈরি করতে পারে, এই ধরণের সমাবয়বতার প্রধান কারণ।

হ্যাঁ, অবশ্যই। শৃঙ্খলঘটিত সমাবয়বীগণের আণবিক সংকেত (Molecular Formula) সম্পূর্ণ একই হয় এবং তাদের অণুতে কার্বন পরমাণুর সংখ্যাও সমান থাকে। শুধুমাত্র কার্বন পরমাণুগুলোর সংযোগ ক্রম বা শৃঙ্খলের গঠনে পার্থক্য থাকে।

পেন্টেনের (C₅H₁₂) ৩টি শৃঙ্খলঘটিত সমাবয়বী রয়েছে।
1. n-পেন্টেন (সরল শৃঙ্খল) – CH₃-CH₂-CH₂-CH₂-CH₃
2. আইসোপেন্টেন (শাখিত শৃঙ্খল) – (CH₃)₂CH-CH₂-CH₃
3. নিওপেন্টেন (অত্যন্ত শাখিত শৃঙ্খল) – C(CH₃)₄

না, তাদের ভৌত ধর্ম (যেমন – স্ফুটনাঙ্ক, গলনাঙ্ক, দ্রাব্যতা) ভিন্ন হয়। সাধারণত, শৃঙ্খল যত বেশি শাখান্বিত হয়, তার অণুটি তত বেশি গোলাকার (স্ফেরিক্যাল) হয়ে যায়, যার ফলে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল (van der Waals force) কমে যায়। ফলে শাখান্বিত সমাবয়বীর স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত সরল শৃঙ্খলযুক্ত সমাবয়বীর চেয়ে কম হয়।
উদাহরণ – n-পেন্টেনের স্ফুটনাঙ্ক 36°C, অন্যদিকে আইসোপেন্টেনের স্ফুটনাঙ্ক 28°C এবং নিওপেন্টেনের স্ফুটনাঙ্ক মাত্র 10°C।

না, শৃঙ্খলঘটিত সমাবয়বতা শুধুমাত্র অ্যালকেনে সীমাবদ্ধ নয়। এটি অ্যালকিন, অ্যালকাইন, অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, কার্বক্সিলিক অ্যাসিড ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণির জৈব যৌগেও দেখা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অণুতে কার্বন শৃঙ্খলের গঠনগত পার্থক্য সম্ভব হয়।
উদাহরণ (অ্যালকোহল) – C₄H₉OH-এর সমাবয়বীগুলোর মধ্যে n-বিউটানল (সরল শৃঙ্খল) এবং আইসোবিউটানল (শাখিত শৃঙ্খল) শৃঙ্খলঘটিত সমাবয়বী।