এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “চলন ও গমন কাকে বলে? চলন ও গমনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

চলন ও গমন কাকে বলে?
চলনের সংজ্ঞা (Definition of movement) – যে প্রক্রিয়ায় জীব এক জায়গায় একে থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা উদ্দীপকের প্রভাবে দেহের কোনও অংশ বা অঙ্গপ্রতঙ্গ সঞ্চালন করে তাকে চলন বা সঞ্চালন বলে।
গমনের সংজ্ঞা (Definition of locomotion) – যে প্রক্রিয়ায় জীব স্বেচ্ছায় অঙ্গপ্রতঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তাকে গমন বলে।
চলন ও গমনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
চলন ও গমনের মধ্যে পার্থক্য –
| চলন | গমন |
| চলনে জীবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন ঘটে। | গমনে জীবের সমগ্র দেহের সঞ্চালন ঘটে। |
| চলনে জীবের স্থান পরিবর্তন হয় না। | গমনে সমগ্র জীবের স্থান পরিবর্তন ঘটে। |
| চলন উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েরই সহজাত বৈশিষ্ট্য। | গমন প্রাণীদের এবং কিছু নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। |
| জীবের চলন হলে গমন নাও হতে পারে। | জীবের গমন হলে চলন হবেই। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
চলন বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।
যে প্রক্রিয়ায় জীবের দেহের কোনো অংশ বা অঙ্গ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা উদ্দীপকের প্রভাবে সঞ্চালিত হয় তাকে চলন বলে। উদাহরণ – সূর্যালোকের দিকে সূর্যমুখী ফুলের মাথা ঘোরা, মানুষের হাত ওঠানো, পাখির ডানা নাড়ানো (উড়ার সময় নয়), উদ্ভিদের মূল মাটির দিকে প্রবেশ করা।
গমন বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।
যে প্রক্রিয়ায় জীব তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালনের মাধ্যমে ইচ্ছেমতো সম্পূর্ণ দেহের স্থান পরিবর্তন করে, তাকে গমন বলে। উদাহরণ – মানুষ হেঁটে এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে যাওয়া, মাছের সাঁতার কাটা, পাখির উড়ে যাওয়া, ব্যাঙের লাফানো।
উদ্ভিদের কি গমন হয়?
সাধারণভাবে, উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের (যেমন – আমগাছ, গুল্ম) গমন হয় না, কারণ তারা মূলের মাধ্যমে এক স্থানে আবদ্ধ থাকে। তবে তারা বিভিন্ন উদ্দীপনায় (আলো, অভিকর্ষ, স্পর্শ) প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে যাকে চলন (যেমন – প্রস্বেদন, বৃদ্ধিজনিত চলন) বলে। কিছু নিম্নশ্রেণির জলজ উদ্ভিদ বা এককোষী শৈবাল (যেমন – ক্ল্যামাইডোমোনাস) সিলিয়া বা ফ্ল্যাজেলা ব্যবহার করে গমন করতে পারে।
প্রাণীর ক্ষেত্রে চলন ও গমন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
খাদ্য সংগ্রহ, বাসস্থান অনুসন্ধান, সঙ্গী নির্বাচন, শিকার থেকে পালানো বা শিকার করা এবং অনুকূল পরিবেশে স্থানান্তরের জন্য প্রাণীর গমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলন এই গমনকে সম্ভব করে তোলে।
গমন ঘটানোর জন্য প্রাণী কী কী উপায় অবলম্বন করে?
প্রাণীরা তাদের দেহ গঠন ও পরিবেশ অনুযায়ী বিভিন্ন উপায়ে গমন করে। যেমন – পেশি ও অস্থির সাহায্যে হাঁটা/দৌড়ানো, পাখার সাহায্যে ওড়া, পাখনা ও দেহের বক্রতা পরিবর্তনের মাধ্যমে সাঁতার কাটা, মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে সরিয়া যাওয়া (সাপ), পেশি ও তরলস্কেলিটনের মাধ্যমে হামাগুড়ি দেওয়া (কেঁচো)।
উদ্ভিদের চলন কয় প্রকার ও কী কী?
প্রধানত দুই প্রকার –
1. বৃদ্ধিজনিত চলন – উদ্ভিদদেহের বৃদ্ধির ফলে ঘটে (যেমন – মূলের মাটিতে প্রবেশ, কাণ্ডের আলোর দিকে বৃদ্ধি)।
2. অবস্থানগত চলন – দেহের নির্দিষ্ট অংশের স্থান পরিবর্তন (যেমন – ট্রপিক চলন, ন্যাস্টিক চলন – লজ্জাবতী গাছের পাতার সঙ্কোচন)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “চলন ও গমন কাকে বলে? চলন ও গমনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন