মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

Solution Wbbse

আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” এর থেকে “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা - সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন
Contents Show

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন কী?

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন –

  • প্রতিবাদ – 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর বাংলাদেশকে বিভক্ত করা হয়। বড়োলাট লর্ড কার্জনের এই বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন হয়।
  • স্বদেশি ও বয়কট – এই প্রতিবাদী আন্দোলনের অঙ্গ ছিল স্বদেশি জিনিস ব্যবহার ও বিদেশি জিনিস বর্জন করা। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে এই স্বদেশি ও বয়কট প্রতিবাদকে একসঙ্গে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন বলা হয়।

কবে, কেন বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন হয়?

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন –

  • সময়কাল – 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর লর্ড কার্জন বাংলাদেশকে ভাগ করলে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়।
  • কারণ – আয়তনের বিশালতা, প্রশাসনিক সুবিধা, উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়কে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের কারণ হিসেবে দেখিয়েছিল। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করা, হিন্দু বাঙালিদের সংখ্যালঘু করাই ছিল সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এই সমস্ত কারণে বঙ্গভঙ্গ হলে তার প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন হয়।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের নেতা কারা ছিলেন?

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে স্থানীয় এবং জাতীয় দু-ধরনের নেতা ছিলেন।

আন্দোলনের নেতৃত্ব –

  • স্থানীয় – এই আন্দোলনের স্থানীয় বাঙালি নেতা ছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় এবং নেত্রী ছিলেন সরলাদেবী চৌধুরাণী, হেমাঙ্গিনী দাস এবং লীলাবতী দেবী প্রমুখ।
  • জাতীয় – সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বাল গঙ্গাধর তিলক, সুব্রহ্মণ্য আয়ার, চিদাম্বরম পিল্লাই, লালা লাজপত রায় প্রমুখ ব্যক্তিরা জাতীয় স্তরে বঙ্গভঙ্গের নেতৃত্ব দান করেন।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের কয়টি ধারা ও কী কী?

1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর লর্ড কার্জনের বঙ্গবিভাজনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সংঘটিত হয়, তা বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন নামে পরিচিত।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন ধারা –

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের চারটি ধারা লক্ষণীয়। যথা –

  1. চিরাচরিত রাজনৈতিক আন্দোলন,
  2. বয়কট আন্দোলন,
  3. স্বদেশি আন্দোলন এবং
  4. গুপ্ত সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে বাংলার কোন্ কোন্ শ্রেণি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে?

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে বাংলার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ –

  • মধ্যবিত্তশ্রেণি – এই শ্রেণি প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ প্রদর্শন, প্রচারপুস্তিকা, আবেদনপত্র, স্বদেশি ও বয়কটের মাধ্যমে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
  • শ্রমিকশ্রেণি – পাটকল, সরকারি ছাপাখানা, বন্দর ও অন্যান্য কর্মকেন্দ্রের শ্রমিকেরা ধর্মঘটের মাধ্যমে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।

এভাবে সামাজিক শ্রেণি হিসেবে মধ্যবিত্ত ও শ্রমিকেরা এই আন্দোলনে যোগদান করে।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে বাংলার কৃষকরা কেন যোগদান করেনি?

বাংলাদেশে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন শুরু হলেও বাংলার কৃষকেরা এই আন্দোলন থেকে দূরে ছিল।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির যোগ না দেওয়ার কারণ –

  • যোগাযোগের অভাব – আন্দোলনের কোনো নেতাই কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না।
  • কর্মসূচি – এই আন্দোলনের কর্মসূচিতে খাজনা বন্ধের কথা ছিল না।

এই সমস্ত কারণ ছাড়াও অন্যান্য বেশ কিছু কারণে এই আন্দোলনে কৃষকেরা যোগদান করেনি।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের নেতারা কেন কৃষকদের সমর্থন চাননি?

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনটি পরিচালিত হয় শ্রেণিস্বার্থে।

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমর্থন না চাওয়ার কারণ –

  • শ্রেণিস্বার্থ – এই আন্দোলন পরিচালিত হয় মধ্যবিত্তশ্রেণির দ্বারা, মধ্যবিত্তশ্রেণির স্বার্থে।
  • আর্থিক – এই আন্দোলনে অর্থের জোগান দিত জমিদাররা। কৃষকরা তাই নেতাদের কাছে গুরুত্বহীন ছিল।

এইসব কারণে এই আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির সমর্থন চাওয়া হয়নি।

বাংলার বাইরে কৃষক আন্দোলনের উপর বঙ্গভঙ্গের প্রভাব কীরূপ হয়েছিল?

বাংলার বাইরেও বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল।

বাংলার বাইরে কৃষক আন্দোলন –

তবে বাংলা থেকে বহু দূরে মেবারে এই সময়কার কৃষক আন্দোলনের রূপটি ছিল অনেকটা আলাদা। চিতোরের রানাদের সম্পর্কে যে বীরগাথা লেখা হয়েছিল তার অনেকটাই বঙ্গভঙ্গের সুবাদে। লিখেছিলেন রমেশচন্দ্র দত্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের মতো ব্যক্তিরা। অথচ, পরবর্তীকালে মেবারের দরিদ্র কৃষকদের উপর 85 রকমের কর চাপানো হয়। ফলে তারা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে সীতারাম দাস নামে এক সাধুর নেতৃত্বে। 1916 খ্রিস্টাব্দে বিনয় সিং-এর উদ্যোগে মেবারের রাজকর্মচারী মানিকলাল ভার্মার তৎপরতায় উদয়পুরের মহারানার বিরুদ্ধে কর নিষিদ্ধ করার আন্দোলন শুরু হয়।

সত্যাগ্রহ কী? মহাত্মা গান্ধির সত্যাগ্রহ আন্দোলন বলতে কী বোঝো?

সত্যাগ্রহ –

সাধারণ অর্থে সত্যের প্রতি আগ্রহকে বলা হয় সত্যাগ্রহ। গান্ধিজির মতে, যা সত্য এবং ন্যায়সংগত সেই বিশ্বাসে অনড় থেকে শান্ত ও নিরস্ত্রভাবে সংযম ও অহিংসার সঙ্গে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রতিপক্ষের হৃদয় জয় করাই হল সত্যাগ্রহ।

সত্যাগ্রহ আন্দোলন –

এই সত্যাগ্রহ আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা গান্ধিবাদী আন্দোলনগুলিই সত্যাগ্রহ আন্দোলন নামে পরিচিত। গান্ধিজির মতে, রাজনৈতিক আন্দোলনেরও চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সত্যের প্রতি আগ্রহ ও নিষ্ঠা।

গান্ধিজির পরিচালিত প্রথম তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে এসে গান্ধিজি সত্যাগ্রহের ভিত্তিতে তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলন পরিচালনা করেন।

গান্ধিজির পরিচালিত প্রথম তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলনসমূহ –

  • চম্পারণ – 1917 খ্রিস্টাব্দে বিহারের চম্পারণ জেলায় গান্ধিজি প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেন।
  • খেদা – গুজরাটের খেদা বা খেড়া জেলায় অজন্মার জন্য শস্যহানি হলে চাষিদের দুর্গতি বাড়ে। চাষিদের আহ্বানে গান্ধিজি এখানে রাজস্ব হ্রাসের জন্য আন্দোলন করেন।
  • আহমেদাবাদ – আহমেদাবাদে শ্রমিকদের আবেদনে গান্ধিজি আন্দোলন করেন।

তিন কাঠিয়া প্রথা কী?

1917 খ্রিস্টাব্দে বিহারের চম্পারণ জেলায় ‘তিন কাঠিয়া প্রথা’-কে কেন্দ্র করে মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে চম্পারণ সত্যাগ্রহ সংগঠিত হয়েছিল।

তিন কাঠিয়া প্রথা –

চম্পারণ জেলায় নীলকর সাহেবরা চাষিদের জোর করে প্রতি 1 বিঘা জমির 3 কাঠায় নীল চাষ করতে বাধ্য করত। আবার এই উৎপাদিত নীল চাষিরা কম দামে নীলকরদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য ছিল। এই প্রথাকেই ‘তিন কাঠিয়া প্রথা’ বলা হত।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ কী?

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে গান্ধিজি সত্যাগ্রহ আদর্শের ভিত্তিতে যে তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলন পরিচালনা করেন, তার মধ্যে চম্পারণ সত্যাগ্রহ অন্যতম।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ –

বিহারের চম্পারণ জেলায় নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে 1917 খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি কৃষকদের সংগঠিত করে যে আন্দোলন পরিচালনা করেন, তা চম্পারণ সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজিকে চম্পারণ ত্যাগের নির্দেশ দেয়, কিন্তু তিনি তা দৃঢ়তার সঙ্গে উপেক্ষা করেন। শেষপর্যন্ত সরকার 1917 খ্রিস্টাব্দে ‘চম্পারণ কৃষি বিল’ পাস করে সেখানকার চাষিদের নীলচাষ স্বেচ্ছাধীন করে।

খেদা সত্যাগ্রহ কী?

খেদা সত্যাগ্রহ –

1917-1918 খ্রিস্টাব্দে দুর্ভিক্ষ, শস্যহানি প্রভৃতি কারণে গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকরা শোচনীয় অবস্থায় পড়ে সরকারের কাছে রাজস্ব মকুবের আবেদন জানালেও সরকার তাতে কর্ণপাত না করে কৃষকদের উপর উৎপীড়ন শুরু করলে 1918 খ্রিস্টাব্দের 22 মার্চ গান্ধিজির নেতৃত্বে সেখানকার কৃষকরা যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেছিল, তা খেদা সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

আহমেদাবাদ সত্যাগ্রহ কী?

ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর 1917-1918 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গান্ধিজি যে তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার মধ্যে আহমেদাবাদ সত্যাগ্রহ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।

আহমেদাবাদ সত্যাগ্রহ –

আহমেদাবাদে সুতাকল শ্রমিকরা মালিকদের কাছে নানাভাবে অত্যাচারিত হত। এই অত্যাচারের প্রতিবাদস্বরূপ শ্রমিকদের আহ্বানে গান্ধিজি 1918 খ্রিস্টাব্দে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন, তা আহমেদাবাদ সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ফলে মালিকপক্ষ 35 শতাংশ মজুরি বৃদ্ধিতে রাজি হয় এবং গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলন সফল হয়।

মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে এবং জাতীয় কংগ্রেসের পরিচালনায় সংঘটিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের নাম লেখো।

মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে এবং জাতীয় কংগ্রেসের পরিচালনায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল।

মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে আন্দোলনসমূহ –

এই আন্দোলনগুলি হল –

  • অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন (Non Cooperation Movement, 1920-1922 খ্রিস্টাব্দ),
  • আইন অমান্য আন্দোলন (Civil Disobedience Movement, 1930-1934 খ্রিস্টাব্দ) এবং
  • ভারত ছাড়ো আন্দোলন (Quit India Movement, 1942 খ্রিস্টাব্দ)।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতিতে কীরূপ পড়েছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব –

1914 থেকে 1918 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ভারতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ে।

  • কৃষকদের উপর প্রভাব – ভূমিরাজস্বের উপর উপকর বসানো হলে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে।
  • শ্রমিকদের উপর প্রভাব – কলকারখানার উপর চড়া হারে কর বসানো হলে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা স্বাভাবিকভাবে বেকার হয়ে পড়ে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে ভারতও প্রবল আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতীয় কৃষক ও শ্রমিকরা কী ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হয়?

1914 খ্রিস্টাব্দের 28 জুলাই অস্ট্রিয়া সার্বিয়া আক্রমণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। ভারতীয় অর্থনীতির উপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতীয় কৃষক ও শ্রমিকদের অবস্থা –

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে ভারতের বাজারে দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বাড়তি করের চাপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণি। রবীন্দ্র কুমারের গবেষণা থেকে জানা যায়, খাদ্যদ্রব্যের দাম 100 শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও মজুরি 15 শতাংশও বাড়েনি। ফলে তারা দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

কে, কবে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেন?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন ছিল গান্ধিজির প্রথম সর্বভারতীয় আন্দোলন।

অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা –

  • সূচনাকাল – 1921 খ্রিস্টাব্দের 1 জানুয়ারি থেকে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
  • প্রধান নেতা – এই আন্দোলনের সূচনা করেন মহাত্মা গান্ধি। সত্যাগ্রহ ও অহিংসার আদর্শে প্রথম সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনরূপে এই আন্দোলন শুরু হয়।

অসহযোগ আন্দোলনে কৃষকদের স্বার্থে কোন্ কোন্ কর্মসূচি ছিল?

গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত প্রথম সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন ছিল অসহযোগ আন্দোলন।

অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক স্বার্থের কর্মসূচি –

  • সালিশি বোর্ড – গ্রামাঞ্চলের পঞ্চায়েত এলাকায় স্থানীয় বিবাদ মীমাংসার জন্য সালিশি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব ছিল এই আন্দোলনে।
  • খাজনা বন্ধ – এই কর্মসূচিতে জমির খাজনা দেওয়া বন্ধ রাখতে বলা হয়।

এই কর্মসূচিতে আকৃষ্ট হয়ে কৃষকেরা অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় যুক্তপ্রদেশের কৃষকদের ভূমিকা কী ছিল?

অসহযোগ আন্দোলনের সময় যুক্তপ্রদেশের কৃষকদের ভূমিকা –

  • খাজনা বন্ধ – বাবা রামচন্দ্র, দেওনারায়ণ পাণ্ডে, গৌরীশঙ্কর মিশ্র প্রমুখ নেতাদের দ্বারা কৃষকেরা সংগঠিত হয়ে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।
  • আক্রমণ – সংগঠিত কৃষকেরা তালুকদারদের খামারবাড়ি, বসতবাড়ি আক্রমণ করে। এমনকি কোথাও কোথাও দোকানবাজারে লুঠপাট চালায়।

অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের সময় এইভাবে যুক্তপ্রদেশের কৃষকেরা হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিল।

অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনকালে বাংলার কোন্ কোন্ জেলায় কৃষক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে?

ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনকালে বাংলায় কৃষক আন্দোলন –

অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার বিভিন্ন জেলায় কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। যেমন – মেদিনীপুর, পাবনা, বগুড়া, বীরভূম, কুমিল্লা, রাজশাহি, রংপুর, দিনাজপুর, বাঁকুড়া ইত্যাদি।

অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনে মেদিনীপুরের কৃষকরা কীভাবে শামিল হয়?

গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত প্রথম সর্বভারতীয় আন্দোলন হল অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন।

অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনে মেদিনীপুরের কৃষকদের যোগদান –

অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনকালে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাংলার কৃষকরাও প্রতিবাদে শামিল হয়। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে মেদিনীপুরের কৃষকরা।

  • বৃহৎ, মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্র ইত্যাদি সকল শ্রেণির কৃষকই এই আন্দোলনে যোগদান করেছিল।
  • তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে কৃষকরা ইউনিয়ন বোর্ড বয়কট করে। তারা চৌকিদারি কর দেওয়াও বন্ধ করে দেয়।

চৌরিচৌরার ঘটনাটি কী?

অসহযোগ আন্দোলনের আদর্শ ছিল অহিংসা এবং সত্যাগ্রহ। চৌরিচৌরায় ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার জন্য গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

চৌরিচৌরার ঘটনা –

1922 খ্রিস্টাব্দের 5 ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের (তখনকার যুক্তপ্রদেশ) গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানে ভগবান আহির নামে এক স্বেচ্ছাসেবকের উপর পুলিশ অকথ্য অত্যাচার করে এবং বিনা প্ররোচনায় জনতার উপর গুলিবর্ষণ করে। এর ফলে জনতা উত্তেজিত হয়ে চৌরিচৌরা থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে 22 জন পুলিশকর্মী মারা যায়। এই ঘটনাই চৌরিচৌরা ঘটনা নামে পরিচিত।

চৌরিচৌরা ঘটনাটির গুরুত্ব কী?

অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের (তখনকার যুক্তপ্রদেশ) চৌরিচৌরা পুলিশ থানায় সহিংস ঘটনা ঘটার ফলে গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

চৌরিচৌরা ঘটনার গুরুত্ব –

  • দেশবাসী অহিংস সত্যাগ্রহ আদর্শের অনুসারী নয় এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়।
  • ইংরেজ সরকারের পুলিশের দমনপীড়ন জনতা আর মেনে নিতে রাজি ছিল না। বরং তাদের মধ্যে সাহস, বীরত্ব, কারাদণ্ড ও নির্যাতন সহ্য করার মানসিকতা দেখা যায়।
  • এই ঘটনা অসহযোগ আন্দোলনের অবসান ঘটায়।
  • গান্ধির নির্দেশে আন্দোলনের হঠাৎ সমাপ্তি কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
  • স্বরাজ্য দল গঠিত হয়।

কে, কবে যুক্তপ্রদেশ কিষানসভা প্রতিষ্ঠা করেন?

মধ্যবিত্তশ্রেণির স্বার্থে যেমন বিভিন্ন সভাসমিতি গড়ে ওঠে তেমনি কৃষকশ্রেণির স্বার্থে বিভিন্ন কিষানসভা গড়ে ওঠে।

যুক্তপ্রদেশ কিষানসভার প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – যুক্তপ্রদেশ কিষানসভার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মদনমোহন মালব্য। এক্ষেত্রে গৌরীশঙ্কর মিশ্র ও ইন্দ্রনারায়ণ দ্বিবেদী তাঁকে সাহায্য করেছিলেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1918 খ্রিস্টাব্দে যুক্তপ্রদেশ কিষানসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

যুক্তপ্রদেশের কিষান আন্দোলনের প্রকৃতি কী ছিল?

1918 খ্রিস্টাব্দে যুক্তপ্রদেশে কিষানসভা গঠিত হয়।

যুক্তপ্রদেশের কিষান আন্দোলনের প্রকৃতি –

যুক্তপ্রদেশের কিষান আন্দোলন শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকেনি। কৃষকরা তালুকদারদের বাড়ি, খামার আক্রমণ করে ক্ষান্ত থাকেনি, তারা দোকানবাজারেও লুঠতরাজ চালায়। পুলিশের সঙ্গে হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে।

কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্রের কীরূপ ভূমিকা ছিল?

অথবা, বাবা রামচন্দ্র কে ছিলেন?

1920-1921 খ্রিস্টাব্দে যুক্তপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকরা তালুকদারদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।

কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্র –

বাবা রামচন্দ্র ছিলেন যুক্তপ্রদেশে অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালের কৃষকনেতা। প্রতাপগড়, রায়বেরিলি, সুলতানপুর, ফৈজাবাদ প্রভৃতি জেলার কৃষকেরা তাঁর নেতৃত্বে তালুকদারদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।

যুক্তপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্রের অবদান ছিল অনস্বীকার্য।

বাবা রামচন্দ্রের কিষান আন্দোলনের লক্ষ্য কী ছিল?

যুক্তপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন বাবা রামচন্দ্র।

বাবা রামচন্দ্রের আন্দোলনের লক্ষ্য –

বাবা রামচন্দ্রের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল জোরজবরদস্তিমূলক কর আদায় বন্ধ করা বা করের পরিমাণ হ্রাস করা, বেগার প্রথার অবসান, বেদখলি জমি চাষ করতে অস্বীকার করা, অত্যাচারী ভূস্বামীদের সামাজিকভাবে বয়কট ইত্যাদি।

ব্রিটিশ সরকার অন্যায়ভাবে বাবা রামচন্দ্রকে জেলে পাঠালে ক্ষিপ্ত কৃষকরা বিশাল জমায়েত করে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়।

বাবা রামচন্দ্র পরিচালিত কৃষক আন্দোলনকে গান্ধিজি শেষ পর্যন্ত সমর্থন জানাননি কেন?

বাবা রামচন্দ্র যুক্তপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন।

বাবা রামচন্দ্র পরিচালিত কৃষক আন্দোলনকে গান্ধিজি শেষ পর্যন্ত সমর্থন জানাননি কারণ –

  • স্বতঃস্ফূর্ততা – বাবা রামচন্দ্র প্রতাপগড়, রায়বেরিলি, ফৈজাবাদ, সুলতানপুর প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকদের সংগঠিত করেন। তাঁর কুর্মি কিষানসভার আন্দোলন কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।
  • সহিংস – বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কৃষকরা খাজনা প্রদান বন্ধ করে। তারা হাটবাজার লুঠ করে, তালুকদারদের বাড়ি আক্রমণ করে।

এই কারণে গান্ধিজি বাবা রামচন্দ্রের কৃষক আন্দোলনকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন করেননি।

1921 খ্রিস্টাব্দে চা বাগিচার শ্রমিকেরা কেন আসাম ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল?

1921 খ্রিস্টাব্দে চা বাগিচা শ্রমিকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ –

  • অসহযোগ আন্দোলন – গান্ধিজি চম্পারণ সত্যাগ্রহের মাধ্যমে বিহারের দরিদ্র কৃষক-শ্রমিকদের কাছে অতিমানবে পরিণত হন। আসামের চা বাগিচায় বিহারের শ্রমিকেরা কাজ করত। গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের জন্য তারা আসাম ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
  • শোষণ – চা বাগিচা মালিকেরা শ্রমিকদের শোষণ করত। কম মজুরি, বেশি সময় কাজ, দৈহিক নির্যাতন, অস্বাস্থ্যকর জীবন, সুযোগসুবিধার অভাব প্রভৃতি কারণেও শ্রমিকেরা অসন্তুষ্ট ছিল। এই সকল কারণেই চা বাগিচার শ্রমিকরা আসাম ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

স্বামী বিদ্যানন্দ কে?

1919 খ্রিস্টাব্দে বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কৃষক অভ্যুত্থান শুরু হয়।

স্বামী বিদ্যানন্দ –

অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিহারের দ্বারভাঙা, ভাগলপুর প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকদের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্বামী বিদ্যানন্দ। 1920 খ্রিস্টাব্দে বিহার প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভায় তিনি কৃষকদের ক্ষোভের কারণ অনুসন্ধানের জন্য কমিটি তৈরির প্রস্তাব দেন। কিন্তু কংগ্রেস তাঁর এই দাবি সমর্থন করেনি।

কে, কবে অযোধ্যা কিযানসভা প্রতিষ্ঠা করেন?

কৃষকশ্রেণির স্বার্থরক্ষার জন্য অযোধ্যা কিষানসভা গড়ে ওঠে।

অযোধ্যা কিষানসভার প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – মহারাষ্ট্রের এক ব্রাহ্মণ কৃষকনেতা বাবা রামচন্দ্র ‘অযোধ্যা কিষানসভা’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1920 খ্রিস্টাব্দে তিনি এই কিষানসভা প্রতিষ্ঠা করেন।

এই সভা প্রতিষ্ঠার পর স্থানীয় কৃষকেরা সংগঠিত হয়।

কোথায়, কার নেতৃত্বে বিজোলিয়া সত্যাগ্রহ শুরু হয়?

অসহযোগ আন্দোলনের সময় অনেক আঞ্চলিক কৃষক আন্দোলন হয়, বিজোলিয়া সত্যাগ্রহ ছিল তার মধ্যে অন্যতম।

বিজোলিয়া সত্যাগ্রহ –

  • আন্দোলনের কেন্দ্র – রাজস্থানের মেবার রাজ্যের বিজোলিয়ায় এই সত্যাগ্রহ আন্দোলন হয়। ভিল উপজাতিরা এই আন্দোলন করে।
  • নেতৃত্ব – মোতিলাল তেজওয়াত এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। গান্ধিজির সত্যাগ্রহ পদ্ধতি বিজোলিয়ায় প্রয়োগ করা হয় এবং এই আন্দোলন সফল হয়।

মোপালা বিদ্রোহ কী?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক অসন্তোষ দেখা দিতে থাকে। এই সকল কৃষক অসন্তোষের মধ্যে মোপালা বিদ্রোহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

মোপালা বিদ্রোহ –

অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন মালাবার অঞ্চলে যে কৃষক বিদ্রোহ ঘটে, তা মোপালা বিদ্রোহ নামে পরিচিত। অস্পষ্ট প্রজাস্বত্ব আইন এবং জমিদারদের তীব্র শোষণের বিরুদ্ধে মোপালারা কৃষক বিদ্রোহ গড়ে তোলে। 1921 খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-তে মোপালা নেতা ইয়াকুব হাসান গ্রেফতার হলে মোপালাদের মধ্যে যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় তার ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে। তারা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে, এমনকি পুলিশচৌকি আক্রমণ করে। শেষপর্যন্ত সামরিক আইন জারি করে সরকার এই আন্দোলনের অবসান ঘটায়।

মোপালা বিদ্রোহ কেন হয়েছিল?

অসহযোগ আন্দোলনের সময় যেসব আঞ্চলিক কৃষক আন্দোলন হয়, মোপালা বিদ্রোহ ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম।

মোপালা বিদ্রোহের কারণ –

মালাবার অঞ্চলের মুসলিম কৃষক সম্প্রদায় ‘মোপালা’রা 1921 খ্রিস্টাব্দে জমিদার শ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। দীর্ঘদিনের অন্যায় ও সামন্ততান্ত্রিক শোষণ তো ছিলই এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল খলিফাকে তাঁর হৃতরাজ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার ধর্মীয় উন্মাদনা এবং ইংরেজবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ।

জেনমি কাদের বলা হত? তাদের বিরুদ্ধে কেন আন্দোলন হয়েছিল?

1921 খ্রিস্টাব্দে মালাবার অঞ্চলে জেনমিদের বিরুদ্ধে মুসলিম কৃষকদের আন্দোলন মোপালা আন্দোলন নামে পরিচিত।

জেনমি –

কেরলের মালাবার অঞ্চলের হিন্দু কৃষকদের জেনমি বলা হত।

জেনমির বিরুদ্ধে আন্দোলনের কারণ –

হিন্দু জেনমিরা অকথ্য অত্যাচারের মাধ্যমে দরিদ্র মোপালাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ইয়াকুব হাসান-এর নেতৃত্বে মোপালারা তাই জেনমিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।

রাম্পা বিদ্রোহ কী?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ গড়ে ওঠে। এই সকল কৃষক বিদ্রোহের মধ্যে রাম্পা বিদ্রোহ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

রাম্পা বিদ্রোহ –

অসহযোগ আন্দোলনের সময় অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা, গুন্টুর ও গোদাবরী জেলার কৃষক ও আদিবাসীরা বিদ্রোহ করেছিল। অন্ধ্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃষক বিদ্রোহ হল উত্তর গোদাবরী অঞ্চলে আল্লুরি সীতারাম রাজু পরিচালিত রাম্পা বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী কৃষকরা গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ শুরু করে। 1924 খ্রিস্টাব্দের 6 মে আপ্লুরি সীতারাম রাজু ধরা পড়লে রাম্পা বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।

কবে, কোথায় রাম্পা বিদ্রোহ ঘটে?

রাম্পা বিদ্রোহ –

  • সময়কাল – অসহযোগ আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে রাম্পা কৃষক বিদ্রোহ (1922-1924 খ্রিস্টাব্দ) ঘটে।
  • বিদ্রোহের কেন্দ্র – অন্ধের গোদাবরী ও গুন্টুর অঞ্চলে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। স্থানীয় উপজাতিদের নিয়ে আল্লুরি সীতারাম রাজু বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। অসহযোগ আন্দোলনের আদর্শ ছিল অহিংসা ও সত্যাগ্রহ। এই নীতি এই বিদ্রোহে সঠিকভাবে অনুসৃত না হলেও কৃষকেরা শোষণ থেকে মুক্তির জন্য এগিয়ে এসেছিল।

আল্লুরি সীতারাম রাজুর পরিচালিত কৃষক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

আল্লুরি সীতারাম রাজু 1922 থেকে 1924 খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে দক্ষিণ ভারতের গোদাবরী অঞ্চলে এক কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন।

আল্লুরি সীতারাম রাজুর পরিচালিত কৃষক আন্দোলন –

  • নেতৃত্ব – গোদাবরী অঞ্চলের রাম্পা পার্বত্য এলাকায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট আদিবাসীদের আল্লুরি সীতারাম রাজু সংগঠিত করেন। তিনি গান্ধিজির প্রশংসা করলেও ইংরেজদের হত্যা করতে আদিবাসীদের উৎসাহ দেন এবং নিজেও পদস্থ ইংরেজ কর্মচারীদের গুলি করে হত্যা করেন।
  • প্রকৃতি – আল্লুরি সীতারাম রাজু ইংরেজ এবং মহাজনি শোষণের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের নিয়ে প্রতিরোধ করেন। ফলে কৃষক আন্দোলন বা রাম্পা বিদ্রোহ তীব্র হয়ে ওঠে।
  • পরিণতি – আল্লুরি সীতারাম রাজু পুলিশের গুলিতে নিহত হলে রাম্পা বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।

কবে, কোথায় অরণ্য সত্যাগ্রহ শুরু হয়?

অরণ্য সত্যাগ্রহ –

  • সময়কাল – অসহযোগ আন্দোলনের সময় অর্থাৎ 1921 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে অরণ্য সত্যাগ্রহ শুরু হয়।
  • আন্দোলনের কেন্দ্র – অন্ধ্র অঞ্চলের কুদাপ্পার রায়চাটি তালুক এবং গুন্টুর -এর পালনাদ তালুকে অরণ্য সত্যাগ্রহ উদ্যাপিত হয়। গান্ধিজির অনুসৃত সত্যাগ্রহ নীতির বিকৃত প্রয়োগ ছিল এই ‘অরণ্য সত্যাগ্রহ’। এখানে সরকারের সংরক্ষিত বনভূমি ধ্বংস করা হয়।

কেন স্টে এনকোয়ারি কমিশন (Stay Enquiry Commission) গঠিত হয়?

স্টে এনকোয়ারি কমিশন গঠন –

  • শোষণ বিরোধিতা – ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যে সব উপাদান (পুলিশ, সৈন্য, প্রশাসন) ছিল, তার সহায়ক ছিল মহাজন শ্রেণি। তারা শোষণের মাধ্যমে সমাজকে অবদমিত করে রাখত।
  • গণ আন্দোলন – আইন অমান্য আন্দোলনের সময় জম্মুর মিরপুর, কোটলি, রাজৌরি তালুকে সাহুকার (মহাজন) বিরোধী গণ আন্দোলন হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার পরিস্থিতির তদন্তের জন্য স্টে এনকোয়ারি কমিশন গঠন করে।

অন্ধ্রপ্রদেশের কোথায়, কারা রায়তরাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল?

1928 খ্রিস্টাব্দে অন্ধ্র প্রাদেশিক রায়তসভা তৈরি হয়।

রায়তরাজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব –

এই সংগঠন ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিজয়ওয়াড়াতে তাদের দ্বিতীয় সম্মেলনে ‘রায়তরাজ’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গ্রহণ করে।

নেতৃত্ব –

অধ্যাপক এন জি রঙ্গ ছিলেন এদের নেতা। আইন অমান্য আন্দোলন এইভাবে অন্ধ্রপ্রদেশে বিপুলভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।

কবে, কেন আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়?

মহাত্মা গান্ধি পরিচালিত সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনের অন্যতম ছিল এই আইন অমান্য আন্দোলন।

আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা –

  • কারণ – লবণ তৈরি ও বিক্রি করাকে ব্রিটিশ সরকার নিজেদের একচেটিয়া ব্যাবসায় পরিণত করে। স্থানীয়ভাবে লবণ তৈরি নিষিদ্ধ করে দেয় ও লবণের উপর কর আরোপ করে।
  • সূচনাকাল – 1930 খ্রিস্টাব্দের 6 এপ্রিল এই আন্দোলনের সূচনা হয়।

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ভারতের কোথায় কোথায় কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল?

অসহযোগ আন্দোলনের পর আইন অমান্য আন্দোলন ছিল গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত দ্বিতীয় সর্বভারতীয় সত্যাগ্রহ আন্দোলন। এই আন্দোলনেও কৃষকশ্রেণি গান্ধিজির আহ্বানে সাড়া দেয়।

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ভারতের কৃষক আন্দোলনের স্থানসমূহ –

কৃষকদের সমর্থনে যুক্তপ্রদেশের আইন অমান্য আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। কালকাপ্রসাদ নামে এক ব্যক্তি রায়বেরিলি, বারাবাঁকি, এলাহাবাদ জেলায় কৃষকদের সংগঠিত করেন। এ ছাড়া গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, অন্ধ্র, উড়িষ্যা ইত্যাদি স্থানেও কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে।

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় অন্ধ্রের কোথায়, কার নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন হয়েছিল?

আইন অমান্য আন্দোলনে ভারতের কৃষকশ্রেণি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

অন্ত্রের কৃষক আন্দোলন –

  • আন্দোলনের কেন্দ্র – অন্ধ্রের উপকূল অঞ্চল, নেলোর, কৃষ্ণা ও গুন্টুর জেলায় এই সময় কৃষক আন্দোলন হয়।
  • নেতৃত্ব – দুগ্ধিবালা বালরাম কৃষ্ণ নিয়ার নামে এক তেলুগু কবি এই কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এইভাবে কৃষক আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠে।

সর্বভারতীয় কিষাণসভার দাবিগুলি কী ছিল?

1936 খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় কিষাণসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। লখনউতে কিষাণসভার প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বভারতীয় কিষাণসভার দাবিসমূহ –

কিষাণসভার দাবিগুলি ছিল –

  • খাজনা ও করের 50 শতাংশ হ্রাস,
  • কৃষককে জমির স্বত্ব দেওয়া,
  • বেগার প্রথার বিলুপ্তি,
  • ঋণ ও সুদ মকুব,
  • জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ইত্যাদি।

ক্রিপস মিশন কী উদ্দেশ্যে ভারতে আসে?

1942 খ্রিস্টাব্দের 23 মার্চ ক্রিপস মিশন ভারতে আসে।

ক্রিপস মিশনের ভারত আগমনের উদ্দেশ্য –

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য ও প্রখ্যাত আইনজ্ঞ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতকে সম্ভাব্য জাপানি আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভারতীয়দের সাহায্যলাভ ও ভারতের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানের উদ্দেশ্যে ভারতে আসেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন কেন হয়?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে শেষ গণ আন্দোলন ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ –

  • ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা – যুদ্ধে ভারতবাসীর সাহায্যলাভের জন্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতে আসেন। ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় তাঁর প্রস্তাব বাতিল হয়।
  • ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গ্রহণ – কংগ্রেস ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গ্রহণ করলে ইংরেজ সরকার কংগ্রেসি নেতাদের বন্দি করে।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় 1942 খ্রিস্টাব্দের 9 আগস্ট জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোন্ কোন্ প্রদেশে কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে?

গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনগুলির মধ্যে শেষ আন্দোলন ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলন (1942 খ্রিস্টাব্দ)। বিগত আন্দোলনগুলির মতো এই আন্দোলনেও সাধারণ মানুষের যোগদান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।

কৃষক আন্দোলনের স্থানসমূহ –

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে এই আন্দোলন ছিল শহরকেন্দ্রিক, পরে তা গ্রামাঞ্চলেও বিস্তার লাভ করে। আন্দোলনে সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। এর মধ্যে কৃষকদের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য। ডঃ সুমিত সরকার লিখেছেন, ‘ঝড়ের চারটি মূল কেন্দ্র ছিল- বিহার, পূর্ব যুক্তপ্রদেশ, মেদিনীপুর ও উড়িষ্যা এবং মহারাষ্ট্র-কর্ণাটক।’

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোথায় কোথায় স্থানীয় সরকার গড়ে ওঠে?

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের স্থানীয় সরকারসমূহ –

  • বাংলা – বাংলার মেদিনীপুর জেলায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • যুক্তপ্রদেশ – এখানকার বালিয়া-আজমগড়ে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • উড়িষ্যা – উড়িষ্যার তালচের, বালেশ্বর অঞ্চলে স্থানীয় সরকার গড়ে ওঠে।
  • মহারাষ্ট্র – এখানকার সাতারা অঞ্চলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

এভাবে ব্রিটিশ প্রশাসনকে নিশ্চিহ্ন করে বহু জায়গায় ভারতীয় জনগণ সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলে।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী?

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার –

1942 খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন চলার সময় ডিসেম্বরে মেদিনীপুরের তমলুক অঞ্চলে সমান্তরাল জাতীয় সরকারের একটি অংশ হিসেবে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে। সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল ও তমলুক – এই 4টি থানা জাতীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। এর সর্বাধিনায়ক ছিলেন বিশিষ্ট গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র সামন্ত। এই সরকারের সেনাবাহিনীর নাম ‘বিদ্যুৎবাহিনী’ ও মহিলা স্বেচ্ছাসেবী দলের নাম ছিল ‘ভগিনী সেনা’।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছিল?

ভারত ছাড়ো আন্দোলনপর্বে বাংলার মেদিনীপুর জেলায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নেতৃত্ব –

সতীশচন্দ্র সামন্ত -এর নেতৃত্বে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের উদ্যোগসমূহ –

  • তাম্রলিপ্ত সরকার সেই সময়ে হওয়া বিধ্বংসী সাইক্লোন-এর পর ত্রাণসংগ্রহ ও তা বণ্টনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
  • সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম, মহিষাদলের জাতীয় সরকারের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলে।
  • সালিশি সভার মাধ্যমে এই সরকার গ্রামস্তরের বিবাদ মেটানোর উদ্যোগ নেয়। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ‘বিদ্যুৎবাহিনী’ নামে একটি সশস্ত্র বাহিনীও তৈরি করেছিল।

একা আন্দোলন শুরু হয় কেন?

1921 খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যায় নিম্নবর্গের কৃষকরা একা বা একতা আন্দোলন সংগঠিত করে। এই আন্দোলনের নেতা ছিলেন মাদারি পাসি। আন্দোলনের চরিত্র ছিল উগ্র প্রকৃতির।

একা আন্দোলন শুরু হওয়ার কারণ –

একা আন্দোলন শুরু হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল। যথা –

  • নির্ধারিত খাজনার চেয়ে 50 শতাংশ অতিরিক্ত খাজনা নির্ধারণ।
  • বাটাই বা উৎপন্ন শস্যের বদলে নগদ অর্থে করপ্রদান ইত্যাদি।
  • খাজনা আদায়কারী ঠিকাদারদের অত্যাচার ও শোষণ।

একা আন্দোলন কাদের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়? কৃষকদের প্রধান শপথগুলি কী ছিল?

অসহযোগ-খিলাফৎ আন্দোলনের সময় যুক্তপ্রদেশে একটি কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে, যা একা আন্দোলন নামে পরিচিত।

সংগঠক –

সমাজের নিম্নবর্গের কৃষকরা এই আন্দোলন সংগঠিত করে। এই আন্দোলনের নেতা ছিলেন মাদারি পাসি।

প্রধান শপথ –

একা আন্দোলন পরিচালনার সময় আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা মাঝে মাঝে সভা করত। একজন পুরোহিত সভায় পৌরোহিত্য করতেন এবং উপস্থিত কৃষকরা শপথ নিত –

  • তারা কেবল সরকার নির্ধারিত খাজনা দেবে, অতিরিক্ত খাজনা দেবে না।
  • জমিদার জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করলেও কৃষকরা জমি ছাড়বে না প্রভৃতি।

মাদারি পাসি কে ছিলেন?

অসহযোগ-খিলাফৎ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশে (তখনকার যুক্তপ্রদেশ) একটি কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে, যা একতা বা একা আন্দোলন নামে পরিচিত।

মাদারি পাসি –

সমাজের নিম্নবর্গের কৃষকদের দ্বারা সংগঠিত একা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন মাদারি পাসি। আন্দোলনের চরিত্র উগ্র প্রকৃতির ছিল। মাদারি পাসি জেলাশাসককে হত্যা এবং ইংরেজ শাসকদের বিতাড়িত করার ডাক দেন।

একা বিদ্রোহের দাবিগুলি কী কী ছিল?

1921 খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যায় কংগ্রেস একতা বা একা আন্দোলন সংগঠিত করে।

একা বিদ্রোহীদের দাবি –

  • তারা সবসময় কর প্রদান করবে।
  • নথিবদ্ধ করের বেশি পরিমাণ কর তারা দেবে না।
  • অপরাধীদের কোনোভাবে সাহায্য করবে না।
  • সর্বোপরি পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত সবসময় মেনে নেবে।

একা আন্দোলন -এর সমাপ্তি কীভাবে হয়?

অসহযোগ আন্দোলনের সময় যুক্তপ্রদেশে একা বা একতা আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের নেতা ছিলেন মাদারি পাসি। তিনি নিম্নবর্ণের মানুষ ছিলেন।

একা আন্দোলন -এর সমাপ্তি –

একা আন্দোলন উগ্ররূপ ধারণ করলে ব্রিটিশ সরকার তা দমন করতে তৎপর হয়। 1922 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে সরকারের নির্মম দমননীতির ফলে এই আন্দোলনের অবসান ঘটে।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় কারা বারদৌলি অঞ্চলে গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন? এখানে কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়?

অসহযোগ আন্দোলনের সময় বারদৌলি অঞ্চলে গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন কল্যাণজি মেহতা, কুনবরজি মেহতা, দয়ালজি দেশাই প্রমুখ।

বারদৌলি অঞ্চলে গঠনমূলক কর্মসূচিসমূহ –

বারদৌলি অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। হালি প্রথা, মদ্যপান, পণপ্রথা ইত্যাদির বিরুদ্ধে কৃষকদের সচেতন করে তোলা হয়। এ ছাড়া এই অঞ্চলে বিদ্যালয়, সত্যাগ্রহ শিবির, আশ্রম ইত্যাদি গড়ে তোলা হয়।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ কী?

গুজরাটের সুরাট জেলার একটি তালুক হল বারদৌলি। 1920-1922 খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের সময় স্থির হয়েছিল যে, গান্ধিজি বারদৌলি থেকেই আন্দোলন শুরু করবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। এমতাবস্থায়, 1926 খ্রিস্টাব্দে সরকার বারদৌলি তালুকে ৩০ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধির নির্দেশ দিলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ –

এই প্রতিবাদের ফলস্বরূপ 1928 খ্রিস্টাব্দে বারদৌলিতে যে কৃষক আন্দোলন হয়েছিল, তা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রধান সংগঠক ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।

কে, কবে বারদৌলি সত্যাগ্রহ শুরু করেন?

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আদর্শের সফল প্রয়োগ হয় বারদৌলিতে।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ –

  • নেতৃত্ব – গুজরাটের বারদৌলি সত্যাগ্রহের নেতা ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। তাঁকে সাহায্য করেন কুনবরজি মেহতা ও কল্যাণজি মেহতা।
  • সূচনাকাল – 1928 খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বারদৌলি সত্যাগ্রহ শুরু হয়।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন কেন শুরু হয়?

1928 খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে অহিংস পথে সত্যাগ্রহ আদর্শের উপর ভিত্তি করে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল -এর সুযোগ্য নেতৃত্বে খাজনা বা রাজস্ব বন্ধ সংক্রান্ত যে আন্দোলন সংঘটিত হয়, তা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ শুরু হওয়ার কারণ –

বারদৌলি তালুকে মোট 137টি গ্রাম ছিল। জনসংখ্যা ছিল প্রায় 87,000 জন। এখানকার অধিবাসী কুনবিরা ছিল জমির মালিক। আর কালিপরাজ যারা বংশপরম্পরায় খেতমজুর ছিল, তারা ছিল স্থানীয় জনসংখ্যার প্রায় 60 শতাংশ।

এই সময় তুলোর দাম কমে গিয়েছিল। তবু বোম্বাই সরকার 1927 খ্রিস্টাব্দে প্রথমে 30 শতাংশ ও পরে 22 শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি করলে পরিস্থিতি কৃষকদের কাছে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। দৈনন্দিন জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে এইরূপ পরিস্থিতিতে শুরু হয় বারদৌলি সত্যাগ্রহ।

কালিপরাজ ও উজালিপরাজ কী?

কালিপরাজ ও উজালিপরাজ –

  1. কালিপরাজ – কালিপরাজ কথাটির মানে হল কালো মানুষ। তারা দুবলা জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং বারদৌলির জনসংখ্যার প্রায় 50 শতাংশ। তারা বংশপরম্পরায় ঋণদান হিসেবে পাতিদার কৃষকদের জমি চাষ করত।
  2. উজালিপরাজ – গান্ধিপন্থী কর্মীরা কালিপরাজদের নাম দেন রানিপরাজ বা উজালিপরাজ (1921 খ্রিস্টাব্দ)। সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য তারা কালিপরাজদের (কালো মানুষ) নাম বদল করে রানিপরাজ (অরণ্যবাসী) বা উজালিপরাজ (উজ্জ্বল মানুষ) নাম রাখেন।

বারদৌলি সত্যাগ্রহের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

1928 খ্রিস্টাব্দে বারদৌলিতে অহিংস পথে সত্যাগ্রহ আদর্শের উপর ভিত্তি করে খাজনা বা রাজস্ব বন্ধের একটি আন্দোলন হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও মহাত্মা গান্ধি।

বারদৌলি সত্যাগ্রহের দুটি বৈশিষ্ট্যসমূহ –

বারদৌলি সত্যাগ্রহের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  1. স্থানীয় নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই কৃষক আন্দোলনে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই যোগদান করেছিল। নারীদের যোগদানও ছিল লক্ষণীয়।
  2. গান্ধিজির আদর্শে অনুপ্রাণিত বল্লভভাই প্যাটেলের সুযোগ্য নেতৃত্ব ছিল এই আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

বারদৌলি সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণ করেছিলেন এমন কয়েকজন মহিলার নাম লেখো।

1928 খ্রিস্টাব্দে গুজরাট প্রদেশের সুরাট অঞ্চলের বারদৌলিতে যে কৃষক আন্দোলন হয়েছিল, তা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

বারদৌলি সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণকারী মহিলাগণ –

বারদৌলি সত্যাগ্রহে মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। এই সত্যাগ্রহে যেসকল মহিলারা কৃতিত্বের পরিচয় রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন – মনিবেন প্যাটেল, মিঠুবেন প্যাটেল, শারদা মেহতা প্রমুখ।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ কীভাবে সফল হয়?

বারদৌলি সত্যাগ্রহের সাফল্য –

  • অহিংস পথ – বারদৌলির পাতিদার কৃষক এবং কালিপরাজ ভূমিদাসরা অহিংস পথে খাজনা বন্ধের আন্দোলন চালায়। সরকারি নিপীড়ন ও লোভনীয় প্রস্তাবেও তারা বিচলিত হয়নি।
  • বামপন্থার ভীতি – ব্রিটিশ সরকার বারদৌলি আন্দোলনের সঙ্গে বোম্বাইয়ের বামপন্থী গিরনি-কামগড় ইউনিয়নের শিল্প ধর্মঘট যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা করে।
  • অনুসন্ধান কমিটি – ম্যাক্সওয়েল ব্লুমফিল্ড তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে বারদৌলির রাজস্ব বৃদ্ধি ত্রুটিপূর্ণ বলে ঘোষিত হয়।

এই সমস্ত কারণে বারদৌলি সত্যাগ্রহ সফলতা লাভ করে।

গান্ধিজি ‘হরিজন’ নামকরণের অনুরূপ কালিপরাজদের ‘রানিপরাজ’ বা ‘উজালিপরাজ’ নাম দেওয়ার কারণ কী?

গান্ধিজি যেমন হিন্দুসমাজের অবর্ণ ও তফশিল জনগোষ্ঠীর মানুষদের হরিজন নাম দেন, তেমনি কালিপরাজদের রানিপরাজ বা উজালিপরাজ নাম রাখা হয়।

ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটি কী?

গুজরাটের সুরাট জেলায় বারদৌলি তালুকে গান্ধিজির অনুগামী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে একটি সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটি গঠিত হয় (1928 খ্রিস্টাব্দ)।

ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটি –

বারদৌলি সত্যাগ্রহ জাতীয় বিষয়ে পরিণত হলে এবং গিরনি-কামগড় ইউনিয়নের শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে বোম্বাই সরকার এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। ম্যাক্সওয়েল ব্লুমফিল্ড কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন পেশ করে বলে যে, সরকার -এর বারদৌলিতে রাজস্ব বৃদ্ধি (22%) ত্রুটিপূর্ণ। বারদৌলির রাজস্ব 2,87,492 টাকা থেকে কমিয়ে 48,648 টাকা করা হয়।

এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোম্বাই সরকার রাজস্ব সংশোধন মুলতুবি রাখে। 1940 -এর দশক পর্যন্ত আর রাজস্ব বৃদ্ধি হয়নি।

বারদৌলি সত্যাগ্রহের তাৎপর্য কী?

গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে 1928 খ্রিস্টাব্দে একটি খাজনা বন্ধ আন্দোলন হয়।

বারদৌলির সত্যাগ্রহের তাৎপর্য –

  • সত্যাগ্রহের সাফল্য – বারদৌলি আন্দোলনের সাফল্য সত্যাগ্রহের সফলতা প্রমাণ করে।
  • গান্ধিজির নেতৃত্ব – এই আন্দোলনের সাফল্য অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতা ভুলিয়ে দেয়। এরপর গান্ধিজি অবিসংবাদী জাতীয় নেতায় পরিণত হন। এই আন্দোলনে গান্ধিজির মত ও পথের সত্যতা প্রমাণিত হয়।

বারদৌলি সত্যাগ্রহ কেন গান্ধিজির জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল?

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আদর্শের ভিত্তিতে 1928 খ্রিস্টাব্দে বারদৌলি সত্যাগ্রহ পরিচালিত হয় ও সাফল্য লাভ করে।

বারদৌলি সত্যাগ্রহের তাৎপর্য –

এই সত্যাগ্রহের মধ্য দিয়েই গান্ধিজির বেশ কয়েক বছরের ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’-এর অবসান ঘটে। তাঁর রাজনৈতিক অবসাদ কেটে যায়। স্বমহিমায় তিনি পুনরায় কংগ্রেসের রাজনৈতিক বৃত্তে ফিরে আসেন।

আবারও গান্ধিজি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হন, যা একাধারে ছিল অহিংস প্রকৃতির এবং জনসমর্থনের দ্বারা পরিচালিত।

তেভাগা আন্দোলন কী? এর কয়েকজন নেতা-নেত্রীর নাম লেখো।

তেভাগা আন্দোলন –

1937 খ্রিস্টাব্দে ফ্লাউড কমিশনের রিপোর্টে বলা হয় যে, বাংলার বহু কৃষক পরিবারের কৃষিজমিতে কোনো অধিকার নেই। এই কমিশনের সুবাদে ভাগচাষিরা তিন ভাগের এক ভাগ ফসল জমা দেবে বলে স্থির হয়, যা তেভাগা নামে পরিচিত। কিন্তু জমিদার বা সরকার কেউই এটা মানতে রাজি ছিল না। এই অবস্থায় কমিউনিস্টদের কৃষক সংগঠন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভা 1946 খ্রিস্টাব্দে যে আন্দোলন শুরু করে, তাকে তেভাগা আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয়।

তেভাগা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ –

তেভাগা আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ হলেন নিম্নরূপ-চারু মজুমদার, অবনী লাহিড়ী, বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়, জয়মণি, দীপেশ্বরী, বাতাসী, বিমলা মণ্ডল প্রমুখ।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন কেন হয়েছিল?

ভারতে কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে তেলেঙ্গানা আন্দোলন অন্যতম উল্লেখযোগ্য। 1946 খ্রিস্টাব্দে এই আন্দোলনের সূচনা হয়।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের কারণ –

প্রাক্-স্বাধীনতার যুগে তেলেঙ্গানা অঞ্চলটি ছিল হায়দরাবাদের নিজাম-শাসিত অঞ্চল। মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক পরিবেশে এই অঞ্চলের কৃষকদের কোনো স্বাধীন সত্তা ছিল না। এখানকার জমিদার, জায়গিরদার বা দেশমুখরা কৃষকদের উপর ‘ভেট্টি’ প্রথার মাধ্যমে শোষণ চালাত। এই পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বে কৃষকরা গেরিলা প্রতিরোধ শুরু করে।

কংগ্রেস নেতারা কেন কৃষক আন্দোলনকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট ছিলেন?

কৃষক আন্দোলনকে সীমাবদ্ধ রাখার কারণ –

  • জমিদার শ্রেণির ক্ষোভ – কংগ্রেস দলের সমর্থক, নেতা এবং অর্থের জোগানদাতা ছিল জমিদার শ্রেণি। কৃষক আন্দোলনে জমিদাররা অসন্তুষ্ট হয় কারণ কৃষকেরা খাজনা দেওয়া বন্ধ করতে চাইত।
  • শৃঙ্খলা সমস্যা – আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক কৃষকের যোগদানের ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও কৃষকেরা দল বেঁধে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটায়। এই সকল কারণে কংগ্রেসি নেতারা কৃষক আন্দোলনকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছিলেন।

কৃষক আন্দোলনে বামপন্থী প্রভাব বৃদ্ধির কারণ কী ছিল?

শ্রমিকশ্রেণির মতো কৃষকশ্রেণিও বামপন্থী আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।

বামপন্থী প্রভাব বৃদ্ধির কারণসমূহ –

কৃষক আন্দোলনে বামপন্থী প্রভাব বৃদ্ধির কারণগুলি হল নিম্নরূপ –

  • কৃষক স্বার্থের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের উদাসীন মনোভাব কৃষকদের বামপন্থার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।
  • রাশিয়ার বিপ্লবে বামপন্থা অবলম্বন করে কৃষক-শ্রমিকরা যে সাফল্য পেয়েছিল, তা ভারতীয় কৃষকদের অনুপ্রাণিত করে ইত্যাদি।

প্রাক্-স্বাধীনতা পর্বের কৃষক আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনের অনুষঙ্গ বলা হয় কেন?

স্বাধীনতার পূর্বেকার কৃষক আন্দোলনগুলি ভারতে জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য।

জাতীয় আন্দোলনের অনুষঙ্গ বলার কারণ –

কৃষক আন্দোলনগুলিকে ‘জাতীয় আন্দোলনের অনুষঙ্গ’ বলার কারণগুলি হল নিম্নরূপ –

  • জাতীয় আন্দোলন থেকে দূরে যে আন্দোলনকে সফল করা যাবে না, কৃষক নেতারা তা উপলব্ধি করেন।
  • অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষকরা জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যরূপে জাতীয় আন্দোলনের অংশ হিসেবে কৃষক আন্দোলন পরিচালনা করত।

কৃষক আন্দোলন কখনোই সর্বভারতীয় রূপ লাভ করতে পারেনি কেন?

কৃষক আন্দোলন কখনোই সর্বভারতীয় রূপ লাভ করতে পারেনি কারণ –

  • দেশীয় রাজ্য – ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতীয় দেশীয় রাজ্যগুলিতে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু ছিল। ফলে কৃষকদের অবস্থা ছিল শোচনীয়।
  • সাংগঠনিক দুর্বলতা –
    • ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে।
    • অনেক পরে 1936 খ্রিস্টাব্দে কিষানসভা গড়ে ওঠে।
    • জমিদাররা কংগ্রেসকে চাঁদা দিত। তাই কংগ্রেস কৃষকদের খাজনা বন্ধ করতে বলেনি।

উপরোক্ত কারণ ছাড়াও ব্রিটিশ সরকারের দমনপীড়ন, ধর্মীয় বিভেদ, চেতনার অভাব, অনীহা প্রভৃতি কারণের জন্য কৃষক আন্দোলন কখনোই সর্বভারতীয় রূপ লাভ করতে পারেনি।

কে, কবে ভারত শ্রমজীবী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন?

শ্রমজীবী সংঘ প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারক শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত শ্রমজীবী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – এই শ্রমিক সংঘের প্রতিষ্ঠা হয় 1870 খ্রিস্টাব্দে। কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে উদ্বুদ্ধ হয়ে শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘবের জন্য শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায় এই শ্রমিক সংঘটি প্রতিষ্ঠা করেন।

বোম্বে মিল অ্যান্ড মিল হ্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?

বোম্বে মিল অ্যান্ড মিল হ্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – নারায়ণ মেঘাজি লোখাণ্ডে ‘বোম্বে মিল অ্যান্ড মিল হ্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1890 খ্রিস্টাব্দে এই শ্রমিক সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রমিকশ্রেণির দুর্দশার প্রতি মানবতাবাদীদের দৃষ্টি প্রথম আকৃষ্ট হয়। তারাই এই বিষয়ে প্রথম উদ্যোগী হন।

কারা, কবে প্রিন্টারস অ্যান্ড কম্পোজিটার্স লিগ প্রতিষ্ঠা করেন?

প্রিন্টারস অ্যান্ড কম্পোজিটার্স লিগ প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – স্বদেশি আন্দোলনের নেতা ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় এবং শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী কলকাতার সরকারি ছাপাখানার কর্মীদের জন্য প্রিন্টারস অ্যান্ড কম্পোজিটার্স লিগ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1905 খ্রিস্টাব্দের 21 অক্টোবর এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

‘প্রিন্টারস অ্যান্ড কম্পোজিটার্স লিগ’ ছিল বাংলাদেশের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন। এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরে অন্যান্য শিল্পশ্রমিকেরা সংগঠিত হয় এবং ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলে।

শ্রমিকশ্রেণি স্বদেশি আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল কেন?

বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।

শ্রমিকশ্রেণির সমর্থনের কারণ –

শ্রমিকশ্রেণির এই আন্দোলনকে সমর্থন করার কারণ কেবল আর্থিক দাবি বিষয়ে ছিল না, তারা জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। শ্রমিকদের বোঝানো হয়েছিল, জাতীয় আন্দোলনের সাফল্যের সঙ্গে শ্রমিকদের ভাগ্য জড়িত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অবসান না ঘটলে শ্রমিকদের মুক্তি ঘটবে না।

স্বদেশি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভারতের কোথায় কোথায় শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়?

1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর বড়োলাট লর্ড কার্জন প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। এই ঘটনার বিরুদ্ধে শুরু হয় বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলন।

শ্রমিক ধর্মঘটের স্থানসমূহ –

বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলন শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘটে শামিল হয়। 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকরের দিন সারা বাংলার কলকারখানায় শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হয়। এ ছাড়া তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, বিহার, মহারাষ্ট্রেও শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দেয়।

স্বদেশি আন্দোলনের সময় হাওড়ার ফোর্ট গ্লস্টার জুট মিলের শ্রমিক ধর্মঘট কেন তাৎপর্যপূর্ণ?

হাওড়ার বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার জুটমিলের শ্রমিকরা স্বদেশি আন্দোলনের সময় ধর্মঘট করে।

ধর্মঘটের তাৎপর্য –

  • এই শ্রমিকদের আন্দোলন ছিল সবচেয়ে তীব্র।
  • শ্রমিকরা পরস্পরের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়ে ধর্মঘট শুরু করেছিল। কেরানিরাও শ্রমিকদের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়েছিল। ফলে কেরানি ও সাধারণ শ্রমিকদের মিলিত প্রয়াস এখানে লক্ষণীয়।

শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলনকে দিকচিহ্ন বলা হয় – কেন?

লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ আন্দোলন সংঘটিত হয়, তা ইতিহাসে স্বদেশি বা বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্রের মতে, শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলন ছিল একটি দিকচিহ্ন।

শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলনকে দিকচিহ্ন বলা হয় কারণ –

  • স্বদেশি আন্দোলনকালে বাংলা, তামিলনাড়ু, জামালপুর ইত্যাদি অঞ্চলে সংগঠিত শ্রমিক ধর্মঘটের মাধ্যমে সর্বভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল।
  • স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটেছিল।

কে, কবে মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন?

ইংরেজ আমলে ফিনান্স পুঁজির সূত্রে মাদ্রাজ অঞ্চলে কলকারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাতা – মানবতাবাদী কর্মী বি পি ওয়াদিয়া মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1918 খ্রিস্টাব্দে এই শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছিল। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের সংগঠিত করা হয়। এরপর তারা বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য যৌথভাবে আন্দোলন করে।

আইন অমান্য আন্দোলন শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি কেন?

গান্ধিজির আইন অমান্য আন্দোলনে সমাজের সব শ্রেণি অংশগ্রহণ করলেও শ্রমিকশ্রেণির অংশগ্রহণ ছিল তুলনামূলকভাবে কম।

আইন অমান্য আন্দোলন শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি কারণ –

  • দাবি উপেক্ষা – গান্ধিজি উত্থাপিত 11 দফা দাবির মধ্যে শ্রমিকদের উত্থাপিত দাবি স্থান পায়নি।
  • বামপন্থী প্রভাব – গিরনি-কামগড় ইউনিয়ন, ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির প্রভাব শ্রমিকদের উপর পড়েছিল। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কমিউনিস্ট নেতারা কারারুদ্ধ ছিলেন। তাই কমিউনিস্ট দল এই আন্দোলনে যোগ দেয়নি। এই সকল কারণে, আইন অমান্য আন্দোলন শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে তেমনভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি।

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় এবং তার পরবর্তীকালে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের দুর্বলতার কারণ কী ছিল?

গান্ধিজির নেতৃত্বে যে সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনগুলি পরিচালিত হয়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল আইন অমান্য আন্দোলন।

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় এবং তার পরবর্তীকালে শ্রমিক আন্দোলনের দুর্বলতার কারণ –

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় এবং তার পরবর্তীকালে শ্রমিক আন্দোলন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ – 1931 খ্রিস্টাব্দে ‘গান্ধি-আরউইন চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে কংগ্রেস সাময়িকভাবে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। আন্দোলন স্থগিত হওয়ার ফলে শ্রমিকরাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোন্ কোন্ স্থানে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট হয়?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলন একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। শ্রমিকশ্রেণি এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় শ্রমিক ধর্মঘটের স্থানসমূহ –

বোম্বাই শহরে গণবিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়। ক্রমশ তা গুজরাট, বিহার, মহীশূর, দিল্লি, লখনউ, কানপুর, নাগপুর, মাদ্রাজ, কোয়েম্বাটোর, কলকাতা ইত্যাদি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি পিছিয়ে ছিল কেন?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলন একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণির পিছিয়ে থাকার কারণসমূহ –

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি যুক্ত হয়। শ্রমিকরা এই আন্দোলনে যোগদান করলেও তারা বেশ পিছিয়ে ছিল। কারণ –

  • শহরকেন্দ্রিকতা – ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল শহরকেন্দ্রিক। শহরকেন্দ্রিক শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে যোগদান করলেও গ্রামীণ কুটিরশিল্পের শিল্পী-কারিগররা এই আন্দোলন থেকে দূরে ছিল।
  • বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি – মুসলিম লিগ, র‍্যাডিকাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টি ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদান না করায় এই দলের শ্রমিক সংগঠনগুলিও আন্দোলনে যোগদান থেকে বিরত ছিল।
  • দমননীতি – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উৎপাদন অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে সরকার শ্রমিকশ্রেণির উপর নিষ্ঠুর দমননীতি প্রয়োগ করে।

কার নেতৃত্বে, কবে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (AITUC) প্রতিষ্ঠিত হয়?

AITUC প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1920 খ্রিস্টাব্দের 31 অক্টোবর এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • প্রতিষ্ঠাতা – কংগ্রেস দলের উদ্যোগে লালা লাজপত রায়-এর সভাপতিত্বে বি পি ওয়াদিয়া, এন এম যোশি ও তিলকের সহযোগিতায় এই সংগঠনটি গড়ে ওঠে। এরপর AITUC -এর মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে যোগসূত্র বজায় থাকে। শ্রমিকেরা পৃথক সামাজিক শ্রেণি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংঘবদ্ধ আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রশস্ত হয়।

নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস বা AITUC-র ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। 1920 খ্রিস্টাব্দের 30 অক্টোবর বোম্বাইতে লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে এর প্রথম অধিবেশন বসে।

নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য –

প্রাচীনকাল থেকে ভারতে শ্রমিকশ্রেণির অস্তিত্ব থাকলেও ব্রিটিশ আমলে আধুনিক শিল্প প্রতিষ্ঠা বা ফিনান্স পুঁজির বিকাশের ফলে শ্রমিকশ্রেণির উত্থান ঘটে।

  • এই শ্রমিকশ্রেণির অবস্থা ছিল শোচনীয়। তাদের বেতন ছিল কম, থাকতে হত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। তাদের কাজের সময়সীমা ছিল 12 ঘণ্টা এবং জীবন-জীবিকার কোনো নিরাপত্তা ছিল না।
  • ব্রিটিশ সরকার শ্রমিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে কারখানা আইন-সহ বিভিন্ন আইন পাস করলেও তাতে শ্রমিকরা খুব বেশি লাভবান হয়নি। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ জমতে থাকে এবং বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ধর্মঘটও হয়। চিত্তরঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের সংগঠিত করে জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে সচেষ্ট হন।

এইভাবে ভারতে শ্রমিকশ্রেণির ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে AITUC-র জন্ম হয়েছিল, যার মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলন একটি নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত হয়েছিল।

কবে, কাদের উদ্যোগে লেবার স্বরাজ পার্টি অফ দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়?

বামপন্থীরা ভারতে শ্রমজীবী মানুষের শোষণমুক্তির জন্য গঠন করেন ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি। প্রতিষ্ঠাকালে এই দলের নাম ছিল লেবার স্বরাজ পার্টি অফ দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস (Labour Swaraj Party of the Indian National Congress)।

লেবার স্বরাজ পার্টি অফ দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটি প্রতিষ্ঠা –

লেবার স্বরাজ পার্টি 1925 খ্রিস্টাব্দের 1 নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়।

লেবার স্বরাজ পার্টি অফ দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটির উদ্যোক্তা –

কাজী নজরুল ইসলাম, হেমন্ত কুমার সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, শামসউদ্দিন হোসেন প্রমুখের সক্রিয় উদ্যোগে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

কবে, কারা ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন?

ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর শ্রমিক-কৃষকদের মধ্যে সংগঠন প্রসারের জন্য ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির প্রতিষ্ঠা –

  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1927 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • প্রতিষ্ঠাতা – মুজফ্ফর আহমেদ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, হেমন্ত কুমার সরকার ছিলেন এই দলের প্রতিষ্ঠাতা।

এরপর বিভিন্ন রাজ্যে এই দলের শাখা স্থাপিত হয় এবং শ্রমিক-কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ শুরু হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

শিল্পবিপ্লবের পর মার্কসের মতবাদ শোষিত-নিপীড়িত-শ্রমজীবী মানুষকে শোষণমুক্তির দিশা দেখায় এবং শ্রেণিসংগ্রামের প্রেরণা জোগায়। ভারতেও বামপন্থীরা 1927 খ্রিস্টাব্দে শ্রমজীবীদের শোষণমুক্তির উদ্দেশ্যে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (WPP) গঠন করেন।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য –

1920 খ্রিস্টাব্দের 17 অক্টোবর রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হয়। তারপর 1925 খ্রিস্টাব্দে কানপুরে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠে। ইংরেজ সরকারের দমননীতি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য ভারতের কমিউনিস্ট নেতারা গোপনে তাদের কার্যকলাপ পরিচালনা করতে থাকেন। তারা শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বামপন্থী মতাদর্শ প্রচার ও তাদের সংগঠিত করার জন্য ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি-কে হাতিয়ার করেন। এই সংগঠন শ্রেণিসংগ্রাম, বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা লোপ, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, সংবাদপত্রের বাস্বাধীনতা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ইত্যাদির দাবি তুলেছিল।

এই সংগঠনের হাত ধরে কমিউনিস্ট পার্টি তার সংগঠন বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির মুখপত্রগুলির নাম উল্লেখ করো।

বাংলা, বোম্বাই, পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশে কমিউনিস্ট কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য 1927 খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি গঠিত হয়।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির মুখপত্রসমূহ –

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি সাম্যবাদী ভাবধারা প্রসারের জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশ করেছিল। যেমনাদী বাংলায় ‘লাঙ্গল’ ও ‘গণবাণী’, বোম্বাইয়ে ‘ক্রান্তি’, যুক্তপ্রদেশে অসন্তিকারী’, পাঞ্জাবে ‘কীর্তি কিষাণ’ ইত্যাদি।

এই সকল পত্রপত্রিকার মাধ্যমে সারা ভারতে সাম্যবাদের প্রচার সহজ হয়েছিল।

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

আইন অমান্য আন্দোলনের সময় নাসিক জেলে বন্দি জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পট্টবর্ধন, ইউসুফ মেহের আলি, মিনু মাসানি, আচার্য নরেন্দ্র দেব -এর সভাপতিত্বে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয় (1934 খ্রিস্টাব্দ)।

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের মূল উদ্দেশ্য –

  • জমিদারি প্রথার বিলোপ,
  • বেগার প্রথার অবসান,
  • ভূমিরাজস্বের হার কমানো,
  • ঋণ মকুব,
  • কৃষকদের মধ্যে জমিবণ্টন,
  • কাজের অধিকার ও ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা,
  • শিল্প-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।

ইতিপূর্বে কমিউনিস্ট পার্টির তোলা দাবিগুলি এই দলের মূল উদ্দেশ্যে পরিণত হয়। স্বল্প স্থায়িত্বের জন্য এই দল তার উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করতে পারেনি।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির ভূমিকা কী ছিল?

1920 খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী প্রভাব পড়ে এবং বামপন্থী মতাদর্শের ভিত্তিতে কয়েকটি দল গড়ে ওঠে। কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি ছিল এগুলির মধ্যে অন্যতম।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ভূমিকা –

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির ভূমিকা অনস্বীকার্য। যথা –

  • ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হওয়ার আগের দিন ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেফতার করলে আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব এসে পড়ে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির হাতে।
  • জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া, অরুণা আসফ আলি প্রমুখের সুযোগ্য পরিচালনায় ভারত ছাড়ো আন্দোলন গতি লাভ করেছিল।

ভারতের কোথায়, কবে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়?

1920 খ্রিস্টাব্দে প্রথমে রাশিয়ার তাসখন্দে প্রবাসী বিপ্লবীরা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।

ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা –

  • স্থান – কানপুর সম্মেলনে সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • প্রতিষ্ঠাকাল – 1925 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এতদিন পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে বামপন্থী গোষ্ঠী আশ্রয় নিয়েছিল। এখন থেকে তারা নিজস্ব রাজনৈতিক দল গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দলের নীতি ও আদর্শ প্রচার করতে থাকে।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে দ্বিজ বলার কারণ কী?

1917 খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের সাফল্য আন্তর্জাতিক স্তরে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই ঘটনার প্রভাবে 1920 -এর দশক থেকে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে বামপন্থী সাম্যবাদী মতাদর্শ ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে।

কমিউনিস্ট পার্টিকে দ্বিজ বলার কারণ –

এইরূপ পরিস্থিতিতে 1920 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জি ও খিলাফৎ নেতা মহম্মদ আলি ও মহম্মদ সাফিক একত্রে রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর 1925 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কানপুরে কমিউনিস্ট পার্টির একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। কানপুর সম্মেলনেই ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি-র আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় বলে মনে করা হয়।

‘দ্বিজ’ কথার অর্থ হল – যার দু-বার জন্ম। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-ও দু-বার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে এই পার্টিকে ‘দ্বিজ’ বলা হয়।

কে, কবে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ কেন গঠন করেন?

ফরওয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা –

জওহরলাল নেহরুর উদ্যোগে আচার্য নরেন্দ্র দেব, জয়প্রকাশ নারায়ণ ও অচ্যুত পট্টবর্ধন কংগ্রেসের কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য মনোনীত হন। CSP বা কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রভাবেই সুভাষচন্দ্র বসু ত্রিপুরি কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী নেতাদের অসহযোগিতায় সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতির পদ ত্যাগ করে 1939 খ্রিস্টাব্দের 3 মে সমমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন। শেষপর্যন্ত ফরওয়ার্ড ব্লক একটি বামপন্থী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।

1920 -এর দশকে ভারতে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার কোন্ কোন্ ষড়যন্ত্র মামলা করেছিল?

রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর থেকে ভারতে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধিতে ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ফলে সরকার কমিউনিস্টদের দমন করার উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে।

বিভিন্ন মামলা –

কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলাগুলি হল – বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা (1923 খ্রিস্টাব্দ), কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা (1924 খ্রিস্টাব্দ), মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (1929 খ্রিস্টাব্দ) ইত্যাদি।

কানপুর বলশেভিক মামলা বলতে কী বোঝো?

ভারতে সাম্যবাদী আন্দোলনের সূচনা এবং শ্রমিকদের মধ্যে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধিতে ইংরেজ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ফলে সাম্যবাদের গতিরোধের উদ্দেশ্যে সরকার যেসকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, কানপুর বলশেভিক মামলা তার মধ্যে অন্যতম।

কানপুর বলশেভিক মামলা –

  • সময়কাল এবং পরিপ্রেক্ষিত – ঔপনিবেশিক সরকারবিরোধী কমিউনিস্ট কার্যকলাপ দমন করার উদ্দেশ্যে 1924 খ্রিস্টাব্দে কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হয়।
  • অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ – মুজফ্ফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, শওকৎ উসমানি ও নলিনী গুপ্ত এই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হন।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?

শ্রমিক আন্দোলনে সাম্যবাদের প্রভাব লক্ষ করে ব্রিটিশ সরকার 1929 খ্রিস্টাব্দের 20 মার্চ মুজফ্ফর আহমেদ, পি সি যোশি, ধরণী গোস্বামী এবং ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা বেঞ্জামিন ব্রাডলি ও ফিলিপ স্প্র্যাট-সহ 33 জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করলে শুরু হয় মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিক্রিয়া –

  • এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মধ্যে কয়েকজন কংগ্রেসি নেতাও ছিলেন। ফলে জাতীয় কংগ্রেসও এই মামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
  • মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার বিচারের সময় কমিউনিস্টরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে লড়াই করলে কমিউনিস্ট মতাদর্শ প্রসার লাভ করে।

দত্ত-ব্রাডলে থিসিস বলতে কী বোঝো?

দত্ত-ব্রাডলে থিসিস –

ব্রিটিশ সরকার 1934 খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি ও ট্রেড ইউনিয়নকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করলে বিখ্যাত মার্কসীয় ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্ত এবং কমিউনিস্ট নেতা বেঞ্জামিন ব্রাডলে একটি ইস্তাহার প্রকাশ করেন, যা দত্ত-ব্রাডলে থিসিস নামে পরিচিত। এই থিসিসে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের কথা বলা হয় এবং যুক্তফ্রন্ট গঠনের পরিকল্পনা করা হয়।

হুইটলি কমিশন কী?

শ্রমিকশ্রেণির অবিরাম বিক্ষোভ এবং সমসাময়িক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির জন্য হুইটলি কমিশন (Whitley Commission) নিয়োগ করে।

হুইটলি কমিশন –

  • নিয়োগকাল – 1929 খ্রিস্টাব্দে হুইটলি কমিশন নিয়োগ করা হয়।
  • উদ্দেশ্য – হুইটলি কমিশনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল যে শ্রমিকদের অবস্থার প্রতি ব্রিটিশ সরকার কতটা সহানুভূতিশীল তা প্রমাণ করা – কিন্তু সরকারের এই অভিসন্ধি পূরণ হয়নি।

শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত দমনমূলক আইনগুলি কী কী?

ভারতে শ্রমিক আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠলে ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে তারা শ্রমিক আন্দোলনের গতিরোধ করতে উদ্যত হয়।

শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত দমনমূলক আইনসমূহ –

এই উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার বেশ কিছু দমনমূলক আইন প্রণয়ন করে। যথা –

  • The Indian Trade Union Act,
  • Public Safety Act,
  • Trade Dispute Act ইত্যাদি।

শিল্প বিরোধ বিল পাসের উদ্দেশ্য কী ছিল?

কমিউনিস্ট আন্দোলন দমন করার জন্য বড়োলাট লর্ড আরউইন (Irwin) তাঁর জরুরি ক্ষমতাবলে যে দুটি শ্রমিকবিরোধী আইন পাস করেন, তার মধ্যে শিল্প বিরোধ বিল বা Trade Disputes Bill বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

শিল্প বিরোধ বিল পাসের উদ্দেশ্য –

শিল্প বিরোধ বিল পাসের উদ্দেশ্যগুলি হল –

  • ধর্মঘট বে-আইনি বলে ঘোষণা করা।
  • সালিশি বোর্ড দ্বারা শ্রমিক-মালিক বিরোধের অবসান ঘটানো।
  • সর্বোপরি, সাম্যবাদী ভাবধারার প্রসার রোধ করা ইত্যাদি।

বোম্বাই ট্রেড ডিসপিউট অ্যাক্ট (Bombay Trade Dispute Act) বলতে কী বোঝো?

1938 খ্রিস্টাব্দে শ্রমিক আন্দোলনের গতি স্তব্ধ করতে ব্রিটিশ সরকার যে আইন প্রণয়ন করে, তা বোম্বাই ট্রেড ডিসপিউট অ্যাক্ট (Bombay Trade Dispute Act) নামে পরিচিত।

বোম্বাই ট্রেড ডিসপিউট অ্যাক্ট –

বোম্বাই ট্রেড ডিসপিউট অ্যাক্ট-এ বলা হয় –

  • শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের বিরোধ অবশ্যই মিটিয়ে নিতে হবে।
  • ধর্মঘট বে-আইনি বলে ঘোষিত হয় ইত্যাদি।

ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি শোষণমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তোলার জন্য কী কী কর্মসূচি নিয়েছিল?

1925 খ্রিস্টাব্দে কানপুরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়।

কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচি –

  • প্রথমত, এরা কংগ্রেসকে বাধ্য করেছিল পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করতে।
  • দ্বিতীয়ত, কমিউনিস্টরা জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের দাবি করেছিল, স্লোগান তুলেছিল – ‘লাঙল যার জমি তার’।
  • তৃতীয়ত, রেলপথ, জলপথ, ডাক যোগাযোগ, খনি প্রভৃতি শিল্পের জাতীয়করণের দাবি তুলেছিল।

প্রাথমিক পর্বে কমিউনিস্ট পার্টির কী কী সীমাবদ্ধতা ছিল?

1925 খ্রিস্টাব্দে কানপুরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।

প্রাথমিক পর্বে কমিউনিস্ট পার্টির সীমাবদ্ধতা –

  • প্রথমত, আদর্শ ও বৃহৎ শক্তি হয়ে উঠতে না পারা।
  • দ্বিতীয়ত, কমিউনিস্ট নেতৃত্বের আদর্শগত স্ববিরোধিতা।
  • তৃতীয়ত, কংগ্রেসের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জোট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বামপন্থী নেতৃত্বের ব্যর্থতা ইত্যাদি।

তবে বলা যায়, সীমাবদ্ধতা থাকলেও ভারতে কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করা এবং তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের বিষয়ে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদা তৎপর ছিল।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে কমিউনিস্ট পার্টি দূরে ছিল কেন?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলন একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। কিন্তু কংগ্রেস পরিচালিত এই স্বতঃস্ফূর্ত গণ আন্দোলনে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি যোগদান করেনি।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে থাকার কারণ –

ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে সরে ছিল। কারণ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার সোভিয়েত রাশিয়াকে আক্রমণ করে। সোভিয়েত রাশিয়া ছিল কমিউনিস্ট রাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের মিত্রপক্ষ। ফলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সোভিয়েত রাশিয়া ও ব্রিটেনের পক্ষ অবলম্বন করায় ইংল্যান্ড-বিরোধী কংগ্রেসি ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে সমর্থন জানায়নি।

মানবেন্দ্রনাথ রায় কে ছিলেন?

মানবেন্দ্রনাথ রায় –

ভারতে সাম্যবাদী আন্দোলনের জনক ছিলেন নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ওরফে মানবেন্দ্রনাথ রায়। এই দ্বিতীয় নামেই তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন। প্রথমে মানবেন্দ্রনাথ পূর্ববাংলার অনুশীলন দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 1915 খ্রিস্টাব্দে তিনি অস্ত্রসংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারত ছেড়ে জার্মানিতে যান। বিভিন্ন দেশ ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে তিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং সেখানে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এখানেই নরেন্দ্রনাথ ‘মানবেন্দ্রনাথ’ নাম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আমেরিকা থেকে পালিয়ে মেক্সিকোতে যান এবং সেখানেই তিনি মার্কসবাদে দীক্ষিত হন।

1920 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি প্রমুখের সহায়তায় রাশিয়ার তাসখন্দে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, প্রতিষ্ঠিত হয়। র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-র প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি। ভারতে কমিউনিস্ট ভাবধারা প্রচার এবং গোড়ার দিকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের নীতি-পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন মানবেন্দ্রনাথ। কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে তাই তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সময় যে ছদ্মনামগুলি ব্যবহার করেন তার মধ্যে কয়েকটির উল্লেখ করো।

ভারতে সাম্যবাদী আন্দোলনের জনক ছিলেন নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সময় ছদ্মনামসমূহ –

বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সময় নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য যেসকল ছদ্মনামগুলি ব্যবহার করেছিলেন, সেগুলি হল – মানবেন্দ্রনাথ রায়, মিস্টার মার্টিন, মিস্টার ব্যানার্জি, ডঃ মাহমুদ প্রমুখ।

Vanguard of Indian Independence পত্রিকা সম্পর্কে কী জানো।

ভারতে বামপন্থী ভাবধারা ও আন্দোলন প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মানবেন্দ্রনাথ রায়।

Vanguard of Indian Independence পত্রিকা –

বিভিন্ন গ্রন্থ এবং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে মানবেন্দ্রনাথ রায় সাম্যবাদী ভাবধারার প্রসার ঘটান। ‘Vanguard of Indian Independence’ পত্রিকা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। 1922 খ্রিস্টাব্দে তিনি বার্লিনে আসেন এবং সেখান থেকে এই পাক্ষিক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। সাম্যবাদী প্রসার রোধের উদ্দেশ্যে সরকার এই পত্রিকাটি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।

মানবেন্দ্রনাথ রায় -এর সঙ্গে রুশ বিপ্লবী মিখাইল বোরোদিনের কী সম্পর্ক ছিল?

রুশ বিপ্লবী মিখাইল বোরোদিন এবং মানবেন্দ্রনাথ রায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে একসঙ্গে সাম্যবাদী কাজকর্ম চালিয়েছিলেন।

মিখাইল বোরোদিনের সঙ্গে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সম্পর্ক –

বুড়িবালামের যুদ্ধ ও বাঘা যতীনের মৃত্যুর পর বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায়কে সাম্যবাদী আদর্শে দীক্ষিত করেন বোরোদিন। তাঁদের দুজনের উদ্যোগে মেক্সিকোতে সাম্যবাদী দল তৈরি হয়।

মানবেন্দ্রনাথ রায় -এর সঙ্গে রুশ বিপ্লবী মিখাইল বোরোদিনের কী সম্পর্ক ছিল?

রাশিয়ায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা –

অনুরূপভাবে 1920 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন মানবেন্দ্রনাথ রায়।

মানবেন্দ্রনাথ রায় এবং লেনিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার আন্দোলন সম্পর্কে কী মত পোষণ করতেন?

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রসঙ্গে উভয়ের মতবিরোধ –

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার আন্দোলনে রাশিয়ার বলশেভিক নেতা লেনিন ও ভারতের বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায় পরস্পরবিরোধী ধারণা পোষণ করতেন। লেনিন চাইতেন জাতীয় বুর্জোয়াদের সঙ্গে কমিউনিস্টরা একসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করুক; কিন্তু মানবেন্দ্রনাথ রায় মনে করতেন কমিউনিস্টরাই এককভাবে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন করবে।

এই মতবিরোধকে কেন্দ্র করে মানবেন্দ্রনাথ রায় তৃতীয় আন্তর্জাতিক (কমিনটার্ন) থেকে বহিষ্কৃত হন।

লেনিন এবং মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মতবিরোধের কারণ কী ছিল?

ভারতের সাম্যবাদী আন্দোলনের জনক ছিলেন নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ওরফে মানবেন্দ্রনাথ রায়। 1915 খ্রিস্টাব্দে ভারত ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশ ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেক্সিকোতে গিয়ে পৌঁছোন।

লেনিনের সঙ্গে মতবিরোধের কারণ –

মেক্সিকোতে থাকাকালীন মানবেন্দ্রনাথ রায় 1919 খ্রিস্টাব্দে মিখাইল বোরোদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর 1920 খ্রিস্টাব্দে লেনিনের আহ্বানে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের দ্বিতীয় কংগ্রেসে যোগদান করার জন্য মানবেন্দ্রনাথ রাশিয়ায় যান। এই সমাবেশে ঔপনিবেশিক দুনিয়ায় বিপ্লব সফল করার জন্য কমিউনিস্টরা কী ভূমিকা গ্রহণ করবে, সেই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে লেনিনের সঙ্গে তাঁর তীব্র মতভেদ দেখা দেয়।

এই কংগ্রেসে লেনিন ‘উপনিবেশগুলির আশুকর্তব্য, বা Colonial Thesis নামক খসড়া পেশ করেন, যাতে ভারতের ক্ষেত্রে ‘জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম’ বলতে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বের কথা বলা হয়। মানবেন্দ্রনাথ এর বিরোধিতা করে একটি পরিপূরক তত্ত্ব পেশ করেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য লেনিন কিছুটা হলেও তাঁর সঙ্গে সহমত হন।

ভারতে বামপন্থার জনপ্রিয়তার কারণ কী ছিল?

1920 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1935 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে যে বামপন্থী আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল, তা ভারতের জাতীয় আন্দোলনে এক নতুন ধারার সূত্রপাত করেছিল।

বামপন্থার জনপ্রিয়তার কারণ –

  • গান্ধিজি পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার।
  • বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতা।
  • কৃষক ও শ্রমিক স্বার্থ বিষয়ে জাতীয় কংগ্রেসের উদাসীনতা ইত্যাদি কারণে বামপন্থা ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

1920-1935 খ্রিস্টাব্দে বামপন্থার ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?

বামপন্থার ব্যর্থতার কারণ –

  • সংকীর্ণ শ্রেণিচরিত্রের এই আন্দোলন ছিল শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির আন্দোলন।
  • যাদের জন্য ও যাদের নিয়ে এই আন্দোলন তারাই ছিল উপেক্ষিত। অতি সংক্ষেপে বলতে গেলে এই দল সমাজের নীচুতলার মানুষকে স্পর্শ করতে পারেনি।
  • সাধারণ মানুষের কাছে গান্ধিজি যতটা কাছের মানুষ ছিলেন, কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা তা হতে পারেননি।

সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধিজি পরিচালিত তিনটি সত্যাগ্রহ কী কী?

সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গান্ধিজির নেতৃত্বে যে তিনটি আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ পরিচালিত হয়েছিল, সেগুলি হল —

  • বিহারের চম্পারণ জেলায় নীলচাষীদের স্বার্থরক্ষার জন্য চম্পারণ সত্যাগ্রহ (1917 খ্রিস্টাব্দ)
  • সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকদের নিয়ে খেদা সত্যাগ্রহ (1918 খ্রিস্টাব্দ) এবং
  • আমেদাবাদ সুতাকল শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ (1918 খ্রিস্টাব্দ)।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষক শ্রেণি পিছিয়ে ছিল – কেন?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কোনো কৃষিভিত্তিক কর্মসূচী ছিল না। তাছাড়া নেতৃত্ববর্গের সঙ্গে জমিদার-মহাজন শোষকদের যোগাযোগ এর ঘটনাকে কৃষক শ্রেণি সুনজরে দেখেনি। স্বভাবতই জমিদার ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির সাহায্যপুষ্ট এই আন্দোলন থেকে কৃষকশ্রেণি পিছিয়ে ছিল।

চম্পারণ সত্যাগ্রহে কার অনুরোধে এবং কাদের নিয়ে গান্ধীজি চম্পারণে যান?

কৃষক নেতা রাজকুমার শুক্লার অনুরোধে রাজেন্দ্রপ্রসাদ, ব্রজকিশোর প্রসাদ, অধ্যাপক কৃপালনি, মজাহরুল হক, মহাদেব দেশাই প্রমুখদের নিয়ে গান্ধিজি চম্পারণে যান (1917 খ্রিস্টাব্দ)।

খেদা সত্যাগ্রহে গান্ধীজির সহযোদ্ধা কারা ছিলেন?

মোহনলাল পান্ডা, বল্লভভাই প্যাটেল, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখরা খেদা সত্যাগ্রহে গান্ধিজির সহযোদ্ধা ছিলেন।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতের কোথায় কোথায় কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল?

বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে মেদিনীপুর জেলা, বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে প্রতাপগড় ও রায়বেরিলি, মাদারি পাশির নেতৃত্বে উত্তর অযোধ্যায় একা বা একতা আন্দোলন, স্বামী বিদ্যানন্দের নেতৃত্বে বিহারের দারভাঙ্গা, মালাবার অঞ্চলের মোপলা বিদ্রোহ ছিল অসহযোগ আন্দোলনের সময় উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন।

যুক্তপ্রদেশ কিষাণ সভা (1918 খ্রিস্টাব্দ) কাদের উদ্যোগে স্থাপিত হয়?

মদনমোহন মালব্য, ট্যান্ডন, গোরীশঙ্কর মিশ্র, ইন্দ্রনারায়ণ দ্বিবেদী প্রমুখের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় 1918 খ্রিস্টাব্দে যুক্তপ্রদেশ কিষাণসভা স্থাপিত হয়।

একা বা একতা আন্দোলন কী?

1921-22 খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ও খিলাফতি নেতাদের উদ্যোগে এবং মাদারি পাশির নেতৃত্বে হরদৌ, সীতাপুর, বারাচ, বাররাকী জেলায় যে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়, এই আন্দোলন একা বা একতা আন্দোলন নামে খ্যাত।

দামোদর ক্যানেল কর আন্দোলন কী?

দামোদর ক্যানেল কর বাড়ানোর কারণে কংগ্রেস নেতা আব্দুল সাত্তার ও কমিউনিস্ট নেতা বঙ্কিম মুখার্জির নেতৃত্বে বর্ধমান জেলায় কৃষকশ্রেণি দামোদর ক্যানেল কর আন্দোলন শুরু করে।

পত্তনিদার ও কুনবি কাদের বলা হয়?

গুজরাটের মধ্যবিত্ত চাষীদের বলা হত পত্তনিদার এবং নিম্নবর্গীয় দরিদ্র কৃষকদের কুনবি বলা হত।

কিষাণ আন্দোলনে বামপন্থী প্রভাব বাড়ার কারণ কী?

কিষাণ আন্দোলনে বামপন্থী প্রভাব বাড়ার কারণগুলি হল –

  • কিষাণ আন্দোলনের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের উদাসীনতা
  • রুশ বিপ্লবে শ্রমিক-কৃষকদের সাফল্য
  • কংগ্রেসের আপোষমূলক নীতি
  • অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমিদার-জোতদার ঘেঁষা নীতি
  • উপযুক্ত কৃষক-কর্মসূচী গ্রহণে অনীহা।

সর্বভারতীয় কিষাণসভা গঠনে (1936 খ্রি:) কাদের নাম জড়িয়ে গেছে?

এন. জি. রঙ্গ, স্বামী সহজানন্দ, ই. এম. এস. নামুদ্রিপাদ, ইন্দুলাল যাজ্ঞিক প্রমুখ কিষাণ নেতার নাম সর্বভারতীয় কিষাণসভা গঠনে জড়িয়ে আছে।

প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বে কয়েকজন প্রথম সারির সমাজতান্ত্রিক কিষাণ নেতার নাম লেখো।

রাম মনোহর লোহিয়া, মোহন সিং, জয়প্রকাশ নারায়ণ, ই. এম. এস. নাম্বুদ্রিপাদ, বঙ্কিম মুখার্জি প্রমুখরা ছিলেন প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সমাজতান্ত্রিক কিষাণ নেতা।

সর্বভারতীয় কিষাণ সভার ইস্তাহারে কী বলা হয়েছে?

সর্বভারতীয় কিষাণসভার ইস্তাহারে যা বলা হয়েছিল –

  • জমিদারি প্রথার বিলোপ
  • বেগার প্রথা বন্ধ
  • ভূমি রাজস্বের ছাড়
  • খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধি
  • কৃষকদের ঋণ পরিশোধের জন্য বিলম্বিত ব্যবস্থা
  • সামন্তকরের বিলোপ এবং
  • জমিতে কৃষকদের স্বত্বপ্রদান ইত্যাদি।

বখস্ত আন্দোলন কী?

বখস্ত জমি বলতে খাজনা অনাদায়ে যে জমি জমিদাররা বাজেয়াপ্ত করে। এই জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করা হয়। বিহারের এই বখস্ত জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সংগঠিত হয় (1930 খ্রি: – 1937 খ্রি:) তা বখস্ত আন্দোলন নামে খ্যাত। বামপন্থীরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল।

স্বাধীনতালাভের প্রাক্ মুহূর্তে সংগঠিত কয়েকটি কৃষক আন্দোলনের নাম লেখো।

স্বাধীনতালাভের প্রাক মুহূর্তে সংগঠিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কৃষক আন্দোলন হল –

  • তেভাগা আন্দোলন
  • পুন্নাপ্রা-ভায়লার আন্দোলন
  • তেলেঙ্গানা আন্দোলন
  • মহারাষ্ট্রের দহনু ও উমাবরগাঁ আন্দোলন।

তেভাগা আন্দোলনের মূল কথা কী ছিল?

তেভাগা আন্দোলনের মূল কথা ছিল: বর্গাদারগণ যে জমিতে চাষ করে সেই জমিতে তাদের স্বত্ব প্রদান করা; যতদিন না তা সম্ভব ততদিন উৎপন্ন ফসলের 2/3 ভাগ (দুই তৃতীয়াংশ) তাদের দিতে হবে। সমগ্র বাংলার প্রায় 60 লক্ষ কৃষক এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

তেলেঙ্গানা আন্দোলনের কয়েকজন নেতার নাম লেখো।

পি. সি. সুন্দরাইয়া, রবিনারায়ণ রেড্ডি, ইয়েলো রেড্ডি প্রমুখ ছিলেন তেলেঙ্গানা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী উল্লেখযোগ্য নেতা।

বেট্টি প্রথা কী?

হায়দরাবাদের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে কৃষকদের বাধ্যতামূলক বেগার শ্রম প্রথাকে বেট্টি প্রথা বলে। তবে হরিজনদের ওপর এই প্রথা বলবৎ ছিল।

হারি প্রথা কী?

জমিদারের জমিতে চাষীকে বিনা পারিশ্রমিকে নিজের গরু-লাঙল দ্বারা আবাদ করে দেওয়াকে হারিপ্রথা বলা হত। এই প্রথা উত্তরপ্রদেশে চালু ছিল।

যজমানি প্রথা কি?

নিম্নবর্গের চাষীদের বড় জমিদার বা উচ্চবর্ণের তালুকদারদের বাজার অপেক্ষা কমদামে ঘি, চামড়া, কাঠ, কাপড় সরবরাহ করার প্রথাকে যজমানি প্রথা বলে। এই প্রথা উত্তরপ্রদেশে বহুল প্রচলিত ছিল।

হাতিওয়ালা ও মোটরওয়ালা কী?

উত্তরপ্রদেশের কৃষক অসন্তোষের একটি কারণ ছিল হাতিওয়ালা ও মোটরওয়ালা প্রথা। তালুকদাররা হাতি বা মোটর গাড়িতে চড়লে তার খরচ প্রজাদের বহন করতে হত, যা হাতিওয়ালা ও মোটরওয়ালা নামে খ্যাত।

পুন্নাপ্রা-ভায়লার গণসংগ্রামের দু’জন কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।

পুন্নাপ্রা-ভায়লার গণসংগ্রামের (1946 খ্রিস্টাব্দ) দুজন কমিউনিস্ট নেতা হলেন – কে. সি. জর্জ এবং টি. ভি. টমাস

স্বদেশী আন্দোলনের যুগে কয়েকজন নেতার নাম লেখো — যাঁরা শ্রমিক সংগঠনে এগিয়ে এসেছিলেন?

স্বদেশী আন্দোলনের যুগে কয়েকজন শ্রমিক নেতা হলেন — প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, অপূর্ব কুমার ঘোষ, অশ্বিনীকুমার ব্যানার্জিপ্রেমতোষ বসু। এঁরা সকলেই ব্যারিস্টার ছিলেন।

মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়নের (1918 খ্রিস্টাব্দ) কর্ণধার কারা ছিলেন?

চেল্লাপতি চেট্টি এবং বি. পি. ওয়াদিয়া ছিলেন মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়নের প্রধান কর্ণধার।

ভারতে কার নেতৃত্বে এবং কবে প্রথম মে দিবস পালিত হয়?

1923 খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গারভেলু চেট্টিয়ার নেতৃত্বে মাদ্রাজের সমুদ্রতীরে ভারতে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়।

কবে এবং কার সভাপতিত্বে AITUC (All India Trade Union Congress) গঠিত হয়?

1920 খ্রিস্টাব্দের 30 অক্টোবর, লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে বোম্বাই – এ AITUC গঠিত হয়।

রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার (1920 খ্রিস্টাব্দ) সঙ্গে কাদের নাম জড়িয়ে আছে?

এম. এন. রায়, অবনী মুখার্জি, নলিনীগুপ্ত, মহেন্দ্রপ্রতাপ, ধীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, মহম্মদ আলি, মহম্মদ সাফিক প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতার নাম রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার (1920 খ্রিস্টাব্দ) সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

কবে, কার সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (ভারতে) প্রতিষ্ঠিত হয়?

1925 খ্রিস্টাব্দের 26 ডিসেম্বর কানপুরে মাদ্রাজের প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের সভাপতিত্বে ভারতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য তাদের কোন কোন্ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল?

কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য তাদের তিনটি ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয় যথা —
1. পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা (1922 খ্রিস্টাব্দে),
2. কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা (1924 খ্রিস্টাব্দ) এবং
3. মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা (1929 খ্রিস্টাব্দ)।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় (1925 খ্রিস্টাব্দে) কারা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল?

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় যারা উদ্যোগী হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন — সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার, মুজাফ্ফর আহমেদ, এস. ভি. ঘাটে, কে. এন. যোগলেকর, এস. এস. মিরাজকর প্রমুখ।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কমিউনিস্ট নেতা হলেন — মুজাফ্ফর আহমেদ, এস. ভি. ঘাটে, কে. এন. যোগলেকর, এস. এস. মিরাজকর, শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে (এস. এ. ডাঙ্গে), শৌকত উসমানি, পি. সি. যোশী, ধরনী গোস্বামী, সামসুল হুদা, গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দু’জন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা হলেন — বেন ব্রাডলি ও ফিলিপ স্প্যাট। এছাড়াও হিউ লেস্টার হ্যাচিনসন নামে একজন ব্রিটিশ সাংবাদিকও এই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন।

কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (1924 খ্রিস্টাব্দ) অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত দু’জন কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।

কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দু’জন কমিউনিস্ট নেতা হলেন — মুজাফ্ফর আহমেদ এবং নলিনী গুপ্ত।

কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি কবে, কাদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে?

1934 খ্রিস্টাব্দের 23 অক্টোবর বোম্বাই-এ কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। এই সংগঠনটি যাদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল তাঁরা হলেন — আচার্য নরেন্দ্রদেব, রাম মনোহর লোহিয়া, এম. এ. আনসারি, মিনু মাসানি, জয়প্রকাশ নারায়ণ প্রমুখ।

কয়েকজন কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের নেতার নাম লেখো।

আচার্য নরেন্দ্রদেব, অচ্যুত পটবর্ধন, রামমনোহর লোহিয়া, অরুণা আসফ আলি, জয়প্রকাশ নারায়ণ প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের নেতা।

কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি (1934 খ্রিস্টাব্দ) কী উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল?

শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের শামিল করার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি (1934 খ্রিস্টাব্দ) গঠন করা হয়েছিল। আসলে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে থেকে সঠিক নীতি নির্ধারণে সাহায্য করাও ছিল এর লক্ষ্য।

কবে, কাদের নেতৃত্বে বাংলায় পেজেন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়?

1925-26 খ্রিস্টাব্দে বাংলায় পেজেন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়। এই সংগঠনটি গঠন করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন — মুজাফ্ফর আহমেদ, কবি নজরুল ইসলাম, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ। 1928 খ্রিস্টাব্দে এর নাম পরিবর্তন করে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি রাখা হয়।

কবে, কাদের উদ্যোগে বোম্বাই-এ পেজেন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়?

1927 খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই-এ পেজেন্টস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়। এই সংগঠনটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন — এস. এস. মিরাজকর, কে. এন. যোগলেকর, এস. ভি. ঘাটে প্রমুখ।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির (1928 খ্রিস্টাব্দ) উদ্দেশ্য কী ছিল?

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির উদ্দেশ্যগুলি হল —
1. শ্রমিকদের কাজের সময় সীমা কমানো,
2. জমিদারি প্রথার অবসান ঘটানো,
3. শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ,
4. বাক্-স্বাধীনতা অর্জন।

ভারতছাড়ো আন্দোলনে (1942 খ্রিস্টাব্দ) কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টির ভূমিকা কী ছিল?

ভারতছাড়ো আন্দোলন (1942 খ্রিস্টাব্দ) শুরু হওয়ার আগেই ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করে। নেতৃত্বহীন আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টির ওপর। জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পটবর্ধন, রাম মনোহর লোহিয়া, অরুণা আসফ আলি প্রমুখ কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীরা বোঝাতে চেয়েছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।

কবে, কাদের নেতৃত্বে ইন্ডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ গঠিত হয়?

1928 খ্রিস্টাব্দে বাম মনোভাবাপন্ন তরুণ কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ইন্ডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ (Independence for India League) গঠিত হয়।

ইন্ডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ কেন গঠন করা হয়?

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী আদর্শ বিস্তারে জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন প্রাণপুরুষ। তারই অঙ্গ হিসেবে গড়ে ওঠে ইন্ডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক কাঠামোতে সমাজতান্ত্রিক সংস্কার সাধন। অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্জন করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্যের ভিত্তিতে ভারতীয় সমাজকে পুনর্গঠন করা।

কাদের নেতৃত্বে এবং ভারতের কোথায় কোথায় বিভিন্ন কমিউনিস্ট গোষ্ঠী গড়ে ওঠে?

কলকাতায় মুজাফ্ফর আহমেদ ও আব্দুর রেজাক খাঁ, বোম্বাই-এ শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে (এস. এ. ডাঙ্গে) ও এস. ভি. ঘাটে, মাদ্রাজে সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ার, লাহোরে আব্দুল মজিদ প্রমুখের নেতৃত্বে ভারতে কমিউনিস্ট গোষ্ঠীসমূহ গড়ে ওঠে। এই সমস্ত গোষ্ঠীর সম্মিলিত রূপ 1925 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি।

কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনের গুরুত্ব কী ছিল?

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী আদর্শকে সংহত করার জন্য সুভাষচন্দ্র বসুকে 1938 খ্রিস্টাব্দের হরিপুরা অধিবেশনে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন করা হয়।

ত্রিপুরি কংগ্রেসের গুরুত্ব কী ছিল?

1939 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরি অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসু বামপন্থী দলগুলির সমর্থনে 203 ভোটের ব্যবধানে গান্ধিজির মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ফলে কংগ্রেসের বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র হয়। সুভাষচন্দ্র সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নামে নতুন দল প্রতিষ্ঠা করেন (3 মে, 1939 খ্রিস্টাব্দ)।


আজকের আর্টিকেলে আমরা দশম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” এর “সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো দশম শ্রেণির মাধ্যমিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Please Share This Article

Related Posts

জেট বায়ু কাকে বলে জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখো -

জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য – মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক

নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কীভাবে করা হয় -

নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন? বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কীভাবে করা হয়?

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ - সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

About The Author

Solution Wbbse

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য – মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক

নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন? বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কীভাবে করা হয়?

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিষয়সংক্ষেপ