আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায়, ‘খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের ভারতীয় উপমহাদেশ (রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং ধর্মের বিবর্তন-উত্তর ভারত)’ অধ্যায়ের অধ্যায় সারসংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।
জনপদ থেকে মহাজনপদ
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নগরায়ণ হলো সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা। দ্বিতীয় নগরায়ণ হলো বৈদিক সভ্যতার শেষ পর্ব। বৈদিক যুগের শেষ পর্বে ভারতে অনেকগুলি জনপদের সৃষ্টি হয়। এই জনপদ পরে পরিণত হয় মহাজনপদে। ভারতে এইরকম মহাজনপদ ছিল ষোলোটি। ঠিক এই সময় ভারতে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান হয়। মহাবীর ও গৌতম বুদ্ধ দুজনেই তাঁদের ধর্মমত প্রচার করতে থাকেন। জনপদ কথার অর্থ হলো ‘জন’ অর্থাৎ ‘জনগণ’, ‘পদ’ অর্থাৎ পা। জনগণ যেখানে পা রাখেন, তাই হলো জনপদ। প্রাচীন ভারতে গ্রামের থেকে বড়ো অঞ্চলকে বলা হতো জন। এই জন থেকে জনপদ শব্দটি এসেছে। প্রাচীন ভারতে এইরকম বহু জনপদ তৈরি হয়েছিল। বড়ো আয়তনের জনপদগুলি মহাজনপদ নামে পরিচিত হয়। মহাজনপদগুলি আসলে এক-একটি রাজ্য ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে এইরকম অনেকগুলি মহাজনপদ ছিল।
ষোড়শ মহাজনপদ
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যখন গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীর তাঁদের ধর্মপ্রচার করছিলেন, তখন কাবুল থেকে গোদাবরী নদীর তীর পর্যন্ত 16টি বড়ো বড়ো রাজ্যের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এগুলি হলো — অঙ্গ, মগধ, কাশী, কোশল, অবন্তি, বৎস, বৃজি, মল্ল, চেদি, কুরু, পাঞ্চাল, মৎস্য, শূরসেন, অস্মক, গান্ধার ও কম্বোজ। এদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চলত। শেষপর্যন্ত মগধ এদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়। কারণ মগধের ভৌগোলিক অবস্থান, পূর্বদিকে দুর্ভেদ্য ঘন অরণ্য, খনিজ সম্পদ, নদীর অবস্থান প্রভৃতি মগধের উত্থানে সহায়তা করেছিল।
মহাজনপদের শাসনব্যবস্থা
মহাজনপদের মধ্যে একমাত্র অস্মক ছাড়া বাকি 15টি অবস্থিত ছিল মধ্য ও উত্তর ভারতে। মহাজনপদগুলির মধ্যে বৃজি ও মল্ল ছিল প্রজাতান্ত্রিক রাজ্য। এখানে সবাই মিলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শাসক নির্বাচন করতেন। বাকি রাজ্যগুলি ছিল রাজতান্ত্রিক।
প্রতিবাদী বা নব্যধর্ম
বৈদিক যুগের শেষপর্বে ধর্মে ব্রাহ্মণদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই বৈদিক ধর্মে বা ব্রাহ্মণ্য ধর্মে জাতপাতের ভেদাভেদ, যাগযজ্ঞ, আচার-অনুষ্ঠান, পশুবলিপ্রথা সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। এসবের বিরুদ্ধে একপ্রকার প্রতিবাদ জানিয়ে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের জন্ম হয়েছিল। এই দুই ধর্মমত ইউরোপের প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের মতো প্রতিবাদী বা নব্যধর্ম নামে পরিচিত ছিল।
জৈন ধর্ম
জৈন ধর্মের প্রচারকদের তীর্থংকর বলা হতো। জৈন ধর্মে এইরকম চব্বিশ জন তীর্থংকর ছিলেন। মহাবীর ছিলেন জৈন ধর্মের শেষ তীর্থংকর। তিনি রাজপুত্র হয়েও সংসারধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। তারপর কঠোর তপস্যা করে দিব্য জ্ঞানলাভ করেন এবং 30 বছর ধরে তিনি ধর্মপ্রচার করেন।
মূলনীতি
জৈন ধর্মের চারটি মূলনীতি ছিল। যথা —
ক. কোনো রকম প্রাণী হত্যা না করা।
খ. মিথ্যা না বলা।
গ. অন্যের দ্রব্য ছিনিয়ে না নেওয়া।
ঘ. ব্যক্তিগত কোনো সম্পত্তি না করা।
পার্শ্বনাথ নির্দেশিত এই নীতিগুলিকে চতুর্যাম ব্রত বলা হতো। পরে মহাবীর এর সঙ্গে আরও একটি নীতি মানার কথা বলেন, যা হলো ব্রহ্মচর্য। এগুলিকে একত্রে বলা হতো পঞ্চমহাব্রত। জৈন ধর্মের অনুগামীরা পরে দুটি সম্প্রদায়ে ভাগ হয়ে যান। যথা — শ্বেতাম্বর এবং দিগম্বর।
বৌদ্ধ ধর্ম
বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভাবক ও প্রধান প্রচারক ছিলেন গৌতম বুদ্ধ। তিনি রাজপুত্র হয়েও মহাবীরের মতো সংসারধর্ম ত্যাগ করেন। এরপর গয়ার কাছে একটি পিপুল গাছের নিচে কঠোর তপস্যা করে জ্ঞান বা বোধিলাভ করেন। 45 বছর ধরে তিনি ধর্মপ্রচার করেন। তাঁর প্রচারিত ধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম নামে পরিচিত ছিল। 80 বছর বয়সে তিনি কুশীনগরে মারা যান।
মূলনীতি
বৌদ্ধ ধর্মের কতকগুলি মূলনীতি ছিল। এগুলি হলো —
ক. আর্যসত্য।
খ. মজঝিম পন্থা।
গ. অষ্টাঙ্গিক মার্গ প্রভৃতি।
বৌদ্ধরাও দুটি সম্প্রদায়ে ভাগ হয়ে যান। যথা — হীনযান এবং মহাযান।
জৈন ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মেই ত্রিরত্ন বলে একটি ধারণা আছে, যার এক-একটিকে রত্ন বলা হয়। জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি ভারতে হলেও পরে তা ভারতীয় উপমহাদেশ ও তার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে বৌদ্ধ ধর্ম চিন, সিংহল, মালয়, কোরিয়া, তিব্বত প্রভৃতি অঞ্চলে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। বৌদ্ধ ধর্মের ও জৈন ধর্মের অহিংসা ও শান্তির বাণী গোটা বিশ্বকে নতুন পথের সন্ধান দেয়।
জাতকের গল্প
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে গৌতম বুদ্ধের জন্মবৃত্তান্ত সংক্রান্ত কিছু গল্প রয়েছে, যা জাতক নামে পরিচিত। এই গল্পগুলি মূলত পালি ভাষায় বলা ও লেখা হতো। পাঁচশোরও অধিক জাতকের গল্প আছে। জাতকের গল্পগুলি থেকে সেই সময়কার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসেরপঞ্চম অধ্যায়, “খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের ভারতীয় উপমহাদেশ (রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং ধর্মের বিবর্তন-উত্তর ভারত)” অধ্যায়ের অধ্যায় সারসংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!