আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের নবম অধ্যায় ‘আলাপ’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।
আলাপ অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি
বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ছোটোগল্পকার, সমালোচক পূর্ণেন্দু পত্রী ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার নাকোলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বিশিষ্ট গল্প সংকলন ‘স্তালিনের রাত’, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ প্রশংসার দাবি রাখে। মজাদার ছোটোগল্প রচয়িতা হিসেবে তিনি সমাদৃত। তাঁর বিশিষ্ট চারখানি কাব্য হল – ‘একমুঠো রোদ’, ‘শব্দের বিছানা’, ‘তুমি এলে সূর্যোদয় হয়’, ‘কথোপকথন’ (৫ খণ্ড)। চলচ্চিত্র পরিচালক মানুষটির যেসব পরিচালনা কৃতিত্বের পরিচয়বাহী, সেগুলো হল – ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘ছোটো বকুলপুরের যাত্রী’, ‘মালঞ্চ’, ‘পথচিত্র’, ‘ছেঁড়া তমসুক’, ‘স্ত্রীর পত্র’ ইত্যাদি।
আলাপ অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ
পালাম বিমানবন্দরের বাইরে ঘোর কুয়াশায় আচ্ছন্ন। প্রকৃতির বিরোধিতায় নির্দিষ্ট সময়ে প্লেন ছাড়ছে না। কফি কর্নারের দিকে এগিয়ে লেখক দেখেন দুজন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি কফি কাপ নিয়ে আলাপ করছেন।
এঁদের দুজন ছিলেন প্রখ্যাত সেতারবাদক বিলায়েৎ খাঁ এবং অন্যজন বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায় জানতে চাইলেন বাজনার বিষয়ে কিন্তু বিলায়েৎ খাঁ বিদেশে বাজানোর অভিজ্ঞতার কথা জানান। প্রসঙ্গক্রমে জার্মানি, ফ্রান্সের শ্রোতাদের কাছে তাঁর যে কত সমাদর এবং বিদেশিরা যে তাল, বোল, মীড়ের কাজ যথেষ্ট বোঝেন-তা জানতে চেয়েছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এ. ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন। বিমানবন্দরে এক দিল্লিপ্রবাসী বাঙালি জানতে চান – তিনি দিল্লিতে বাজান কেন। তার উত্তরে বিলায়েৎ খাঁ দিল্লি অপেক্ষা কলকাতায় অনুষ্ঠান করায় আরও পরিতৃপ্তির কথা জানান। মোরাদাবাদের এক নামজাদা তবলাবাদক কলকাতা সম্পর্কে বিদ্রূপ করলে খাঁ সাহেব জানবাবুকে টেনে এনে স্টেজে বসিয়ে দেন। এরপর জ্ঞান ঘোষের বাজনা শুনে তবলা শিল্পী ভীষণ লজ্জা পান।
আলাপ অধ্যায়ের নামকরণ
একে অন্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলাই আলাপ। আবার একজন বা অনেকজন অপরিচিত ব্যক্তির মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠার যে প্রয়াস বা আয়োজন তাকে আলাপ বলে।
এক শীতের সকালে গাঢ় কুয়াশায় প্রকৃতি যখন আচ্ছন্ন তখন লেখক দেখেছিলেন জগদবিখ্যাত সেতারি ওস্তাদ বিলায়েৎ খাঁ এবং চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক সত্যজিৎ রায় কফি কর্নারে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছেন। উভয়ের আলোচনার বিষয় হল গানবাজনা। প্রসঙ্গক্রমে বিলায়েৎ খাঁ গানবাজনার বিস্তৃতি, জার্মানি ও ফ্রান্সে সেতার বাজানোর অভিজ্ঞতা এবং বিদেশিরা কতটা সমঝদার-তার প্রকাশ আছে বক্তব্যে। দুই বিখ্যাত মানুষের কথোপকথন তথা আলাপের মধ্য দিয়ে লেখক উভয়ের ভাবনা, কলকাতার প্রতি বিলায়েৎ খাঁর প্রীতি ইত্যাদি উপভোগ করেছেন। এহেন ভাবনায় লেখক দুজন মহান মানুষের কথাবার্তার ধরন তুলে ধরে উভয়ের আলাপচারিতার সার্থক পরিচয় দিয়েছেন।
আলাপ অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা
উদ্বিগ্ন – উদবেগের সঙ্গে। পালাম বিমানবন্দর – দিল্লির একটি বিশিষ্ট আন্তর্জতিক বিমানবন্দর। নির্ধারিত – নির্দিষ্ট হয়ে আছে যা। নির্ভর – আস্থা। সিকিউরিটি – পাহারাদার। পেয়ালা – চায়ের পাত্র; চায়ের কাপ। আলাপরত – আলাপ করেছেন এমন। লোকেশন – অঞ্চল। কথোপকথন – কথাবার্তা। চকচকে – উজ্জ্বল। মীড় – সংগীতের সুর সমন্বয়। সচেতন – চেতনাপূর্ণ। ইমপ্রোফাইজ – তাৎক্ষণিক সংগীত; আগে প্রস্তুতি ছাড়া উপস্থিত মতো। ফোক টিউন – লোকসংগীত। প্রবাসী – বিদেশে বাস করেন যিনি। প্রশস্ত – চওড়া। বিদ্রূপ – ব্যঙ্গ। সমঝদার – বোদ্ধা; বোঝেন এমন। গণ্ডগোল – সমস্যা, ঝামেলা। আর্টিস্ট – শিল্পী। ঘরোয়া – ঘরের মধ্যে অনুষ্ঠিত যা। তালিম – আদবকায়দা; ব্যাবহারিক জ্ঞান; শিক্ষা। বদ অভ্যাস – খারাপ অভ্যাস। গ্রিনরুমে – সাজঘরে। হিড়হিড় – টানতে টানতে। ধূসর – ঈষৎ পাণ্ডুবর্ণ; ছাইরঙের। বিলম্ব – দেরি। অপেক্ষমান – অপেক্ষা করছে এমন।
এই ছোট্ট আলাপচারিতা সত্যজিৎ রায় এবং ওস্তাদ বিলায়েত্ খাঁ-র শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা এবং তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটায়। তাদের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, শিল্পের কোন সীমানা নেই, শিল্পীরা বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে মিশে নতুন নতুন সৃষ্টির জন্ম দিতে পারেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের নবম অধ্যায় ‘আলাপ’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পরীক্ষায় প্রায়ই আসে। আশা করি, নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে অথবা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, দয়া করে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!