অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – চন্দ্রগুপ্ত – বিষয়সংক্ষেপ

Gopi

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ অধ্যায়চন্দ্রগুপ্ত’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকে প্রশ্নোত্তর প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।

চন্দ্রগুপ্ত – বিষয়সংক্ষেপ
চন্দ্রগুপ্ত – বিষয়সংক্ষেপ

লেখক পরিচিতি

১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। এরপর কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য তিনি বিলেত গমন করেন। সেখানে অধ্যয়ন করতে করতেই তিনি পাশ্চাত্য সংগীত ও নাট্যসাহিত্য নিয়ে চর্চা করেন। সেখানে স্বদেশিভাব নিয়ে ইংরেজি কবিতাও প্রকাশ করেন তিনি। পরবর্তীকালে দেশে ফিরে সরকারি কাজে যুক্ত হয়েও সাহিত্যকর্মে ব্রতী থেকেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল। অবশ্য প্রথমে তিনি প্রহসনকার রূপেই পরিচিত হন, তারপরে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন নাট্যকাররূপে। তাঁর গীতিকাব্য সংগ্রহ, হাসির গান ও কবিতার সংকলন বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রহসনগুলি হল – ‘একঘরে’, ‘কল্কি অবতার’, ‘বিরহ’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’, ‘ত্র্যহস্পর্শ’ ইত্যাদি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল – ‘আর্যগাথা’, ‘ত্রিবেণি’ ইত্যাদি। পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক নাটক রচনায় তিনি অনবদ্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য পৌরাণিক নাটক হল – ‘পাষাণী’, ‘ভীষ্ম’, ‘সীতা’ ইত্যাদি। তাঁর ঐতিহাসিক নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘চন্দ্রগুপ্ত’ ‘সাজাহান’, ‘মেবার পতন’, ‘রানাপ্রতাপ সিংহ’, ‘তারাবাঈ’, ‘নূরজাহান’ ইত্যাদি। তাঁর ঐতিহাসিক নাটকগুলিতে স্বদেশপ্রেমের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে এই স্মরণীয় কবি-সাহিত্যিক, গীতিকার ও নাট্যকারের জীবনাবসান হয়।

চন্দ্রগুপ্ত অধ্যায়ের উৎস

পাঠ্য নাট্যাংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে নেওয়া হয়েছে।

চন্দ্রগুপ্ত অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

সিন্ধুনদতটে শিবিরের সামনে দাঁড়িয়ে অস্তায়মান সূর্যের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত গ্রিক অধিপতি সেকেন্দার সাহা; ভারতবর্ষের বিচিত্র পরিবেশে তিনি মুগ্ধ হয়ে সেনাপতি সেলুকসের সঙ্গে কথোপকথনে নিমগ্ন। এমন সময় সেখানে হাজির হন আন্টিগোনস, সে গুপ্তচর সন্দেহে এক ভারতীয় যুবককে সেখানে হাজির’ করে। যুবক শিবিরের পাশে বসে তালপাতায় সাহিত্য বিচিত্রা কীসব লিখছিল, আন্টিগোনস তা বুঝতে পারেনি। তাই সেকেন্দার সাহা-র কাছে তাকে নিয়ে আসে। সেকেন্দার সাহা, যুবকের উদ্দেশ্য জানতে চায়। যুবক জানায় যে সে গ্রিক সম্রাটের বাহিনী চালনা, ব্যূহ রচনাপদ্ধতি, সামরিক নিয়মাবলি একমাস ধরে শিখছিল, গ্রিক সেনারা চলে যাবে বলে তা লিখে রাখছিল। সে আরও জানায় যে সে মগধের মহাপদ্মনন্দের পুত্র চন্দ্রগুপ্ত। তার বৈমাত্রেয় ভাই ধননন্দ সিংহাসন অধিকার করে তাকে নির্বাসিত করেছে, তারই প্রতিশোধ সে নেবে। চন্দ্রগুপ্ত জানায় সে সেলুকসের কাছেই গ্রিকবিদ্যা শিখছিল। এ কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে আন্টিগোনস সেলুকসকে বিশ্বাসঘাতক বলে অপমান করে। তখন সেলুকস ও আন্টিগোনস পরস্পর দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। আন্টিগোনসের উদ্যত তরবারির আঘাত থেকে চন্দ্রগুপ্ত মুহূর্তের মধ্যে সেলুকসকে রক্ষা করে। তখন আন্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে আক্রমণ করে, কিন্তু চন্দ্রগুপ্তের আঘাতে আন্টিগোনস-এর তরবারি পড়ে যায়। এমন ঘটনায় চন্দ্রগুপ্ত হতবাক হয়ে যান। সেনাপতির প্রতি রূঢ় আচরণের জন্য তিনি আন্টিগোনসকে নির্বাসিত করেন আর চন্দ্রগুপ্তকে শত্রুর গুপ্তচর হিসেবে গ্রিক শিবিরে প্রবেশের অপরাধে গ্রেফতার করার আদেশ দেন। সেকেন্দার সাহা-র এমন আদেশে চন্দ্রগুপ্ত প্রতিবাদ করে বলেন তাকে বধ না করে বন্দি করা যাবে না। চন্দ্রগুপ্তের এমন সাহসী মনোভাবে সেকেন্দার সাহা মুগ্ধ হয়ে তাকে মুক্তি দেন।

চন্দ্রগুপ্ত অধ্যায়ের নামকরণ

নামকরণ হল সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রধানত নামকরণের মাধ্যমেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায়। নামকরণ নানা ধরনের হতে পারে, যেমন – কাহিনিধর্মী, চরিত্রপ্রধান, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। এবার আলোচনা করে দেখা যাক যে পাঠ্য নাট্যাংশের নামকরণটি সার্থক কি না।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ঐতিহাসিক নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত’ – এর প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে পাঠ্য নাট্যাংশটি নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সমগ্র নাটকটির সামান্যতম অংশ আমরা এখানে পাঠ করছি, তবু তারই মধ্য থেকে বিষয়বস্তুর একটা ছবি বুঝে নেওয়া যায়। নাটকের শুরুতেই দেখি সিন্ধুনদতটে অস্তায়মান সূর্য দেখে অভিভূত সেকেন্দার সাহা ভারতের প্রাকৃতিক ও মানবিক বৈচিত্র্যে মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন সেনাপতি সেলুকসের কাছে। তার মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটেছে এই উক্তিতে – সত্য সেলুকস! কী বিচিত্র এই দেশ! পুরুর বীরত্বেও তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। এর পরেই সেকেন্দার সাহা-র মুগ্ধতা বৃদ্ধি পায় চন্দ্রগুপ্তের আচরণে। গুপ্তচর সন্দেহে আন্টিগোনস তাকে ধরে নিয়ে এলে, সেকেন্দার সাহা-র প্রশ্নের উত্তরে চন্দ্রগুপ্ত জানায় সে মগধের রাজকুমার এবং ধননন্দের বৈমাত্রেয় ভাই। সিংহাসন উদ্ধারের আকাঙ্ক্ষাতেই সে সেলুকসের কাছে গ্রিকদের যুদ্ধবিদ্যা আয়ত্ত করেছেন। আন্টিগোনস সেলুকসকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে চন্দ্রগুপ্ত তরবারির আঘাতে আন্টিগোনসের উদ্যত তরবারিকে প্রতিহত করেন এবং নিজেকেও আন্টিগোনসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন; আবার চন্দ্রগুপ্তের তরবারির আঘাতে আন্টিগোনসের তরবারি হস্তচ্যুত হয়। এই ঘটনায় সেকেন্দার সাহা মুগ্ধ হয়ে যান চন্দ্রগুপ্তের সাহসিকতায়। তবু পরীক্ষা করার জন্যই চন্দ্রগুপ্তকে বন্দি করার নির্দেশ দেন তিনি। চন্দ্রগুপ্ত জবাবে বলেন – তাকে বধ না করে বন্দি করা যাবে না। মুগ্ধ অভিভূত সেকেন্দার সাহা বীর চন্দ্রগুপ্তকে বলেন – ‘তুমি মুক্ত’।

নাট্যকার চন্দ্রগুপ্তের বীরত্ব ও সাহসিকতাই আলোচ্য নাট্যাংশে তুলে ধরতে চেয়েছেন। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলতে পারি যে নাটকটির চরিত্রপ্রধান নামকরণ সার্থক হয়েছে।

চন্দ্রগুপ্ত অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

নদতট – নদের তীর। শিবির – সেনানিবাস; সেনা ছাউনি। অস্তগামী – অস্ত যাচ্ছে যে। সূর্যরশ্মি – সূর্যের আলো। বিচিত্র – নাক্ষ্ম নান; রকমারি। শুভ্র – সাদা। চন্দ্রমা – চাঁদ। তামসী – অন্ধকার। আতঙ্ক – ভয়। প্রাবৃটে – বর্ষাকালে। অভ্রভেদী – আকাশ ভেদ করে যা। তুষার – বরফ। মৌলি – মুকুট। হিমাদ্রি – হিমালয়। স্বেচ্ছাচার – নিজের ইচ্ছামতো কাজ। তালীবন – তালগাছের বন। মদমত্ত – উন্মত্ত। মাতঙ্গ – হাতি। জঙ্গম – গতিশীল। পর্বতসম – পর্বতের মতো। মন্থর – ধীর। মহাভুজঙ্গম – বিশালাকার সাপ। মহাশৃঙ্গ – বড়ো শিংওয়ালা। কুরঙ্গম – হরিণ। প্রেক্ষণ – দৃষ্টি। সৌম্য – সুন্দর; সুশ্রী। গৌর – ফরসা। বাত্যা – ঝড়। শৌর্য – বীরত্ব; সাহস। প্রত্যর্পণ – ফিরিয়ে দেওয়া। মহানুভব – উদারচিত্ত; দয়ালু। বৈমাত্র – বিমাতার সন্তান। করাল – ভীষণ। শকট – যান; গাড়ি। গুপ্তচর – লুকিয়ে খবর সংগ্রহ করে যে চর। রাজাধিরাজ – সম্রাট। ব্যূহ – যুদ্ধে সৈন্যবিন্যাস। সামরিক – যুদ্ধ-বিষয়ক। অভিপ্রায়ে – আশায়। ভূপতি– রাজা; নৃপতি। সংঘাতে – সংঘর্ষে। হৃত – হারিয়ে ফেলা। পদবি – উপাধি। শির – মাথা। নিরন্ত – ক্ষান্ত; বিরত। ভূপতিত – মাটিতে পড়ে যাওয়া। নির্বাসিত – বিতাড়িত। সৈন্যাধ্যক্ষ – সেনাদের অধ্যক্ষ বা প্রধান। স্মরণ – মনে করা। নিরাশ্রয় – আশ্রয়হীন। এস্ত – ভীত। কাপুরষ – ভীরু। ভবিষ্যদ্বাণী – আগামীতে কি ঘটবে তা বলা। দুর্জয় – জয় করা শক্ত এমন; অজেয়।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ অধ্যায়চন্দ্রগুপ্ত’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি, নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, আপনি টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। দয়া করে আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারা ও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মেঘাচ্ছন্নতা বলতে কী বোঝো? মেঘ কীভাবে সৃষ্টি হয়?

শিশির ও শিশিরাঙ্ক কাকে বলে?

মোপলা বিদ্রোহের কারণ কী?

কোনো জায়গার জলবায়ু শনাক্তকরণ কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

জলচক্র বলতে কী বোঝো? জলচক্র সৃষ্টির পদ্ধতি ও গুরুত্ব