অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – হাওয়ার গান – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের অষ্টাদশ অধ্যায় হাওয়ার গান’ নিয়ে আলোচনা করবো, যেখানে রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তরের বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকবে। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই আসে।

হাওয়ার গান – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী যুক্তি কবির মনে এসেছিল বলে তোমার মনে হয়?

বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘হাওয়ার গান’ কবিতার প্রথম কয়েকটি চরণে কবি জানিয়েছেন যে হাওয়াদের কোনো বাড়ি নেই, তাই তারা বাইরে বাইরে কেঁদে মরে। সারা দিনরাত্রি ধরে বুকচাপা কান্না কেঁদে ও নিশ্বাস ফেলে তারা যেন কাকে খুঁজে ফেরে।

এরপর পুরো কবিতাটিই লেখা হয়েছে হাওয়াদের জবানিতে। তারা যেন নিজেরাই জানাচ্ছে যে কীভাবে তারা সারা পৃথিবী জুড়ে জলে, তীরে, পাহাড়ে, বন্দরে, নগরে, অরণ্যে, প্রান্তরে তাকে খুঁজে খুঁজে বৃথাই ঘুরেছে। ঝরাপাতায় ভরা পার্কের বেঞ্চি, কেঁপে ওঠা শার্সি, চিমনির শব্দ ও কাননের কান্নার কাছে শুধু তার কথাই শুধিয়েছে। দোলনায় ঘুমোনো মিষ্টি শিশু, মেঝের কার্পেটে তন্দ্রাচ্ছন্ন কুকুর আর মৃদু মোমের আলো নিয়ে স্বপ্নময় যে ঘর, সেখানেও হাওয়া তাকে খুঁজে পায় না। অন্ধকার সমুদ্রে ভেসে চলা জাহাজের যাত্রীরা যখন আমোদ-প্রমোদে মত্ত, তখন হাওয়া ঢেউকে ধাক্কা দিয়ে জানতে চায় সে কোথায়? অবশেষে সব থেমে গিয়ে ডেক নির্জন হয়, চাঁদ অস্তগামী হয়, শুধু সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়। তবু হাওয়াদের বিশ্রাম নেই। তারা সমস্ত বিশ্ব জুড়ে অনন্তকাল ধরে তাদের সেই অফুরান সন্ধানে উত্তাল হয়ে যেন সুর তোলে-সে কোথায়-সে কোথাও নেই। এইসব যুক্তিকে মাথায় রেখেই সম্ভবত কবি এই কবিতার নাম দিয়েছিলেন ‘হাওয়ার গান’।

হাওয়ার গান কবিতাটির বিষয়বস্তু আলোচনা করো।

হাওয়ারা যেন চিরকাল গৃহহীন। কাকে যেন খুঁজে খুঁজে তারা সারা পৃথিবী জুড়ে কেঁদে ফেরে। সাগর, পাহাড়, বন্দর, নগর, অরণ্যপ্রান্তর জুড়ে তারা বৃথাই ঘুরে মরে। যাকে খোঁজে সে যেন কোথাও নেই।

পার্কের বেঞ্চিতে ঝরে-পড়া পাতা, কাচের জানলায় কেঁপে ওঠা শার্সি, চিমনির শব্দের কাছে তারা এই প্রশ্ন করে চলে। ঘরের মধ্যে দোলনায় ঘুমিয়ে থাকা শিশু, কার্পেটের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন কুকুর, মৃদু মোমের আলো জ্বলা স্বপ্নময় ঘর সবই আছে। শুধু যাকে তারা খোঁজে, সে যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। অন্ধকার রাতে সমুদ্রের বুকে ভেসে চলা জাহাজের মাস্তুলে যখন আলো জ্বলে, যাত্রীরা নানা আনন্দে মেতে থাকে, হাওয়ারা তখন ঢেউয়ের বুকে আঘাত করে নিজেদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজে। কিন্তু সেখানেও যাকে খোঁজে তাকে পায় না। একসময় রাত গভীর হলে জাহাজের সব কোলাহল থেমে যায়, শুধু অন্ধকারে সমুদ্রের দোলা আর গর্জন চলে, চাঁদও অস্তগামী হয়। কিন্তু হাওয়াদের কোনো বিশ্রাম নেই। তাদের বাড়ি নেই, দেশ নেই, আছে শুধু অবিরাম ছুটে চলা। অন্তহীন সময় ধরে চলেছে তাদের এই সন্ধান। সারা বিশ্ব জুড়ে যেন বেজে চলেছে। তাদের সেই করুণ গান-নেই, সে কোথাও নেই। তাই তারা চিরকাল উত্তাল হয়ে ফেরে।

আসলে কবি তথা মননশীল মানুষের জীবনও যেন এমনই কোনো প্রাণের মানুষের খোঁজে অবিরাম ছুটে চলা। তাই তারও সত্যকার বাড়ি বা আত্মার আশ্রয় কোথাও নেই। তাকেই পাওয়ার জন্য মানুষের চিরকাল খুঁজে ফেরা। সে হয়তো আছে, হয়তো কোথাও নেই!

হাওয়ার গান কবিতাটির নামকরণ আলোচনা করো।

নামকরণ সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নামকরণের মধ্য দিয়ে পাঠক বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের মতো সাহিত্য-বিষয়টি পাঠ করার আগেই সাহিত্য-বিষয়টি সম্পর্কে খানিক ধারণা লাভ করতে পারেন। সাহিত্যে নামকরণ নানা উপায়ে হতে পারে। যথা – চরিত্রকেন্দ্রিক, ঘটনাকেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি।

কবিতার শিরোনাম তার বক্তব্য অথবা ভাববস্তুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। কখনও সমুদ্রে, কখনও পথে, কখনও পার্কে বয়ে চলা হাওয়ার শব্দে কবি যেন তাদের গৃহহীনতার বেদনা, কোনো না পাওয়া বঞ্চিতের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলাকে অনুভব করেছেন। হাওয়ার শব্দে যেন বাজে সেই বেদনার করুণ সুর। তাই ‘হাওয়ার গান’ নামকরণটি সুপ্রযুক্তই হয়েছে।

নীচের পঙ্ক্তিগুলির মধ্যে ক্রিয়াকে চিহ্নিত করো এবং অন্যান্য শব্দগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখাও –

  • ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মোম।
  • আঁধারে জাহাজ চলে।
  • শার্সিতে কেঁপে-ওঠা দেয়ালের পঞ্জর।
  • অকূল অন্ধকারে ফেটে পড়ে গর্জন।
জ্বলে যায় –
ঘরে ঘরে –
স্বপ্নের, মৃদু –
মোম –
ক্রিয়া।
অধিকরণ সম্পর্ক।
ক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই।
ক্রিয়ার কর্ম।
চলে –
আঁধারে –
জাহাজ –
ক্রিয়া।
অধিকরণ সম্পর্ক।
কর্তৃ সম্পর্ক।
কেঁপে ওঠা –
শার্সিতে –
দেয়ালের –
পঞ্জর –
ক্রিয়া।
অধিকরণ সম্পর্ক।
ক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই।
কর্তৃ সম্পর্ক।
ফেটে পড়ে –
অকূল –
অন্ধকারে –
গর্জন –
ক্রিয়া।
ক্রিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই।
অধিকরণ সম্পর্ক।
কর্তৃ সম্পর্ক।

বন্দর, বন্দর নগরের ঘন ভিড় – পঙ্ক্তিটির প্রথমে একই শব্দ দুবার ব্যবহার করা হয়েছে। এইরকম আরো চারটি পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করো। কবিতার ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের কৌশল অবলম্বনের কারণ কী?

কবিতায় আরও চারটি এইরকম পঙ্ক্তি হল –

  • ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মোম।
  • কেঁদে কেঁদে মরি শুধু বাইরে।
  • খুঁজে খুঁজে সুরে ফিরি বাইরে।
  • সুরে সুরে বলে যাই-নেই রে।

এই ব্যবহারের ব্যাকরণগত নাম শব্দদ্বৈত। কবিতার ক্ষেত্রে এইধরনের শব্দ ব্যবহারের কৌশল অবলম্বন করা হয় – প্রথমত, একটি ঝংকার বা অনুরণন সৃষ্টি করার জন্য এবং দ্বিতীয়ত, ব্যবহৃত শব্দটির কোনো বিশিষ্ট অর্থ, যেমন – বহুবচন বোঝানো অথবা ক্রিয়াজাতীয় শব্দের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি ইত্যাদি বোঝানোর জন্য।

ধ্বনি পরিবর্তনের দিক থেকে শূন্য অংশগুলি পূর্ণ করো –

ধ্বনি পরিবর্তনের দিক থেকে শূন্য অংশগুলির পূর্ণ রূপ –

  • চন্দ্র > চন্ন > চাঁদ
  • রাত্রি > রাত্তির
  • পঞ্জর > পাঁজর

হাওয়ার গান কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ লেখো। এই শব্দগুলির বদলে দেশি/বাংলা শব্দ ব্যবহার করে পঙ্ক্তিগুলি আবার লেখো।

হাওয়ার গান কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ হল – পার্ক, বেঞ্চি, কার্পেট, সিনেমা, ডেক।

এই শব্দগুলির বদলে দেশি/বাংলা শব্দ ব্যবহার করে আবার লেখা পক্তিগুলি হল –

শব্দকবিতার মূল পঙক্তিপরিবর্তিত পঙক্তি
পার্ক, বেঞ্চিপার্কের বেঞ্চিতে ঝরাপাতা ঝর্ঝরউদ্যানের আসনেতে ঝরা পাতা ঝর্ঝর।
কার্পেটআবছায়া কার্পেট কুকুরের তন্দ্রায়আবছায়া গালিচা কুকুরের তন্দ্রায়।
সিনেমাযাত্রীরা সিনেমায়, কেউ নাচে, গান গায়যাত্রীরা চলচ্চিত্রে, কেউ নাচে, গান গায়।
ডেকঅবশেষে থামে সব, ডেক হয় নির্জনঅবশেষে থামে সব, পাটাতন হয় নির্জন।

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের অষ্টাদশ অধ্যায়হাওয়ার গান’ সম্পর্কিত রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে এবং বাংলা বিষয়ে আপনার প্রস্তুতিকে আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করবে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও কোনো তথ্যের প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও এই সুবিধা নিতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ভারতের দ্বীপ অঞ্চল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ভারতের পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

মাধ্যমিক – জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয় – স্নায়ুতন্ত্র – বিষয়সংক্ষেপ