আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাবিংশ অধ্যায় ‘নাটোরের কথা’ নিয়ে আলোচনা করবো। এতে থাকছে ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর, যা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অধ্যায় থেকে প্রশ্ন প্রায়ই অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় আসে।
নাটোর নেমন্তন্ন করলেন – সেই নেমন্তন্নের তালিকায় কাদের নাম ছিল বলে লেখক স্মরণ করতে পেরেছেন?
নাটোর অর্থাৎ মহারাজ জগদিন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবারের সকল পুরুষ সদস্যকে নিমন্ত্রণ করলেন। এ ছাড়া আরও অনেক বিখ্যাত লোককে আমন্ত্রণ জানালেন। তবে লেখক এই নিমন্ত্রিতদের তালিকায় যাঁদের নাম স্মরণ করতে পেরেছেন, তাঁরা হলেন রবীন্দ্রনাথ, দীপুদা, জানকীনাথ ঘোষাল, ডব্লিউ.সি.বোনার্জি, লালমোহন ঘোষ, লেখকের মেজো জ্যাঠামশাই, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অবনীন্দ্রনাথ নিজে।
রওনা হলুম সবাই মিলে হৈ-হৈ করতে করতে। – কোথায় রওনা হলেন? কীভাবেই বা রওনা হলেন?
ভূমিকম্পের বছরে নাটোরের প্রভিনসিয়াল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমান বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে রাজশাহী ডিভিশনের তখনকার বর্ধিষ্ণু গ্রাম নাটোরের রাজা জগদিন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে অবনীন্দ্রনাথ ও তার সঙ্গীসাথিরা নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
তখন যাওয়া-আসায় হাঙ্গামা থাকলেও তাদের জন্য স্পেশাল ট্রেন ছিল। সম্মেলনের উপযুক্ত ধুতি-পাঞ্জাবি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাক্সপেটরায় নিয়ে সবাই চোগাচাপকান পরে হইহই করতে করতে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
যেন ইন্দ্রপুরী। – কীসের সঙ্গে ‘ইন্দ্রপুরী’র তুলনা করা হয়েছে? কেনই বা লেখক এমন তুলনা করেছেন?
নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের বাড়ি অর্থাৎ নাটোরের রাজবাড়িটিকে ইন্দ্রপুরীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
পুরাণ অনুসারে ইন্দ্র স্বর্গের বিশিষ্ট দেবতাদের অন্যতম। তিনি সৌন্দর্যের দেবতা। তাই তাঁর পুরী অর্থাৎ রাজপ্রাসাদটি অত্যন্ত সুন্দর, সুরম্য, মনোহারী। সেটি বিশালতায় যেমন অনন্য তেমনি সৌন্দর্যে, সৌকর্যে অতুলনীয়। নাটোরের রাজবাড়িটিও বিশাল এবং ঝাড়লণ্ঠন, রাজবাড়িটি যেন হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যের আধার এক প্রাসাদ। তাই ইন্দ্রপুরীর সঙ্গে রাজবাড়ির তুলনা করা হয়েছে।
নাটোরেরও খুব আগ্রহ – কোন্ প্রসঙ্গে তাঁর আগ্রহের কথা এখানে বলা হয়েছে?
মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের নাটোরের রাজবাড়ি, গ্রাম দেখার সময় গ্রামের বাড়িঘর, মন্দির সব দেখে অবনীন্দ্রনাথের ভালো লাগে এবং তিনি সেগুলির স্কেচ আঁকতে শুরু করেন। মহারাজার এই স্কেচগুলি খুব পছন্দ হয় এবং তিনি লেখককে আরও স্কেচ করে দেওয়ার জন্য রাজবাড়ির অন্দরমহলে রানি ভবানির ঘরে নিয়ে যান। এই প্রসঙ্গে মহারাজার সম্পর্কে লেখক স্কেচ বিষয়ে তাঁর আগ্রহের কথা লিখেছেন।
আগে থেকেই ঠিক ছিল – আগে থেকে কী ঠিক থাকার কথা বলা হয়েছে? সেই উপলক্ষ্যে কোন্ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা পাঠ্যাংশে রয়েছে, তা আলোচনা করো।
রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সমর্থনকারীদের আগে থেকে ঠিক করে রাখা বিষয় অনুযায়ী নাটোরের প্রাদেশিক সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথ প্রস্তাব রাখেন যে, সমস্ত সম্মেলনটি বাংলা ভাষায় হবে।
এই প্রস্তাব সকলে মানলেন না। এই নিয়ে ছোটোদের সঙ্গে বড়োদের মতবিরোধ বাধল। সমস্ত লোক দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেল। বড়োরা চাইলেন ইংরেজিতে সম্মেলন হোক এবং ছোটোরা চাইল বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হোক। বড়োরা ইংরেজিতে বক্তৃতা দিতে উঠলেই ছোটোরা ‘বাংলা বাংলা’ বলে চিৎকার শুরু করে। অবশেষে সকলেই এই প্রস্তাব মেনে নিল এবং সম্মেলন বাংলা ভাষাতেই সম্পন্ন হল।
আমাদের তো জয়জয়কার। – কী কারণে লেখক ও তাঁর সঙ্গীদের ‘জয়জয়কার’ হল?
নাটোরে অনুষ্ঠিত প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে রবি ঠাকুর প্রস্তাব করেন যে, সম্মেলন বাংলা ভাষায় হোক। কিন্তু দলের নেতারা তা মানলেন না। তাঁরা ইংরেজি ভাষাই চাইলেন। অনেক তর্কবিতর্কের পর সমস্ত দলটি দু-ভাগে বিভক্ত হল। বড়োরা ইংরেজিতে বলতে উঠলেই ‘বাংলা বাংলা’ বলে চিৎকার করে ছোটোরা বক্তৃতা পণ্ড করে দেয়। অবশেষে বাধ্য হয়ে নেতৃত্ব স্থানীয়েরা বাংলা ভাষার দিকেই মত দিলেন এবং সম্মেলন বাংলাতেই হল। এই সাফল্যটিকেই লেখক তাঁদের ‘জয়জয়কার’ বলে বর্ণনা করেছেন।
সেই প্রথম আমরা পাবলিকলি বাংলা ভাষার জন্য লড়লুম। – লেখকের অনুসরণে সেই ‘লড়াই’-এর বিশদ বিবরণ দাও।
আগে থেকে ঠিক করে রাখা পরিকল্পনা অনুযায়ী নাটোরের প্রভিনসিয়াল কনফারেন্সে রবীন্দ্রনাথ প্রস্তাব রাখলেন যে, সম্মেলন বাংলা ভাষায় হোক। বড়োরা কেউ এই প্রস্তাব মানলেন না। লেখক রবিকাকাকে উৎসাহ জোগালেন যে তাঁরা এই লড়াইয়ে হার মানবেন না। ছোটোদের সঙ্গে বড়োদের অনেক তর্কাতর্কির পর বাংলার পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি দল তৈরি হয়ে গেল। বাংলায় ‘সোনার বাংলা’ গানটি গাওয়া হল। তারপর ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার চেষ্টা হতেই ছোটোরা সকলে ‘বাংলা বাংলা’ বলে চিৎকার করে বক্তৃতা ভেস্তে দিতে লাগল। অবশেষে সকলে হার মেনে বাংলা ভাষায় প্রস্তাবটিকে মেনে নিলেন ও সম্মেলনটি শেষপর্যন্ত বাংলাতেই সুসম্পন্ন হল। এভাবেই লেখক ও অন্যান্যরা বাংলা ভাষার জন্য প্রথম ‘পাবলিকলি’ লড়াই করেছিলেন।
নাটোরের রাজবাড়িতে খাবারের ব্যবস্থা কেমন ছিল?
রাজবাড়িতে রাজা এলাহি খাবারের ব্যবস্থা করেন। মাছ, মাংস, ডিম সব কিছুর ব্যবস্থা ছিল। রানিমা নিজে হাতে পিঠেপায়েস করেছেন। হালুইকর এবেলা-ওবেলা মিষ্টি তৈরি করে দেয়, এমনকি খাওয়ার সময় ঘরের সামনে বসেও টাটকা সন্দেশ তৈরি করে দেয়। এমনকি সোডা, ডাবের জল ইত্যাদির ব্যবস্থাও নিখুঁত এবং যথাযথ ছিল। আতিথেয়তা এতটাই যে, প্রতিটি ব্যক্তির পছন্দ অনুযায়ী তার সামনে ঠিক সময়ে জিনিসটি পৌঁছে যেত।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাবিংশ অধ্যায় ‘নাটোরের কথা’-এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি, যা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত এ ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসায় আশা করা যায়, এটি আপনার পড়াশোনায় সহায়ক হবে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও তথ্যের প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। পোস্টটি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও এর সুবিধা নিতে পারে। ধন্যবাদ!