অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – সুভা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের সুভা অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে সুভা অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় সুভা অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই সুভা অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

Table of Contents

চণ্ডীপুর গ্রামে বাণীকন্ঠের তিন মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোটোর নাম সুভাষিণী, যাকে সবাই স্নেহভরে সুভা বলে ডাকে। সুভা জন্মগতভাবে মূকবধির ছিলেন, কিন্তু তার অনুভূতিশীলতা ছিল অসাধারণ। তার ওষ্ঠের ভাবের আভাসেই যেন কচি কিশলয় কাঁপতে শুরু করত। তার বড় বড় কালো চোখে ছিল অপরিসীম সুন্দরতা। সুভার মনোভাব তার মুখের উপর ছায়া ফেলে স্পষ্ট হয়ে উঠত।

সাধারণ ছেলেমেয়েরা তার সাথে খেলা করতে ভয় পেত, তাই তার বন্ধু ছিল তাদের গোয়ালের দুটি গাভী সর্বশী ও পাঙ্গুলি, একটি ছাগল এবং একটি বিড়ালছানা। মানুষের মধ্যে তার একমাত্র সঙ্গী ছিল গোঁসাইদের নিষ্কর্মা ছেলে প্রতাপ। সুভা প্রায়ই তেঁতুলতলায় বসে বসে প্রতাপকে মাছ ধরতে দেখত এবং মনে মনে প্রতাপের জন্য কোনো বিশেষ সাহায্য করার ইচ্ছা পোষণ করত। নিজের হাতে তৈরি পান সেজে প্রতাপকে দিত এবং মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করত যেন প্রতাপের সামনে কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে।

সুভা – বাংলা  – অষ্টম শ্রেণি – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

সে নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন। – সুভা সম্পর্কে এ রকম উপমা লেখকব্যবহার করেছেন কেন?

দ্বিপ্রহর অর্থাৎ দুপুরবেলা গ্রামবাংলার পথঘাট নির্জন থাকে। কোনো কোলাহল থাকে না। সুভা যেহেতু বাক্যহীনা বা বোবা ছিল তাই কথা বলা তার সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরাও তাকে ভয় পেত। তার সঙ্গে খেলা করত না। তাই সুভার নির্বাক, বন্ধুহীন অবস্থাকে লেখক এই উপমা দিয়ে প্রকাশ করেছেন।

সুভার সঙ্গে সর্বশী ও পাঙ্গুলির সম্পর্ক কীরকম ছিল?

সর্বশী ও পাঙ্গুলি দুটি গাই। সুভাদের গোয়ালে থাকা এই গাই দুটি সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। তার পায়ের আওয়াজ তারা চিনত। সুভার কথাহীন যে করুণ সুর তার মর্ম তারা বুঝত। সুভার আদর, ভর্ৎসনা, মিনতি তারা মানুষের চেয়ে ভালো বুঝতে পারত।

তাহাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হইল — কাদের সম্পর্কে এ কথা লেখক বলেছেন? তাঁর এরূপ মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।

সুভার বাবা-মা সম্পর্কে প্রশ্নে প্রদত্ত কথাটি বলা হয়েছে।

বোবা মেয়েটির বিবাহের বয়স উপস্থিত হলে কন্যা- ভারগ্রস্ত বাবা-মা চিন্তিত হয়ে উঠেছিলেন। সমাজে সবাই নিন্দা শুরু করেছিলেন, এমনকি তাদের একঘরে করার প্রস্তাবও উঠেছিল। তাই মেয়েটির বিয়ে দিয়ে তারা তাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা করেছেন বলে লেখক কটাক্ষ করেছেন।

সুভার সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব কেমন ছিল তা লেখো।

সুভার যে অল্প কিছু বন্ধু ছিল তারা প্রায় সবাই মনুষ্যেতর প্রাণী – সর্বশী ও পাঙ্গুলি নামে দুটি গাই এবং একটি বিড়ালশাবক ও একটি ছাগল। গাভী দুটি সুভার পায়ের আওয়াজ বুঝত। সুভার আদর, ভর্ৎসনা, মিনতি সবই তারা বুঝতে পারত। সুভা দুই হাত দিয়ে সর্বশীর গলা জড়িয়ে তার কানের কাছে গাল ঘষত যখন, তখন পাঙ্গুলি স্নেহের দৃষ্টিতে তাকে দেখত আর গা চেটে দিত। বাড়িতে যদি সুভাকে কেউ কঠিন কথা বলত, সুভা এই গাই দুটির কাছে চলে আসত, তারা সুভার মর্মবেদনা যেন বুঝতে পেরে, তার বাহুতে শিং ঘষে ঘষে তাকে নির্বাক ব্যাকুলতার সঙ্গে সান্ত্বনা দিত। বিড়ালশিশুটি সুভার কোলে নিঃসংকোচে যখন সুখনিদ্রার ব্যবস্থা করত, সুভা তার গলায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুমোতে সহায়তা করত।

শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মনের অবস্থা কেমন ছিল? তার মনের অবস্থা এরকম হওয়ার কারণ কী?

শুক্লা দ্বাদশীর রাতে সুভা শয়নগৃহ থেকে বাইরে এসে তার চিরপরিচিত নদীর তীরে কচি ঘাসের উপর শুয়ে আকুল হয়ে যেন ধরণীকে জড়িয়ে ধরে বলতে চেয়েছিল প্রকাণ্ড মূক মানবমাতা যেন তাকে যেতে না দেন। দুই বাহু দিয়ে যেন তাকে ধরে রাখেন।

সুভার ইচ্ছা ছিল না তার গ্রাম, মনুষ্যেতর বন্ধুদের ছেড়ে যেতে। সে কথা বলতে পারে না, তাই নতুন মানুষ নতুন পরিবেশে সে মানিয়ে নিতে পারবে না। তাই সে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।

গল্পের একেবারে শেষ বাক্যটি গল্পের ক্ষেত্রে কতখানি প্রয়োজন আলোচনা করো।

সুভা গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাগ্যবিড়ম্বিতা এক পল্লিকিশোরীর করুণ জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। এ গল্পে সুভার মূক জীবনের যন্ত্রণা ও বিড়ম্বনার কথা বলতে গিয়ে লেখক সমকালীন নিষ্ঠুর, অমানবিক সমাজের ছবিও প্রকাশ করেছেন। গল্পের শেষ বাক্যটি সেই সমাজের যান্ত্রিক, অমানবিক পুরুষতন্ত্রের পরিচায়ক। তাই সুভাকে মানবিক মর্যাদা না দিয়ে, তার প্রাণের ভাষা না বুঝে, তার হৃদয়ার্তি অনুভব না করে তার দ্বিতীয় বিবাহের সিদ্ধান্ত এবং সঙ্গতভাবেই সে নারীকে তুল্যমূল্য যাচাই করা তার হীন, নীচ মানসিকতারই প্রকাশ। পাশাপাশি বাপের বাড়ির মতো শ্বশুরবাড়িতেও অবহেলিত সুভার জীবন সতীন আগমনে আরও বিপন্ন, বিভীষিকাময় হয়ে ওঠার ইঙ্গিতও এ বাক্যে প্রচ্ছন্ন।

মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে আরও দু-একটি গল্পের নাম লেখো এবং ‘সুভা’ গল্পটির সঙ্গে তুলনা করো।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘আদরিণী’ ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘মহেশ’ নামক ছোটোগল্পটিতে মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব চিত্রিত হয়েছে। এ ছাড়াও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কালাপাহাড়’ও এ জাতীয় গল্প।

উপরের তিনটি গল্পে মনুষ্যেতর প্রাণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব, স্নেহ, ভালোবাসার কথা থাকলেও, সুভা গল্পের প্রধান চরিত্র সুভা। মনুষ্যেতর চরিত্রের প্রাধান্য নেই এই গল্পে। উপরের তিনটি গল্পেই মনুষ্যেতর চরিত্রই প্রাধান্য পেয়েছে। সুভা মনুষ্যেতর প্রাণীগুলিকে ভালোবেসে তার কষ্টের প্রকাশ করেছে শুধু ভাব বিনিময়ের মধ্য দিয়ে।

মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ – এ কথা কেন বলা হয়েছে?

প্রশ্নে প্রদত্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘সুভা’ নামক গল্পটি থেকে। মাছ ধরা ক্রিয়াটি মোটেই সহজসাধ্য নয়। গভীর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে দীর্ঘক্ষণ নিস্তব্ধ অপেক্ষার পর বড়শিতে মাছ ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে অপরের কথা মাছশিকারির মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই বাক্যহীন সঙ্গীই সেই পরিস্থিতিতে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ কারণেই লেখক এ কথা বলেছেন।

এবার তাহার স্বামী চক্ষু এবং কর্ণেন্দ্রিয়ের দ্বারা পরীক্ষা করিয়া এক ভাষাবিশিষ্ট কন্যা বিবাহ করিয়া আনিল। – এরকম আচরণের কারণ কী?

সুভার স্বামী সুভাকে বিয়ে করার আগে দেখতে আসার সময় কেবল রূপই দেখেছিল, নিজের কানে তার কণ্ঠস্বর শোনেনি।। বিয়ের সপ্তাহখানেকের মধ্যে তারা বুঝতে পারে যে নববধূ বোবা, বোবা মেয়ের এ সমাজে স্থান নেই। তাই তার বর পুনরায় বিয়ে করল। প্রথমবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সে চোখ ও কানের দ্বারা পরীক্ষা করে এক ভাষাবিশিষ্ট মেয়েকে ঘরে আনল।

এই গল্পে, আমরা সুভাষিনী নামে এক মুক বালিকার দুঃখের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারি। সকলে তাকে স্নেহভরে সুভা বলে ডাকে। ছোটবেলা থেকেই সুভার মা তাকে পছন্দ করতেন না, কিন্তু তার বাবা তাকে বেশি ভালোবাসতেন। সুভার একাকী জীবনে তার বন্ধু ছিল দুটি গাভী, একটি ছাগল এবং একটি বিড়ালছানা। গ্রামের এক অকর্মণ্য মানুষ প্রতাপও তাকে ভালোবাসত।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে সুভার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তার স্বামী বুঝতে পারে যে সুভা কথা বলতে পারে না। তাই সে আরেকটি বিয়ে করে ফেলে। এই ঘটনায় সুভার জীবনে দুঃখের শেষ থাকে না। তার একাকী জীবন আরও বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে।

এই গল্পটি আমাদেরকে একজন মুক বালিকার কষ্টের জীবন সম্পর্কে ধারণা দেয়। সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বঞ্চিত জীবনযাপন করে। আমাদের উচিত তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের পাশে থাকা।

Share via:

মন্তব্য করুন