নবম শ্রেণী ইতিহাস – বিংশ শতকে ইউরোপ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Rahul

আজকে আমরা এই আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায়, “বিংশ শতকে ইউরোপ” এর কিছু “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নবম শ্রেণী ইতিহাস - বিংশ শতকে ইউরোপ - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

‘জারতন্ত্র’ বলতে কী বোঝো?

1613 খ্রিস্টাব্দে মিখাইল রোমানভ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন রাশিয়ার রোমানভ। 1917 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় 300 বছর ধরে রাশিয়া রোমানভ বংশীয় রাজতন্ত্রের শাসনাধীনে ছিল। এই বংশের রাজারা সার্বভৌম শক্তির প্রতীকরূপে নিজেদের ‘জার’ বলে অভিহিত করতেন। এদের শাসনকাল ‘জারতন্ত্র’ নামে পরিচিত।

রাশিয়াতে 1917 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পূর্বে জারতন্ত্র কীরকম ছিল?

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে ফরাসি বিপ্লবের পর ইউরোপের প্রায় প্রত্যেক দেশেই যখন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সূচিত হয়, তখন রাশিয়ায় চলছিল রোমানভ বংশীয় জারদের সম্পূর্ণ রক্ষণশীল, কেন্দ্রীভূত, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে জার ও তাঁর অনুগত অভিজাতদের ক্ষমতাই ছিল প্রধান। জনগণের কোনো ভূমিকা ছিল না দেশশাসনের ব্যাপারে।

‘থার্ড সেকশন’ কী?

রাশিয়ার স্বৈরাচারী জার প্রথম নিকোলাসের গুপ্ত পুলিশ ও গোয়েন্দাবাহিনীকে বলা হত ‘থার্ড সেকশন’। জেনারেল বেঙ্কেনডর্ফের অধীনে এই গুপ্ত বাহিনী সমগ্র দেশে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ সৃষ্টি করেছিল। বিনা বিচারে কারাদণ্ড, হত্যা, নির্বাসন দ্বারা এই বাহিনী বিপ্লবী গুপ্ত সমিতিগুলির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল। অধ্যাপক লিপসন ‘থার্ড সেকশন’কে রাশিয়ার ইতিহাসে অন্ধকারতম প্রতিষ্ঠান বলে অভিহিত করেছেন।

ডিসেমব্রিস্ট/ডেকাব্রিস্ট বিদ্রোহ (1825 খ্রিস্টাব্দ) কী?

রাশিয়ার জার প্রথম নিকোলাসের রাজত্বের প্রথম দিকে রাশিয়ায় সংবিধান ও উদারতান্ত্রিক শাসনের দাবিতে কিছু দেশপ্রেমিক ও একদল সেনা 1825 খ্রিস্টাব্দের 26 ডিসেম্বর পেট্রোগ্রাড শহরে এক বিদ্রোহে শামিল হয়। জার প্রথম নিকোলাসের বিরুদ্ধে সংঘটিত এই বিদ্রোহ ডিসেমব্রিস্ট বা ডেকাব্রিস্ট বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

ডিসেমব্রিস্ট বিদ্রোহ কোন্ জারের শাসনকালে হয়েছিল? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?

জার প্রথম নিকোলাসের শাসনকালে ডিসেমব্রিস্ট বিদ্রোহ হয়েছিল (26 ডিসেম্বর, 1825 খ্রিস্টাব্দ)। এই বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল –

  • জারের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে পরিণত করা।
  • ভূমিদাস প্রথার উচ্ছেদ করা।

জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারকে ‘মুক্তিদাতা জার’ বলা হয় কেন?

জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ছিল ভূমিদাস প্রথার বিলোপ। তিনি 1861 খ্রিস্টাব্দের 3 মার্চ (19 ফেব্রুয়ারি) আইন করে ভূমিদাসদের মুক্তি প্রদান করেন। তাই তাঁকে ‘মুক্তিদাতা জার’ বলা হয়।

1861 খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাসদের মুক্তির ঘোষণাপত্রে কী বলা হয়েছিল?

রুশ জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার 1861 খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাসদের জন্য মুক্তির ঘোষণাপত্র জারি করেন। এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় –

  • সামন্তপ্রভুদের অধীনতা থেকে ভূমিদাসরা মুক্তি পাবে।
  • মুক্ত ভূমিদাসরা স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার পাবে।
  • প্রভুর জমির অর্ধাংশ তার অধীনতা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসদের দেওয়া হবে।
  • জমিদার তার হারানো জমির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন।

‘Bastard Feudalism’ বা ‘বিকৃত সামন্ততন্ত্র’ কী?

রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার 1861 খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাসদের মুক্তি দিয়ে ‘মুক্তিদাতা জার’ নামে পরিচিত হন। কিন্তু তাঁর পুত্র তৃতীয় আলেকজান্ডার তাঁর ‘মুক্তিনামা’-কে অগ্রাহ্য করে পুনরায় ভূস্বামীদের অধীনে ভূমিদাসদের রাখার ব্যবস্থা চালু করেন এবং অভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষার দায়িত্ব জমিদারদের হাতে ছেড়ে দেন। একে ‘Bastard Feudalism’ বা ‘বিকৃত সামন্ততন্ত্র’ বলা হয়।

রাশিয়ার ‘নিহিলিস্ট আন্দোলন’ সম্পর্কে কী জান?

জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সময়কালে 1860 -এর দশকে রাশিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা ‘নিহিলিস্ট আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে আন্দোলনকারীরা সম্পত্তির যৌথ মালিকানায় বিশ্বাস করত। সংসদীয় ব্যবস্থায় তাদের কোনো আস্থা ছিল না, বরং তারা সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ছিল।

‘নারদনিক আন্দোলন’ সম্পর্কে কী জান?

রুশ শব্দ ‘নারদ’ থেকেই ‘নারদনিক’ কথাটির উদ্ভব হয়েছে। এর অর্থ জনগণ। রাশিয়ার বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় কৃষকদের অবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্যে তাদের বিপ্লবমুখী করার যে নীতি গ্রহণ করেন, তা ‘নারদনিক আন্দোলন’ নামে পরিচিত হয়।

নারদনিক আন্দোলনের লক্ষ্য কী ছিল? কোন্ রুশ জার নারদনিকদের হাতে নিহত হন?

নারদনিক আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে জারতন্ত্রের বিলোপ সাধন করে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করা।

জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার নারদনিকদের হাতে নিহত হন।

‘বলশেভিক’ ও ‘মেনশেভিক’ কাদের বলা হয়?

1898 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় কার্ল মার্কসের আদর্শে ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। 1903 খ্রিস্টাব্দে মতপার্থক্যের জন্য এই দলটি বলশেভিক ও মেনশেভিক — এই দু-ভাগে ভাগ হয়ে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ‘বলশেভিক’ নামে পরিচিত হয়। আর সংখ্যালঘিষ্ঠ অংশ ‘মেনশেভিক’ নামে পরিচিত হয়।

বলশেভিক ও মেনশেভিকদের মধ্যে পার্থক্য কী ছিল?

বলশেভিক ও মেনশেভিকদের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়বলশেভিকমেনশেভিক
সংখ্যাগতবলশেভিকরা ছিল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ।মেনশেভিকরা ছিল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের সংখ্যালঘিষ্ঠ অংশ।
মতাদর্শগতবলশেভিকরা বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।মেনশেভিকরা রাশিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।
নেতাএদের নেতা ছিলেন লেনিন।এদের নেতা ছিলেন মার্তভ।

ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে রাশিয়ার সমাজব্যবস্থা কী ধরনের ছিল?

ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে রাশিয়ায় সমাজ মূলত দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল, যথা — অভিজাত ও কৃষক সম্প্রদায়। অভিজাত সম্প্রদায় বংশকৌলীন্যের জোরে সমস্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করত। তাদের অধীনে ম্যানর, বৃহৎ জমিদারি এবং অনেক সার্ফ ছিল। দ্বিতীয় আলেকজান্ডার সার্ফদের মুক্তি দিলেও তারা ‘মির’ নামে গ্রাম্য সমিতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ফলে তাদের দুর্দশা কমেনি।

1905 খ্রিস্টাব্দের পূর্বে রাশিয়ার কৃষকদের অবস্থা কেমন ছিল?

1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ার সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত ছিল —

  • সুবিধাভোগী অভিজাত এবং
  • সুবিধা থেকে বঞ্চিত দরিদ্র কৃষকশ্রেণি।

ভূমিদাস প্রথার অবসানের পর কৃষকদের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। মিরগুলি ছিল প্রকৃত জমির মালিক। মিরগুলির অনুমতি ছাড়া কৃষকরা জীবিকা পরিবর্তন করতে পারত না। ভূস্বামীদের পরিবর্তে তারা মিরগুলির ভূমিদাসে পরিণত হয়।

‘মিরা’ কাদের বলা হয়?

রাশিয়ার গ্রামীণ সমবায় সমিতিকে ‘মির’ বলা হয়। 1861 খ্রিস্টাব্দে ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটিয়ে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার এদের উপর মুক্ত কৃষকদের ভূমির ভার ন্যস্ত করেন।

1905 খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ায় শ্রমিকদের অবস্থা বর্ণনা করো।

1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ার জার সরকার শিল্পপতি ও পুঁজিপতিদের স্বার্থের প্রতি নজর দিয়ে শ্রমিক স্বার্থকে অবহেলা করতে শুরু করে। রুশ শ্রমিকরা ছিল সর্বহারা ও শোষিত শ্রেণির প্রতিনিধি। শিল্পপতি ও পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে তাদের শোষণ করা হত। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শিক্ষা, খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব ইত্যাদির সঙ্গে লড়াই করে তাদের প্রাণধারণ করতে হত।

1905 খ্রিস্টাব্দের পূর্বে রাশিয়ায় ভূমিদাসদের অবস্থা কেমন ছিল?

1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ায় ভূমিদাসরা সীমাহীন দুর্দশা ও অত্যাচারের শিকার হয়েছিল। ভূমিদাসরা জমিদারের ম্যানর সংলগ্ন গ্রামে বাস করত এবং জমিদারের সামান্য জমিতে চাষবাস করত। এর বিনিময়ে তারা জমিদারকে করভি বা বেগার শ্রম, টাইথ বা ধর্মকর-সহ বিভিন্ন কর দিতে বাধ্য থাকত।

‘পোটেমকিন’ যুদ্ধজাহাজের নাবিকরা কেন বিদ্রোহ করেছিল?

1905 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ‘পোটেমকিন’ নামক যুদ্ধজাহাজের নাবিকরা রাশিয়ার বিপ্লবী শ্রমিকদের উপর দমননীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। এমনকি সৈনিকরাও উচ্চপদস্থ অফিসারদের আদেশ অমান্য করেছিলেন। তবে জার সরকার অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে এই বিদ্রোহ দমন করে।

1905 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় বিপ্লবের কারণ কী ছিল?

রাশিয়ার জারতন্ত্রের স্বৈরাচারী শাসন, অর্থনৈতিক শোষণ, সামাজিক বৈষম্য, শ্রমিকদের অসন্তোষ, কৃষকদের দুর্দশা, রুশ-জাপান যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় ইত্যাদি সমস্যা 1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পটভূমি সৃষ্টি করেছিল। ট্রটস্কির মতে, 1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ছিল 1917 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের ড্রেস রিহার্সাল বা মহড়া।

কোন ঘটনা ‘Bloody Sunday’ বা ‘রক্তাক্ত রবিবার’ নামে কুখ্যাত?

1905 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে রবিবার ফাদার গ্যাপন নামে এক ভাগ্যান্বেষী ধর্মযাজকের নেতৃত্বে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে শ্রমিকশ্রেণি কারখানায় কাজের সময় নির্দিষ্ট করা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিদান প্রভৃতি দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা করে জারের শীতকালীন প্রাসাদের দিকে অগ্রসর হয়। জারের সেনাবাহিনী ওই মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি চালালে প্রচুর শ্রমিক আহত ও নিহত হয়। এই শোচনীয় হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে ‘রক্তাক্ত রবিবার’ বা ‘Bloody Sunday’ নামে কুখ্যাত।

‘সোভিয়েত’ কী?

রাশিয়ার বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে কৃষক, শ্রমিক, সৈনিক ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে গঠিত স্বশাসিত পরিষদকে ‘সোভিয়েত’ বলা হয়। রাশিয়ায় প্রথম সোভিয়েত গড়ে উঠেছিল রাজধানী পেট্রোগ্রাড শহরে। এখানে শ্রমিক ও সৈনিকরা রুশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম সোভিয়েত গঠন করেছিল। সাধারণ মানুষদের নিয়ে গঠিত এই সোভিয়েতগুলি ছিল জাতির প্রকৃত প্রতিনিধি।

‘অক্টোবর ইস্তাহার’ বা ‘October Manifesto’ কী?

বিপ্লবের ব্যাপকতায় জার দ্বিতীয় নিকোলাস ভীত হয়ে 1905 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মন্ত্রী কাউন্ট উইটের পরামর্শে শাসনসংস্কারের এক ঘোষণাপত্র পেশ করেন যা ‘অক্টোবর ইস্তাহার’ নামে পরিচিত। এই ঘোষণাপত্রে ডুমাকে আইন প্রণয়নের সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়, জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ভোটদানের অধিকার স্বীকৃত হয়। শ্রমিকশ্রেণিও ভোটাধিকার লাভ করে।

‘ডুমা’ কী?

‘ডুমা’ হল রাশিয়ার জাতীয় পরিষদ। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের নির্দেশে রুশ জনগণ 1905 খ্রিস্টাব্দে এই পরিষদটি গঠন করেছিল। এই পরিষদ জারতন্ত্রের স্বৈরাচারকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের মনে সাংবিধানিক শাসন প্রবর্তনের আশা জাগ্রত করে। উল্লেখ্য 1906 খ্রিস্টাব্দে ডুমার প্রথম অধিবেশন বসে।

‘Bulyghin Constitution’ বা ‘বুলিঘিন শাসনতন্ত্র’ কী?

রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাস 1905 খ্রিস্টাব্দে ‘বুলিঘিন শাসনতন্ত্র’ নামে একটি শাসনতন্ত্র প্রবর্তন করেন। এই শাসনতন্ত্র অনুসারে জার জাতীয় সভার পরিবর্তে একটি রাজকীয় ডুমা (Imperial Duma) স্থাপনের কথা ঘোষণা করেন। এই সভার কাজ ছিল পরামর্শ দান করা।

1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব কেন ব্যর্থ হয়?

1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ব্যাপক আকার ধারণ করলেও বিপ্লবীদের পরিকল্পনার অভাব, বিপ্লবী দলের বিভিন্ন নেতাদের নির্বাসনে থাকা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ঐক্যবোধের অভাব, জারের দমননীতি, বিদেশি পুঁজিপতিশ্রেণির জার সরকারকে সমর্থন ইত্যাদির জন্য 1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যায়।

1905 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার বিপ্লবের গুরুত্ব কী ছিল?

1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ব্যর্থ হলেও এর গুরুত্ব কম ছিল না।

  • এই বিপ্লবের ফলে শ্রমিক, কৃষক এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা জাগ্রত হয়। তারা বুঝতে পারে জারতন্ত্রের উচ্ছেদ না হলে তাদের মুক্তিলাভ অসম্ভব।
  • এই বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার বিভিন্ন স্থানে যে বিপ্লবী কাউন্সিল ও সোভিয়েত গড়ে ওঠে তা 1917 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
  • সর্বোপরি এই বিপ্লবের ফলে স্বৈরাচারী জারতন্ত্র কেঁপে উঠেছিল তথা তার পতন সুনিশ্চিত হয়।

রুশ বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ কী ছিল?

রুশ শাসনব্যবস্থায় জারদের দুর্বলতার সুযোগে অভিজাত শ্রেণির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা, অবাধে প্রজাশোষণ, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ এবং রুশ-জাপান যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বারবার জার্মানির কাছে পরাজয়, জারতন্ত্রের প্রতি জনরোষের সৃষ্টি করেছিল।

রাসপুটিন কে ছিলেন?

রাসপুটিন ছিলেন রাশিয়ার সাইবেরীয় অঞ্চলের একজন সন্ন্যাসী। তিনি রুশ জার দ্বিতীয় নিকোলাসের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করেন এবং রানি আলেকজান্দ্রার সহযোগিতায় জনস্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত হন।

রুশ বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণ কী ছিল?

রাশিয়ার মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাস কৃষকেরা ‘মির’ নামক গ্রাম্য সমবায় সমিতির কাছ থেকে চাষযোগ্য জমিগুলি কিনে কুলাকদের কাছে বিক্রি করে এবং কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে যোগ দেয়। কিন্তু কলকারখানায় অল্প মজুরি, উদয়াস্ত পরিশ্রম ও অস্বাস্থ্যকর বস্তিজীবনের অভিশাপ তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তারা জারতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটাতে সচেষ্ট হলে বিপ্লবের পথ প্রশস্ত হয়।

স্টোলিপিন (1906-1911 খ্রিস্টাব্দ) কেন বিখ্যাত ছিলেন?

স্টোলিপিন ছিলেন জার দ্বিতীয় নিকোলাসের অত্যন্ত কৌশলী ও প্রতিভাবান একজন প্রধানমন্ত্রী। রাশিয়ার বিদ্রোহ দমন করে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম করাই ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য। শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণিকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি কিছু অধিকার দান করেন, যেমন – কৃষকদের জমির স্বত্বদান, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও বিমার অধিকার দান ইত্যাদি। তাঁর সংস্কারের ফলে রাশিয়ায় জোতদার প্রথা ব্যাপকভাবে চালু হয়। সম্ভবত তাঁর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে জার দ্বিতীয় নিকোলাস তাঁকে গুপ্তঘাতকের দ্বারা হত্যা করান। তিনি বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ কঠোর হাতে দমন করেন—যা কালো সন্ত্রাসের রাজত্ব বা স্টোলিপিন প্রতিক্রিয়া নামে খ্যাত।

1917 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের সামাজিক কারণ কী ছিল?

রাশিয়ার সামাজিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। সমাজ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। নিম্নবর্গে ছিল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দরিদ্র কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ। উচ্চবর্গে ছিল অভিজাত সম্প্রদায় এবং মধ্যবর্গে ছিল নগণ্য মধ্যবিত্ত শ্রেণি। 1905 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের ব্যর্থতার পর নিম্নবর্গের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। জার সরকার এদের ক্ষোভ প্রশমনের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই বিক্ষোভই বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল।

1917 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পিছনে দার্শনিকদের দায়িত্ব আলোচনা করো।

ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তেমনি 1917 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান অনস্বীকার্য। লিও টলস্টয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, তুর্গেনেভ, ডস্টয়েভস্কি, পুশকিন, গোগোল প্রমুখ সাহিত্যিক ও দার্শনিকরা রুশদের কাছে জারতন্ত্রের স্বৈরাচারিতার চিত্র তুলে ধরেন। বাকুনিনের নৈরাজ্যবাদ ও কার্ল মার্কসের সাম্যবাদ জনগণের মনে সচেতনতার সঞ্চার করে।

রুশ বিপ্লবকে প্রভাবিত করেছে এমন কয়েকজন সাহিত্যিকের নাম উল্লেখ করো।

রুশ বিপ্লবকে যাঁরা প্রভাবিত করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— – গোর্কি, টলস্টয়, পুশকিন, গোগোল, ডস্টয়েভস্কি প্রমুখ। এ ছাড়া বাকুনিনের নৈরাজ্যবাদী চিন্তা এবং কার্ল মার্কসের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ রুশ বিপ্লবকে প্রভাবিত করেছিল।

1917 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?

1917 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল – প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার বিপর্যয়। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর জন্য খাবার ও গোলাবারুদের অভাব দেখা দেয়। বিভিন্ন রণক্ষেত্রে অসংখ্য রুশ সৈন্য মারা যায়। কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেলে দেশে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়। এই অবস্থায় লেনিনের ‘শান্তি-জমি-রুটি’-র তত্ত্ব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং জনগণ জার সরকারের প্রবল বিরোধিতা করলে জার দ্বিতীয় নিকোলাস পদত্যাগ করেন।

‘পেট্রোগ্রাড ধর্মঘট’ কবে ও কেন শুরু হয়?

বলশেভিকদের আহ্বানে 1917 খ্রিস্টাব্দের 8 মার্চ (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) রাশিয়ার পেট্রোগ্রাড শহরে বলশেভিকদের নেতৃত্বে 80-90 হাজার শ্রমিক খাদ্যের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে। তারা জারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।

1917 খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর বা বলশেভিক বিপ্লবের গুরুত্ব কী ছিল?

1917 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে রাশিয়াতে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়, তার ফলে –

  • প্রায় 300 বছরের রোমানভ বংশের পতন হয়।
  • রাশিয়ায় সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • রাশিয়ায় বসবাসকারী অ-রুশ জাতিগুলি সমান অধিকার ও মর্যাদা পায়।
  • পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাম্যবাদের প্রসার ঘটে।

ইউরোপের ইতিহাসে 1917 খ্রিস্টাব্দের গুরুত্ব কী?

ইউরোপের ইতিহাসে 1917 খ্রিস্টাব্দের গুরুত্ব হল –

  • রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান ঘটে।
  • রাশিয়ায় লেনিনের নেতৃত্বে নভেম্বর বা বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয়।
  • রাশিয়া বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

‘শান্তি, জমি, রুটি’ – এই স্লোগান কে, কাদের দিয়েছিলেন?

রাশিয়ায় 1917 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর বিপ্লবের পূর্বে লেনিন ঘোষণা করেন যে, বলশেভিকদের নেতৃত্বে সোভিয়েতগুলি ক্ষমতা গ্রহণ করলে রণক্লান্ত সৈন্যরা পাবে শান্তি; ভূমিহীন কৃষকরা পাবে জমি এবং শ্রমিকরা পাবে রুটি। এই স্লোগান বলশেভিক গোষ্ঠীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে।

কেরেনস্কি কে ছিলেন?

আলেকজান্ডার কেরেনস্কি ছিলেন রাশিয়ার মেনশেভিক গোষ্ঠীর নেতা। 1917 খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে প্রিন্স লুভভের নেতৃত্বে যে অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত, সেই সরকারে কেরেনস্কি বিচারবিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর সরকারের পতনের পর বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করলে তিনি আমেরিকায় পালিয়ে যান।

কেরেনস্কি সরকার কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

কেরেনস্কি শ্রমিক-কৃষকদের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। শ্রমিক-কৃষকরা যুদ্ধ চায়নি। তারা চেয়েছিল যুদ্ধ বর্জন করে রাশিয়ার সার্বিক উন্নয়ন। কেরেনস্কি সরকার যুদ্ধ পরিচালনার দিকেই সর্বাধিক মনোনিবেশ করেছিল। রাশিয়ার অভ্যন্তরে জার্মান অনুপ্রবেশ রোধ করতে না পারার ব্যর্থতা শ্রমিক, কৃষক ও জনগণকে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তোলে।

বলশেভিক বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণ আলোচনা করো।

রাশিয়ার জারতন্ত্রের সংস্কারের ব্যর্থতা, শাসনব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থায় অভিজাতদের একচ্ছত্র ভূমিকা, জাতীয় সভার মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, স্টোলিপিনের সংস্কারের ব্যর্থতা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের ফলে খাদ্যাভাব ও মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি বলশেভিক বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছিল।

বলশেভিক বিপ্লবের পিছনে কৃষক ও শ্রমিক অসন্তোষ কতখানি দায়ী ছিল?

রাশিয়ায় ভূমিদাসপ্রথা বন্ধ হলেও কৃষকদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। দরিদ্র কৃষকরা তাদের জমি ধনী কৃষকদের বিক্রি করে দেয় এবং নিজেরা ভাগচাষিতে পরিণত হয়। অপরদিকে শ্রমিকশ্রেণির অশিক্ষা, সুস্বাস্থ্যের অভাব, কম মজুরি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আহার ও বাসস্থানের নিম্নমান ইত্যাদি কৃষক ও শ্রমিকদের বিক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।

লেনিন কে ছিলেন?

অথবা, লেনিন কেন বিখ্যাত?

1917 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর বিপ্লবের প্রধান নায়ক ছিলেন লেনিন। তিনি রাশিয়ায় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসে লেনিন নামে তিনি পরিচিত হলেও এটি ছিল তাঁর ছদ্মনাম। লেনিনের আসল নাম ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ।

‘এপ্রিল থিসিস’ কী?

1917 খ্রিস্টাব্দের 16 এপ্রিল লেনিন রাশিয়ায় বলশেভিক কর্মীদের সামনে তাঁর যে বিখ্যাত কর্মধারা প্রকাশ করেন, তা ‘এপ্রিল থিসিস’ নামে পরিচিত। তিনি বলেন, বলশেভিকদের জন্যই রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান ঘটেছে তাই রাষ্ট্রক্ষমতা তাদেরই প্রাপ্য। সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বলশেভিকরা ক্ষমতা পেলে সৈন্যরা শান্তি পাবে, কৃষকরা জমি পাবে, শ্রমিকরা রুটি পাবে।

লেনিনের ‘এপ্রিল থিসিস’ কী কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

1917 খ্রিস্টাব্দের 16 এপ্রিল লেনিনের ‘এপ্রিল থিসিস’ ঘোষিত হয়। এই ঘোষণায় লেনিন ‘শান্তি, জমি ও রুটি’র যে স্লোগান দেন তা রুশবাসীকে গভীরভাবে নাড়া দেয় এবং লেনিন ও বলশেভিক দল বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বলশেভিকরা কীভাবে রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে?

1917 খ্রিস্টাব্দের 10 অক্টোবর বলশেভিক দলের প্রধান নেতা লেনিন গোপনে পেট্রোগ্রাড শহরে এসে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের আহ্বান জানান। লেনিনের নির্দেশে তাঁর অনুগামী ট্রটস্কি 7 নভেম্বর লাল ফৌজের 25 হাজার সদস্য নিয়ে রাজধানী পেট্রোগ্রাড শহর দখল করেন। এর ফলে কেরেনস্কির নেতৃত্বে পরিচালিত অস্থায়ী সরকারের পতন ঘটে। এরপর বলশেভিক দল রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে।

ট্রটস্কি কে ছিলেন? তাঁর প্রকৃত নাম কী?

ট্রটস্কি ছিলেন রুশ বিপ্লবে লেনিনের প্রধান সহযোগী। তিনি রাশিয়ায় লাল ফৌজ সংগঠিত করেন। তাঁর প্রকৃত নাম লেভ দাভিদোভিচ ব্রনস্টেইন।

ট্রটস্কি কেন বিখ্যাত ছিলেন?

1917 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবে লেনিনের প্রধান সহযোগী ছিলেন ট্রটস্কি। সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ট্রটস্কি বলশেভিক স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত Red Guard বা লাল ফৌজের সাহায্যে 7 নভেম্বর কেরেনস্কি সরকারকে উচ্ছেদ করে রাশিয়ার নভেম্বর বিপ্লবকে বাস্তবায়িত করেন।

1917 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবকে একই সঙ্গে ‘অক্টোবর বিপ্লব’ ও ‘নভেম্বর বিপ্লব’ বলা হয় কেন?

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় দিনপঞ্জি অনুসারে বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল 1917 খ্রিস্টাব্দের 25 অক্টোবর। তাই এই বিপ্লবকে ‘অক্টোবর বিপ্লব’ বলা হয়। কিন্তু গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, চূড়ান্ত সাফল্যের দিনটি 13 দিন এগিয়ে অর্থাৎ 7 নভেম্বর। সেইজন্য একই বিপ্লব ‘নভেম্বর বিপ্লব’ নামেও পরিচিত।

1917 খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের কারণ কী ছিল?

প্রিন্স লভভ্ এবং কেরেনস্কি পরিচালিত শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার ধারাবাহিক বিপর্যয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, চরম খাদ্যাভাব, বলশেভিক নেতা লেনিনের সুযোগ্য নেতৃত্ব, তৎকালীন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি প্রতিবিপ্লবী শক্তিগুলির দুর্বলতা বলশেভিকদের সাফল্য এনে দেয়।

রাশিয়ার ‘শ্বেত বিপ্লব’ সম্পর্কে আলোচনা করো।

রুশ বিপ্লবের বিরুদ্ধে যে প্রতিবিপ্লব গড়ে ওঠে, তা ‘শ্বেত বিপ্লব’ নামে পরিচিত। 1917 খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর বিপ্লবের মাধ্যমে বলশেভিক দল ক্ষমতালাভ করলে বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত জমিদার ও যাজকশ্রেণি এর বিরোধিতা করে। এদের সঙ্গে যোগ দেয় মেনশেভিকগণ। সাইবেরিয়া থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত সর্বত্র শ্বেত সন্ত্রাস চলতে থাকে। বলশেভিকগণ দমননীতির মাধ্যমে এদের দমন করে বিপ্লবকে রক্ষা করে।

‘সোভনারকম’ বলতে কী বোঝো?

1917 খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লব সফল হওয়ার পরদিন (8 নভেম্বর) রাশিয়ার সমাজতন্ত্রী নেতৃবর্গের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যে অস্থায়ী সরকার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তার নাম ছিল “Council of People’s Commissars”। রুশ ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে এই সরকারকে বলা হত ‘Sovnarkom’ বা ‘সোভনারকম’।

রুশ বিপ্লবের রাজনৈতিক প্রভাব কী ছিল?

1917 খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের প্রভাবে –

  • রাশিয়ায় জারতন্ত্রের অবসান ঘটে।
  • রাশিয়ায় বলশেভিক দলের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয় ইত্যাদি।

রুশ বিপ্লবের দুটি সামাজিক প্রভাব লেখো।

1917 খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের প্রভাবে —

  • রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং
  • রাশিয়ার সমাজে সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

রুশ বিপ্লবের দুটি অভ্যন্তরীণ প্রভাব লেখো।

1917 খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাবে —

  • রাশিয়ায় সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং
  • বিশ্বের মধ্যে রাশিয়াতেই সর্বপ্রথম সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

বলশেভিক বিপ্লবের আন্তর্জাতিক প্রভাব সম্পর্কে লেখো।

রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব শুধু ইউরোপেই নয়, বিশ্বের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা করে। এই বিপ্লবের দ্বারা –

  • বিশ্বের সাম্যবাদী আন্দোলনগুলি প্রেরণা লাভ করে,
  • ধনতন্ত্রের স্ববিরোধিতা প্রকটিত হয় এবং সমাজতন্ত্রের উত্থানের পটভূমি রচিত হয় ইত্যাদি।

বলশেভিক বিপ্লব বিশ্বের সমাজব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিল?

বলশেভিক বিপ্লবের দ্বারা রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়। বিশ্বরাজনীতি দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায় — ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক। ইউরোপের ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাম্যবাদী সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সূচনা হয়, যা ইউরোপকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়।

‘ইসক্রা’ বলতে কী বোঝো?

‘ইসক্রা’ কথার অর্থ ‘স্ফুলিঙ্গ’। নির্বাসনকালে সুইজারল্যান্ড থেকে লেনিন এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে ইসক্রার মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে বলশেভিক দল গড়ে ওঠে।

‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ বলতে কী বোঝো?

ঊনবিংশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতকের প্রথমদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক ধরনের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রচারিত হয়। এই জাতীয়তাবাদীগণ নিজ জাতিকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্যান্য জাতিগুলিকে নিকৃষ্ট বলে প্রচার করে এবং অন্য জাতির উপর বলপ্রয়োগ করে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কথা বলে। এই ভাবধারা ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ নামে পরিচিত।

উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য কীভাবে দায়ী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ইউরোপের অধিকাংশ দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়। যেমন — জার্মানরা টিউটন জাতির শ্রেষ্ঠত্ব, ইংল্যান্ডের হোমার লি স্যাক্সন জাতির শ্রেষ্ঠত্ব এবং রুশ লেখকেরা শ্লাভ জাতির শ্রেষ্ঠত্বের কথা প্রচার করেন। পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন দেশের এই জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনে জার্মানির দায়িত্ব কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনের পিছনে ঐতিহাসিকগণ জার্মানিকে এককভাবে দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, বিশ্ব রাজনীতিতে জার্মানির প্রাধান্য স্থাপনের জন্য কাইজারের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ, ইংল্যান্ডের সঙ্গে নৌ-বাণিজ্য ও ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়া, বলকান রাজনীতিতে নিজ স্বার্থে তুরস্কের সঙ্গে মিত্রতা, অস্ট্রিয়ার আগ্রাসনকে সমর্থন এবং জার্মান শিল্পপতি ও সমরনায়কদের উগ্র নীতি প্রভৃতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল।

কোন্ যুদ্ধকে ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধ’ বলা হয় এবং কেন?

ইউরোপের ইতিহাসে 1914 খ্রিস্টাব্দের যুদ্ধকে ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধ’ বলা হয়। কারণ এত ব্যাপক, ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী যুদ্ধ পৃথিবীতে এর আগে কখনও সংঘটিত হয়নি এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশই এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যোগ দিয়েছিল। সেজন্য 1914 খ্রিস্টাব্দের যুদ্ধকে ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধ’ বলা হয়।

কবে এবং কী কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় 1914 খ্রিস্টাব্দে।

কারণ – বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রান্সিস ফার্দিনান্দ এবং তাঁর পত্নী সোফিয়া এক স্লাভ আততায়ীর হাতে নিহত হলে অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে চরমপত্র পাঠায় এবং সার্বিয়া তা মানতে অস্বীকার করে। অতঃপর অস্ট্রিয়া বেলগ্রেড আক্রমণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (1914-1918 খ্রিস্টাব্দ) দুটি পক্ষের মধ্যে হয়েছিল। এই যুদ্ধের একপক্ষে ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, রোমানিয়া, চীন, জাপান ও পোর্তুগাল। এরা ‘মিত্রশক্তি’ নামে পরিচিত। অপরপক্ষে ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইটালি, তুরস্ক ও বুলগেরিয়া। এরা ‘অক্ষশক্তি’ বা ‘কেন্দ্রীয় শক্তি’ নামে পরিচিত। যদিও পরবর্তীকালে ইটালি ‘অক্ষশক্তি’ ত্যাগ করেছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কেন যোগদান করে?

মার্কিন শিল্পপতি ও পুঁজিপতি, সমরাস্ত্র নির্মাতা ও বিক্রেতাগণের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য এবং নিরপেক্ষ দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর জার্মানির সাবমেরিন আক্রমণ ও মার্কিন নাগরিকদের প্রাণহানি ইত্যাদি নানা কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিপক্ষে যোগদান করে 1917 খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির সাফল্যের কারণগুলি কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির সাফল্যের পিছনে অনেক কারণ ছিল –

  • আমেরিকার মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রের মিত্রপক্ষে যোগদান,
  • ব্রিটেনের নৌশক্তির প্রাধান্য,
  • জার্মানির মিত্র দেশগুলির জার্মানিকে অসহযোগিতা,
  • কানাডা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশগুলির সম্পদ মিত্রশক্তির স্বার্থে ব্যবহার ইত্যাদি মিত্রশক্তিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাফল্য জুগিয়েছিল।

এগুলোর কারণে মিত্রশক্তি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাফল্য অর্জন করেছিল।

কত খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে? প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কোথায় ‘শান্তিচুক্তি’ সম্পাদিত হয়?

1918 খ্রিস্টাব্দে (11 নভেম্বর) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সের প্যারিস শহরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ‘শান্তিচুক্তি’ সম্পাদিত হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কে, কত খ্রিস্টাব্দে ‘চোদ্দো দফা নীতি’ ঘোষণা করেন?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ‘চোদ্দো দফা নীতি’ ঘোষণা করেন।

1918 খ্রিস্টাব্দে (8 জানুয়ারি) ‘চোদ্দো দফা নীতি’ ঘোষণা করা হয়।

উড্রো উইলসন কে ছিলেন? তিনি কেন বিখ্যাত?

উড্রো উইলসন ছিলেন একজন আদর্শবাদী নেতা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র রক্ষা ইত্যাদির উদ্দেশ্যে তিনি চোদ্দো দফা শর্ত ঘোষণা করে বিখ্যাত হন।

উইলসনের চোদ্দো দফা শর্তের কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করো।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যে চোদ্দো দফা শর্ত রচনা করেন, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  1. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে হবে,
  2. উপকূল অঞ্চল সর্বদা সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে,
  3. আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠন করতে হবে,
  4. সর্বোপরি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ দিতে হবে ইত্যাদি।

প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ‘বৃহৎ চার’ (Big Four) কারা?

1919 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিজয়ী মিত্রশক্তিবর্গের প্রতিনিধিগণ প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে একত্রিত হন। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবর্গ এখানে সমবেত হলেও মূল ক্ষমতা ছিল চারটি বৃহৎ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবর্গের হাতে। এরা ‘Big Four’ নামে পরিচিত। এরা হলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী অর্ল্যান্ডো ও ইটালির প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেনশোঁ।

প্যারিস শান্তি সম্মেলনে কয়টি সন্ধি গ্রহণ করার কথা বলা হয়? সেগুলি কী কী?

1919 খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে মোট 5টি সন্ধি গ্রহণ করা হয়েছিল। সেগুলি হল –

  • জার্মানির সঙ্গে ভার্সাই -এর সন্ধি,
  • অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সেন্ট জার্মেইনের সন্ধি,
  • বুলগেরিয়ার সঙ্গে নিউই-এর সন্ধি,
  • হাঙ্গেরির সঙ্গে ট্রিয়াননের সন্ধি এবং
  • তুরস্কের সঙ্গে সেভরের সন্ধি।

ভার্সাই সন্ধির দুটি আঞ্চলিক শর্ত লেখো।

আঞ্চলিক পুনর্গঠনের শর্তানুযায়ী –

  • জার্মানি ফ্রান্সকে আলসাস ও লোরেন; বেলজিয়ামকে ইউপেন, মেলমেডি ও মরেসনেট; পোল্যান্ডকে পোজেন ও পশ্চিম প্রুশিয়া এবং ডেনমার্ককে উত্তর স্লেজউইগ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়,
  • জার্মানির ডানজিগকে উন্মুক্ত বন্দর বলে ঘোষণা করা হয় ইত্যাদি।

ভার্সাই সন্ধির দুটি অর্থনৈতিক শর্ত লেখো।

ভার্সাই সন্ধির দ্বারা –

  • জার্মানির কয়লাসমৃদ্ধ সার অঞ্চলটি 15 বছরের জন্য ফ্রান্সকে দিয়ে দেওয়া হয় এবং
  • যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানির উপর 660 কোটি পাউন্ড অর্থের দায় চাপানো হয় ইত্যাদি।

ভার্সাই সন্ধির দুটি সামরিক শর্ত লেখো।

ভার্সাই সন্ধির দুটি সামরিক শর্ত হল –

  • জার্মানির সেনাবাহিনীকে ভেঙে দিয়ে সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে মাত্র 1 লক্ষ্য করা হয় এবং
  • জার্মানির যুদ্ধজাহাজগুলি ব্রিটেনকে প্রদান করা হয়।

ভার্সাই সন্ধির ঔপনিবেশিক শর্তাদি আলোচনা করো।

ভার্সাই সন্ধির ঔপনিবেশিক শর্তানুসারে আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ায় উপনিবেশগুলির উপর জার্মানির অধিকার বিলোপ করা হয় এবং অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জার্মানির সংযোগ নিষিদ্ধ করা হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে রাখা হয় সামোয়ার দ্বীপপুঞ্জ, জাপানের অধীনে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, বেলজিয়ামের অধীনে ট্যাঙ্গানিকার কিছু অংশ, অস্ট্রেলিয়ার অধীনে নিউগিনি, ফ্রান্সের অধীনে ক্যামেরুনের কিছু অংশ এবং ব্রিটেনের অধীনে পূর্ব আফ্রিকাকে রাখা হয়।

ভার্সাই সন্ধিকে ‘আরোপিত সন্ধি’ বা ‘জবরদস্তিমূলক সন্ধি’ বলা হয় কেন?

1919 খ্রিস্টাব্দের 28 জুন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্রপক্ষ ও পরাজিত জার্মানির মধ্যে ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধিকে অনেকে ‘আরোপিত সন্ধি’ বা ‘জবরদস্তিমূলক সন্ধি’ বলে অভিহিত করেন। কারণ –

  • এই সন্ধি ছিল জার্মানির পক্ষে অত্যন্ত কঠোর ও অপমানজনক।
  • জার্মান প্রতিনিধিদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে এবং তাদের ভয় দেখিয়ে এই সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।

জাতিসংঘ কখন গঠিত হয়?

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন তাঁর চোদ্দো দফা নীতির শেষ দফায় জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। সেই অনুসারে 1919 খ্রিস্টাব্দের 28 এপ্রিল জাতিসংঘের চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এই দিনকে ‘জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা দিবস’ বলা হয়। জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন বসে 1920 খ্রিস্টাব্দের 10 জানুয়ারি।

জাতিসংঘ কেন গঠিত হয়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অগণিত মানুষের প্রাণহানি, ভয়াবহ ধ্বংসকাণ্ড, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি, মারণাস্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি বিশ্বজনমানসে যে আতঙ্ক ও ব্যাকুলতার সৃষ্টি করে তার থেকে মুক্ত হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ অগ্রণী হয়। এই শান্তি স্থাপনের প্রধান পদক্ষেপ স্বরূপ গড়ে ওঠে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

জাতিসংঘের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল –

  • পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং
  • ন্যায় ও সততার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করা।

জাতিসংঘের মৌলিক উদ্দেশ্য কী ছিল?

জাতিসংঘের মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সুনিশ্চিত করা; আন্তর্জাতিক বিরোধের মীমাংসা; সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারী, শিশু, অবহেলিত শ্রেণি এবং শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা ইত্যাদি।

জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গগুলি (organ) কী কী ছিল?

জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গগুলি ছিল –

  • সাধারণ সভা (League Assembly)।
  • পরিষদ (Council)।
  • সচিবালয় (Secretariat)।
  • আন্তর্জাতিক বিচারালয় (Permanent Court of International Justice)।
  • আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন (International Labour Organization) ইত্যাদি।

জাতিসংঘের পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি কারা ছিল?

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠাকালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইটালি ও জাপান ছিল এই পরিষদের স্থায়ী সদস্য। পরে রাশিয়া ও জার্মানিকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

আমেরিকা কেন জাতিসংঘ যোগদান করেনি?

উড্রো উইলসনের মস্তিষ্কপ্রসূত হলেও ভার্সাই সন্ধিপত্রের অঙ্গীভূত লীগ কভেন্যান্ট মার্কিন সিনেটে গৃহীত না হওয়ায় আমেরিকা জাতিসংঘে যোগদান করেনি। এছাড়াও 1920 খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের পরাজয়, এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে। তাই আমেরিকা প্যারিস শান্তিচুক্তিসমূহে স্বাক্ষর করেনি।

জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ স্থাপিত হলেও মূলত জাতিসংঘের সাংগঠনিক দুর্বলতা, তার ত্রুটিপূর্ণ ভোটদান পদ্ধতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্য শক্তিধর রাষ্ট্রের জাতিসংঘের সদস্যপদ গ্রহণ না করা, যুদ্ধকে বেআইনি ঘোষণা করলেও আগ্রাসন অব্যাহত রাখা, জাতিসংঘের নিজস্ব সেনাবাহিনীর অভাব, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতি এবং সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা জাতিসংঘকে ব্যর্থ করে তোলে।

জাতিসংঘের কৃতিত্ব বা অবদান কী ছিল?

জাতিসংঘ ব্যর্থ হলেও তার শান্তি স্থাপনের চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়নি। অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সমাজ ও শ্রমিকদের কল্যাণসাধন, জনস্বাস্থ্য, দাসপ্রথার উচ্ছেদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মান উন্নয়ন এবং সর্বোপরি সহযোগিতা ও সম্প্রীতির ধারণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছিল জাতিসংঘ।

গুস্তাভ স্ট্রেসেম্যান কে?

অর্থনীতিবিদ গুস্তাভ স্ট্রেসেম্যান ছিলেন জার্মানির ভাইমার প্রজাতন্ত্রের চ্যান্সেলার। 1923 থেকে 1929 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টায় জার্মানির উপর চাপানো ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য গঠিত হয় ক্ষতিপূরণ কমিশন (ডয়েজ কমিশন ও ইয়ং কমিশন) যা জার্মানির ক্ষতিপূরণ সমস্যার বেশ কিছুটা সমাধান করে। আবার পররাষ্ট্রক্ষেত্রে লোকার্নো চুক্তি (1925 খ্রিস্টাব্দ) স্বাক্ষরের ফলে ফ্রাঙ্কো-জার্মান বিরোধিতা হ্রাস পায়। জার্মানি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে এবং জার্মানির আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। লামাপুন।

‘ডওয়েজ পরিকল্প’না কী?

1924 খ্রিস্টাব্দে মার্কিন অর্থনীতিবিদ চার্লস ডওয়েজ জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল করার জন্য এবং ক্ষতিপূরণ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের উদ্দেশ্যে যে পরিকল্পনা করেন, তা ‘ডওয়েজ পরিকল্পনা’ নামে খ্যাত। এর দ্বারা জার্মানির জন্য ‘রাইখমার্ক’ নামে একটি নতুন মুদ্রার প্রবর্তন, একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, জার্মানিকে মার্কিন ঋণপ্রদান ও বাৎসরিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের পরিমাণ স্থির করে দেওয়া হয়।

‘ইয়ং পরিকল্পনা’ কী?

অথবা, ‘আওয়েন পরিকল্পনা’ কী?

মার্কিন অর্থনীতিবিদ আওয়েন ইয়ং -এর নেতৃত্বে 1928 খ্রিস্টাব্দে ক্ষতিপূরণ সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। 1929 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রিপোর্টে এই কমিটি জার্মানির অর্থনীতির উপর থেকে মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার, ক্ষতিপূরণ কমিশনের উচ্ছেদ, একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় ও জার্মানি কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষতিপূরণ 59 টি বার্ষিক কিস্তিতে দেওয়ার কথা বলা হয়। এই রিপোর্টই ‘ইয়ং পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত।

ব্রেস্ট-লিটভস্কের সন্ধির শর্ত কী ছিল?

ব্রেস্ট-লিটভস্কের সন্ধির শর্ত ছিল –

  • রাশিয়া জার্মানিকে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, ফিনল্যান্ড, লিভোনিয়া, এস্টোনিয়া প্রভৃতি অঞ্চল ছেড়ে দেবে।
  • রাশিয়া জার্মানিকে ক্ষতিপূরণ দেবে।
  • রাশিয়া ইউরোপের অন্য দেশে বলশেভিক দলের প্রচার করবে না।

ব্রেস্ট-লিটভস্কের সন্ধির গুরুত্ব কী ছিল?

ব্রেস্ট-লিটভস্কের সন্ধি রাশিয়া তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই সন্ধির ফলে –

  • জার্মানি ফিনল্যান্ড দখল করে, যার ফলে রাশিয়ার রাজধানী পেট্রোগ্রাড শহরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।
  • এই কারণে লেনিন 1918 খ্রিস্টাব্দের 10 মার্চ পেট্রোগ্রাড থেকে মস্কোতে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
  • এই সন্ধির শর্ত কঠোর হলেও রাশিয়া যুদ্ধ থেকে সরে এসে অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের কাজে মনোনিবেশ করার সুযোগ পেয়েছিল।
  • লেনিন মনে করতেন, এই সন্ধি সাময়িক – জার্মানি পরাজিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সন্ধি বাতিল করা হবে।

‘War Communism’ বা ‘যুদ্ধভিত্তিক সাম্যবাদ’ বলতে কী বোঝো?

গৃহযুদ্ধ ও বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে লেনিন এক বিশেষ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, যার নাম ‘War Communism’ বা ‘যুদ্ধভিত্তিক সাম্যবাদ’। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধজয়ের লক্ষ্যে পরিচালিত করা হয় এবং দেশীয় অর্থনীতির উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হয়।

স্ট্যালিন কে ছিলেন?

লেনিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত রাশিয়ার কর্ণধার হন জোসেফ স্ট্যালিন। তিনি 1924 খ্রিস্টাব্দ থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তিনি বলশেভিক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য ছিলেন।

‘চেকা’ কী?

‘চেকা’ হল রাশিয়ার এক গুপ্ত পুলিশবাহিনী। এর সাহায্যে স্ট্যালিন প্রতিবিপ্লবীদের বিরুদ্ধে লাল সন্ত্রাস চালিয়েছিলেন।

‘লোকার্নো স্পিরিট’ কী?

নিজেদের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর করার জন্য ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম ও চেকোশ্লোভাকিয়া 1925 খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো শহরে মিলিত হয়ে পরস্পর সমমর্যাদার ভিত্তিতে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মতবিনিময় করে ও কয়েকটি সালিশিমূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই হার্দিক পরিবেশ ও মনোভাবই ‘লোকার্নো স্পিরিট’ বা ‘লোকার্নো পরিবেশ’ নামে পরিচিত। যাকে ডেভিড থমসন ‘লোকার্নো হানিমুন’ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন ‘যুদ্ধ ও শান্তির বছরগুলির প্রকৃত বিভাজন’ বলে অভিহিত করেছেন।

‘1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা’ বলতে কী বোঝো?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে শিল্পপণ্যের বেহিসাবি উৎপাদন, ইউরোপের উপর মার্কিন ঋণের বোঝা, জার্মান ক্ষতিপূরণের ছন্দপতন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর সোভিয়েত রাশিয়ার দিক থেকে বৈদেশিক ঋণগ্রহণে অস্বীকার- এই সমস্ত কিছুই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিপদে ফেলে দিয়েছিল। মার্কিন পুঁজির বাজার হয়ে উঠেছিল ফাটকাবাজদের লীলাক্ষেত্র। ফলে শেষ পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের শেয়ার বাজারে ধস নামে এবং দেশে ধনতান্ত্রিক সংকট দেখা দেয়। যা ইতিহাসে ‘1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা’ বা Great Depression নামে পরিচিত।

1929 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণ কী ছিল?

1929 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মহামন্দার সৃষ্টি হয়। এই মহামন্দার কারণ ছিল-

  • এই সময় আমেরিকায় কৃষিসংকটের জন্য কৃষিজাত পণ্যের মূল্য হ্রাস পায়।
  • শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন দেশের চাহিদা অপেক্ষা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। আবার এই সময় রপ্তানির পরিমাণও হ্রাস পেয়েছিল।
  • 1929-র দশকে আমেরিকাবাসীরা শেয়ার বাজারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে। প্রথমদিকে শেয়ারের দাম বাড়লেও অচিরেই শেয়ারের দাম কমতে থাকায় আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসে।

‘কালো বৃহস্পতিবার’ কী?

আমেরিকার অর্থনীতিতে 1929 খ্রিস্টাব্দের 24 অক্টোবর শেয়ার বাজারে এক বিরাট পতন ঘটে। ওই দিন বৃহস্পতিবার ছিল বলে আমেরিকাবাসী এই দিনটিকে ‘কালো বৃহস্পতিবার’ নামে চিহ্নিত করে।

আমেরিকার অর্থনীতির ইতিহাসে ‘কালো মঙ্গলবার’ বলতে কী বোঝায়?

1929 খ্রিস্টাব্দের 29 অক্টোবর আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিটের বিখ্যাত শেয়ার বাজারে এমন অবস্থা দেখা দেয় যে, সেদিন যে-কোনো মূল্যে শেয়ার কেনাবেচার জন্য কোনো গ্রাহকই সেখানে উপস্থিত ছিল না। আমেরিকান অর্থনীতির ইতিহাসে এই ঘটনা ‘কালো মঙ্গলবার’ বা ‘Black Tuesday’ নামে পরিচিত।

1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দাকে ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা’ কেন আখ্যা দেওয়া হয়?

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই মন্দা ইউরোপ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে প্রভাব বিস্তার করে, কারণ জার্মানি মার্কিন ঋণ গ্রহণ করে তার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চালাচ্ছিল। অন্যদিকে ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশগুলি আমেরিকাকে যুদ্ধকালীন ঋণ মেটাত। শেয়ার বাজারে অকস্মাৎ ধস নামলে মার্কিন ব্যাংকগুলি বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ডলারের দাম পড়ে যায় এবং ফলস্বরূপ ইউরোপের প্রায় অনেক দেশই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মন্দা শুরু হলেও সারা বিশ্বে এই মন্দার প্রভাব পড়েছিল বলে একে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা বলা হয়।

‘New Deal’ কী?

মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্ট অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য 1933-1934 খ্রিস্টাব্দে ‘নতুন ব্যবস্থা’ বা ‘New Deal’ চালু করেন। New Deal -এর মাধ্যমে তিনি আমেরিকার বেকার সমস্যার সমাধান, শিল্প, কৃষি, ব্যাংক, বাণিজ্য ইত্যাদি ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা আমেরিকায় কী প্রভাব ফেলেছিল?

1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দার ফলে আমেরিকায় –

  • শিল্পোৎপাদন ব্যাপক হ্রাস পায় এবং বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
  • প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে পড়ে।
  • শেয়ার বাজারে পতন ঘটে।
  • বহু মানুষ ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে।

1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দার দুইটি প্রভাব লেখো।

1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দার দরুন –

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকার সমস্যা ভীষণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং
  • বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীগণ প্রচণ্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল।

1929 খ্রিস্টাব্দের মন্দার ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি?

সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল না বলে মন্দার প্রকোপ সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়েনি। উদ্বৃত্ত উৎপাদন এবং সেই উদ্বৃত্ত দ্রব্য রপ্তানির সমস্যাও সোভিয়েত দেশের ছিল না।

NEP বা লেনিনের নতুন অর্থনৈতিক নীতি বলতে কী বোঝায়?

লেনিন বাস্তব প্রয়োজনে ও রাশিয়ার বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কসবাদ থেকে কিছুটা সরে এসে যে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেন, তা ‘নতুন অর্থনৈতিক নীতি’ (New Economic Policy) বা সংক্ষেপে NEP নামে পরিচিত। 1921 খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির দশম অধিবেশনে এই নীতি গৃহীত হয়। এই নীতি অনুসারে –

  • ছোটো ছোটো জমির মালিকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
  • ছোটো ও মাঝারি শিল্পপতিদের উপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে ব্যক্তিমালিকানা স্বীকার করা হয়।

লেনিনের নয়া অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

লেনিন 1921 খ্রিস্টাব্দে তাঁর নয়া অর্থনীতি ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় বলা হয় যে –

  • কৃষকদের উদ্বৃত্ত ফসল কেড়ে নেওয়া হবে না।
  • রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীন জমিতে কৃষকদের মালিকানা থাকবে।
  • ছোটো ও মাঝারি শিল্পগুলিতে ব্যক্তিমালিকানা বজায় থাকবে।
  • বৈদেশিক বাণিজ্য সরকারের হাতে এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ব্যক্তিগত হাতে থাকবে।

‘হুভার স্থগিতকরণ’ বা ‘হুভার মোরাটোরিয়াম’ বলতে কী বোঝায়?

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জার্মানিকে ঋণ দিত। কিন্তু 1929 খ্রিস্টাব্দে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মহামন্দার জন্য আমেরিকার পক্ষে জার্মানিকে ঋণ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে জার্মানি ঋণ না পেয়ে মিত্রপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে না। আবার মিত্রপক্ষের রাষ্ট্রগুলি আমেরিকার ঋণ শোধ করতে অপারগ হয়। এই অবস্থায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হুভার 1931 খ্রিস্টাব্দের 20 জুন ঘোষণা করেন যে, 1931 খ্রিস্টাব্দের 1 জুলাই থেকে আগামী এক বছর কোনো দেশকে তার ঋণ শোধ করতে হবে না। একেই ‘হুভার মোরাটোরিয়াম’ বা ‘হুভার স্থগিতকরণ’ বলা হয়।

উগ্র জাতীয়তাবাদ কীভাবে ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থানের পথকে প্রশস্ত করেছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে স্বাক্ষরিত ভার্সাই সন্ধিতে ইতালিকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হলে ইতালির প্রতিনিধি কাউন্ট অর্ল্যান্ডো ভার্সাই সন্ধির বৈঠক ত্যাগ করেন এবং তখন থেকেই ইতালিতে উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। এরা ইতালির প্রাপ্য অধিকার আদায়ের জন্য বলপ্রয়োগকে গুরুত্ব দিলে ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত হয়।

‘ফ্যাসিবাদ’ কী?

ইতালিতে বেনিটো মুসোলিনি ‘ফ্যাসিস্ট দল’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালির রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করেছিল। ফ্যাসিবাদ হল মুসোলিনির নেতৃত্বে পরিচালিত একটি রাজনৈতিক মতবাদ। ফ্যাসিবাদ বলতে বোঝায় একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী, আগ্রাসী, জাতিবিদ্বেষী ও সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একদলীয় একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থা ও এক সর্বগ্রাসী মতবাদ।

ফ্যাসিবাদের মূল কথা কী ছিল?

বেনিটো মুসোলিনি ইতালিতে ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছিলেন। ফ্যাসিবাদের মূল বক্তব্য ছিল – সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে বিশ্বে ইতালির হৃত মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। আর এই উদ্দেশ্যেই মুসোলিনি ইতালিতে একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন।

ফ্যাসিবাদের উদ্ভবের অর্থনৈতিক কারণ কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে দারুণ অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। যুদ্ধের দরুন জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যাভাব, শিল্পদ্রব্যের অভাব, মজুরদের মজুরি না বাড়া ইত্যাদি সংকটের মুখে পড়ে ইতালি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় ফ্যাসিবাদী একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ইতালিকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিল।

ফ্যাসিস্ট দল কে প্রতিষ্ঠা করেন? এই দলের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

মুসোলিনি ফ্যাসিস্ট দল প্রতিষ্ঠা করেন।

ফ্যাসিস্ট দলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল –

  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং
  • কমিউনিস্টদের ধ্বংস করা।

ফ্যাসিস্ট দলের লক্ষ্য কী ছিল?

ফ্যাসিস্ট দলের মূল লক্ষ্য ছিল –

  • রাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধি করা,
  • কমিউনিস্টদের প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা,
  • ইতালিকে বিশ্বে হৃত মর্যাদা ফিরিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে শক্তিশালী বিদেশনীতি গ্রহণ করা।

মুসোলিনি কে ছিলেন?

মুসোলিনি ছিলেন ইতালির ফ্যাসিস্ট দলের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি 1922 খ্রিস্টাব্দে ইতালির প্রধানমন্ত্রী হয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ‘ইল ডুচে’ হয়েছিলেন।

মুসোলিনি কীভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইতালিতে কলকারখানা বন্ধ, শ্রমিক ছাঁটাই, খাদ্যাভাব, বেকার সমস্যা, ফাটকাবাজদের উত্থান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইত্যাদি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংকট তীব্রতর হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে ইতালিতে কমিউনিস্টদের উত্থান বন্ধ করতে এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের নিরসন করে ইতালির প্রাচীন গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে জনগণ মুসোলিনিকে সমর্থন করে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেন।

ইতালিতে মুসোলিনি কী ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করেন?

ইতালিতে মুসোলিনি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।

এই শাসনব্যবস্থা ছিল উগ্র ও আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত একদলীয় একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থা।

‘গমের যুদ্ধ’ বা ‘Battle of Wheat’ বলতে কী বোঝো?

1922 খ্রিস্টাব্দে মুসোলিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ দ্বারা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উপর বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। তিনি আর্থিক ক্ষেত্রে স্বয়ম্ভরতার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য জলপাইসহ অন্যান্য ফলের চাষ কমিয়ে দিয়ে গম উৎপাদনের উপর জোর দেন। এটি ‘গমের যুদ্ধ’ বা ‘Battle of Wheat’ নামে খ্যাত।

মুসোলিনি কবে রোম অভিযান করেন এবং কেন?

1922 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে মুসোলিনি ও তাঁর ফ্যাসিস্ট বাহিনীর 50 হাজার সদস্য রোম অভিযান শুরু করে।

মুসোলিনির রোম অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল – রাজা ভিক্টর ইম্যানুয়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখল করা। ফ্যাসিস্ট বাহিনীর সংখ্যা ও শক্তি দেখে ইতালীয় সরকারের মন্ত্রিগণ ভয়ে পদত্যাগ করেন। রাজা ভিক্টর ইম্যানুয়েল রাষ্ট্রিক বিশৃঙ্খলা এড়াতে মুসোলিনিকে মন্ত্রিসভা গঠন করতে আহ্বান জানান। এইভাবে মুসোলিনি ইতালির প্রথম ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী হন।

‘কালো কুর্তা’ নামে কারা পরিচিত?

ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দলের সদস্যরা কালো পোশাক পরে আধা-সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ করত। এই কারণে ফ্যাসিস্টরা ‘কালো কুর্তা’ নামে পরিচিত হয়।

জার্মানিতে কীভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রজাতান্ত্রিক সরকার স্থাপিত হয়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির শোচনীয় পরাজয়ের ফলে জার্মানিতে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম হল্যান্ডে পালিয়ে গেলে রাজতন্ত্রের পতন সূচিত হয়। এই পরিস্থিতিতে সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রেডরিখ ইবার্টের নেতৃত্বে Socialist Republican Party রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে একটি সাময়িক প্রজাতান্ত্রিক সরকারের প্রতিষ্ঠা করে।

‘ভাইমার প্রজাতন্ত্র’ কী?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর জার্মানির বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রেডরিখ ইবার্ট -এর নেতৃত্বে ‘সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান দল’ রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে জার্মানিতে সাময়িকভাবে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। বার্লিনের নিকটবর্তী ভাইমার শহরে এই প্রজাতান্ত্রিক সরকারের কর্মকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় বলে এই প্রজাতন্ত্রকে ‘ভাইমার প্রজাতন্ত্র’ বলা হয়।

কখন, কোথায় ‘ভাইমার প্রজাতন্ত্র’ স্থাপিত হয়? এর নামকরণ কীভাবে হয়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম পর্বে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের ফলে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম হল্যান্ডে পালিয়ে যান। ফলে 1918 খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে অস্থায়ী প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়। বার্লিনের কাছে ভাইমার নামক একটি স্থানে গণপরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করেন। এই জন্য এই প্রজাতন্ত্র ‘ভাইমার প্রজাতন্ত্র’ নামে পরিচিত হয়।

ভাইমার প্রজাতন্ত্রের শাসনতান্ত্রিক কাঠামোটি আলোচনা করো।

1918 খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রশাসনের শীর্ষে ছিলেন রাষ্ট্রপতি। আইনসভা ছিল দুকক্ষবিশিষ্ট। 20 বছরের বেশি বয়স্ক প্রত্যেক নাগরিক ভোটদান করে রাষ্ট্রপতি ও আইনসভার সদস্যদের নির্বাচিত করতেন।

‘ক্যাপ পুটস’ কী?

‘পুটস’ কথার অর্থ হলো আকস্মিকভাবে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা। জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে 1920 খ্রিস্টাব্দে উলফগ্যাং ক্যাপ নামে এক সামরিক কর্মচারীর নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর একটি অংশ বার্লিন দখল করে সমগ্র জার্মানির ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল। একেই ‘ক্যাপ পুটস’ বলা হয়।

ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতনের কারণগুলি কী ছিল?

ভাইমার প্রজাতন্ত্রের অপমানজনক ভার্সাই সন্ধি অনুমোদন, কোনো বৃহৎ দলের সমর্থন লাভে ব্যর্থতা এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক দুর্দশা ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতনকে ত্বরান্বিত করে।

‘নাৎসিবাদ’ কী?

জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি রাজনৈতিক মতবাদের নাম নাৎসিবাদ। নাৎসিবাদ হল উগ্র জাতীয়তাবাদী, জাতিবিদ্বেষী, সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি একদলীয় একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থা ও একটি সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী মতবাদ। এটি ফ্যাসিবাদের সমতুল্য।

নাৎসি দলের উদ্ভবের রাজনৈতিক কারণ কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে বিজয়ী মিত্রপক্ষ ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির উপর বিশাল অঙ্কের আর্থিক, সামরিক ও ভৌগোলিক ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেয়। এই অপমানজনক শর্তের প্রতিকারে প্রজাতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতা নাৎসি দলের উদ্ভবের পিছনে প্রধান রাজনৈতিক কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছিল।

নাৎসি দলের উদ্ভবের অর্থনৈতিক কারণ কী ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো জার্মানিতেও মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যাভাব, বেকারত্ব, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দুষ্প্রাপ্যতা, শিল্প ধর্মঘট চরম আকার ধারণ করে। এই সকল সমস্যার সমাধানে প্রজাতান্ত্রিক সরকারের ব্যর্থতার সময়ে নাৎসি দলের নেতা হিটলারের কর্মসূচি জার্মানির মানুষের মনে আশার আলো জাগিয়েছিল।

‘বিয়ার হল অভ্যুত্থান’ কী?

1923 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে হিটলার জেনারেল লুডেনডর্ফের সহায়তায় বলপূর্বক ভাইমার প্রজাতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে জার্মানির শাসনক্ষমতা হস্তগত করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনা ‘বিয়ার হল অভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত। এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয় এবং দেশদ্রোহিতার অপরাধে হিটলার কারারুদ্ধ হন।

নাৎসি দলের উদ্ভবে কি কোনো জাতিবিদ্বেষ কাজ করেছিল?

নাৎসি দলের নেতা হিটলারের ইহুদি বিদ্বেষ নীতি জার্মানিবাসীদের মধ্যে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। জার্মানরা ছিল টিউটন জাতিগোষ্ঠীর লোক এবং ইহুদিরা ছিল অন্য গোষ্ঠীভুক্ত। জার্মানির অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের অনেকেই ছিলেন ইহুদি। হিটলার জার্মান জাতির এই দুরবস্থার জন্য ইহুদিদের দায়ী করলে টিউটনরা সহজেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়।

নাৎসি দল কেন জার্মানিতে জনপ্রিয় হয়?

অথবা, হিটলারের উত্থানের কারণ কী ছিল?

ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতা, আর্থিক দুর্বলতা ইত্যাদি নানা সংকটে জার্মানি যখন জর্জরিত তখন জার্মানিতে হিটলার এক আশাবাদী পরিকল্পনা জনসম্মুখে তুলে ধরেন। এই পরিকল্পনায় – ভার্সাই সন্ধি বাতিল, শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গঠন, জার্মান শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও বেকারদের কর্মসংস্থান, জার্মান ভাষাভাষীদের ঐক্যবদ্ধ করে বৃহৎ রাষ্ট্রগঠন ইত্যাদি বলা হয়েছিল। হিটলারের অসাধারণ বাগ্মিতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর এবং নাৎসি দলের প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধি পায়, ফলে নির্বাচনে নাৎসি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।

হেরেনভক তত্ত্ব কী?

নাৎসি দলের প্রতিষ্ঠাতা হিটলার মনে করতেন যে, জার্মানরাই একমাত্র আর্যজাতি এবং বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী। অন্যান্য সব জাতিই বর্ণসংকর। সুতরাং শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে জার্মানরা বিশ্বের অন্যান্য জাতির উপর আধিপত্য স্থাপনের অধিকারী। এই তত্ত্বই হেরেনভক তত্ত্ব নামে পরিচিত।

‘স্টর্ম ট্রুপার্স’ বা ‘ব্রাউন শার্টস’ কাদের বলা হত?

নাৎসি দলের আধা-সামরিক ঝটিকাবাহিনীর নাম ছিল ‘স্টর্ম ট্রুপার্স’। এই বাহিনী নাৎসি দলের সভাসমিতিগুলি পাহারা দিত এবং হামলা চালিয়ে অন্য দলের সমিতিগুলি ভেঙে দিত। এই বাহিনীর সদস্যরা বাদামি রঙের পোশাক পরত বলে, এদের ব্রাউন শার্টস বলা হত।

নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট দলের মতবাদের মধ্যে মিল কোথায়?

হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দল জার্মানিতে এবং মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালিতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল।

  • হিটলারের নাৎসি ও মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট দলের মতবাদ ছিল গণতন্ত্রবিরোধী ও একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী।
  • উভয়ের মতবাদ ছিল সাম্রাজ্যবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী।

গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের দুটি পার্থক্য বিবৃত করো।

গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের দুটি পার্থক্য হল –

  • শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি – গণতন্ত্র হল জনগণের মতের উপর প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা আর ফ্যাসিবাদ হল রাষ্ট্রনায়কের ইচ্ছায় পরিচালিত শাসনব্যবস্থা।
  • বিরোধী দল – গণতন্ত্রে শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী মতবাদে শাসনব্যবস্থায় বিরোধী দলের কোনো ভূমিকা নেই।

নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।

নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে সাদৃশ্য থাকলেও অনেকগুলি পার্থক্যও লক্ষ করা যায়। যেমন –

  • নাৎসিবাদ যতটা ইহুদিবিরোধী ছিল ফ্যাসিবাদ ততটা ইহুদিবিরোধী ছিল না।
  • ইতালির অর্থনীতিতে স্বয়ম্ভরতা আনতে ও বেকারত্ব দূর করতে ফ্যাসিবাদ ব্যর্থ হলেও জার্মানির ক্ষেত্রে নাৎসিবাদ এই বিষয়ে সফল হয়েছিল।

স্পেনের গৃহযুদ্ধ কী?

স্পেনের দুর্বল প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে 1936 খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে যে ভয়াবহ সংঘর্ষের সূচনা হয়, তা ‘স্পেনের গৃহযুদ্ধ’ নামে খ্যাত। দীর্ঘদিন যুদ্ধ চলার পর 1939 খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্কো স্পেনে প্রজাতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।

স্পেনে গৃহযুদ্ধ কেন ঘটেছিল?

1936 খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে জয়লাভ করে বামপন্থীরা স্পেনে সরকার গঠন করে। সরকারের প্রতি আনুগত্যের অভাব সন্দেহ করে বামপন্থীরা বহু সামরিক কর্মচারীকে পদচ্যুত করেন ও বহুজনকে বলপূর্বক অবসর নিতে বাধ্য করেন। রাজতন্ত্রের সমর্থক সন্দেহে অনেককে দূরবর্তী স্পেনীয় উপনিবেশে বদলির ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে যাজক, উগ্র প্রজাতন্ত্রী ও রাজতন্ত্রী বিক্ষুব্ধ সেনাবাহিনীকে উসকানি দিলে 1936 খ্রিস্টাব্দে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী বিদ্রোহ করে।

স্পেনের গৃহযুদ্ধের দুটি পক্ষ কারা ছিল?

স্পেনের গৃহযুদ্ধের দুটি পক্ষ ছিল –

  • সরকার পক্ষ – কমিউনিস্ট, সমাজতন্ত্রী ও প্রজাতন্ত্রীরা প্রজাতান্ত্রিক সরকারের পক্ষ।
  • বিদ্রোহী পক্ষ – জাতীয়তাবাদী নামে পরিচিত ফ্যালানজিস্ট, ন্যাশনালিস্ট প্রমুখ দক্ষিণপন্থী দল ছিল বিদ্রোহী পক্ষ।

স্পেনের গৃহযুদ্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কী ভূমিকা ছিল?

স্পেনের গৃহযুদ্ধে –

  • জার্মানির হিটলার ও ইতালির মুসোলিনি স্পেনের বিদ্রোহী নেতা জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে সমর্থন করেন।
  • রাশিয়া স্পেনের প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন করে।
  • ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে।

স্পেনীয় গৃহযুদ্ধে ফ্রাঙ্কোর জয়লাভের কারণ কী ছিল?

শক্তি ও সামর্থ্যের দিক থেকে স্পেনের প্রজাতান্ত্রিক সরকার ও জাতীয়তাবাদীরা প্রায় সমকক্ষ ছিল। তবে ফ্রাঙ্কো জার্মানি ও ইতালির থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধোপকরণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রচুর সাহায্য পেয়েছিলেন। অপরদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নিরপেক্ষতার নীতি, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ না করার নীতি ইত্যাদি ফ্রাঙ্কোর জয়লাভে বড় ভূমিকা পালন করেছিল।

স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলাফল কী হয়েছিল?

স্পেনের গৃহযুদ্ধের অবসানে ফ্রাঙ্কো স্পেনে একনায়কতন্ত্র স্থাপনে উদ্যোগী হন। স্পেনে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীলতার জয় সূচিত হয়। ক্যাথলিক ধর্ম রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা পায়। পররাষ্ট্রনীতিতে স্পেন ফ্যাসিস্ট শক্তি দুটির অনুগামী হয়, জার্মানির সঙ্গে অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষর করে জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে।

স্পেনীয় গৃহযুদ্ধ কি ফ্যাসিবাদ বনাম সাম্যবাদের সংঘর্ষ ছিল?

হিটলার ও মুসোলিনি স্পেনীয় গৃহযুদ্ধকে ফ্যাসিবাদ বনাম সাম্যবাদের সংঘর্ষ বলেছেন। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এটি ছিল গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী একনায়কতন্ত্রের, সমাজতন্ত্রবাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের আদর্শগত সংঘাত। এই সংঘাতে সামরিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ বেশি জড়িত ছিল। সাম্যবাদের ভীতিতে ভীত ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে বিভ্রান্ত করার জন্য হিটলার ও মুসোলিনি এই আদর্শগত সংঘাতের চিত্র তুলে ধরেছিলেন।


আজকে এই আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায়, “বিংশ শতকে ইউরোপ” এর কিছু “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, টেলিগ্রামে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি। এছাড়া, এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নবম শ্রেণী ইতিহাস - প্রাককথন: ইউরোপ ও আধুনিক যুগ

নবম শ্রেণী ইতিহাস – প্রাককথন: ইউরোপ ও আধুনিক যুগ

নবম শ্রেণী ইতিহাস - বিপ্লবী আদর্শ,নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ - বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী ইতিহাস – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী ইতিহাস - বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ - অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

নবম শ্রেণী ইতিহাস – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রতিসরণ কোণ কাকে বলে? কাচফলকে প্রতিসরণের ফলে আলোকরশ্মির চ্যুতি হয় না কেন?

একটি প্রিজমের i-δ লেখচিত্র আঁকো, যেখানে i হল আপতন কোণ ও δ হল চ্যুতিকোণ।

উত্তল লেন্স এবং অবতল লেন্স কয়প্রকার ও কী কী?

আলোকের বিক্ষেপণ কাকে বলে? র‍্যালের বিক্ষেপণ সূত্রটি লেখো।

রেখাচিত্রের সাহায্যে লেন্স দ্বারা প্রতিবিম্ব গঠনের নিয়মাবলি গুলি লেখো।