এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – বল ও গতি – নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র – প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় “বল ও গতি” এর “নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

নবম শ্রেণী-ভৌতবিজ্ঞান-বল ও গতি-নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র-প্রশ্ন ও উত্তর

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

Contents Show

নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রটি বিবৃত ও ব্যাখ্যা করো।

নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র – প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

ব্যাখ্যা – প্রকৃতিতে প্রতিটি বলেরই একটি সমান ও বিপরীত বল থাকে যার একটিকে ক্রিয়া বলা হলে অপরটিকে তার প্রতিক্রিয়া বলে চিহ্নিত করা হয়।

ধরা যাক, A ও B দুটি বস্তু পরস্পর প্রত্যক্ষ সংযোগ বা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় A বস্তু, B -এর উপর \(\overrightarrow{F_{AB}}\) মানের বল প্রয়োগ করলে B বস্তুও একই মুহূর্তে A বস্তুর উপর একটি সমান ও বিপরীতমুখী বল \(\overrightarrow{F_{BA}}\) প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ, \(\overrightarrow{F_{AB}}=-\overrightarrow{F_{BA}}\)। ‘-‘ চিহ্ন নির্দেশ করে বলদ্বয়ের ক্রিয়ারেখা পরস্পর বিপরীতমুখী।

নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রটি বিবৃত ও ব্যাখ্যা করো।

নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রটি থেকে কী কী বিষয় জানা যায়?

তৃতীয় সূত্র থেকে দুটি বিষয় জানা যায় –

  • ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধারণা
  • ভরবেগ সংরক্ষণ সূত্র

ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া কাকে বলে? এদের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

ক্রিয়া (Action) ও প্রতিক্রিয়া (Reaction) – আন্তঃক্রিয়া (Interaction) ঘটানোর সময় দুটি বস্তু পরস্পরের উপর যে সমান ও বিপরীত যুগপৎ বল প্রয়োগ করে, তার যে-কোনো একটিকে ক্রিয়া বিবেচনা করলে, অন্যটিকে তার প্রতিক্রিয়া বলা হয়।

ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ – দেয়ালের গায়ে একটি বল ছুঁড়লে সেটি বিপরীত দিকে আবার বলনিক্ষেপকারীর হাতে ফিরে আসে। বলটি দেয়ালে আঘাত করার সময় যে বল প্রয়োগ করে সেটি ক্রিয়া হলে, দেয়াল যে সমমাত্রার বল প্রয়োগ করে তাকে ফিরিয়ে দেয়, তা হল প্রতিক্রিয়া।

ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য –

  • ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দুটি সমমাত্রার বল, যারা একই রেখা বরাবর পরস্পর বিপরীত অভিমুখে সক্রিয় হয়।
  • ক্রিয়া ছাড়া প্রতিক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া ছাড়া ক্রিয়ার অস্তিত্ব থাকে না, যা নির্দেশ করে যে প্রকৃতিতে বিচ্ছিন্ন বলের কোনো অস্তিত্ব নেই।
  • ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সর্বদা একই সময়ের জন্য স্থায়ী হয়।
  • দুটি বলই যুগপৎ ক্রিয়াশীল হয়, আগে পরে নয় এবং এদের কখনোই নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা (অর্থাৎ, বিশেষ একটি বলই ক্রিয়া ও অন্যটি প্রতিক্রিয়া) যায় না।
  • এই দুটি বল সর্বদা দুটি ভিন্ন বস্তুর উপর কাজ করে। তাই এরা কখনোই পরস্পরকে প্রশমিত (balance) করতে সক্ষম হয় না এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়।

একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার সাহায্যে প্রমাণ করো ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীত।

ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যে পরস্পর সমান ও বিপরীত তা নীচের সরল পরীক্ষা ব্যবস্থাটির সাহায্যে প্রমাণ করা যায় –

পরীক্ষা পদ্ধতি –

  • দুটি স্প্রিং তুলা নিয়ে তাদের হুক দুটির একটিকে অন্যটির সঙ্গে আটকে হাত দিয়ে বিপরীত দিকে সমান বল প্রয়োগ করে টানা হল।
  • এবার একটি তুলাকে আংটার সাহায্যে দেয়ালে শক্ত করে আটকে তার অন্য প্রান্তে দ্বিতীয় তুলাটির একপ্রান্ত (চিত্রের মতো) যুক্ত করে অন্য প্রান্তে আগের মতোই হাত দিয়ে টানা হল।
  • প্রত্যেক ক্ষেত্রে টান বাড়িয়ে বা কমিয়ে স্প্রিং তুলার সূচক কী পাঠ দেয় তা লক্ষ করা হল।

পর্যবেক্ষণ – দেখা গেল, প্রত্যেকক্ষেত্রেই সূচকটি একইসঙ্গে পরস্পর বিপরীত অভিমুখে গতিশীল হচ্ছে এবং সচল থাকার প্রত্যেক মুহূর্তে দুটিরই সূচক একই পাঠ দেখাচ্ছে।

সিদ্ধান্ত –

  • সূচক দুটির একই সঙ্গে গতিশীল হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া একই সঙ্গে কিন্তু দুটি ভিন্ন বস্তুতে ক্রিয়াশীল হয়।
  • পরস্পর বিপরীত অভিমুখে সূচক দুটির চলাচল প্রমাণ করে যে, দুটি বলের অভিমুখ পরস্পর বিপরীত।
  • প্রত্যেক মুহূর্তে সূচক দুটির পাঠ সমান – এই পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া মানগতভাবে সমান।
একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার সাহায্যে প্রমাণ করো ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীত।

বোধমূলক প্রশ্নোত্তর

নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত দুটি চুম্বকের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল কাজ করে। – নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

A ও B দুটি দণ্ডচুম্বকের সমমেরু (উত্তর/ দক্ষিণ) মুখোমুখি অবস্থায় পরস্পরের কাছাকাছি বা নির্দিষ্ট করে বললে ওদের চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে রাখা হল। এতে দুটি মেরুর প্রত্যেকটিই নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুসারে একে অন্যের উপর পরস্পর বিপরীত অভিমুখে সমমানের চৌম্বক বল প্রয়োগ করে।

এই বল দুটির যে-কোনো একটিকে ক্রিয়া বলা হলে অন্যটি হয় তার প্রতিক্রিয়া। এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কারণেই মেরুদুটি পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়। ঘটনাটিকে বলা হয় বিকর্ষণ (Repulsion)।

একইভাবে দুটি চুম্বকের বিপরীত মেরুদ্বয় পরস্পর নিকটবর্তী হলে চৌম্বকক্ষেত্র মেরুদুটির উপর সমান ও বিপরীত বল এমনভাবে প্রয়োগ করে যে, মেরুদ্বয় পরস্পরের আরও কাছে আসে। এক্ষেত্রে ঘটনাটিকে বলা হয় আকর্ষণ (Attraction)।

সুতরাং, চৌম্বক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার কারণেই সংঘটিত হয়ে থাকে।

নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত দুটি চুম্বকের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল কাজ করে। - নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ বল কাজ করে। – নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

সূর্য ও পৃথিবী উভয়েই পরস্পরের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থান করায় একে অন্যের উপর মহাকর্ষীয় বল প্রয়োগ করে। নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুযায়ী এই বল দুটি সমান ও বিপরীতমুখী হয় যাদের একটিকে ক্রিয়া বলা হলে অন্যটি হয় তার প্রতিক্রিয়া।

বলদুটি মানগতভাবে সমান হলেও পৃথিবীর ভর কম হওয়ায় তার উপর সূর্যের দেওয়া মহাকর্ষীয় বলের প্রভাব অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাই এই বল পৃথিবীতে অভিকেন্দ্র ত্বরণ সৃষ্টি করে এবং ক্রিয়াশীল এই অভিকেন্দ্র বলের প্রভাবে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে বৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করতে বাধ্য হয়।

∴ সূর্য ও পৃথিবীর পারস্পরিক আকর্ষণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নীতির একটি পরিচিত দৃষ্টান্ত বলে বিবেচনা করা যায়।

ক্রিকেট খেলায় ব্যাট ও বলের সংঘাত খুবই অল্প সময়ের জন্য হলেও ব্যাটের আঘাতে বল অল্প সময়ে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে থাকে। – নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র অনুসারে, \(F=\frac{\Delta p}{\Delta t}\) অর্থাৎ \(\Delta p=F⋅\Delta t\)। সুতরাং, বৃহৎ মানের বল অতি অল্প সময়ের জন্য ক্রিয়াশীল হয়েও কোনো বস্তুতে যথেষ্ট বেশি পরিমাণ ভরবেগের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম।

ক্রিকেট খেলায় ব্যাট ও বলের সংঘাত খুবই অল্প সময়ের জন্য হলেও ব্যাটের আঘাতে বল অল্প সময়ে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে থাকে। - নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

তাই সংঘাতকাল অল্প হলেও ব্যাটের দ্বারা প্রযুক্ত বল যথেষ্ট বেশি হওয়ায় ক্রিকেট বলে সঞ্চারিত ভরবেগ অনেক বেশি হয়। ফলে, সেটি অল্প সময়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।

কাচের পাত্র শক্ত (সিমেন্ট বা পাথরের) মেঝেতে পড়লে ভেঙে যায়, কিন্তু বালি বা কার্পেটের উপর পড়লে অক্ষত থাকে। – নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে কোনো কাচপাত্র সিমেন্টের বা পাথরের মেঝেতে পড়লে মেঝেতে আঘাত করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অর্থাৎ, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেটি স্থিরাবস্থায় আসে। সুতরাং, \(F=\frac{\Delta p}{\Delta Tt}\) সমীকরণ অনুসারে, কাচপাত্র ওই মেঝেতে যথেষ্ট বেশি মানের বল প্রয়োগ করে যার আঘাতে পাত্রটি ভেঙে যায়।

কার্পেট বা বালিতে পতনের ক্ষেত্রে পাত্রটি স্থিরাবস্থায় আসতে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সময় নেয়। ফলে, কার্পেট বা বালি দ্বারা প্রযুক্ত বলের মানও যথেষ্ট কম হয়। এ কারণে পাত্রটি অক্ষত থাকে।

ছিপে গাঁথা মাছ জল থেকে তোলার সময় ছিপ বেঁকে যায়। – নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

ছিপে গাঁথা মাছ জল থেকে তোলার সময় ছিপ বেঁকে যায়। বঁড়শিতে আটকে পড়া মাছ ঝুলন্ত অবস্থায় যখন থাকে তখন ছিপ সুতোর মাধ্যমে মাছের উপর বল প্রয়োগ করে। এই বলের (ক্রিয়া) সমপরিমাণ বল সুতোর উপর বিপরীত অভিমুখে টান হিসেবে কাজ করে, যা ছিপকে বাঁকিয়ে দেয়।

নৌকার আরোহী যখন লাফ দিয়ে পাড়ে নামে, তখন নৌকাটি পিছনে সরে যায়। – নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

তীরে পৌঁছানো নৌকার আরোহী নৌকা থেকে লাফিয়ে পাড়ে আসতে চাওয়ার উদ্দেশ্যে নৌকার ওপর তীরভূমির বিপরীত দিকে অর্থাৎ, নদীর দিকে বল প্রয়োগ করে। একে ক্রিয়া বলে বিবেচনা করা হলে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে নৌকাটিও আরোহীর ওপর বিপরীত অভিমুখে (অর্থাৎ, তীরভূমি অভিমুখে) সমমানের বল প্রয়োগ করে যা আরোহীকে সামনে এগিয়ে দেয়।

নৌকার আরোহী যখন লাফ দিয়ে পাড়ে নামে, তখন নৌকাটি পিছনে সরে যায়। - নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

সুতরাং, নৌকার উপর আরোহী দ্বারা প্রযুক্ত বল (ক্রিয়া) নৌকাটিকে পিছনে ঠেলে দেয় যার প্রতিক্রিয়া আরোহীকে তীরে পৌঁছোতে সাহায্য করে।

বায়ুশূন্য স্থানে পাখি উড়তে পারে না কেন?

পাখি ওড়ার সময় ডানা দিয়ে ডানার নীচের বায়ুতে বল প্রয়োগ করে। ফলে বায়ুও ডানার ওপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলের জন্যই পাখি উড়তে পারে। কিন্তু বায়ুশূন্য স্থানে পাখি ডানা ঝাপটালেও কোনো ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া বল সৃষ্টি হয় না। তাই বায়ুশূন্য স্থানে পাখি উড়তে পারে না।

গাছ থেকে আপেল মাটিতে এসে পড়ে। পৃথিবী আপেলের দিকে এগিয়ে যায় না কেন?

অভিকর্ষ বলের জন্য পৃথিবী আপেলকে নিজের দিকে টানে। নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুযায়ী, আপেলও পৃথিবীকে নিজের দিকে টানে। কিন্তু আপেলটিই পৃথিবীর দিকে এগোয় পৃথিবী আপেলের দিকে এগোয় না। কারণ – বল = ভর × ত্বরণ হওয়ায় একই বলের জন্য ভর বেশি হলে ত্বরণ কম হয়। পৃথিবী আপেলের তুলনায় বহুগুণ ভারী বলে পৃথিবীর ত্বরণ এতটাই কম হয় যে তা সহজে মাপা যায় না। তাই পৃথিবী আপেলের দিকে আসে না। কিন্তু আপেলের ভর খুব কম বলে আপেলটিই ত্বরণসহ পৃথিবীর দিকে সরে আসে অর্থাৎ, মাটিতে এসে পড়ে।

ক্রিকেট বল ধরার সময় খেলোয়াড় হাতকে পিছনদিকে টেনে নেয় কেন?

ক্যাচ ধরার সময় বলটি যখন খেলোয়াড়ের হাতে আঘাত করে তখন হাতটিও তৃতীয় সূত্রের নির্দেশনা মেনে বলটির ওপর একটি প্রতিক্রিয়া প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়ার জন্য বলটি যাতে হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে খেলোয়াড় বলটি তালুবন্দি করার সময় হাতটিকে সামান্য পিছিয়ে নেন। এর ফলে বলটি গতিহীন হতে সময় বেশি লাগে, ফলে বলটিতে সৃষ্ট মন্দনের মান কম হয়। এতে আঘাতের তীব্রতা হ্রাস পায় এবং কম প্রতিক্রিয়ার জন্য হাত থেকে বলটি ছিটকে বেরিয়ে যাওয়ায় সম্ভাবনাও কমে যায়।

মাঝিরা নৌকা চালানোর সময় লগি কাত করে মাটিতে চাপ দেয় কেন?

মাঝিরা নৌকা চালানোর সময় লগি কাত করে জলের তলদেশের মাটিতে চাপ দেয় অর্থাৎ তির্যকভাবে বল প্রয়োগ করে। মাটিও লগি বরাবর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল (R) প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলের উল্লম্ব উপাংশ (V) নৌকার ওজনের বিরুদ্ধে ক্রিয়া করে নৌকাকে জলে ভেসে থাকতে সাহায্য করে এবং অনুভূমিক উপাংশ (H) নৌকাটির সামনের দিকে গতি সৃষ্টি করে। এর ফলে নৌকাটি সামনের দিকে এগিয়ে চলে। লগিটি যত বেশি কাত করে মাটিতে চাপ দেয় প্রতিক্রিয়া বলের অনুভূমিক উপাংশের মান তত বেশি হওয়ায় নৌকার গতিবেগও তত বেশি হয়।

মাঝিরা নৌকা চালানোর সময় লগি কাত করে মাটিতে চাপ দেয় কেন?

ঘোড়া গাড়িকে যে বলে টানে, গাড়িও ঘোড়াকে সমান বলে বিপরীত দিকে টানে। তাহলে গাড়ি চলে কীভাবে?

ঘোড়া গাড়িকে যে বলে টানে, গাড়িও ঘোড়াকে সমান বলে বিপরীত দিকে টানে, তবুও গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে চলে। এর কারণ হল, ঘোড়া গাড়িকে টানার সময় পা দিয়ে মাটিতে তির্যকভাবে ক্রিয়া বল প্রয়োগ করে বলে ভাবা হলে, মাটিও ঘোড়ার পা বরাবর সমান ও বিপরীতমুখী একটি প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলের উল্লম্ব উপাংশ ঘোড়ার ওজন দ্বারা প্রতিমিত হয়, আর অনুভূমিক উপাংশ গাড়ির চাকা ও মাটির স্পর্শতলে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণবল অপেক্ষা বেশি হয়। তাই প্রতিক্রিয়া বলের অনুভূমিক উপাংশের প্রভাবেই ঘোড়া গাড়িটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুসারে কোনো বস্তুতে গতি সঞ্চার হয় কীভাবে?

অথবা, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান এবং বিপরীতমুখী হওয়া সত্ত্বেও সাম্য সৃষ্টি করে না কেন?

নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুযায়ী, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু ক্রিয়া বল ও প্রতিক্রিয়া বল কখনো একই বস্তুতে প্রযুক্ত হয় না। দুই বা ততোধিক বস্তু যদি একই সংস্থার অন্তর্গত হয় তবে সেই সংস্থা গঠনকারী বস্তুসমূহে প্রযুক্ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া অভ্যন্তরীণ বল হিসেবে কাজ করে। বাহ্যিক বল অনুপস্থিত থাকায় এদের প্রভাবে বস্তুগুলিতে গতি সৃষ্টি হয় না। তাই এই বল দুটি সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।

বিচ্ছিন্ন বস্তুসমূহের ক্ষেত্রে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল সংশ্লিষ্ট বস্তুগুলির উপর সক্রিয় অন্য বাধাদানকারী বল যেমন – প্রবাহীর বাধা, ঘর্ষণ, সান্দ্রতা ইত্যাদিকে অতিক্রম করতে সক্ষম হলে বস্তুগুলির যে-কোনো একটি বা সবগুলিই গতি লাভ করে। আবার বাধাদানকারী বলগুলির প্রভাব বেশি হলে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া গতি উৎপাদনে অসমর্থ হয়। একারণেই বস্তুতে গতি সঞ্চার হয়। যেমন – নৌকা থেকে পাড়ে নামার সময় আরোহী ও নৌকা উভয়েই গতিপ্রাপ্ত হয়। আবার ভারী ইটের দেয়ালকে কোনো ব্যক্তি ঠেলা দিলে ঘর্ষণের প্রভাব বেশি হওয়ার জন্য দেয়াল গতিশীল না হলেও তার দেওয়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিকে বিপরীতদিকে ঠেলে দেয়।

কোনো বইকে হাতের ক্রিয়া বলে ঠেললে সেটিও সমান প্রতিক্রিয়া দেয় তাহলে বইটি সরে যায় কেন? এইভাবে বড়ো পাথর সরে না কেন?

নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুসারে প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। তবে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল দুটি সমান ও বিপরীতমুখী হলেও এরা একে অন্যকে প্রশমিত করতে পারে না কারণ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কখনই একই বস্তুর ওপর প্রযুক্ত হয় না, দুটি ভিন্ন বস্তুর ওপর প্রযুক্ত হয়। এক্ষেত্রে, একটি বইকে হাতের আঙুলের সাহায্যে F (ক্রিয়া) বলে ঠেলা হল। ফলে বইটিও হাতের আঙুলের ওপর F প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ, ক্রিয়া বল বইটির ওপর এবং প্রতিক্রিয়া বল হাতের আঙুলের ওপর প্রযুক্ত হবে। বল প্রয়োগের ফলে বইটির ওপর আরও একটি বল কাজ করবে – সেটি হল ঘর্ষণ বল। সুতরাং, এই অবস্থায় বইটির ওপর দুটি বিপরীতমুখী বল কাজ করে – (a) প্রযুক্ত বল F এবং (b) টেবিল ও বইয়ের মধ্যকার ঘর্ষণ বল f1। প্রযুক্ত বলের মান ঘর্ষণ বলের সীমাস্থ মানের থেকে বেশি হলে বইটি চলতে শুরু করে।

বস্তুর ভর হল জাড্যের পরিমাপ। অর্থাৎ, যে বস্তুর ভর বেশি সেই বস্তুর জাড্য বেশি। বড়ো পাথরের ভর খুব বেশি হওয়ায় তার জাড্য ধর্ম খুব বেশি হয়। এছাড়াও ভূমি ও পাথরের মধ্যে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বলও এক্ষেত্রে খুব বেশি হয়, সেকারণে হাত দিয়ে পাথরের ওপর প্রযুক্ত বলের মান ভূমি দ্বারা প্রযুক্ত ঘর্ষণ বল অপেক্ষা কম হওয়ায় পাথর গতিশীল হয় না।

হাউইবাজিতে অগ্নিসংযোগ করলে সেটি উপরের দিকে উঠে যায় কেন?

অগ্নিসংযোগ করলে হাউই বাজির উপরে ওঠার ঘটনা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নীতি অবলম্বনে ব্যাখ্যা করা যায়। বাজিতে রাখা দাহ্য পদার্থের জ্বলনে উৎপন্ন দগ্ধ গ্যাস তীব্রবেগে ভূপৃষ্ঠ অভিমুখে পরিচালিত হয়ে মাটির উপর খাড়া লম্বভাবে উচ্চমানের ঘাতবল প্রয়োগ করে। এই বলের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ভূপৃষ্ঠ হাউই বাজির উপর একই মানের খাড়া ঊর্ধ্বমুখী বল দেয়। সুতরাং, ব্যবস্থাটি কার্যত একটি কৃত্রিম রকেটের তুল্য আচরণ করে এবং হাউই বাজি যথেষ্ট উচ্চমানের বেগসহ উপরে উঠে যায়।

একই উচ্চতা থেকে বালির উপর পড়লে কোনো ব্যক্তি যতটা আঘাত পায়, শক্ত মেঝের উপর পড়লে তার চেয়ে অনেক বেশি আঘাত সহ্য করতে হয় কেন?

স্তূপ গঠন করে থাকা বালির কণাগুলি অপেক্ষাকৃত আলগাভাবে পরস্পর সংযোগে থাকে। তাই নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে বালির উপরে পতিত হওয়ার পর ব্যক্তির দেহ বালির মধ্যে কিছু দূরত্বে প্রবেশ করে তারপর স্থির হয়। এর ফলে ব্যক্তির ভরবেগ হ্রাস পেয়ে শূন্য হতে যথেষ্ট সময় লাগে। তাই \(F=\frac{\triangle p}{\triangle t}\) সম্পর্ক ব্যবহার করে বলা যায় ∆t বৃদ্ধি পাওয়ায় F -এর মান হ্রাস পায়।

একই উচ্চতা থেকে ব্যক্তি শক্ত মেঝের উপর পড়লে মেঝের তল অত্যন্ত শক্ত হওয়ায় ওই তলের নিম্নমুখী সরণ নগণ্য হয়। স্বাভাবিকভাবেই ভূপতিত ব্যক্তির দেহের ভরবেগের একই পরিমাণ পরিবর্তন অনেক কম সময়ে ঘটে থাকে। সুতারং \(F=\frac{\triangle p}{\triangle t}\) সম্পর্ক নির্দেশ করে যে ∆t অত্যন্ত কম হওয়ায় F -এর মান অনেক বেশি হয়। তাই মেঝে বালির তুলনায় অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়। একারণেই বালির তুলনায় শক্ত মেঝেতে পড়লে আঘাত অনেক বেশি লাগে।

আমরা যখন হাঁটি তখন নিউটনের তৃতীয় সূত্র কীভাবে কাজ করে?

অনুভূমিক তলে হাঁটার সময় আমরা পায়ের সাহায্যে তির্যকভাবে মাটির ওপর বল প্রয়োগ করি। অনুভূমিক তলটিও পায়ের ওপর সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া ফিরিয়ে দেয়।

আমরা যখন হাঁটি তখন নিউটনের তৃতীয় সূত্র কীভাবে কাজ করে?

এই প্রতিক্রিয়া বল (R) -কে পরস্পর লম্বভাবে ক্রিয়াশীল দুটি উপাংশে বিভক্ত করা হলে উল্লম্ব উপাংশটি আমাদের ওজনকে প্রতিমিত করে। অনুভূমিক উপাংশটির মান গতির বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণজনিত বাধা অপেক্ষা বেশি হলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। অতএব, আমাদের নিজের দ্বারা প্রযুক্ত বল অর্থাৎ ক্রিয়া বল প্রত্যক্ষভাবে হাঁটতে সাহায্য করে না, বরং প্রযুক্ত বলের প্রতিক্রিয়ার সাহায্যেই আমরা হাঁটি।

দড়ি টানাটানি খেলায় দুই পক্ষই T ডাইন বল প্রয়োগ করলে দড়ির টান কত হবে?

ধরা যাক, প্রথম পক্ষ T বল প্রয়োগ করছে। ফলে নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র অনুযায়ী, দড়িও ওদের ওপর T বল প্রয়োগ করবে। অর্থাৎ, দড়ির টান T। একইভাবে দ্বিতীয় পক্ষের ক্ষেত্রেও দড়ির টান T, তাই দড়ির সর্বত্র টান T হবে।


আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় “বল ও গতি” এর “নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Share via:

মন্তব্য করুন