সাইটোকাইনিন হরমোনের উৎপত্তিস্থল কোথায়? সাইটোকাইনিন হরমোনের বৈশিষ্ট্য

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সাইটোকাইনিন হরমোনের উৎপত্তিস্থল কোথায়? এই হরমোনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সাইটোকাইনিন হরমোনের উৎপত্তিস্থল কোথায়? এই হরমোনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

সাইটোকাইনিন হরমোনের উৎপত্তিস্থল কোথায়? এই হরমোনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

সাইটোকাইনিন হরমোনের উৎপত্তিস্থল –

  • বর্ধনশীল ফল ও ভাজক কলার কোশ।
  • অপরিণত বীজ ও সস্য, যেমন – আম, আপেল, ভুট্টা, এ ছাড়াও নারকেলের তরল সস্য ও ভুট্টার সস্য।
  • পালং শাক ও পাইনের চারাতে।
  • Ginkgo biloba (জিঙ্কো বিলোবা)-র বীজে, কুলের ফুল ও ফলের নির্যাসেও সাইটোকাইনিন পাওয়া যায়।

সাইটোকাইনিনের বৈশিষ্ট্য –

  • সাইটোকাইনিন কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O), নাইট্রোজেন (N) দ্বারা গঠিত পিউরিন বর্গভুক্ত নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারীয় হরমোন যার রাসায়নিক নাম 6-ফুরফুরাইল অ্যামিনো পিউরিন; সংকেত-C10H9N5O।
  • সাইটোকাইনিন ব্যাপন প্রক্রিয়ায় উৎপত্তিস্থল থেকে সর্বমুখে পরিবাহিত হয়। পরিবহণ মূলত জাইলেম দ্বারা হয়।
  • এটি জলে দ্রাব্য এবং উৎপত্তিস্থল বা অন্যত্র কার্যকারী হয়।
  • সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের সাইটোকাইনেসিসে অংশ নেয়।
  • সাইটোকাইনিন সংশ্লেষ – অ্যাডেনিন → রাইবোজ মনোফসফেট → ইনোসিনিক অ্যাসিড → সাইটোকাইনিন।
  • কোশীয় সাইটোপ্লাজমে প্রোটিন সংশ্লেষের দ্বারা হরমোনটি কাজ করে আর কাজের শেষে সাইটোকাইনিন অক্সিডেজ উৎসেচকের ক্রিয়ায় হরমোনটি নষ্ট হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

সাইটোকাইনিন হরমোনের প্রধান কাজ বা ভূমিকা কী?

সাইটোকাইনিনের প্রধান কাজ হলো কোষ বিভাজন (সাইটোকাইনেসিস) উদ্দীপিত করা। এটি কোষ বৃদ্ধি, অঙ্কুরোদগম, পার্শ্বীয় কুঁড়ির বিকাশ, পাতা বুড়িয়ে যাওয়া (সিনেসেন্স) বিলম্বিত করা এবং পুষ্পায়নে সহায়তা করে।

সাইটোকাইনিন কি অন্য কোন হরমোনের সাথে সমন্বয়ে কাজ করে?

হ্যাঁ, সাইটোকাইনিন প্রায়ই অক্সিন হরমোনের সাথে সমন্বয়ে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাণ্ড ও শিকড়ের বিকাশে অক্সিন ও সাইটোকাইনিনের অনুপাত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, এটি জিব্বেরেলিন ও ইথিলিনের সাথেও মিথস্ক্রিয়া করে।

সাইটোকাইনিন হরমোনের প্রথম আবিষ্কার কীভাবে হয়েছিল?

সাইটোকাইনিন প্রথম আবিষ্কৃত হয় নারকেলের দুধ (এন্ডোস্পার্ম)-এ, যাতে কাইনেটিন নামক একটি সাইটোকাইনিন পাওয়া যায়। এটি কোষ বিভাজন ও বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে বলে পরীক্ষাগারে শনাক্ত করা হয়।

সাইটোকাইনিনের রাসায়নিক প্রকৃতি কী?

সাইটোকাইনিন একটি পিউরিন-ভিত্তিক যৌগ (অ্যাডেনিনের থেকে উদ্ভূত)। এর সাধারণ উদাহরণ হলো কাইনেটিন (6-ফুরফুরাইল অ্যামিনো পিউরিন) এবং প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এমন জিয়াটিন।

সাইটোকাইনিন কিভাবে পরিবাহিত হয়?

এটি মূলত জাইলেম টিস্যুর মাধ্যমে উর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী উভয় দিকে পরিবাহিত হয়। এর উৎপত্তিস্থল (মূলের অগ্রভাগ, অপরিণত বীজ) থেকে এটি পাতাসহ অন্যান্য অংশে পৌঁছায়।

সাইটোকাইনিন হরমোন নিষ্ক্রিয় হয় কিভাবে?

সাইটোকাইনিন অক্সিডেজ নামক এনজাইমের মাধ্যমে সাইটোকাইনিন ভেঙে যায়, যার ফলে এর কার্যকারিতা শেষ হয়।

কাইনেটিন এবং জিয়াটিনের মধ্যে পার্থক্য কী?

কাইনেটিন একটি সংশ্লেষিত (প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদে পাওয়া যায় না) সাইটোকাইনিন, যেটি প্রথম নারকেলের দুধে শনাক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে, জিয়াটিন প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদে (যেমন, ভুট্টার বীজে) পাওয়া যায় এমন একটি শক্তিশালী সাইটোকাইনিন।

সাইটোকাইনিনের অভাবে উদ্ভিদে কী লক্ষণ দেখা যায়?

সাইটোকাইনিনের অভাব হলে কোষ বিভাজন কমে যায়, পাতা দ্রুত বুড়িয়ে যায় (পীতবর্ণ ধারণ করে), পার্শ্বীয় কুঁড়ির বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং সামগ্রিক বৃদ্ধি মন্থর হতে পারে।

সাইটোকাইনিন ও অক্সিনের অনুপাতের গুরুত্ব কী?

সাইটোকাইনিন ও অক্সিনের অনুপাতের গুরুত্ব –
1. উচ্চ সাইটোকাইনিন – অক্সিন অনুপাত → পার্শ্বীয় কুঁড়ি/শাখা বৃদ্ধি হয়।
2. নিম্ন সাইটোকাইনিন – অক্সিন অনুপাত → মূল বৃদ্ধি উদ্দীপিত হয়।
3. এই অনুপাত টিস্যু কালচারে ক্যালাস গঠন এবং অঙ্গ সৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সাইটোকাইনিন হরমোনের উৎপত্তিস্থল কোথায়? এই হরমোনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

প্রাণী হরমোনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

প্রাণী হরমোনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

অক্সিন ও জিব্বেরেলিন কাকে বলে? অক্সিন ও জিব্বেরেলিনের একটি করে উৎসগত এবং দুটি করে কার্যগত পার্থক্য নির্দেশ করো।

অক্সিন ও জিব্বেরেলিন কাকে বলে? অক্সিন ও জিব্বেরেলিনের পার্থক্য

হরমোন ও উৎসেচক কাকে বলে? হরমোন ও উৎসেচকের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

হরমোন ও উৎসেচক কাকে বলে? হরমোন ও উৎসেচকের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রাণী হরমোনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

অক্সিন ও জিব্বেরেলিন কাকে বলে? অক্সিন ও জিব্বেরেলিনের পার্থক্য

হরমোন ও উৎসেচক কাকে বলে? হরমোন ও উৎসেচকের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

সাইটোকাইনিন হরমোন – কাজ, উদাহরণ ও ব্যবহারিক প্রয়োগ

কাইনিন কী? কাইনিনের উৎসস্থল কোথায়? কাইনিনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।