ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস কি? এদের মধ্যে পার্থক্য

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস কি? ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস কি? ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
Contents Show

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস কি?

ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes Mellitus) –

একে আমরা সাধারণ ভাষায় ‘সুগার’ বা ‘মধুমেহ’ রোগ বলি। এটি মূলত ইনসুলিন হরমোনের অভাবে হয়।

  • কারণ – যখন অগ্ন্যাশয় থেকে যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি হয় না অথবা শরীর ইনসুলিন কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না।
  • কী ঘটে – রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা বেড়ে যায়। শরীর সেই চিনি গ্রহণ করতে পারে না বলে তা প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়।
  • লক্ষণ –
    • প্রস্রাবে শর্করা বা চিনি থাকে (এ কারণে পিপড়া লাগতে পারে)।
    • ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং প্রচণ্ড পিপাসা ও ক্ষুধা অনুভূত হয়।
    • শরীরের ওজন কমে যায় এবং ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes Insipidus) –

এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি রোগ, যার সাথে রক্তে চিনির মাত্রার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি মূলত ADH (অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক হরমোন) -এর অভাবে হয়।

  • কারণ – মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে ADH হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে নিঃসৃত না হলে কিডনি জল ধরে রাখতে পারে না।
  • কী ঘটে – কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দেয়, ফলে শরীর দ্রুত জলশূন্যতা (Dehydration)-এর শিকার হয়।
  • লক্ষণ –
    • প্রচুর পরিমাণে ও ঘন ঘন প্রস্রাব হয় (প্রস্রাব অনেকটা স্বচ্ছ জলের মতো হয়)।
    • প্রস্রাবে কোনো চিনি থাকে না।
    • তীব্র জলের পিপাসা লাগে।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মধ্যে পার্থক্য –

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসডায়াবেটিস মেলিটাস
এই রোগটির জন্য অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন বা ADH হরমোনের কম ক্ষরণ দায়ী।এই রোগটির জন্য ইনসুলিনের কম ক্ষরণ দায়ী।
এই রোগে মূত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজ নির্গত হয় না।এই রোগে মূত্রের মাধ্যমে গ্লুকোজ নির্গত হয়।
বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মূত্রে কিটোন বডি থাকে না।মধুমেহ রোগীর মূত্রে গ্লুকোজ ও কিটোন বডি থাকে।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।হাইপারগ্লাইসেমিয়া পরিলক্ষিত হয় না।
মূত্রের আপেক্ষিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় না।মূত্রের আপেক্ষিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। 

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হলে কি রক্তে বা প্রস্রাবে চিনি/গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়?

না, একদমই না। ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের সাথে রক্তে বা প্রস্রাবে গ্লুকোজের মাত্রার কোনো সম্পর্ক নেই। এ রোগে রক্তে শর্করা স্বাভাবিক থাকে এবং প্রস্রাবে চিনি পাওয়া যায় না। রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়া শুধু ডায়াবেটিস মেলিটাসের লক্ষণ।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের কারণে কি ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস মেলিটাস (সুগার) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে?

না, বাড়ে না। দুটি রোগের জন্মগত কারণ, প্যাথলজি ও ঝুঁকি উপাদান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। একটির কারণে অন্যটি হওয়ার কোনো ঝুঁকি থাকে না।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও ডায়াবেটিস মেলিটাস কি একই রোগ?

না, এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন রোগ। দুটিরই লক্ষণে প্রচুর জল পিপাসা ও প্রস্রাব হয়, কিন্তু কারণ ও প্যাথলজি সম্পূর্ণ আলাদা। ডায়াবেটিস মেলিটাস ইনসুলিন হরমোনের সমস্যার সাথে সম্পর্কিত, অন্যদিকে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ADH (অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক) হরমোনের সমস্যার সাথে সম্পর্কিত।

“ডায়াবেটিস” শব্দটি উভয় রোগের নামে থাকলেও কেন?

“ডায়াবেটিস” একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ “সাইফন” বা “দিয়ে প্রবাহিত হওয়া”। এটি রোগীর অত্যধিক প্রস্রাব হওয়ার প্রধান লক্ষণটিকে নির্দেশ করে। ঐতিহাসিকভাবে প্রস্রাবের এই বৈশিষ্ট্যের কারণে দুটি ভিন্ন রোগের নামে “ডায়াবেটিস” শব্দটি যুক্ত হয়েছে। “মেলিটাস” অর্থ মধু (প্রস্রাবে চিনির উপস্থিতি নির্দেশ করে), আর “ইনসিপিডাস” অর্থ স্বাদহীন বা বিস্বাদ (প্রস্রাবে চিনির অনুপস্থিতি নির্দেশ করে)।

কিডনির সাথে কোন রোগটির সম্পর্ক বেশি?

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস সরাসরি কিডনির জল শোষণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, কারণ ADH হরমোনের অভাবে কিডনি জল ধরে রাখতে পারে না। অন্যদিকে, ডায়াবেটিস মেলিটাস দীর্ঘমেয়াদে কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে (ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি) যা কিডনি অকার্যকর হওয়ার একটি প্রধান কারণ।

প্রস্রাবে কিটোন বডি থাকে কোন রোগে?

ডায়াবেটিস মেলিটাসে (বিশেষ করে টাইপ-1 ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের মারাত্মক ঘাটতি হলে) শরীর শক্তির জন্য চর্বি ভাঙতে শুরু করে, ফলে রক্ত ও প্রস্রাবে কিটোন বডি তৈরি হয়, যা বিপজ্জনক। ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসে কিটোন বডি তৈরি হয় না।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস কি? ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ডায়াবেটিস মেলিটাসের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

মানবমস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান লেখো। অথবা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

স্নায়ু কী? স্নায়ুর অন্তর্গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

স্নায়ু কী? স্নায়ুর অন্তর্গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

স্নায়ু কী? স্নায়ুর অন্তর্গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

নিউরোনের কার্যগত প্রকারভেদগুলি লেখো। একজন ব্যক্তির মেডালা অবলংগাটা কোনো দুর্ঘনায় ক্ষতিগ্রস্থ হলে কী কী শারীবৃত্তীয় কার্য বিঘ্নিত হতে পারে?

গঠনগত পার্থক্যের ভিত্তিতে নিউরোনের শ্রেণিবিন্যাস করো।