এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ডিম্বাশয়কে ‘মিশ্রগ্রন্থি’ বলা হয় কেন? শুক্রাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ডিম্বাশয়কে ‘মিশ্রগ্রন্থি’ বলা হয় কেন?
ডিম্বাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ অর্থাৎ গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ও পীতগ্রন্থি থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয় এবং ডিম্বাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ থেকে অ্যাসিড ফসফাটেজ উৎসেচকটি ক্ষরিত হয়। ডিম্বাশয় ডিম্বাণুও উৎপন্ন করে। বহিঃক্ষরা এবং অন্তঃক্ষরা উভয় অংশের সমন্বয়ে গঠিত বলে ডিম্বাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলে।
শুক্রাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয় কেন?
শুক্রাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ অর্থাৎ লেডিগের আন্তরকোশ থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরিত হয়। অন্যদিকে শুক্রাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ অর্থাৎ সেমিনিফেরাস টিউবিউল থেকে শুক্রাণু নির্গত হয়। বহিঃক্ষরা এবং অন্তঃক্ষরা উভয় গ্রন্থির বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকার জন্য শুক্রাশয়কে ‘মিশ্রগ্রন্থি’ বলে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মিশ্রগ্রন্থি কাকে বলে?
যে গ্রন্থি একই সাথে অন্তঃক্ষরা (হরমোন নিঃসরণ) ও বহিঃক্ষরা (নালির মাধ্যমে রস/উৎসেচক বা কোষ নিঃসরণ) উভয় কার্য সম্পাদন করে, তাকে মিশ্রগ্রন্থি বলে।
ডিম্বাশয় এবং শুক্রাশয় ছাড়া মানব দেহে আর কোন মিশ্রগ্রন্থি আছে?
হ্যাঁ, অগ্ন্যাশয় একটি উল্লেখযোগ্য মিশ্রগ্রন্থি। এর আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স থেকে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন নিঃসরণ করে (অন্তঃক্ষরা) এবং অগ্ন্যাশয় রস নিঃসরণ করে (বহিঃক্ষরা)।
ডিম্বাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ কী কী হরমোন নিঃসরণ করে?
ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ইস্ট্রোজেন এবং পীতগ্রন্থি (কর্পাস লিউটিয়াম) থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরিত হয়।
শুক্রাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ কী কী হরমোন নিঃসরণ করে?
শুক্রাশয়ের লেডিগের কোষ (আন্তরকোশ) থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরিত হয়।
ডিম্বাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশের কাজ কী?
ডিম্বাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ পরিণত ডিম্বাণু নিঃসরণ করে। এছাড়া এটি কিছু উৎসেচকও নিঃসরণ করতে পারে (যেমন – অ্যাসিড ফসফাটেজ)।
শুক্রাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশের কাজ কী?
শুক্রাশয়ের সেমিনিফেরাস নালিকা থেকে শুক্রাণু উৎপন্ন ও নিঃসরণ হয়, যা একটি বহিঃক্ষরা কাজ।
মিশ্রগ্রন্থি বলতে কেন শুধু ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়কে বোঝায় না?
মিশ্রগ্রন্থি বলতে শুধু ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়কে বোঝায় না। অগ্ন্যাশয় প্রধান উদাহরণ। তবে প্রজননতন্ত্রের এই দুটি গ্রন্থি একই সাথে জনন কোষ (ডিম্বাণু/শুক্রাণু) ও যৌন হরমোন উৎপাদন করার কারণে আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায়।
“বহিঃক্ষরা” এবং “অন্তঃক্ষরা” গ্রন্থির মূল পার্থক্য কী?
“বহিঃক্ষরা” এবং “অন্তঃক্ষরা” গ্রন্থির মূল পার্থক্য –
1. বহিঃক্ষরা গ্রন্থি – এদের নালি থাকে। নালির মাধ্যমে এরা তাদের নিঃসৃত রস (যেমন – লালা, ঘাম, পাচকরস) বা কোষ (শুক্রাণু) নির্দিষ্ট স্থানে নিঃসরণ করে।
2. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি – এদের কোনো নালি থাকে না। এরা হরমোন সরাসরি রক্তে নিঃসরণ করে, যা রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন লক্ষ্য কোষে পৌঁছায়।
ডিম্বাশয় এবং শুক্রাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হলেও, এদের প্রধান কাজ কী?
এদের প্রধান কাজ হল যথাক্রমে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু উৎপাদন, যা প্রজননের জন্য অপরিহার্য। হরমোন নিঃসরণ একটি সমান্তরাল ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়া, যা দ্বিতীয়ীয় যৌন বৈশিষ্ট্য ও প্রজনন চক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
কেন কিছু গ্রন্থিকে শুধুমাত্র অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (যেমন থাইরয়েড, পিটুইটারি) বলা হয়?
কারণ এগুলো শুধুমাত্র হরমোন নিঃসরণ করে এবং এদের কোনো নালি নেই। এরা নিঃসৃত হরমোন সরাসরি রক্তে ছড়িয়ে দেয়। এরা কোন প্রকার রস, উৎসেচক বা জনন কোষ নালির মাধ্যমে নিঃসরণ করে না।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ডিম্বাশয়কে ‘মিশ্রগ্রন্থি’ বলা হয় কেন? শুক্রাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন