আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি পুরোনো বইয়ের আত্মকথা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

একটি পুরোনো বইয়ের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
কতকাল হয়ে গেল, আমি মানুষের হাতে-হাতে ঘুরে বেড়াই না। সকলে প্রথমটায় নেড়েচেড়ে দ্যাখে, তারপর আবার ফুটপাথে বইয়ের বান্ডিলগুলোর ওপর ছুড়ে ফেলে। আমি বই; তবে নতুন নই, পুরোনো, জীর্ণ।
আমার আত্মপ্রকাশ –
জন্মমাত্রেই কিন্তু আমার এই চেহারা ছিল না। একগুচ্ছ সাদা কাগজে অনেক লেখা, অনেক কাটাছেঁড়া, ত্রুটি সংশোধনের পর কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর রচনা সম্পূর্ণ করেন। একাধিক কবিতা লেখেন। তিনি এবং সবশেষে সেগুলি একত্র করে একটি অখন্ড কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের কথা চিন্তা করেন; নাম দেন – ‘সাগর থেকে ফেরা’। এভাবেই আমার নামকরণ করা হয়।
শুরুর দিনগুলি –
প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর এই বইয়ের জন্য বিপুল সংখ্যক কবিতা নির্বাচন করেননি; হাতে গোনা অথচ গুণগত মানে উৎকৃষ্ট কবিতা বেছেছিলেন। তাই আমি আকারে শীর্ণকায় হলেও গড়ে উঠেছিলাম কবির ভালোবাসায়। সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অসামান্য প্রচ্ছদ ও নিখুঁত মুদ্রণ। তাই সবমিলিয়ে আমি বিপুল জনসমাদর লাভ করেছিলাম।
ফেলে আসা দিনগুলি –
আমি কিন্তু বইটির প্রথম সংস্করণ নই, ষষ্ঠ সংস্করণ। প্রকাশিত হওয়ার পরেই গ্রন্থটি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার ও আরও নানান সম্মান অর্জন করার ফলে বাজারে এর কাটতি বেড়ে যায়। হু-হু করে বিকোতে থাকে বই। এরই মধ্যে অন্য একটি প্রকাশনা সংস্থা বইয়ের স্বত্ব কিনে নেয়। তাই আমি যে প্রকাশনালয় থেকে বেরিয়েছিলাম তার বিক্রিতে ভাটা পড়ে ও পুনর্মুদ্রণ বন্ধ হয়ে যায়।
আমার সুখ-দুঃখ –
আমার সুদীর্ঘ জীবনে আমি অনেক বিখ্যাত গবেষক, লেখক থেকে শুরু করে তোমাদের বয়সি পড়ুয়া, ছাত্রছাত্রীদের সান্নিধ্য পেয়েছি। বিভিন্ন কাব্যপাঠের আসরে অনেক আবৃত্তিকার যখন আমায় হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠে উদাত্ত কণ্ঠে একাধিক কবিতা পাঠ করতেন, তখন গর্বে আমার বুক ভরে উঠত। অনেক নিবিষ্ট পাঠক আমার পাতায় পাতায় পেনসিল বোলালে যন্ত্রণা নয়, বরং শব্দ ও পঙ্ক্তির গুরুত্ব, বাক্যের চমৎকারিত্ব তাদের খুশি করছে জেনে আমিও আহ্লাদিত হয়ে উঠতাম। আবার একটি স্থানীয় গ্রন্থাগারে যখন ঠাঁই পেয়েছিলাম তখন কেউ কেউ যখন শুরুর কিছু পাতা উলটে, ভালোভাবে একখানা কবিতাও না পড়ে আমায় ফেলে রেখে যেত তখন খুব দুঃখ হত। বই কতটা মজবুত সেদিকে নজর না দিয়ে অনেকে এই সেদিন পর্যন্তও ফোটোকপি করত। তাতে করে আমার বাঁধাইও আলগা হয়ে যেত, খসে পড়ত একাধিক পাতা। এতখানি আহ্লাদ-যন্ত্রণা, আনন্দ-অনাচার গায়ে মেখেই এখন আমি আলগা বাঁধাইয়ের, অনেকখানি পাতাবিহীন জীর্ণ, দীর্ণ বই।
উপসংহার –
তবে এখন আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই, থাকা উচিতও নয়। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কালজয়ী রচনা হিসেবে আমার নাম এখনও উচ্চারিত হয়, ভবিষ্যতেও হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সময়ের বিচারে সমস্ত বস্তুগত জিনিসই পুরোনো হয়; কিন্তু সৃষ্টি কখনও মলিন হয় না। তাই আমি বহিরঙ্গে পুরোনো হলেও ভেতরে এখনও সজীব, সতেজ। আমার মধ্যেই রয়েছে ‘জং’ নামের একটি অসামান্য কবিতা। আমার একাকী, নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলোয় আমি এখন সেটিই আওড়ে যাই –
“হাওয়া বয় শন শনয তারারা কাঁপেয হৃদয়ে কি জং ধরেয পুরানো খাপে?” …
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি পুরোনো বইয়ের আত্মকথা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি পুরোনো বইয়ের আত্মকথা’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন