আজকের আলোচনার বিষয় একটি পুরোনো বইয়ের আত্মকথা। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। এই রচনাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি बारবার পরীক্ষায় আসে। তাই, ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১২ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারার জন্য, এই রচনাটি মুখস্ত করে রাখা খুবই জরুরি।
এই রচনায়, আমরা একটি পুরোনো বইয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে তার জীবনযাত্রা, অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতিগুলো বর্ণনা করবো। বইটি কীভাবে তৈরি হয়েছিল, সে কোথায় ছিল, কারা কারা তাকে পড়েছে, এবং তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। এই রচনাটি শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিকই নয়, বরং এটি বেশ মনোরঞ্জক এবং চিন্তা-উদ্দীপকও হতে পারে।
একটি পুরোনো বইয়ের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
কতকাল হয়ে গেল, আমি মানুষের হাতে-হাতে ঘুরে বেড়াই না। সকলে প্রথমটায় নেড়েচেড়ে দ্যাখে, তারপর আবার ফুটপাথে বইয়ের বান্ডিলগুলোর ওপর ছুড়ে ফেলে। আমি বই; তবে নতুন নই, পুরোনো, জীর্ণ।
আমার আত্মপ্রকাশ –
জন্মমাত্রেই কিন্তু আমার এই চেহারা ছিল না। একগুচ্ছ সাদা কাগজে অনেক লেখা, অনেক কাটাছেঁড়া, ত্রুটি সংশোধনের পর কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর রচনা সম্পূর্ণ করেন। একাধিক কবিতা লেখেন। তিনি এবং সবশেষে সেগুলি একত্র করে একটি অখন্ড কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের কথা চিন্তা করেন; নাম দেন-‘সাগর থেকে ফেরা’। এভাবেই আমার নামকরণ করা হয়।
শুরুর দিনগুলি –
প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর এই বইয়ের জন্য বিপুল সংখ্যক কবিতা নির্বাচন করেননি; হাতে গোনা অথচ গুণগত মানে উৎকৃষ্ট কবিতা বেছেছিলেন। তাই আমি আকারে শীর্ণকায় হলেও গড়ে উঠেছিলাম কবির ভালোবাসায়। সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অসামান্য প্রচ্ছদ ও নিখুঁত মুদ্রণ। তাই সবমিলিয়ে আমি বিপুল জনসমাদর লাভ করেছিলাম।
ফেলে আসা দিনগুলি –
আমি কিন্তু বইটির প্রথম সংস্করণ নই, ষষ্ঠ সংস্করণ। প্রকাশিত হওয়ার পরেই গ্রন্থটি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার ও আরও নানান সম্মান অর্জন করার ফলে বাজারে এর কাটতি বেড়ে যায়। হু-হু করে বিকোতে থাকে বই। এরই মধ্যে অন্য একটি প্রকাশনা সংস্থা বইয়ের স্বত্ব কিনে নেয়। তাই আমি যে প্রকাশনালয় থেকে বেরিয়েছিলাম তার বিক্রিতে ভাটা পড়ে ও পুনর্মুদ্রণ বন্ধ হয়ে যায়।
আমার সুখ-দুঃখ –
আমার সুদীর্ঘ জীবনে আমি অনেক বিখ্যাত গবেষক, লেখক থেকে শুরু করে তোমাদের বয়সি পড়ুয়া, ছাত্রছাত্রীদের সান্নিধ্য পেয়েছি। বিভিন্ন কাব্যপাঠের আসরে অনেক আবৃত্তিকার যখন আমায় হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠে উদাত্ত কণ্ঠে একাধিক কবিতা পাঠ করতেন, তখন গর্বে আমার বুক ভরে উঠত। অনেক নিবিষ্ট পাঠক আমার পাতায় পাতায় পেনসিল বোলালে যন্ত্রণা নয়, বরং শব্দ ও পঙ্ক্তির গুরুত্ব, বাক্যের চমৎকারিত্ব তাদের খুশি করছে জেনে আমিও আহ্লাদিত হয়ে উঠতাম। আবার একটি স্থানীয় গ্রন্থাগারে যখন ঠাঁই পেয়েছিলাম তখন কেউ কেউ যখন শুরুর কিছু পাতা উলটে, ভালোভাবে একখানা কবিতাও না পড়ে আমায় ফেলে রেখে যেত তখন খুব দুঃখ হত। বই কতটা মজবুত সেদিকে নজর না দিয়ে অনেকে এই সেদিন পর্যন্তও ফোটোকপি করত। তাতে করে আমার বাঁধাইও আলগা হয়ে যেত, খসে পড়ত একাধিক পাতা। এতখানি আহ্লাদ-যন্ত্রণা, আনন্দ-অনাচার গায়ে মেখেই এখন আমি আলগা বাঁধাইয়ের, অনেকখানি পাতাবিহীন জীর্ণ, দীর্ণ বই।
উপসংহার –
তবে এখন আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই, থাকা উচিতও নয়। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কালজয়ী রচনা হিসেবে আমার নাম এখনও উচ্চারিত হয়, ভবিষ্যতেও হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সময়ের বিচারে সমস্ত বস্তুগত জিনিসই পুরোনো হয়; কিন্তু সৃষ্টি কখনও মলিন হয় না। তাই আমি বহিরঙ্গে পুরোনো হলেও ভেতরে এখনও সজীব, সতেজ। আমার মধ্যেই রয়েছে ‘জং’ নামের একটি অসামান্য কবিতা। আমার একাকী, নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলোয় আমি এখন সেটিই আওড়ে যাই –
“হাওয়া বয় শন শনয তারারা কাঁপেয হৃদয়ে কি জং ধরেয পুরানো খাপে?” …
এই আলোচনায়, আমরা একটি পুরোনো বইয়ের আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছি। এই ধরণের রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারার জন্য, একবার এই রচনাটি মুখস্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।
এই রচনা লেখার সময়, আমাদের বইটির জন্ম, লেখকের সাথে সম্পর্ক, বিভিন্ন পাঠকের হাত ধরে ভ্রমণ, জ্ঞান বিতরণ, অভিজ্ঞতা লাভ এবং বর্তমান অবস্থা – এই সকল বিষয় সাবলীল ভাষায় তুলে ধরতে হবে।
মনে রাখবেন, সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি এবং স্পষ্ট ভাব প্রকাশের মাধ্যমে আপনি আপনার রচনাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।