আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
“এই পথ যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হত তুমি বলোতো….”
ভূমিকা – এমন বাঙালি কমই আছেন, যাঁরা এই গানের সঙ্গে পরিচিত নন। এই গান বাঙালিয়ানার যে যুগের প্রতিভূস্বরূপ, সে যুগের অন্যতম প্রতিনিধি গ্রীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। যে নাম বাংলা আধুনিক ও ছায়াছবির গানের সমার্থক বললে অত্যুক্তি হবে না। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মানেই ‘এ শুধু গানের দিন, এ লগন গান শোনাবার…’; মাধুর্য, পরিপূর্ণতা, নিখুঁত পরিবেশন ও স্বকীয়তায় সমুজ্জ্বল গানের সাত দশকব্যাপী এক হিরণ্ময় সম্ভার।
জন্ম ও পরিচয় – 1931 সালের 4 অক্টোবর ঢাকুরিয়া, কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন রেলের পদাধিকারী ও সুগায়ক। মা হেমপ্রভা দেবী ছিলেন টপ্পা গায়িকা। বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিলেন সন্ধ্যা।
সন্ধ্যা সংগীতের তালিম নিতে শুরু করেন পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, পণ্ডিত এটি কানন ও পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ির তত্ত্বাবধানে। যদিও তাঁর প্রকৃত গুরু ছিলেন উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খান এবং পরে তাঁর পুত্র উস্তাদ মুনব্বর আলি খান। ভারতীয় মার্গ সংগীতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় দক্ষতা ও পরিচিতি দুই-ই অর্জন করেন। যদিও তাঁর কাজের সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে বাংলা আধুনিক ও ছায়াছবির গান।
কর্মজীবন – সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কর্মজীবনের শুরু মুম্বাইয়ে। তার আগে গানের প্রথম রেকর্ড বেরোয় 1945 সালে, দুর্গাপুজোর প্রথম অ্যালবাম 1948 সালে। ওই একই বছরে ‘সমাপিকা’ ছায়াছবিতে প্লেব্যাক গানে হাতেখড়ি। 1951 সালে হিন্দি ছবি ‘তরানা’-য় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ক্লাসিক ডুয়েট ‘বোল পাপিহে বোল’ গান দিয়ে শুরু করে তিনি ২৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে কাজ করেন। ব্যক্তিগত কারণে তিনি 1952 সালে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং সত্তর বছরব্যাপী কর্মজীবনের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন বাংলা গানের স্বর্ণযুগের অন্যতম প্রতিনিধি। দেশকালের সীমানা ছাড়িয়ে, বিশ্বময় লক্ষ লক্ষ বাঙালির কাছে এক রোমান্টিক যুগের সুরেলা কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বিশেষত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈত সংগীতে, উত্তম-সুচিত্রা জুটি যে যুগের মুখচ্ছবি। বাংলা ও প্রায় এক ডজন অন্যান্য ভাষা মিলিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কয়েক হাজার গান গেয়েছেন, যেগুলির সুরকারের তালিকায় রয়েছেন শচীন দেববর্মণ, নৌশাদ, মদন মোহন, অনীল বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী, রবীন চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ প্রমুখ দিকপাল সংগীত পরিচালকেরা।
এই কিংবদন্তি গায়িকার ভালো গানের তালিকা তৈরি করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। জনপ্রিয়তম গানের কয়েকটি হল – ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’, ‘আর ডেকো না এই মধু নামে’, ‘মধুমালতী ডাকে আয়’, ‘ওগো মোর প্রিয় বন্ধু, ‘গুন গুন মন ভ্রমরা’, ‘ও বক বকম পায়রা’, ‘যদি নাম ধরে তারে ডাকি’, ‘তুমি না হয় রহিতে কাছে’, ‘কে তুমি আমারে ডাক’, ‘হয়তো কিছুই নাহি পাব’, ‘মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা’, ‘জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া’ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ভারতীয় বাঙালি শিল্পীদের মধ্যে গণ আন্দোলনে যোগ দেন বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ব সচেতনতা গড়ে তুলতে। বাংলাদেশের গুপ্ত বেতারকেন্দ্র গড়ে তুলতেও তিনি নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বন্দি নেতা শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি উপলক্ষ্যে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি। স্বাধীন বাংলাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারির উদ্যাপন অনুষ্ঠানে 1971 সালে তিনিই ছিলেন ঢাকায় আমন্ত্রিত প্রথম বিদেশি শিল্পী।
পুরস্কার ও সম্মান – 2011 সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ প্রদান করে। অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (1999), ‘ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিমেল প্লেব্যাক সিংগার (1971), বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ডস (1972 ও 1965), অনরারি ডিলিট, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (2009)। 2022 সালে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। শিল্পী, বুদ্ধিজীবীমহল ও গায়িকার অগণিত সাধারণ ভক্তদের সিংহভাগ তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। তাঁদের মতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রতিভা ও সংগীতজগতে তাঁর বিশাল অবদানের নিরিখে 90 বছর বয়সে পদ্মশ্রী পুরস্কার যথার্থ স্বীকৃতি নয়।
উপসংহার – কোভিড থেকে সদ্য সুস্থ হয়েও 25 ফেব্রুয়ারি, 2022 হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেন সর্বকালের সেরা সংগীত শিল্পীদের অন্যতম গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন