এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের কার্যাবলি লেখো। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের কার্যাবলি লেখো।
ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হলো দুটি প্রধান নারী যৌন হরমোন। এগুলি ডিম্বাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এবং নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
ইস্ট্রোজেনের কার্যাবলী –
এটি প্রধান নারী যৌন হরমোন হিসেবে পরিচিত। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।
- নারীর বৈশিষ্ট্য – এটি নারীর শারীরিক গড়ন তৈরি করে, ত্বক নরম রাখে, কণ্ঠস্বর তীক্ষ্ণ করে এবং স্তনের বিকাশে উদ্দীপনা জোগায়।
- মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ – এটি ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুকে পরিপক্ক হতে সাহায্য করে এবং মাসিকের পর জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) গঠন করে।
- হাড়ের স্বাস্থ্য – এটি হাড়কে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে (মেনোপজের সময়) ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে নারীদের হাড় ক্ষয়ের (অস্টিওপরোসিস) ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- ত্বক ও চুল – এটি কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বককে স্থিতিস্থাপক এবং চুলকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে।
প্রোজেস্টেরনের কার্যাবলী –
একে প্রায়শই “গর্ভাবস্থার হরমোন” বলা হয়। ইস্ট্রোজেন জরায়ুর আস্তরণ তৈরি করলে, প্রোজেস্টেরন সেটিকে একটি শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
- গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুতি – এটি জরায়ুর আস্তরণকে আরও পুরু করে এবং রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়, যাতে একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু সফলভাবে প্রতিস্থাপিত হতে ও বাড়তে পারে।
- গর্ভপাত প্রতিরোধ – গর্ভাবস্থায় এটি জরায়ুর পেশী সংকোচন প্রতিরোধ করে, যা শরীরকে গর্ভাবস্থা প্রত্যাখ্যান করা (গর্ভপাত) থেকে বিরত রাখে।
- মাসিক নিয়ন্ত্রণ – যদি গর্ভাবস্থা না হয়, তবে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা দ্রুত কমে যায়। এই হ্রাসের ফলে জরায়ুর আস্তরণ ঝরে পড়ে, যার ফলে মাসিক রক্তস্রাব হয়।
- শরীরের তাপমাত্রা – ডিম্বস্ফোটনের পর এটি শরীরের ভিত্তিমূলক তাপমাত্রা সামান্য বাড়িয়ে দেয়।
ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।
ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য –
| ইস্ট্রোজেন | প্রোজেস্টেরন |
| স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের পরিণত গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ক্ষরিত হয়। | স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের করপাস লুটিয়াম বা পীতগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। |
| FSH -এর ক্ষরণ দ্বারা ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ প্রভাবিত হয়। | LH-এর ক্ষরণ দ্বারা প্রোজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ প্রভাবিত হয়। |
| স্ত্রীদেহে রজঃচক্রের আবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করে। | গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন রজঃচক্র বন্ধ রাখে এবং গর্ভাবস্থা বজায় রাখে। |
| জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের বৃদ্ধি ঘটিয়ে স্তরটিকে পুরু করে। | গর্ভাবস্থায় এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের পুরু গঠন বজায় রাখে। |
| ডিম্বাণু উৎপাদনে সাহায্য করে। | গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় কোনো ডিম্বাণুর পরিণতি প্রাপ্তিতে বাধা দেয়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন মূলত শরীরের কোথা থেকে উৎপন্ন হয়?
ইস্ট্রোজেন প্রধানত ডিম্বাশয়ে (গ্রাফিয়ান ফলিকল) উৎপন্ন হয়। তবে কিছু পরিমাণে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি এবং চর্বি কোষেও তৈরি হয়।
প্রোজেস্টেরন প্রধানত ডিম্বাশয়ের করপাস লুটিয়াম (পীতগ্রন্থি) থেকে নিঃসৃত হয়। গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টাও প্রচুর পরিমাণে প্রোজেস্টেরন তৈরি করে।
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন দুটির মধ্যে কোনটি “মূল নারী হরমোন” হিসেবে বিবেচিত?
ইস্ট্রোজেন-কে প্রাথমিক নারী যৌন হরমোন বলা হয়, কারণ এটি বয়ঃসন্ধিকালে স্তন, জরায়ু, যোনিপথের বিকাশ এবং নারীর সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য (যেমন – শরীরের গড়ন, চর্বি বণ্টন) গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
মাসিক চক্রে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা কী?
মাসিক চক্রে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা –
1. ইস্ট্রোজেন চক্রের প্রথমার্ধে (ফলিকুলার ফেজ) আধিপত্য বিস্তার করে। এটি জরায়ুর আস্তরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) পুনর্গঠন ও পুরু করে এবং FSH ও LH হরমোনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে ডিম্বস্ফোটনের জন্য প্রস্তুত করে।
2. প্রোজেস্টেরন চক্রের দ্বিতীয়ার্ধে (লুটিয়াল ফেজ) আধিপত্য বিস্তার করে। এটি ইস্ট্রোজেন দ্বারা তৈরিকৃত এন্ডোমেট্রিয়ামকে আরও স্থায়ী, রক্তসংবহনযুক্ত ও নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রতিস্থাপনের উপযোগী করে তোলে।
গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন –
1. জরায়ুর পেশীকে শিথিল রাখে ও সংকোচন রোধ করে, যাতে গর্ভপাত না হয়।
2. জরায়ুর আস্তরণকে নিষিক্ত ডিম্বাণুর বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য উপযুক্ত রাখে।
3. প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় ইমিউন প্রতিক্রিয়া দমন করে, যাতে ভ্রূণটি শরীর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত না হয়।
4. স্তনগ্রন্থিকে দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করে।
প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ কী?
ভারসাম্যহীনতার কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে –
1. অনিয়মিত বা ভারী মাসিক।
2. পিএমএস (প্রিমেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম) বা পিএমডিডি-এর তীব্র উপসর্গ (মেজাজ খিটখিটে, ব্যথা)।
3. ওজন বৃদ্ধি (বিশেষত পেটের চারপাশে)।
4. ক্লান্তি, অনিদ্রা।
5. গর্ভধারণে সমস্যা (ইনফার্টিলিটি)।
6. ব্রণ বা ত্বকের সমস্যা।
পুরুষদের শরীরেও কি ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন থাকে?
হ্যাঁ, পুরুষদের শরীরেও অল্প পরিমাণে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন থাকে, যা প্রধানত অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ও অণ্ডকোষ থেকে উৎপন্ন হয়। এই হরমোনগুলি পুরুষের হাড়ের স্বাস্থ্য, লিবিডো এবং হরমোনের সামগ্রিক ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের কার্যাবলি লেখো। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন