এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “গঠনগত পার্থক্যের ভিত্তিতে নিউরোনের শ্রেণিবিন্যাস করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গঠনগত পার্থক্যের ভিত্তিতে নিউরোনের শ্রেণিবিন্যাস করো।
নিউরোনের গঠনগত প্রকারভেদ –
কোশদেহ থেকে উৎপন্ন প্রবর্ধকের সংখ্যা অনুযায়ী নিউরোন বিভিন্ন প্রকারের হয় –
- মেরুবিহীন (Apolar) – কোশদেহে যখন কোনো প্রবর্ধক থাকে না, তখন তাকে মেরুবিহীন নিউরোন বলে।
- একমেরুবর্তী নিউরোন (Unipolar) – কোশদেহে যখন একটি প্রবর্ধক বা অ্যাক্সন থাকে তখন তাকে একমেরুবর্তী নিউরোন বলে।
- দ্বিমেরুবর্তী নিউরোন (Bipolar) – কোশদেহের দু-দিকে যখন দুটি প্রবর্ধক থাকে, অর্থাৎ একটি অ্যাক্সন এবং একটি ডেনড্রন থাকে, তখন তাকে দ্বি মেরুবর্তী নিউরোন বলে।
- বহুমেরুবর্তী নিউরোন (Multipolar) – কোশদেহে যখন একাধিক প্রবর্ধক অর্থাৎ একটিমাত্র অ্যাক্সন ও অসংখ্য ডেনড্রন থাকে, তখন তাকে বহুমেরুবর্তী নিউরোন বলে।
- ছদ্ম একমেরুবর্তী নিউরোন (Pseudounipolar) – প্রথম অবস্থায় কোশদেহে থাকা দুটি প্রবর্ধক একত্রিত হয়ে একটি প্রবর্ধকে পরিণত হলে তখন তাকে ছদ্ম একমেরুবর্তী নিউরোন বলে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
গঠনগত পার্থক্যের ভিত্তিতে নিউরোনকে কতটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়?
প্রধানত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় – মেরুবিহীন (Apolar), একমেরুবর্তী (Unipolar), দ্বিমেরুবর্তী (Bipolar) এবং বহুমেরুবর্তী (Multipolar)।
নিউরোনের “প্রবর্ধক” বলতে কী বোঝায়?
প্রবর্ধক হল কোশদেহ থেকে বের হয়ে যাওয়া সুতার মতো অঙ্গ। এরা প্রধানত দু’ধরনের – ডেনড্রাইট (সংকেত গ্রহণ করে) এবং অ্যাক্সন (সংকেত প্রেরণ করে)।
নিউরোনের শ্রেণিবিন্যাস কোন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে?
কোশদেহ (সোমা) থেকে উৎপন্ন প্রবর্ধকের (অ্যাক্সন ও ডেনড্রাইট) সংখ্যা এবং বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে এই শ্রেণিবিন্যাস করা হয়।
মেরুবিহীন নিউরোন (Apolar Neuron) কী এবং কোথায় পাওয়া যায়?
এগুলো এমন নিউরোন যাদের কোশদেহ থেকে কোনো প্রবর্ধক বের হয় না। এরা খুবই প্রাচীন ও সরল ধরনের, সাধারণত নিম্নস্তরের অমেরুদণ্ডী প্রাণীতে এবং ভ্রূণীয় অবস্থায় দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চস্তরের প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রে এরা সাধারণত থাকে না।
একমেরুবর্তী নিউরোন (Unipolar Neuron) এবং ছদ্ম একমেরুবর্তী নিউরোন (Pseudounipolar Neuron)-এর মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
একমেরুবর্তী নিউরোন (Unipolar Neuron) এবং ছদ্ম একমেরুবর্তী নিউরোন (Pseudounipolar Neuron)-এর মধ্যে মূল পার্থক্য –
1. একমেরুবর্তী – কোশদেহ থেকে সরাসরি একটি মাত্র প্রবর্ধক বের হয়। এটাও বিরল, কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণীতে দেখা যায়।
2. ছদ্ম একমেরুবর্তী – কোশদেহ থেকে দেখতে একটি প্রবর্ধকের মতো বের হলেও সেটি আসলে দুটি প্রবর্ধক (একটি ডেনড্রাইট ও একটি অ্যাক্সন) মিলিত হয়ে গঠিত। এই প্রবর্ধকটি কোশদেহের কাছাকাছি “T” আকারে বিভক্ত হয়ে যায়। এরা মানবদেহে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ডর্সাল রুট গ্যাংলিয়নে থাকে এবং সংবেদনশীল (সেনসরি) সংকেত বহন করে।
দ্বিমেরুবর্তী নিউরোন (Bipolar Neuron) এর উদাহরণ দাও।
এদের কোশদেহের দু’দিকে দুটি সুস্পষ্ট প্রবর্ধক থাকে – একপাশে একটি ডেনড্রাইট এবং অন্যপাশে একটি অ্যাক্সন। উদাহরণ – রেটিনার কোষ, অলফ্যাক্টরি ইপিথিলিয়ামের কিছু কোষ এবং ককলিয়ার গ্যাংলিয়নে।
মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে কোন ধরনের নিউরোন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক?
বহুমেরুবর্তী নিউরোন (Multipolar Neuron)। এদের কোশদেহ থেকে অসংখ্য ডেনড্রাইট এবং একটি মাত্র অ্যাক্সন বের হয়। মোটর নিউরোন, সেরেব্রাল কর্টেক্সের পিরামিডাল নিউরোন, স্পাইনাল কর্ডের ইন্টারনিউরোন, পিউরকিনজে কোষ ইত্যাদি সবই বহুমেরুবর্তী নিউরোনের উদাহরণ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “গঠনগত পার্থক্যের ভিত্তিতে নিউরোনের শ্রেণিবিন্যাস করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন