গ্রন্থি কাকে বলে? প্রাণীদেহে গ্রন্থি কত প্রকার ও কী কী? এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “গ্রন্থি কাকে বলে? প্রাণীদেহে গ্রন্থি কত প্রকার ও কী কী? এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রন্থি কাকে বলে? প্রাণীদেহে গ্রন্থি কত প্রকার ও কী কী? এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।
Contents Show

গ্রন্থি কাকে বলে?

বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের নিয়ন্ত্রণে যেসব রক্তজালক-সমৃদ্ধ একক কোশ বা কোশগুচ্ছ থেকে বহুকোশী জীবদেহে নির্দিষ্ট ধরনের জৈবরাসায়নিক পদার্থ সংশ্লেষিত এবং ক্ষরিত হয়, তাদের গ্রন্থি বলে। উদাহরণ – এককোশী গ্রন্থি; ক্ষুদ্রান্ত্রের গবলেট কোশ; বহুকোশী গ্রন্থি; থাইরয়েড, যকৃৎ ইত্যাদি।

প্রাণীদেহে কত প্রকার গ্রন্থি আছে ও কী কী? এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।

প্রাণীদেহে গ্রন্থির প্রকারভেদ –

প্রাণীদেহে তিন প্রকারের গ্রন্থি আছে, যেমন –

  1. বহিঃক্ষরা বা সনাল গ্রন্থি,
  2. অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি এবং
  3. মিশ্রগ্রন্থি।

বহিঃক্ষরা গ্রন্থি –

যেসব গ্রন্থির নালি থাকে এবং গ্রন্থির ক্ষরণ নালির মাধ্যমে দেহগহ্বরে বা গ্রন্থির বাইরে সুনির্দিষ্ট অংশে বাহিত হয়, তাদের সনাল গ্রন্থি বা বহিঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। উদাহরণ – ঘর্মগ্রন্থি, লালাগ্রন্থি, যকৃৎ, সিবেসিয়াস গ্রন্থি, পাকগ্রন্থি ইত্যাদি।

অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি –

রক্তজালকসমৃদ্ধ যেসব গ্রন্থির কোনো নালি থাকে না এবং গ্রন্থি নিঃসৃত জৈবরাসায়নিক পদার্থ (হরমোন) সরাসরি দেহরসে (রক্ত ও লসিকা) ব্যাপন প্রক্রিয়ায় মিশে গিয়ে বাহিত হয়, তাদের অনাল গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি বলে। উদাহরণ – পিটুইটারি গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি।

মিশ্রগ্রন্থি –

যেসব গ্রন্থি অন্তঃক্ষরা এবং বহিঃক্ষরা উভয় গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত, তাদের মিশ্রগ্রন্থি বলে। উদাহরণ – শুক্রাশয়, ডিম্বাশয়, অগ্ন্যাশয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

গ্রন্থি ও হরমোনের মধ্যে সম্পর্ক কী?

অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থিগুলো হরমোন নামক বিশেষ জৈবরাসায়নিক পদার্থ সংশ্লেষণ করে এবং তা সরাসরি রক্তে ক্ষরণ করে। এই হরমোনগুলো রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন লক্ষ্য অঙ্গ বা কোষে পৌঁছে দেহের বৃদ্ধি, বিপাক, প্রজননসব গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?

বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মধ্যে প্রধান পার্থক্য –
1. নালির উপস্থিতি – বহিঃক্ষরা গ্রন্থিতে নালি থাকে, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতে নালি থাকে না।
2. ক্ষরণের গন্তব্য – বহিঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ (যেমন – এনজাইম, ঘর্ম, লালা) নালির মাধ্যমে দেহগহ্বর বা বাইরের ত্বকে নির্গত হয়। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ (হরমোন) সরাসরি রক্তে মিশে যায়।
3. ক্ষরণের প্রকৃতি – বহিঃক্ষরা গ্রন্থি সাধারণত এনজাইম, শ্লেষ্মা প্রভৃতি ক্ষরণ করে, যেখানে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হরমোন ক্ষরণ করে।

মিশ্রগ্রন্থি বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করো।

মিশ্রগ্রন্থি এমন একটি গ্রন্থি যা একই সাথে অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় ধরনের কার্য সম্পাদন করে। উদাহরণস্বরূপ, অগ্ন্যাশয় (Pancreas) –
1. বহিঃক্ষরা অংশ – অ্যাসিনার কোষ থেকে পাচকরস (যাতে অগ্ন্যাশয়িক এমাইলেজ, লাইপেজ, ট্রিপসিন থাকে) নালির মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রে ক্ষরণ হয়।
2. অন্তঃক্ষরা অংশ – আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স থেকে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন সরাসরি রক্তে ক্ষরণ হয়।

এককোশী গ্রন্থি ও বহুকোশী গ্রন্থির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

এককোশী গ্রন্থি ও বহুকোশী গ্রন্থির মধ্যে পার্থক্য –
1. এককোশী গ্রন্থি – শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে অবস্থিত একটি একক কোষ (যেমন – ক্ষুদ্রান্ত্রের গবলেট কোষ) থেকেই শ্লেষ্মা (Mucus) জাতীয় ক্ষরণ হয়।
2. বহুকোশী গ্রন্থি – অনেকগুলো কোষ একত্রিত হয়ে গুচ্ছ বা লোবিউল আকারে গঠিত হয় এবং সুনির্দিষ্ট ক্ষরণ উৎপাদন করে (যেমন – থাইরয়েড গ্রন্থি, লালাগ্রন্থি)।

মানবদেহের প্রধান অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলোর নাম ও তাদের ক্ষরিত হরমোনের উদাহরণ দাও।

মানবদেহের প্রধান অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলোর নাম ও তাদের ক্ষরিত হরমোনের উদাহরণ –
1. পিটুইটারি গ্রন্থি – বৃদ্ধি হরমোন (GH), থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন (TSH),
2. থাইরয়েড গ্রন্থি – থাইরক্সিন (T4), ক্যালসিটোনিন,
3. অগ্ন্যাশয় – ইনসুলিন, গ্লুকাগন,
4. অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি – অ্যাড্রিনালিন, কর্টিসল,
5. পাইনাল গ্রন্থি – মেলাটোনিন।

শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয় কেন?

বহিঃক্ষরা কাজ – শুক্রাশয় শুক্রাণু উৎপন্ন করে যা শুক্রনালির মাধ্যমে বাইরে নিষ্কাশিত হয়। ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপন্ন করে যা ডিম্বনালির মাধ্যমে গর্ভাশয়ে যায়।
অন্তঃক্ষরা কাজ – শুক্রাশয় থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন এবং ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোন সরাসরি রক্তে ক্ষরণ হয়।
সেহেতু এরা উভয় প্রকার গ্রন্থির কাজ সম্পাদন করে, তাই এদের মিশ্রগ্রন্থি বলা হয়।

যকৃত (লিভার) কেন বহিঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে বিবেচিত?

যকৃৎ পিত্তরস উৎপন্ন করে যা পিত্তনালির (বাইল ডাক্ট) মাধ্যমে পিত্তথলিতে জমা থাকে ও পরবর্তীতে ক্ষুদ্রান্ত্রে নিঃসৃত হয়ে চর্বির পরিপাকে সাহায্য করে। যেহেতু এর একটি সুনির্দিষ্ট নালি তন্ত্র আছে, তাই এটি একটি প্রধান বহিঃক্ষরা গ্রন্থি। এছাড়া এটি কিছু প্রোটিন সংশ্লেষণ করে যা রক্তে ক্ষরণ হওয়ায় অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মত কাজও করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “গ্রন্থি কাকে বলে? প্রাণীদেহে গ্রন্থি কত প্রকার ও কী কী? এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

হরমোনকে 'রাসায়নিক বার্তাবহ' বা 'রাসায়নিক দূত' বা 'কেমিক্যাল মেসেঞ্জার' বলা হয় কেন? হরমোনকে 'রাসায়নিক সমন্বায়ক' কেন বলা হয়?

হরমোনকে রাসায়নিক বার্তাবহ, রাসায়নিক দূত, কেমিক্যাল মেসেঞ্জার, রাসায়নিক সমন্বায়ক বলা হয় কেন?

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডালা থেকে ক্ষরিত হরমোনগুলির নাম উল্লেখ করে তাদের কাজগুলির বিবরণ দাও।

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডালা থেকে ক্ষরিত হরমোনগুলির নাম উল্লেখ করে তাদের কাজগুলির বিবরণ দাও।

মানবদেহের ক্যালোরিজেনিক হরমোনটির নাম এবং উৎস লেখো। এই হরমোনটির কাজের বিবরণ সংক্ষেপে লেখো।

মানবদেহের ক্যালোরিজেনিক হরমোনটির নাম এবং উৎস লেখো। এই হরমোনটির কাজের বিবরণ সংক্ষেপে লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

গ্রন্থি কাকে বলে? প্রাণীদেহে গ্রন্থি কত প্রকার ও কী কী? এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।

হরমোনকে রাসায়নিক বার্তাবহ, রাসায়নিক দূত, কেমিক্যাল মেসেঞ্জার, রাসায়নিক সমন্বায়ক বলা হয় কেন?

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির মেডালা থেকে ক্ষরিত হরমোনগুলির নাম উল্লেখ করে তাদের কাজগুলির বিবরণ দাও।

মানবদেহের ক্যালোরিজেনিক হরমোনটির নাম এবং উৎস লেখো। এই হরমোনটির কাজের বিবরণ সংক্ষেপে লেখো।

STH হরমোনের সাধারণ কাজগুলি উল্লেখ করো।