এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হরমোন ও উৎসেচক কাকে বলে? হরমোন ও উৎসেচকের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

হরমোন ও উৎসেচক কাকে বলে?
হরমোন – যে জৈব রাসায়নিক পদার্থ কোনো বিশেষ কোশসমষ্টি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে বিশেষ উপায়ে পরিবাহিত হয়ে জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের মধ্যে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে এবং ক্রিয়ার শেষে বিনষ্ট হয়ে যায়, তাকে হরমোন বলে। যেমন – অক্সিন নামক উদ্ভিদ হরমোন।
উৎসেচক – প্রোটিনধর্মী যে জৈব অনুঘটক সজীব কোশে উৎপন্ন হয়ে কোশের ভিতরে বা বাইরে উপযুক্ত পরিবেশে কোনো জৈব- রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত বা মন্দীভূত করে এবং বিক্রিয়া শেষে নিজে অপরিবর্তিত থাকে, তাকে উৎসেচক বলে।
হরমোন ও উৎসেচকের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
হরমোন এবং উৎসেচকের মধ্যে পার্থক্য –
| হরমোন | উৎসেচক |
| হরমোন জীবদেহে মূলত উদ্ভিদদেহের অগ্রস্থ ভাজক কলা, বীজপত্র এবং প্রাণীদেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। | উৎসেচক জীবদেহের বিভিন্ন বহিঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। |
| হরমোন উৎসস্থল থেকে ক্ষরিত হয়ে দূরবর্তী কোনো স্থানে গিয়ে ক্রিয়া করে। | উৎসেচক প্রায় সর্বত্রই ক্রিয়াশীল। |
| হরমোন জীবদেহে রাসায়নিক বার্তাবহ হিসেবে কাজ করে। | উৎসেচক জীবদেহে জৈব অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। |
| হরমোন ক্রিয়ার শেষে নিষ্ক্রিয় বা ধ্বংস হয়ে যায়। | উৎসেচক ক্রিয়ার শেষে অপরিবর্তিত থাকে। |
| হরমোন সর্বদা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কাজ করে। | উৎসেচকের ঘনত্ব বাড়ালে উৎসেচক নিয়ন্ত্রিত বিক্রিয়ার হার বাড়ে। |
| হরমোন রক্ত, লসিকার মাধ্যমে বাহিত হয়। | উৎসেচক সুনির্দিষ্ট নালিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। |
| হরমোন অ্যামিনোধর্মী, প্রোটিনধর্মী বা স্টেরয়েডধর্মী। | উৎসেচক সর্বদাই প্রোটিনধর্মী হয়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হরমোন কী?
হরমোন হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা উদ্ভিদের নির্দিষ্ট কলা থেকে নিঃসৃত হয়। এটি রক্ত বা অন্যান্য তরলের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে দূরবর্তী লক্ষ্য কোষ বা অঙ্গে গিয়ে শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করে এবং কাজ শেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। যেমন – ইনসুলিন, থাইরক্সিন, অক্সিন।
উৎসেচক কী?
উৎসেচক হল প্রোটিন দিয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরনের জৈব অনুঘটক, যা জীবন্ত কোষে সংশ্লেষিত হয়। এটি উপযুক্ত পরিবেশে নির্দিষ্ট জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি বা হ্রাস করে এবং বিক্রিয়া শেষে নিজে অপরিবর্তিত থাকে। যেমন – এমাইলেজ, পেপসিন।
“জৈব অনুঘটক” বলতে কী বোঝায়?
যেসব অনুঘটক জীবন্ত কোষে তৈরি হয় এবং জৈবিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, তাদের জৈব অনুঘটক বলে। উৎসেচক হল সবচেয়ে সাধারণ জৈব অনুঘটক।
হরমোন সর্বদা নির্দিষ্ট মাত্রায় কাজ করে কেন?
হরমোনের অত্যধিক বা অল্প পরিমাণ দেহের ভারসাম্য নষ্ট করে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে (যেমন – ডায়াবেটিস, গলগণ্ড)। তাই দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে হরমোনের একটি নির্দিষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ মাত্রা প্রয়োজন।
কিছু উৎসেচকের নাম বলো।
পাচনতন্ত্রের কিছু উৎসেচক হলো – অম্লাজ (পেপসিন), লালাটেজ (টায়ালিন/অ্যামাইলেজ), অগ্ন্যাশয়িক অম্লাজ (ট্রিপসিন), লিপেজ ইত্যাদি।
উদ্ভিদে হরমোনের দুইটি কাজ উল্লেখ করো।
1. বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ – অক্সিন ও জিব্বেরেলিন কোষ বিভাজন ও কোষ প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে।
2. প্রতিকূলতা মোকাবেলা – অ্যাবসিসিক অ্যাসিড খরা প্রতিরোধে পাতার রন্ধ্র বন্ধ করতে ও বীজের নিষ্ক্রিয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হরমোন ও উৎসেচক কাকে বলে? হরমোন ও উৎসেচকের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন