এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের কার্যাবলি লেখো। ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের কার্যাবলি লেখো।
ইনসুলিন এবং গ্লুকাগন হলো অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। এরা মানবদেহে রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একে অপরের বিপরীতভাবে কাজ করে।
ইনসুলিনের কাজ –
ইনসুলিন প্রধানত রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর জন্য দায়ী। খাবার খাওয়ার পর, যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন এটি সক্রিয় হয়।
- গ্লুকোজ গ্রহণ – এটি একটি চাবির মতো কাজ করে, যা কোষগুলোর দরজা খুলে দেয়। ফলে রক্তপ্রবাহ থেকে গ্লুকোজ কোষের ভেতরে প্রবেশ করে এবং শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
- শক্তি সঞ্চয় – এটি যকৃৎ ও পেশীগুলোকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ গ্লাইকোজেন আকারে সঞ্চয় করার সংকেত দেয়।
- চর্বি সঞ্চয় – এটি শরীরে চর্বি সঞ্চয়কে উৎসাহিত করে এবং প্রোটিন ভাঙন প্রতিরোধ করে।
- ডায়াবেটিসের ভূমিকা – শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি না হলে বা এটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে না পারলে, রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়; যা ডায়াবেটিসের কারণ হয়।
গ্লুকাগনের কাজ –
গ্লুকাগন ইনসুলিনের ঠিক বিপরীত কাজ করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানোর জন্য দায়ী। আপনি যখন দীর্ঘক্ষণ কিছু খাননি (উপবাস) কিংবা রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেছে, তখন এটি সক্রিয় হয়।
- গ্লাইকোজেন ভাঙন – এটি যকৃৎকে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ভেঙে পুনরায় গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে রক্তপ্রবাহে ছেড়ে দেওয়ার সংকেত দেয়।
- শক্তি সরবরাহ – খাবার না খাওয়ার সময়ও এটি দেহে শক্তির একটি অবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করে।
- নতুন গ্লুকোজ তৈরি – সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ফুরিয়ে গেলে, এটি যকৃৎকে অন্যান্য কাঁচামাল (যেমন – অ্যামিনো অ্যাসিড) থেকে নতুন গ্লুকোজ তৈরি করতে উদ্দীপিত করে। এই প্রক্রিয়াকে গ্লুকোনিওজেনেসিস বলা হয়।
ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের মধ্যে পার্থক্য –
| ইনসুলিন | গ্লুকাগন |
| ইনসুলিন, অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব্ ল্যাঙ্গার হানসের β কোশ থেকে ক্ষরিত হয়। | গ্লুকাগন, অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব্ ল্যাঙ্গারহানসের α কোশ থেকে ক্ষরিত হয়। |
| রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়। | রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। |
| গ্লুকাগন গ্লাইকোজেনোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লাইকোজেনকে ভেঙে গ্লুকোজ তেরি করে। | ইনসুলিন যকৃত এবং পেশিকোশে সংঘটিত গ্লাইকোজেনেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন তৈরি করে। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ইনসুলিন এবং গ্লুকাগন কোন অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হয়?
ইনসুলিন এবং গ্লুকাগন উভয়েই অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন নিঃসৃত হয় অগ্ন্যাশয়ের ‘আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স’ -এর বিটা (β) কোষ থেকে। আর গ্লুকাগন নিঃসৃত হয় আলফা (α) কোষ থেকে।
ইনসুলিন এবং গ্লুকাগন হরমোন দুটির প্রধান কাজ কী?
ইনসুলিন এবং গ্লুকাগন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা (রক্ত শর্করা) নিয়ন্ত্রণের জন্য বিপরীতধর্মীভাবে কাজ করে।
1. ইনসুলিন – রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় (হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব)।
2. গ্লুকাগন – রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় (হাইপারগ্লাইসেমিক প্রভাব)।
ইনসুলিন কীভাবে রক্তে শর্করা কমায়?
ইনসুলিন তিনটি প্রধান উপায়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে –
1. কোষে গ্লুকোজ প্রবেশে সাহায্য করে — এটি কোষের ঝিল্লিতে গ্লুকোজ ট্রান্সপোর্টার সক্রিয় করে, যার ফলে রক্ত থেকে গ্লুকোজ কোষের ভেতরে ঢুকে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
2. গ্লাইকোজেন সংশ্লেষণ বাড়ায় – এটি যকৃৎ ও পেশিকোষে অতিরিক্ত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেন আকারে সঞ্চয় করতে উদ্দীপিত করে। এই প্রক্রিয়াকে গ্লাইকোজেনেসিস বলে।
3. গ্লুকোজের ব্যবহার বাড়ায় এবং নতুন গঠন কমায় – এটি গ্লাইকোলাইসিস বাড়ায় এবং গ্লুকোনিওজেনেসিস (নতুন গ্লুকোজ তৈরি) কমিয়ে দেয়।
গ্লুকাগন কীভাবে রক্তে শর্করা বাড়ায়?
গ্লুকাগন দুটি প্রধান পদ্ধতিতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় –
1. গ্লাইকোজেন ভাঙন – এটি যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি করে এবং তা রক্তে মুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াকে গ্লাইকোজেনোলাইসিস বলে।
2. গ্লুকোনিওজেনেসিস – যখন গ্লাইকোজেনের মজুদ কমে যায়, গ্লুকাগন যকৃৎকে অ্যামিনো অ্যাসিড বা ল্যাকটেটের মত অ-শর্করা উৎস থেকে নতুন গ্লুকোজ তৈরির জন্য উদ্দীপিত করে। এই প্রক্রিয়াকে গ্লুকোনিওজেনেসিস বলে।
কোন অবস্থায় ইনসুলিন নিঃসরণ বেশি হয়?
খাবার খাওয়ার পর, বিশেষত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খেলে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এই উচ্চ রক্ত শর্করাই (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষকে ইনসুলিন নিঃসরণের জন্য উদ্দীপ্ত করে।
কোন অবস্থায় গ্লুকাগন নিঃসরণ বেশি হয়?
দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকলে (উপবাস), ব্যায়াম করলে বা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খুব কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), অগ্ন্যাশয়ের আলফা কোষ গ্লুকাগন নিঃসরণ করে।
“নেগেটিভ ফিডব্যাক মেকানিজম” বলতে এখানে কী বোঝায়?
এটি একটি স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। যখন রক্তে শর্করা বেড়ে যায়, তা ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায় এবং গ্লুকাগন নিঃসরণ কমায়, ফলে শর্করা কমে। আবার শর্করা কমে গেলে, গ্লুকাগন নিঃসরণ বাড়ে এবং ইনসুলিন নিঃসরণ কমে, ফলে শর্করা বাড়ে। এভাবে দেহ একটি স্থিতিশীল অবস্থা (হোমিওস্ট্যাসিস) বজায় রাখে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের কার্যাবলি লেখো। ইনসুলিন এবং গ্লুকাগনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন