এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “আইসোমার বা সমাবয়ব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আইসোমার বা সমাবয়ব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
একই আণবিক সংকেতবিশিষ্ট কিন্তু ভিন্ন আণবিক গঠনবিশিষ্ট ভিন্ন ধর্মের জৈব যৌগগুলিকে পরস্পরের আইসোমার বা সমাবয়ব বলে। যেমন – ইথাইল অ্যালকোহল ও ডাইমিথাইল ইথার। এই দুই যৌগের আণবিক সংকেত হল C2H6O। কিন্তু যৌগ দুটির গঠন সংকেত ও রাসায়নিক ধর্ম আলাদা। সুতরাং, এরা পরস্পরের আইসোমার।
ইথাইল অ্যালকোহলের গঠন – \(H-\overset{\underset〡H}{\underset{\overset〡H}C}-\overset{\underset〡H}{\underset{\overset〡H}C}-OH\)
ডাইমিথাইল ইথারের গঠন – \(H-\overset{\underset〡H}{\underset{\overset〡H}C}-O-\overset{\underset〡H}{\underset{\overset〡H}C}-H\)
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
আইসোমার বা সমাবয়ব কী?
একই আণবিক সংকেত কিন্তু ভিন্ন গঠন বা বিন্যাসের কারণে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট যৌগগুলিকে পরস্পরের আইসোমার বা সমাবয়ব বলে। যেমন, ইথাইল অ্যালকোহল (C₂H₅OH) এবং ডাইমিথাইল ইথার (CH₃OCH₃) উভয়েরই আণবিক সংকেত C₂H₆O, কিন্তু তাদের গঠন ও ধর্ম সম্পূর্ণ আলাদা।
আইসোমারিজম কত প্রকার ও কী কী?
আইসোমারিজম প্রধানত দুই প্রকার –
1. গঠনগত সমাবয়বতা (Structural Isomerism) – এতে অণুতে পরমাণুগুলির সংযোগের ক্রম বা প্রকৃতি ভিন্ন হয়।
2. স্থানগত সমাবয়বতা (Stereoisomerism) – এতে পরমাণুগুলির সংযোগের ক্রম একই থাকে, কিন্তু ত্রি-মাত্রিক স্থানে তাদের বিন্যাস ভিন্ন হয়।
আইসোমারগুলির ধর্ম কি একই হয়?
না, আইসোমারগুলির গঠনগত পার্থক্যের কারণে তাদের ভৌত (গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, দ্রাব্যতা) ও রাসায়নিক ধর্ম সাধারণত আলাদা হয়।
গঠনগত সমাবয়বতার প্রধান প্রকারভেদগুলি কি কি?
গঠনগত সমাবয়বতা আবার নিম্নলিখিত প্রকারের হতে পারে –
1. শৃঙ্খল সমাবয়বতা (Chain Isomerism) – কার্বন শৃঙ্খলের গঠন ভিন্ন হয়। যেমন – n-বিউটেন (সরল শৃঙ্খল) এবং আইসোবিউটেন (শাখিত শৃঙ্খল)।
2. অবস্থানগত সমাবয়বতা (Position Isomerism) – কার্যকরী মূলক বা প্রতিস্থাপক গ্রুপের অবস্থান ভিন্ন হয়। যেমন – n-প্রোপাইল অ্যালকোহল (CH₃CH₂CH₂OH) এবং আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল (CH₃)₂CHOH।
3. কার্যকরী মূলক সমাবয়বতা (Functional Group Isomerism) – কার্যকরী মূলকই ভিন্ন হয়। যেমন – ইথাইল অ্যালকোহল (অ্যালকোহল) এবং ডাইমিথাইল ইথার (ইথার)।
স্থানগত সমাবয়বতা কাকে বলে? এর প্রকারভেদ কি?
যে সমাবয়বতায় অণুর গাঠনিক সংকেত একই থাকে কিন্তু অণুতে পরমাণুগুলির ত্রিমাত্রিক বিন্যাস ভিন্ন হয় তাকে স্থানগত সমাবয়বতা বলে। এটি প্রধানত দুই প্রকার –
1. জ্যামিতিক সমাবয়বতা (Geometrical Isomerism) – সাধারণত ডাবল বন্ড বা রিং-এর কারণে অণুর অংশগুলির স্থানিক বিন্যাসে বাধা সৃষ্টি হলে এটি দেখা দেয়। যেমন – সিস-2-বিউটিন এবং ট্রান্স-2-বিউটিন।
2. প্রতিচ্ছবি সমাবয়বতা (Optical Isomerism) – যেসব অণু তাদের দর্পণ প্রতিবিম্বের সাথে সমাপতিত হয় না (কাইরালিটি) তাদের মধ্যে এটা দেখা যায়। যেমন – L- ও D- ল্যাকটিক অ্যাসিড।
n-পেন্টেন ও আইসোপেন্টেন কি ধরনের সমাবয়ব?
n-পেন্টেন (CH₃(CH₂)₃CH₃) এবং আইসোপেন্টেন ((CH₃)₂CHCH₂CH₃) পরস্পরের শৃঙ্খল সমাবয়ব। উভয়েরই আণবিক সংকেত C₅H₁₂, কিন্তু কার্বন শৃঙ্খলের গঠন ভিন্ন।
জ্যামিতিক সমাবয়বতা দেখা দেয় কোন শর্তে?
জ্যামিতিক সমাবয়বতা সাধারণত তখনই সম্ভব যখন –
1. অণুতে একটি দ্বি-বন্ধন (C=C) বা একটি রিং বিদ্যমান থাকে।
2. দ্বি-বন্ধনের প্রতিটি কার্বন পরমাণু দুটি ভিন্ন পরমাণু বা মূলক দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “আইসোমার বা সমাবয়ব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন