এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ “বার্লোর চক্র” নিয়ে আলোচনা করব। এই অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বার্লোর চক্র” অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই “বার্লোর চক্র” থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বার্লোর চক্র পরিবর্তী প্রবাহে কাজ করে না কেন?
বার্লোর চক্র পরিবর্তী প্রবাহে (AC) কাজ করে না কারণ বার্লোর চক্র ‘তড়িৎপ্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়া’ এই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। চৌম্বকক্ষেত্রের অভিমুখ অপরিবর্তিত রেখে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ বিপরীত দিকে হলে চক্রের ঘূর্ণনের অভিমুখ বিপরীত হবে। পরিবর্তী প্রবাহে (AC) তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়। এক্ষেত্রে চক্রটি একবার একদিকে ও পরের বার বিপরীত দিকে ঘুরতে চেষ্টা করবে। ফলে চক্রের ঘূর্ণন হবে না। কেবলমাত্র সমপ্রবাহে (DC) -তে বার্লোর চক্র কাজ করবে।
বার্লোর চক্রে নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াগুলি করা হলে চক্রের ঘূর্ণনে কী পরিবর্তন দেখা যাবে?
- তড়িৎ প্রবাহমাত্রা বাড়ানো হল।
- তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ ওলটানো হল।
- চুম্বকের মেরুদ্বয়ের অবস্থান উলটে দেওয়া হল।
- চৌম্বকক্ষেত্র ও তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ উভয়কেই একসঙ্গে উলটে দেওয়া হল।
- চুম্বক সরিয়ে নেওয়া হল বা তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করা হল।
- চৌম্বকক্ষেত্রের প্রাবল্য বাড়ানো হল।
- চুম্বক সরিয়ে নিয়ে তার পরিবর্তে অধিক শক্তিশালী চুম্বক ব্যবহার করা হল।
- সমমুখী তড়িৎপ্রবাহের (DC) পরিবর্তে পরিবর্তী (AC) প্রবাহ পাঠানো হল।
- বার্লোর চক্রে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ অপরিবর্তিত রেখে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা বাড়ালে চক্রের ঘূর্ণনের গতি বেড়ে যাবে।
- বার্লোর চক্রে চৌম্বকক্ষেত্রের অভিমুখ অপরিবর্তিত রেখে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ উলটে দিলে চক্রের ঘূর্ণন বিপরীত দিকে হবে।
- বার্লোর চক্রে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ একই রেখে চুম্বকের মেরুদ্বয়ের অবস্থান উলটে দিলে চক্রের ঘূর্ণন বিপরীত দিকে হবে।
- বার্লোর চক্রে চৌম্বকক্ষেত্র এবং তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ একসঙ্গে উলটে দিলে চক্রের ঘূর্ণনের অভিমুখ অপরিবর্তিত থাকবে।।
- বার্লোর চক্রে চুম্বক সরিয়ে নিলে বা তড়িৎপ্রবাহ না হলে চক্রের ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যাবে।
- বার্লোর চক্রে চৌম্বকক্ষেত্রের প্রাবল্য বাড়ানো হলে চক্রের ঘূর্ণন বেগ বাড়ে অর্থাৎ চক্র আরও জোরে ঘোরে।
- বার্লোর চক্রে চুম্বক সরিয়ে নিয়ে তার পরিবর্তে অধিক শক্তিশালী চুম্বক ব্যবহার করলে চক্রের ঘূর্ণন জোরে হবে।
- বার্লোর চক্রে সমমুখী তড়িৎপ্রবাহের পরিবর্তে পরিবর্তী প্রবাহ পাঠালে চক্রের ঘূর্ণন হবে না।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বার্লোর চক্র কী?
বার্লোর চক্র একটি শ্রেণীবদ্ধ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যেটি তড়িৎপ্রবাহ ও চৌম্বকক্ষেত্রের পারস্পরিক ক্রিয়া (ফ্লেমিং-এর বামহস্ত নিয়ম) প্রদর্শন করে। এটি দেখায় কীভাবে বিদ্যুৎশক্তি যান্ত্রিক শক্তি বা গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
বার্লোর চক্র পরিবর্তী প্রবাহে (AC) কাজ করে না কেন?
বার্লোর চক্র ‘তড়িৎপ্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়া’ নীতির উপর কাজ করে, যেখানে চক্রের ঘূর্ণনের দিক নির্ভর করে তড়িৎপ্রবাহের দিক এবং চৌম্বকক্ষেত্রের দিকের উপর।
1. সমপ্রবাহে (DC) – তড়িৎপ্রবাহের দিক স্থির থাকে, ফলে চক্রটি একটি নির্দিষ্ট দিকে অবিচ্ছিন্নভাবে ঘুরতে থাকে।
2. পরিবর্তী প্রবাহে (AC) – তড়িৎপ্রবাহের দিক প্রতি মুহূর্তে (সেকেন্ডে 50 বা 60 বার) পরিবর্তিত হয়। এর ফলে চক্রটি এক মুহূর্ত এক দিকে এবং পরের মুহূর্ত বিপরীত দিকে ঘুরতে চেষ্টা করে। এই অত্যন্ত দ্রুত গতিতে দিক পরিবর্তনের কারণে চক্রের উপর কোনো কার্যকরী ঘূর্ণন বল কাজ করে না, ফলে এটি ঘোরে না এবং কেবলমাত্র কম্পন করতে পারে বা স্থির থাকে।
বার্লোর চক্র কীভাবে কাজ করে?
বার্লোর চক্র একটি সরল বৈদ্যুতিক মোটর যা ফ্লেমিং-এর বামহস্ত নিয়মের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যখন চক্রের (সাধারণত পিতলের তৈরি) রিম বরাবর একটি তড়িৎপ্রবাহ (I) প্রেরণ করা হয় এবং একই সাথে এটিকে একটি শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র (B)-এর মধ্যে রাখা হয়, তখন একটি বল (F) উৎপন্ন হয়। এই বলটি চক্রটিকে স্পর্শকীয় দিকে ধাক্কা দেয় এবং সেটি ঘুরতে শুরু করে। বল, ক্ষেত্র এবং প্রবাহের দিক এই নিয়ম দ্বারা সম্পর্কিত।
বার্লোর চক্রে কোন্ নিয়ম প্রযোজ্য – ফ্লেমিং-এর বামহস্ত নিয়ম নাকি ডানহস্ত নিয়ম?
বার্লোর চক্র ফ্লেমিং -এর বামহস্ত নিয়ম মেনে চলে কারণ এটি মোটর নীতি -র একটি উদাহরণ, অর্থাৎ এখানে বিদ্যুৎশক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
1. বামহস্ত নিয়ম (মোটরের জন্য) – বুড়ো আঙুল বল (F) এর দিক, তর্জনী চৌম্বকক্ষেত্র (BB) এর দিক এবং মধ্যমা তড়িৎপ্রবাহ (I) এর দিক নির্দেশ করে।
2. ডানহস্ত নিয়ম – জেনারেটর নীতির (যান্ত্রিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎশক্তি) জন্য প্রযোজ্য।
বার্লোর চক্রে সাধারণত কোন ধরনের চুম্বক ব্যবহার করা হয়?
পরীক্ষাগারে সাধারণত শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক (Permanent Magnet), যেমন নিওডিমিয়াম চুম্বক ব্যবহার করা হয়, যাতে করে একটি শক্তিশালী ও স্থির চৌম্বকক্ষেত্র পাওয়া যায়। তাত্ত্বিকভাবে, বিদ্যুৎচুম্বক (Electromagnet) দিয়েও করা সম্ভব, কিন্তু স্থায়ী চুম্বক ব্যবহারে ব্যবস্থাটি সহজ ও সরল হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ “বার্লোর চক্র” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বার্লোর চক্র” অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই “বার্লোর চক্র” অংশটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন