আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।
অথবা, বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করো।
অথবা, বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?
বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের কারণ –
ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উষ্ণতায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। বায়ুর উষ্ণতার এই তারতম্যের নিয়ন্ত্রকগুলি হল –

অক্ষাংশ –
অক্ষাংশ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য ঘটে, ফলে উষ্ণতারও পার্থক্য হয়। নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যকভাবে পড়ে। লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মির তুলনায় তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয়। কারণ –
- তির্যক রশ্মিকে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে তুলনামূলকভাবে অধিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় এবং
- তির্যক রশ্মি ভূপৃষ্ঠে বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং, নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে তাপমাত্রাও ক্রমশ কমতে থাকে।
উদাহরণ – 34°05′ উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত শ্রীনগরের তুলনায় নিরক্ষরেখার নিকটবর্তী তিরুবনন্তপুরম (8°30′ উত্তর অক্ষাংশ) অনেক বেশি উষ্ণ। আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অক্ষাংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলেই অক্ষাংশের ভিত্তিতে ভূপৃষ্ঠে তিনটি প্রধান তাপমণ্ডলের সৃষ্টি হয়েছে।
উচ্চতা –
সাধারণভাবে দেখা যায় প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় প্রায় 6.5°C হারে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তাই একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও সমতল স্থানের তুলনায় উঁচু স্থানের তাপমাত্রা কম হয়। উদাহরণ – উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা (0°20′ উত্তর, উচ্চতা 1192 মিটার) এবং ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো (0°11′ দক্ষিণ, উচ্চতা 2850 মিটার) মোটামুটি একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উচ্চতার পার্থক্যের জন্য কাম্পালার (গড় বার্ষিক তাপমাত্রা 21.5°C) তুলনায় কুইটোর তাপমাত্রা (গড়ে 14°C) অনেক কম।

পর্বতের অবস্থান –
উষ্ণ বা শীতল বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কোনো পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত থাকলে বায়ুপ্রবাহ ওই পর্বতশ্রেণিতে বাধা পায়। ফলে পর্বতশ্রেণির দু-দিকের উষ্ণতার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। উদাহরণ – শীতকালে শুষ্ক ও শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু মধ্য-এশিয়ার বরফাবৃত অঞ্চলের ওপর দিয়ে এসে ভারতে প্রবেশ করার মুখে হিমালয় পর্বতশ্রেণিতে বাধা পায় বলে উত্তর ভারত তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পায়।
সালভাগ ও জলভাগের বণ্টন –
জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দিনেরবেলা তাড়াতাড়ি গরম হয় এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়। একইভাবে গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ যতটা উষ্ণ হয়, পার্শ্ববর্তী জলভাগ ততটা হয় না, বা শীতকালে স্থলভাগ যতটা শীতল হয় সংলগ্ন জলভাগ ততটা শীতল হয় না। এজন্য সমুদ্র থেকে দূরে মহাদেশের অভ্যন্তরে জলবায়ু চরম বা মহাদেশীয় প্রকৃতির হয়। কিন্তু সমুদ্র-সংলগ্ন স্থানে সামুদ্রিক প্রভাবের জন্য উষ্ণতা কখনোই খুব বেশি বা কম হয় না। জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয়। উদাহরণ – সমুদ্র থেকে দূরে মহাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত বলে মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের জলবায়ু চরম বা মহাদেশীয় প্রকৃতির। আবার, সামুদ্রিক প্রভাবের জন্য দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার জলবায়ু সমভাবাপন্ন।
দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য –
দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উষ্ণতার তারতম্য হয়। কারণ, যদি দিন বড়ো ও রাত ছোটো হয়, তাহলে দিনেরবেলায় ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত তাপের সবটাই ছোটো রাতে বিকিরিত হতে পারে না, কিছুটা সঞ্চিত থেকে যায়। কিছুদিন এক জায়গায় এরকম চললে জায়গাটি স্বাভাবিকভাবেই উষ্ণ হয়ে যায়। আবার, দিন ছোটো এবং রাত বড়ো হলে দিনেরবেলায় সঞ্চিত তাপের সবটাই বড়ো রাতে বিকিরিত হয়ে যায়, ফলে ওই জায়গায় উষ্ণতা কম হয়।
ভূমির ঢাল –
ভূমির যে ঢালের ওপর সূর্যালোক বেশি খাড়াভাবে পড়ে সেই ঢালে উষ্ণতা অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। এর বিপরীত ঢালে সূর্যালোক তির্যকভাবে পড়ে ও উষ্ণতা তুলনামূলকভাবে কম হয়। উদাহরণ – উত্তর গোলার্ধে হিমালয়, আল্পস প্রভৃতি পর্বতশ্রেণির উত্তর ঢালের তুলনায় দক্ষিণ ঢালের তাপমাত্রা বেশি। আবার দক্ষিণ গোলার্ধের পর্বতশ্রেণি-সমূহের উত্তর ঢাল দক্ষিণ ঢালের তুলনায় বেশি উষ্ণ।

সমুদ্রস্রোত –
সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত যে-কোনো দুটি স্থান একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও একটির পাশ দিয়ে যদি উষ্ণ স্রোত এবং অপরটির পাশ দিয়ে যদি শীতল স্রোত প্রবাহিত হয়, তাহলে প্রথম স্থানটির আবহাওয়া উষ্ণ এবং দ্বিতীয় স্থানটির আবহাওয়া শীতল হয়। উদাহরণ – প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত গ্রেট ব্রিটেনের গ্লাসগো শহরের পাশ দিয়ে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোত এবং কানাডার নৈন শহরের পাশ দিয়ে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয়। এর ফলে শীতকালে গ্লাসগোর গড় তাপমাত্রা যখন 4.3°C -এর নীচে নামে না, তখন নৈন -এর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে 18.5°C পর্যন্ত নেমে যায়।
বায়ুপ্রবাহ –
সমুদ্রস্রোতের মতো বায়ুপ্রবাহের জন্যও তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। শীতকালে সুমেরুর ঠান্ডা বাতাস উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অভ্যন্তরে বহুদূর পর্যন্ত চলে আসে। এজন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যভাগে শীতকালে তীব্র শীত পড়ে এবং তুষারপাত হয়। আবার উষ্ণ চিনুক বায়ুর প্রভাবে প্রেইরি অঞ্চলের বরফ গলে যায়।
মেঘের আবরণ –
আকাশে ঘন মেঘের আবরণ একদিকে যেমন দিনেরবেলা সৌরশক্তিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে বাধা দেয়, অপরদিকে রাত্রিবেলা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপকেও মহাশূন্যে পৌঁছোতে দেয় না। ফলে মেঘের আবরণ থাকলে দিনেরবেলা উত্তাপ কমে, আর রাত্রিবেলা উত্তাপ বাড়ে। এই কারণে মেঘশূন্য রাত্রির তুলনায় মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অনেক গরম হয়।

অরণ্য –
অরণ্যের ভিতর দিয়ে সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে বাধা পায় বলে ঘন অরণ্যের ভিতরে বা অরণ্যের আশেপাশে বায়ুর উষ্ণতা কম হয়। শহরাঞ্চলে রাস্তার দুধারে গাছ লাগালে বায়ুর তাপমাত্রা কিছুটা কমানো সম্ভব।
মৃত্তিকা –
বিভিন্ন প্রকার মাটির তাপশোষণ করার ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন বলে মাটির বিভিন্নতার কারণেও উষ্ণতার তারতম্য হয়ে থাকে। যেমন – বেলেমাটির তাপশোষণ করার ক্ষমতা বেশি। এই মাটি যেমন খুব দ্রুত উত্তপ্ত হয় তেমনি আবার তাপ বিকিরণ করে দ্রুত শীতল হয়ে যেতে পারে।
নগরায়ণ ও শিল্পায়ন –
শহরাঞ্চলে যানবাহন ও কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া তাপ শোষণ করে স্থানীয়ভাবে উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়। নগর এবং শিল্পাঞ্চলের বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড অধিক পরিমাণে থাকায় সৌর বিকিরণ ও পার্থিব বিকিরণ উভয়ই বেশি মাত্রায় হয়। এই কারণে শহরাঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ-সংলগ্ন বায়ু বেশি উষ্ণ হয়। যেমন – দমদম বিমানবন্দরের তুলনায় কলকাতার অন্যান্য স্থানের উষ্ণতা সবসময় 2°C-3°C বেশি থাকে।
চিত্রসহ বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি –
বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতিগুলি হল-
- বিকিরণ পদ্ধতি – সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ উষ্ণ হয় এবং ওই উষ্ণ ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে। বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তর ওই বিকীর্ণ তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয়।
- পরিবহন পদ্ধতি – উত্তপ্ত পদার্থের সংস্পর্শে শীতল পদার্থ এলে, উত্তপ্ত পদার্থের উত্তাপ শীতল পদার্থে সঞ্চালিত হয়। একে বলে পরিবহন প্রক্রিয়া। যেমন – সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় এবং ওই উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়। আবার ওই উত্তপ্ত বায়ুর উত্তাপ শীতল বায়ুতে সঞ্চালিত হয়।
- পরিচলন পদ্ধতি – ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত হওয়ার ফলে প্রসারিত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। তখন চারদিক থেকে ঠান্ডা ভারী বাতাস ওই ফাঁকা স্থানে ছুটে আসে এবং ওই বাতাসও ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায়। এরকম উল্লম্বভাবে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে উত্তাপ ছড়িয়ে যায় এবং বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়। এরই নাম পরিচলন পদ্ধতি।
- অ্যাডভেকসন্ – এক জায়গার উত্তাপ বায়ুর মাধ্যমে যখন ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে অনুভূমিকভাবে অন্য জায়গায় চলে যায়, তার নাম অ্যাডভেকসন্ (অর্থাৎ এটি পরিচলন পদ্ধতির ঠিক বিপরীত। পরিচলন পদ্ধতিতে উত্তাপ উল্লম্বভাবে যায় কিন্তু অ্যাডভেকসন্ পদ্ধতিতে অনুভূমিকভাবে যায়)। উদাহরণ – নিম্ন অক্ষাংশের বেশি উষ্ণতা বায়ুপ্রভাবের মাধ্যমে উচ্চ অক্ষাংশের বায়ুমণ্ডলে স্থানান্তরিত হয়।
- সূর্যরশ্মির প্রত্যক্ষ শোষণ – সূর্যরশ্মি যখন বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে আসে তখন তার কিছু অংশ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদান, যেমন – কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি সরাসরি শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে সামান্য উত্তপ্ত করে। এ ছাড়া ভূপৃষ্ঠ থেকে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপ বিকিরণ।
- লীনতাপ সংযোজন – জল বাষ্পীভূত হওয়ার সময় যে তাপ গ্রহণ করে তাকে বলে লীনতাপ। জলীয়বাষ্প ঘনীভবনের সময় যখন ওই লীনতাপ ত্যাগ করে, তাতে চারপাশের বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হয়।
- বায়ুর সংকোচন – বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিক থেকে যখন ঠান্ডা ও ভারী বায়ু নীচের দিকে নামে তখন ক্রমশ তার চাপ বাড়ে। যতই চাপ বাড়ে ততই সেই বায়ুর আয়তন হ্রাস পায় অর্থাৎ সংকোচন ঘটে, ফলে বায়ু ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়। বায়ু উত্তপ্ত হওয়ার এই পদ্ধতিকে বলে অ্যাডিয়াবেটিক উষ্ণকরণ (adiabatic heating)। [আর যখন ঠিক এর উলটো হয় অর্থাৎ উষ্ণবায়ু হালকা বলে ওপরে ওঠে এবং ওপরে চাপ কম বলে ওই বায়ু প্রসারিত হয়ে শীতল বায়ুতে পরিণত হয়, তাকে অ্যাডিয়াবেটিক শীতলীকরণ (adiabatic cooling) বলে।]
- আগ্নেয়গিরি, প্রস্রবণ প্রভৃতির মাধ্যমে নির্গত ভূগর্ভের তাপ।
- শিলার রাসায়নিক আবহবিকার।
- প্রাণীদেহ থেকে নির্গত তাপ প্রভৃতিও বায়ুমণ্ডলে মিশে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের তাপবলয়গুলির পরিচয় দাও।
পৃথিবীর তাপবলয় –
তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠকে মোট পাঁচটি তাপবলয় বা তাপমণ্ডলে ভাগ করা যায়। এগুলি হল –
উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল –
- অবস্থান – নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 23½° অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল বলে।
- কারণ – সূর্যরশ্মি সারাবছর প্রায় লম্বভাবে পতিত হয় বলে এখানকার বায়ুর তাপমাত্রা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। এজন্য এই অঞ্চলটির নাম উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল। 27°C বা 80°F সমোষ্ণরেখাকে অনেকসময় উষ্ণমণ্ডলের সীমারেখা ধরা হয়। সেক্ষেত্রে নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 30° অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ উষ্ণমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়।
- বৈশিষ্ট্য –- উষ্ণমণ্ডলে সূর্যরশ্মি সারাবছর প্রায় লম্বভাবে পতিত হয়।
- এখানকার গড় তাপমাত্রা সারাবছর বেশি (প্রায় 27°C) থাকে। এ ছাড়া, শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণন্নতার পার্থক্যও কম হয়।
- এখানে সারাবছর দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান থাকে।
- ঋতুপরিবর্তন হয় না বললেই চলে।
 
উত্তর নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল এবং ও দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল –
- অবস্থান – কর্কটক্রান্তিরেখা এবং মকরক্রান্তিরেখা থেকে যথাক্রমে সুমেরুবৃত্ত এবং কুমেরুবৃত্ত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল। এর মধ্যে কর্কটক্রান্তিরেখা (23½° উত্তর) থেকে সুমেরুবৃত্ত (66½° উত্তর) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম উত্তর নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল এবং মকরক্রান্তিরেখা (23½° দক্ষিণ) থেকে কুমেরুবৃত্ত (66½° দক্ষিণ) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল। নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমা হল যথাক্রমে 0°C এবং 27°C।
- বৈশিষ্ট্য –- নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলে সূর্যরশ্মির পতনকোণ উষ্ণমণ্ডল অপেক্ষা কম হয়।
- এখানে সারাবছর দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য বাড়ে বা কমে।
- নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের যে অংশটি কর্কটক্রান্তিরেখা মকরক্রান্তিরেখার কাছাকাছি থাকে সেখানে উষ্ণতা বেশি হয়, তাকে উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল বলে। অপরদিকে, নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের যে অংশটি মেরুবৃত্তের কাছাকাছি থাকে সেখানে উষ্ণতা কম হয়, তাকে শীতল নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল বলে।
 
উত্তর হিমমণ্ডল এবং দক্ষিণ হিমমণ্ডল –
- অবস্থান – সুমেরুবৃত্ত (66½° উত্তর) থেকে সুমেরুবিন্দু (90° উত্তর) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের নাম উত্তর হিমমণ্ডল এবং কুমেরুবৃত্ত (66½° দক্ষিণ) থেকে কুমেরুবিন্দু (90° দক্ষিণ) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের নাম দক্ষিণ হিমমণ্ডল।
- কারণ – উভয়মেরুর চারদিকে সূর্যরশ্মি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে। এর ফলে এই অঞ্চল বছরের বেশ কিছুটা সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। এই অঞ্চলের উষ্ণতা খুবই কম এবং বছরের অধিকাংশ সময় হিমময় বা বরফাবৃত থাকে। এজন্য এই অঞ্চলের নাম হিমমণ্ডল। হিমমণ্ডলের সীমারেখা 0°C থেকে দুই মেরুবিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত।
- বৈশিষ্ট্য –- হিমমণ্ডলে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের তারতম্য অত্যন্ত বেশি। দুই মেরুবিন্দুতে একটানা ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত হয়।
- সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ায় একটানা ছয়মাস দিন থাকার সময়ও বায়ুমণ্ডল বিশেষ একটা উত্তপ্ত হয় না।
- একটানা রাত্রিকালীন সময়ে অরোরা (aurora) বা মেরুজ্যোতির প্রভাবে এই অঞ্চল মৃদু আলোকিত হয়।
 
বিশ্ব উষ্ণায়নের কয়েকটি প্রভাব লেখো।
অথবা, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার জন্য প্রকৃতিতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে অথবা ভবিষ্যতে পড়বে। সেগুলি হল –
- মেরু অঞ্চলে বরফের গলন ও পার্বত্য হিমবাহের গলন – উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার জন্য হিমালয় পর্বতের গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী হিমবাহ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর, দক্ষিণমেরুর হিমবাহও গলে যাচ্ছে।
- সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি – মেরু অঞ্চল এবং পার্বত্য হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের জলতল বেড়ে যাচ্ছে। বিগত শতাব্দীতে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 0.9°C বৃদ্ধির জন্য সমুদ্রজলের উচ্চতা প্রায় 10-12 সেমি বেড়ে গেছে। এর জন্য সমুদ্র উপকূলের নীচু অংশগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
- অধঃক্ষেপণের প্রকৃতি পরিবর্তন – বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাষ্পীভবনের হার ও বাতাসের জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বেড়ে যাবে। বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদির তীব্রতা বাড়বে। অধঃক্ষেপণের বণ্টনে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে বন্যা এবং আর্দ্র অঞ্চলগুলিতে খরা দেখা দেবে।
- শস্য উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধি – কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য প্রধান খাদ্যশস্যগুলির উৎপাদন 10 শতাংশ থেকে 70 শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। ধান, ওট, তামাক, তুলো, পাটের উৎপাদন কমে গেলেও আখ, জোয়ার, বাজরার উৎপাদন বাড়তে পারে। দেখা গেছে হিমাচলের কুলু উপত্যকায় আপেল চাষের সাথে পেয়াজ, রসুনের চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
- কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন – বিশ্ব উষ্ণায়ন কৃষিপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটাবে। এখনকার সেচসেবিত কৃষি অঞ্চলগুলি চারণভূমিতে পরিণত হবে। ধান, পাট, তুলো ক্রান্তীয় অঞ্চলের পরিবর্তে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চাষ হবে। অন্যদিকে, উচ্চ অক্ষাংশের দেশগুলিতে কৃষিপদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
- এল নিনো ও পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব – দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূল বরাবর প্রশান্ত মহাসাগরে হঠাৎ করে দক্ষিণমুখী একধরনের উষ্ণস্রোত সৃষ্টি হয়। এই সমুদ্রস্রোতের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ঘটনাকে এল নিনো বলে। এই স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের জলের উষ্ণতা 1.5 – 2.5°C বেড়ে যায়। এর প্রভাবে পেরু, ইকুয়েডরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ভারতে খরার জন্য এল নিনো দায়ী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ভবিষ্যতে এল নিনোর মতো ঘটনা অনেক বেড়ে যাবে।
ভূমির উচ্চতা কীভাবে বায়ুর তাপ নিয়ন্ত্রণ করে?
অথবা, উচ্চ স্থান শীতল হয় কেন?
অথবা, নিম্নের সমভূমি অপেক্ষা ওপরের পার্বত্য অঞ্চল শীতলতম কেন?
তাপের নিয়ন্ত্রণ –
ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাস পায়। একে বলা হয় তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস-হার (normal lapse rate of temperature)। তাপমাত্রা হ্রাসের এই হার হল প্রতি 1000 মিটারে প্রায় 6.5°C। এজন্য একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও সমতল স্থানের তুলনায় উঁচু স্থানের তাপমাত্রা কম হয়। উদাহরণ – উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা (উচ্চতা 1192 মিটার) এবং ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো (উচ্চতা 2819 মিটার) প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উচ্চতা বেশি হওয়ায় কাম্পালার চেয়ে কুইটোর গড় তাপমাত্রা 7.5°C কম | উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে যায়। কারণ –
- ওপরে বিকিরণ কম – সূর্যতাপে বায়ুমণ্ডল সরাসরি বিশেষ উষ্ণ হয় না। সূর্যতাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উষ্ণ হয় এবং পরে ওই উষ্ণ ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হয়। এজন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে তাপমাত্রা কমে যায়।
- ঘনত্ব কম – ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ঊর্ধ্বে ওঠা যায় তত বায়ুমণ্ডলীয় ভর কমে। বায়ুস্তর পাতলা হয়ে যাওয়ার জন্য বায়ুর তাপ ধারণক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে তাপমাত্রা কম হয়।
- বিকীর্ণ তাপ কম পৌঁছায় – ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপের খুব কম অংশই ওপরে পৌঁছোয়।
- তাপশোষণ কম – ওপরের বায়ুতে ধূলিকণা ও জলীয়বাষ্প কম থাকে বলে ওই বায়ুর তাপশোষণ ও সংরক্ষণ ক্ষমতাও কম।
- বায়ুস্তর পাতলা – বায়ুস্তর ক্রমশ ওপরের দিকে পাতলা হয়ে যায়। তাই ঊর্ধ্বের বায়ু তাড়াতাড়ি তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। এর ফলে উচ্চস্থান শীতল হয় এবং সুউচ্চ পর্বতশিখর তুষারাবৃত থাকে।
সিক্সের গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার যন্ত্রটির পরিচয় দাও ও এর ব্যবহার প্রণালী লেখো।
সিক্সের গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার –
দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উষ্ণতা পরিমাপ করার জন্য যে তাপমান যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়, তার নাম সিক্সের গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ থার্মোমিটার (Six’s Maximum and Minimum Thermometer) | 1782 খ্রিস্টাব্দে জেমস্ সিক্স (James Six) এই তাপমান যন্ত্রটি তৈরি করেন এবং তারই নামানুসারে এই যন্ত্রটিকে সিক্সের থার্মোমিটার বলা হয়। এই যন্ত্রটির সাহায্যে যেমন দিনের (24 ঘণ্টার) সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উষ্ণতা নথিভুক্ত করা যায়, তেমন নথিভুক্ত উষ্ণতার সাহায্যে দিনের গড় উষ্ণতা, মাসের গড় উষ্ণতা এবং বছরের গড় উষ্ণতা নিরূপণ করাও সম্ভব হয়।
থার্মোমিটারের পরিচয় –
- এই থার্মোমিটারটি দেখতে অনেকটা ইংরেজি অক্ষর U -এর মতো, যেটি একটি ফ্রেমের মধ্যে খাড়াভাবে আটকে রাখা থাকে।
- ওই U-আকৃতির থার্মোমিটারটি হল প্রকৃতপক্ষে দুটি বাহু এবং সমব্যাসের সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত কাচের নল বা টিউব।
- ওই দুই বাহুর ওপর দুটি বাল্ব বা কুণ্ড (চিত্রে A এবং B) লাগানো থাকে।
- এই কাচের নল বা টিউবটির দুই বাহুর একটি নির্দিষ্ট অংশ (চিত্রে C এবং D) পর্যন্ত পারদপূর্ণ এবং বাকি অংশ (বামদিকের বাহুর C থেকে A এবং ডানদিকের বাহুর D থেকে P পর্যন্ত) অ্যালকোহলপূর্ণ থাকে।
- দুই বাহুর পারদপ্রান্তের ঠিক ওপরে দুটি হালকা ইস্পাতের সূচক (I1 এবং I2) থাকে, যা উষ্ণতার মান নির্দেশ করে।
- পারদের তুলনায় সূচক দুটি হালকা বলে পারদের ওপর সহজেই ভেসে থাকে।
- সূচক দুটির সঙ্গে স্প্রিং লাগানো থাকে। তাই নলের মধ্যে যখন পারদের উচ্চতা বাড়ে সূচক দুটি ওপরে উঠে যায়, কিন্তু পারদের উচ্চতা কমলেও সূচক দুটি নীচে নামে না। কারণ স্প্রিং লাগানো থাকে বলে সহজেই নলের গায়ে আটকে যায়।
- U-আকৃতির ওই কাচের নলের দুই বাহুর দুদিকে সেলসিয়াস ও ফারনেহাইট স্কেল আঁকা থাকে। এর মধ্যে বামদিকের নলের অর্থাৎ লঘিষ্ঠ থার্মোমিটারের দুদিকের তাপমান স্কেল ওপর থেকে নীচের দিকে বাড়ে এবং ডানদিকের নলে বা গরিষ্ঠ থার্মোমিটারের তাপমান স্কেল নীচে থেকে ওপরের দিকে বাড়ে।

থার্মোমিটারের ব্যবহার প্রণালী –
- প্রথমে কাচের নলটির দুই বাহুর মধ্যে থাকা ইস্পাতের সূচক দুটিকে (I1 এবং I2) চুম্বক দিয়ে যথাক্রমে C এবং D পারদপ্রান্তে স্পর্শ করাতে হবে।
- যেহেতু বায়ুর উষ্ণতা বাড়লে অ্যালকোহল আয়তনে বাড়ে, তাই উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বামদিকে লঘিষ্ঠ থার্মোমিটারের অ্যালকোহল পারদপ্রান্ত (চিত্রে C) -কে নীচের দিকে ঠেলে দেয়। এর ফলে ডানদিকে গরিষ্ঠ থার্মোমিটারের পারদপ্রান্ত (চিত্রে D) ওপরের দিকে ওঠে এবং তার সঙ্গে ইস্পাতের সূচক (I2) -টিও ওপরে ওঠে। এইভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত বায়ুর উষ্ণতা বাড়ে, পারদপ্রান্ত এবং তার সূচকও (I2) ওপরে ওঠে।
- কিন্তু এরপর বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে পারদপ্রান্ত নীচে নামলেও সূচকটি (I2) স্প্রিং-এর সাহায্যে সেই দিনের কাচের নলের গায়ে আটকে থাকে, যা দিনের সর্বোচ্চ উষ্ণতা নির্দেশ করে।
- কাচের নলের গায়ে আঁকা সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের সাহায্যে সেই দিনের সর্বোচ্চ উষ্ণতা জানা যায়।
- উষ্ণতা কমলে অ্যালকোহল সংকুচিত হয় বলে বামদিকের লঘিষ্ঠ থার্মোমিটারের পারদপ্রান্ত (চিত্রে C) ওপরের দিকে উঠতে থাকে এবং তার চাপে সূচক (I1) -টিও ওপরে ওঠে। এভাবে যতক্ষণ উষ্ণতা কমে লঘিষ্ঠ থার্মোমিটারের পারদপ্রান্ত ও সূচক ওপরের দিকে উঠতে থাকে।
- এরপর যখন উষ্ণতা আবার বাড়ে, আগের মতো অ্যালকোহল আয়তনে বাড়ে এবং তার সঙ্গে পারদপ্রান্ত নীচের দিকে নামতে থাকলেও সূচকটি (I1) স্প্রিং -এর সাহায্যে নলের গায়ে একই জায়গায় আটকে থাকে। এই অবস্থার সূচকটির (I1) নিম্নপ্রান্ত সেই দিনের সর্বনিম্ন উষ্ণতাকে নির্দেশ করে, যা নলের গায়ে আঁকা স্কেলের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়।
সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন উষ্ণতা নথিভুক্ত করার পদ্ধতি –
U-আকৃতির কাচের নল বা টিউবটির ডানদিকের বাহুর অর্থাৎ গরিষ্ঠ থার্মোমিটারের সূচকটির (I2) নিম্নপ্রান্তের অবস্থা দেখে সর্বোচ্চ উষ্ণতা ও বামদিকের বাহুর অর্থাৎ লঘিষ্ঠ থার্মোমিটারের সূচকটির (I1) নিম্নপ্রান্তের অবস্থান দেখে সর্বনিম্ন উষ্ণতা নথিভুক্ত করা হয়। সাধারণত প্রতি 24 ঘণ্টা অন্তর নির্দিষ্ট সময়ে বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উষ্ণতা নথিভুক্ত করা হয়। প্রতিদিন এভাবে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উষ্ণতা নথিভুক্ত করা হলে পরের দিনের সঠিক উষ্ণতা পাবার জন্য চুম্বকের সাহায্যে সূচক দুটিকে (I1 এবং I2) দুই বাহুর পারদপ্রান্তে লাগিয়ে দিতে হয়।
আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
 





মন্তব্য করুন