আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় ‘ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ‘ এর ভারতের জলবায়ু বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষা কিংবা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়ই এই ধরনের প্রশ্নগুলো পরীক্ষায় আসে। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।
ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ – ভারতের জলবায়ু – সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি
শীতকালে ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়?
শীতকালে ভারতের দুটি প্রধান অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। এই দুটি অঞ্চল হল – উত্তর-পশ্চিম ভারত এবং ভারতের পূর্ব উপকূলের দক্ষিণাংশ বা করমণ্ডল উপকূল বা তামিলনাডুর উপকূল।
ভারতের কোন্ কোন্ অংশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেমি-র বেশি?
ভারতে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, পূর্ব হিমালয়, মিজোরাম, উত্তরবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেন্টিমিটারের বেশি।
দুটি ভিন্ন ঋতুতে হয় এমন দুটি ঝড়ের নাম লেখো।
গ্রীষ্মকালে নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে ঘূর্ণিঝড় হয় পশ্চিমবঙ্গে তাকে কালবৈশাখী বলা হয় এবং আশ্বিন মাস অর্থাৎ শরৎকালে ভারতের পূর্ব উপকূল অঞ্চলে যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় হয়, পশ্চিমবঙ্গে সেটি আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
আশ্বিনের ঝড় কাকে বলে?
শরৎকালে ভারতের পূর্ব উপকূল অঞ্চলে মাঝেমধ্যে ঘূর্ণিঝড়সহ বৃষ্টিপাত হয়। এই ঝড়ের সময় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি না হলেও প্রলয়ংকরী ঝড়ের কারণে জীবনহানি এবং ধনসম্পত্তির ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত আশ্বিন মাসে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়, তাই একে ‘আশ্বিনের ঝড়’ বলা হয়।
জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে?
জলবায়ুর দুই প্রধান উপাদান – উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত দ্বারা জলবায়ু অঞ্চল নির্ধারণ করা হয়। একটি জলবায়ু অঞ্চল এমন একটি এলাকা, যেখানে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি এবং অন্যান্য আবহাওয়ার উপাদানগুলো মোটামুটি একই রকম থাকে।
মৌসুমি বায়ু কাকে বলে?
অথবা মৌসুমী কথাটির অর্থ কি?
পৃথিবীতে যত ধরনের সাময়িক বায়ু প্রবাহিত হয়, তাদের মধ্যে মৌসুমি বায়ু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে। ‘মৌসুমি’ শব্দটি আরবি শব্দ ‘মৌসিম’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ঋতু। ঋতু অনুসারে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে মৌসুমি বায়ু বলা হয়। ভারতে দুটি বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়—একটি গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং অপরটি শীতকালে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু।
ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়?
ভারতের যেসব অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত হয়, সেগুলি হলো —
1. রাজস্থান ও গুজরাতের মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল।
2. কাশ্মীরের লাদাখ মালভূমি।
3. পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢালে অবস্থিত কর্ণাটক মালভূমি এবং মেঘালয় মালভূমির উত্তরে অবস্থিত শিলং।
মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির কারণ কী?
গ্রীষ্মকালের শেষে বঙ্গোপসাগর থেকে আগত আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি বাংলাদেশের সমভূমি অতিক্রম করে পূর্ব হিমালয় ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করার আগেই মেঘালয় মালভূমির গারো ও খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে প্রথম বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের নাম কী?
পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চল হলো মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণভাগে চেরাপুঞ্জির নিকটে অবস্থিত মৌসিনরাম। এখানে বার্ষিক প্রায় 1187 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
খরা কাকে বলে?
স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে পরিবেশে যে জলবায়ুগত প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হয়, তাকে খরা বলে। বৃষ্টিপাত যদি স্বাভাবিকের তুলনায় 25% কম হয়, তাকে স্বল্প খরা, 50% কম হলে মাঝারি খরা এবং 75% কম হলে তীব্র খরা বলে। খরার ফলে তীব্র জলাভাব দেখা দেয়, যা কৃষি, সেচ ও পানীয় জলের প্রাপ্যতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ভারতের সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চল দুটি কোথায় কোথায় অবস্থিত?
ভারতের সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চল: মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত মৌসিনরাম (চেরাপুঞ্জির কাছাকাছি) ভারতের সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত স্থান। [এ ছাড়া, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে আরব সাগরীয় উপকূল অঞ্চল এবং পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলও সর্বাধিক বর্ষণসিক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত।]
ভারতের সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চল: রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চল। [এ ছাড়া, জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ মালভূমিও সর্বনিম্ন বর্ষণসিক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত।]
শীতকালে তুষারপাত হয় ভারতের এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখো।
শীতকালে তুষারপাত হয় ভারতের যে দুটি রাজ্যে, সেগুলো হলো – 1. জম্মু ও কাশ্মীর এবং 2. হিমাচল প্রদেশ।
কালবৈশাখী ঝড় কী?
গ্রীষ্মকালের শুরুতে বিকেলবেলায় পশ্চিমবঙ্গ ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে মাঝে মাঝে বজ্রবিদ্যুৎ ও বৃষ্টিসহ যে ভীষণ ঝড়ের আবির্ভাব ঘটে, তাকে কালবৈশাখী ঝড় বলে। এই ঝড় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে, তাই একে নরওয়েস্টার (Nor’wester)-ও বলা হয়।
আম্রবৃষ্টি কাকে বলে?
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক ও কেরালা রাজ্যে গ্রীষ্মকালে এপ্রিল মাসে যে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটে, তাকে আম্রবৃষ্টি বলা হয়। আরব সাগর থেকে আগত এই বৃষ্টিপাত আমের ফলনে সাহায্য করে বলে একে আম্রবৃষ্টি বলে। দক্ষিণ ভারতের আমচাষিদের কাছে আম্রবৃষ্টি আশীর্বাদস্বরূপ।
মৌসুমি বিস্ফোরণের সংজ্ঞা দাও।
গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে, বিশেষত মে মাসে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে এক গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপের আকর্ষণে ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ এলাকা থেকে আর্দ্র বায়ু আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখায় বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে। এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। গ্রীষ্মের অসহ্য গরমের মধ্যে এই আর্দ্র বায়ু ভারতে প্রবেশ করে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে তাপমাত্রার হ্রাস ঘটায় এবং ভারতে বর্ষাকালের সূচনা ঘটায়, যা মৌসুমি বিস্ফোরণ (Burst of Monsoon) নামে পরিচিত।
মৌসুমি বায়ুর অনিশ্চয়তা বলতে কী বোঝ?
ভারতের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় 72 ভাগই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের সময়ে ঘটে। তবে, এই বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর অনিশ্চয়তা। কখনও এটি স্বাভাবিক প্রত্যাবর্তনের সময়ের আগেই বিদায় নেয়, আবার কখনও থাকে ভীষণ সক্রিয়, যার ফলে একটানা প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে কখনও অতিবৃষ্টির ফলে বন্যা হয়, আবার কখনও অনাবৃষ্টির কারণে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কী?
ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে শীতকালে যে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণাবর্তের আগমন ঘটে, তাকে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে। শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট এই ঘূর্ণাবর্ত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে ইরাক, ইরান, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ অতিক্রম করে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পৌঁছায় এবং জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে প্রবেশ করে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত ঘটায়। পশ্চিম দিক থেকে আসা এই ঘূর্ণাবর্তগুলি শীতের শান্ত আবহাওয়াকে বিঘ্নিত করে বলে এদের ‘পশ্চিমি ঝামেলা’ নামেও অভিহিত করা হয়।
মরুস্থলী নামকরণের কারণ কী?
ভারতের পশ্চিম প্রান্তে, বিশেষত পশ্চিম রাজস্থানে, বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। সেই জন্য এখানে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। তাই এই শুষ্ক, নিষ্প্রাণ মরু অঞ্চলকে মরুস্থলী বা ‘মৃতের দেশ’ বলা হয়।
শীতকালে ভারতের কোথায় কোথায় বৃষ্টিপাত হয়?
প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে তামিলনাড়ুর উপকূলে এবং ভূমধ্যসাগর থেকে আসা পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়।
জেট বায়ু কী?
ট্রপোস্ফিয়ারের উপরের অংশে অতিদ্রুত প্রবাহিত পশ্চিমা বায়ু প্রবাহকে জেট বায়ু বলে। এই বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় 200-400 কিমি পর্যন্ত হতে পারে। এই বায়ু প্রবাহ ভারতের জলবায়ুকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে।
লু বলতে কী বোঝ?
মার্চ-এপ্রিল মাসে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেড়ে যায়। এর ফলে মাঝে মাঝে শুষ্ক ও উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহ এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। এই ধরনের উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহকে লু বলে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় 30-35 কিমি পর্যন্ত হতে পারে।
ভারতের কোথায় কোথায় লু বায়ু প্রবাহিত হয়?
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি এবং উত্তর গুজরাতে লু বায়ু প্রবাহিত হয়। এছাড়া পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলাতেও লু বায়ু প্রবাহিত হয়।
আঁধি কাকে বলে?
গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমি অঞ্চলে যে প্রবল ধূলিঝড় হয়, তাকে আঁধি বলে। এই ঝড়ের প্রভাবে প্রচুর ধুলো বাতাসে উড়ে। এই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় 50-60 কিমি।
মালাবার উপকূলে প্রবল বৃষ্টি হওয়ার কারণ কী?
জলীয়বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা মালাবার উপকূলে এসে পৌঁছায়। এই বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং তার ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। মালাবার উপকূলে বছরে 300-500 সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়।
তামিলনাড়ু উপকূলে বছরে দুবার বর্ষাকালের কারণ কী?
তামিলনাড়ু উপকূলে বছরে দুবার বর্ষাকালের কারণ –
1. গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরীয় শাখা প্রথমবার বৃষ্টিপাত ঘটায়।
2. আবার শরৎকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রত্যাবর্তনের সময় বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে এবং তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে দ্বিতীয়বার বৃষ্টিপাত ঘটায়।
ভারতে বন্যার কারণ কী?
ভারতে বন্যার কারণ –
1.স্বাভাবিক সময়ের আগে বর্ষা শুরু হলে,
2. স্বাভাবিক সময়ের পরে বর্ষা শেষ হলে,
3. অনিয়মিত এবং অতিরিক্ত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটলে।
4. কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে একটানা বৃষ্টিপাত হলেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
ভারতে খরার কারণ কী?
ভারতে খরার কারণ –
1. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বিলম্বিত প্রবেশ,
2. স্বাভাবিক সময়ের আগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন,
3. জলীয়বাষ্পের অভাবে বৃষ্টি না হলে ভারতে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ছেদ বা break of monsoon কাকে বলে?
বর্ষাকালে, বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট মাসে, বায়ুচাপ বলয়ের পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ মাঝে মাঝে বাধাগ্রস্ত হয়। এই সময় বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি ঘটে, একেই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ছেদ বা Break of Monsoon বলে।
ভারতের জলবায়ুতে লা নিনার প্রভাব লেখো।
অর্থের দিক থেকে লা নিনা (ছোট্ট মেয়ে) হল এল নিনো (শিশু খ্রিস্ট বা ছোট্ট ছেলে)-র ঠিক বিপরীত। লক্ষ্য করা গেছে, কোনো কোনো বছর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব প্রান্ত থেকে খরা সৃষ্টিকারী এল নিনো অন্তর্হিত হলে, পশ্চিম প্রান্তে গভীর নিম্নচাপসহ ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এল নিনোর ঠিক বিপরীত এই পর্যায়টিকে লা নিনা নামে অভিহিত করা হয়। লা নিনার এই বছরগুলিতে ভারতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং বেশি ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা বাড়ে এবং বেশি আর্দ্রতার কারণে শীতকালে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া তৈরি হয়।
আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে মরুভূমি রয়েছে কেন?
আরাবল্লি পর্বত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রসারিত। এই অবস্থানের কারণে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ওই পর্বতের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে আরও উত্তরে চলে যায়। এর ফলে আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিম দিকে অবস্থিত অঞ্চলটি প্রায় বৃষ্টিহীন থাকে, যা ক্রমশ মরুভূমির সৃষ্টি করেছে।
পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটে কেন?
আরব সাগরের ওপর দিয়ে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সরাসরি এসে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই বায়ু ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এর ফলে পশ্চিমঘাটের পশ্চিম ঢালে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
হিমালয় পর্বত ভারতের জলবায়ুকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে?
হিমালয় পর্বত পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণে বাধা পেয়ে ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এছাড়াও, মধ্য এশিয়ার শীতল বায়ু হিমালয় পর্বতে প্রতিহত হয় এবং ভারতে প্রবেশ করতে পারে না। এর ফলে ভারত তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পায়।
মৌসুমি বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলে কেন?
মৌসুমি কথাটি এসেছে আরবি শব্দ ‘মৌসম’ থেকে, যার অর্থ ঋতু। ঋতুভেদে এই বায়ু ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয়, শীতকালে তার বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই ঋতুভেদে প্রবাহিত হওয়ার কারণে এই বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলা হয়।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আর্দ্র কেন?
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর বা ভারত মহাসাগরের দিক থেকে আসে। যেহেতু এই বায়ু সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাই এতে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। এজন্য এই বায়ু আর্দ্র।
কালবৈশাখীর আর-এক নাম ‘নরওয়েস্টার’ কেন?
গ্রীষ্মকালে অধিক উষ্ণতার কারণে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়। এর ফলে সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপ প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করে, যার কারণে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটে। এই ঝড় উত্তরের পশ্চিম দিক থেকে আসে, তাই একে ‘নরওয়েস্টার’ বলা হয়।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় ‘ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ’ এর ভারতের জলবায়ু বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলি নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়শই আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনার পড়াশোনায় সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, আপনি আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি যত দ্রুত সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া, পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদেরও সহায়ক হতে পারেন।
ধন্যবাদ!