আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” -এর “হিমবাহের বিভিন্ন কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

হিমবাহ বলতে কী বোঝ?
আকাশ থেকে যে তুষারপাত হয়, সেই তুষার প্রকৃতিতে খুবই নরম। কিন্তু হিমরেখার ঊর্ধ্বে ক্রমশ জমা হওয়া তুষারের সম্মিলিত চাপে নীচের তুষার জমাট বেঁধে প্রথমে ফার্ন ও পরে কঠিন বরফে পরিণত হয়। বরফের পরিমাণ যখন অনেক বেড়ে যায়, তখন তা ওপরের বরফের চাপে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে থাকে। খুব ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া সেই বরফের নদীকেই বলা হয় হিমবাহ। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হিমবাহ যখন নামতে থাকে তখন নীচের দিকে প্রচণ্ড চাপ ও ঘর্ষণের জন্য হিমবাহের তলদেশে তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তলদেশের বরফ গলে গিয়ে অবতরণ-পথকে পিচ্ছিল করে দেয়। তখন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কঠিন বরফযুক্ত হিমবাহের নীচের দিকে নেমে আসা কিছুটা সহজ হয়ে যায়।
হিমবাহ কী কী প্রক্রিয়ায় ক্ষয় করে?
হিমবাহ সাধারণত দুইভাবে ক্ষয় করে থাকে –
- উৎপাটন এবং
- অবঘর্ষ।
উৎপাটন – প্রবহমান হিমবাহের চাপে পর্বতের দেহ থেকে পাথর খুলে আসে। একে বলা হয় উৎপাটন বা প্লাকিং।
অবঘর্ষ – হিমবাহের সঙ্গে যেসব পাথরখণ্ড থাকে সেগুলির সঙ্গে সংঘর্ষে হিমবাহ উপত্যকা বা পর্বতগাত্র ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত এবং মসৃণ হয়, একে বলা হয় অবঘর্ষ।
পৃথিবীর দীর্ঘতম, দ্রুততম এবং ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহের সম্পর্কে কী জান?
পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ – অ্যান্টার্কটিকার ল্যামবার্ট হিমবাহ পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ। এটি 400 কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ।
পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহ – গ্রিনল্যান্ডের জ্যাকোবশাভন পৃথিবীর প্রধান হিমবাহগুলির মধ্যে দ্রুততম। বর্তমানে এটি দিনে প্রায় 45 মিটার প্রবাহিত হয়।
ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ – কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত সিয়াচেন ভারতের দীর্ঘতম তথা বৃহত্তম হিমবাহ। এই হিমবাহের দৈর্ঘ্য প্রায় 76 কিলোমিটার।
হিমবাহের শ্রেণিবিভাগ করো।
অবস্থান অনুযায়ী হিমবাহ তিন রকমের হয় –
মহাদেশীয় হিমবাহ –
গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকা (>50000 বর্গকিমি) জুড়ে পাতের আকারে অবস্থিত হিমবাহ হল মহাদেশীয় হিমবাহ।
অবস্থান – অ্যান্টার্কটিকা (প্রায় 85%) এবং গ্রিনল্যান্ডে এই ধরনের হিমবাহ রয়েছে।
বৈশিষ্ট্য –
- এগুলি কেন্দ্র থেকে পাতের আকারে চারদিকে প্রসারিত। এগুলি দেখতে অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মতো।
- এই হিমবাহের প্রান্তদেশের বরফ খুব পাতলা হয়।
- মহাদেশীয় হিমবাহ হিমসোপান সৃষ্টি করে।
- মূলত কোয়াটারনারি ভূতাত্ত্বিক যুগে এই হিমবাহ সঞ্চিত হয়েছিল এমন ধারণা করা হয়।
উদাহরণ – অ্যান্টার্কটিকার ল্যামবার্ট, গ্রিনল্যান্ড আইস শিট।
পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ –
পর্বতের উঁচু অংশ থেকে হিমবাহ যখন নীচের দিকে ধীরে ধীরে নামতে থাকে তখন তাকে পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ বলে।
বৈশিষ্ট্য –
- মনে করা হয় প্রাচীন তুষার যুগ থেকে এই বরফ সঞ্চিত হতে থাকে।
- পার্বত্য হিমবাহ থেকেই মূলত নদীর সৃষ্টি হয়।
- পার্বত্য হিমবাহ নানা ধরনের ফাটলযুক্ত হয়।
উদাহরণ – আলাস্কার হুবার্ড, ভারতের সিয়াচেন।
পাদদেশীয় হিমবাহ –
হিমবাহ যখন উৎস অঞ্চল থেকে পর্বতের নীচের দিকে নেমে এসে পর্বতের পাদদেশ পর্যন্ত প্রসারিত হয়, তখন তাকে পাদদেশীয় হিমবাহ বলে।
বৈশিষ্ট্য –
- এগুলির আকার অপেক্ষাকৃত ছোটো হয়।
- পাদদেশীয় হিমবাহের সামনে গোলাকার অংশকে লোব বা পাখা (fan) বলে।
- উচ্চ অক্ষাংশে পর্বতের পাদদেশের সমতল অংশে দেখা যায়।
- একাধিক উপত্যকা হিমবাহ পরস্পর মিলিত হয়ে গঠিত হয়।
উদাহরণ – আলাস্কার মালাসপিনা।
নদী উপলকা ও হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।
নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য –
| বিষয় | নদী উপত্যকা | হিমবাহ উপত্যকা | 
| উপত্যকার অবস্থান | শুক-মরু অঞ্চল ও তুষারাবৃত অঞ্চল ছাড়া নদী উপত্যকা ভূপৃষ্ঠের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। | হিমবাহ উপত্যকা শুধুমাত্র সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চল ও শীতল মেরু অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। | 
| উপত্যকার আকৃতি | শুষ্ক বা অর্ধ-শুষ্ক অঞ্চলে পার্শ্বক্ষয়ের চেয়ে নিম্নক্ষয়ের মাত্রা বেশি হয় বলে ‘I’ আকৃতির এবং আর্দ্র বা আর্দ্রপ্রায় অঞ্চলে নিম্নক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পার্শ্বক্ষয়ও হতে থাকে বলে ‘V’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়। | পার্বত্য অঞ্চলে যে উপত্যকার মধ্যে দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয়, সেখানে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় হিমবাহ উপত্যকার তলদেশ ও পার্শ্বদেশ প্রায় সমানভাবে ক্ষয় ও মসৃণ হয় এবং এর ফলে উপত্যকার আকৃতি ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়। | 
| উপত্যকায় সঞ্চিত পদার্থসমূহের আকৃতি | নদীবাহিত পাথরগুলি পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে বা নদীখাতের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ক্রমশ গোলাকার ও মসৃণ হয় এবং শেষে বালি ও পলিতে পরিণত হয়। | হিমবাহের শেষপ্রান্তে উপত্যকায় পড়ে-থাকা হিমবাহবাহিত নানা আয়তনের পাথরগুলি এবড়োখেবড়ো, অমসৃণ ও কোণযুক্ত হয়। | 
মহাদেশীয় হিমবাহ ও উপত্যকা হিমবাহ পার্থক্য মধ্যে লেখো।
মহাদেশীয় হিমবাহ ও উপত্যকা হিমবাহের পার্থক্যগুলি হল –
| বিষয় | মহাদেশীয় হিমবাহ | উপত্যকা হিমবাহ | 
| ধারণা | অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডে সৃষ্ট হিমবাহ হল মহাদেশীয় হিমবাহ। | পর্বতের উপত্যকায় হিমবাহ গঠিত হলে সেটি উপত্যকা হিমবাহ। | 
| আয়তন | মহাদেশীয় হিমবাহ আয়তনে সুবিশাল হয়ে থাকে। | এটি আয়তনে অপেক্ষাকৃত ছোটো হয়। | 
| গতিপ্রকৃতি | মহাদেশীয় হিমবাহ সমগ্র মহাদেশ জুড়ে সবদিক থেকে প্রবাহিত হয়। | এটি পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বরাবর প্রবাহিত হয়। | 
| গভীরতা | মহাদেশীয় হিমবাহে বরফের গভীরতা খুব বেশি। | বরফের গভীরতা অপেক্ষাকৃত কম হয়। | 
ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত গঠিত হয় কেন?
পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে মূল হিমবাহ উপত্যকা এবং শাখা-হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে গভীরতার পার্থক্য হয়। এর কারণে উভয়ের মিলনস্থলে কম গভীরতাবিশিষ্ট শাখা-হিমবাহ উপত্যকাটি মূল হিমবাহের উপত্যকার ওপর ‘ঝুলন্ত উপত্যকা’-রূপে অবস্থান করে।
পরবর্তীকালে, উপত্যকা দুটিতে হিমবাহ গলে গিয়ে নদী উৎপন্ন হয়। উচ্চতা ও ঢালের পার্থক্যের কারণে কম গভীরতাবিশিষ্ট উপত্যকার নদীটি নীচে অবস্থিত প্রধান উপত্যকার ওপর প্রবল বেগে পতিত হয়। তাই ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। যেমন বদ্রীনাথের কাছে অবস্থিত বসুধারা জলপ্রপাত।
ক্রেভাস ও বার্গস্রুন্ড কীভাবে তৈরি হয়?
ক্রেভাস – হিমবাহ যখন নীচের দিকে নেমে আসে তখন তার পৃষ্ঠদেশ বেশ জমাট ও মসৃণ থাকে। এজন্য বন্ধুর পর্বতের গা বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসার সময় ঢালের মুখে এলে হিমবাহের পৃষ্ঠদেশে যথেষ্ট টান পড়ে এবং সেই অংশে চিড় বা ফাটলের সৃষ্টি হয়। হিমবাহের পৃষ্ঠদেশের সেই চিড় বা ফাটলকে বলা হয় ক্রেভাস। ক্রেভাসগুলি কখনও লম্বালম্বিভাবে, আবার কখনও আড়াআড়িভাবে সৃষ্টি হয়।

বার্গস্রুন্ড – হিমবাহ যখন নীচের দিকে নামে, তখন অনেক সময় বন্ধুর পর্বতের খাঁজকাটা গা এবং হিমবাহের মধ্যে ফাঁকের সৃষ্টি হয়। সেই ফাঁককে বলা হয় বার্গস্রুন্ড। এই ফাটল হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে হিমবাহের তলদেশ পর্যন্ত প্রসারিত হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস হালকা তুষার দিয়ে ঢাকা থাকে বলে দূর থেকে এদের উপস্থিতি বোঝা যায় না। তাই শীতকালে পর্বত অভিযাত্রীদের কাছে এটি বিপদের বিষয়।
বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাস -এর পার্থক্যগুলি হল –
| বিষয় | বার্গস্রুন্ড | ক্রেভাস | 
| ধারণা | করি হিমবাহ ও পর্বতের খাড়া চালের মধ্যে সৃষ্ট ফাঁক হল বার্গস্রুন্ড। | পর্বতের চাল বরাবর হিমবাহ নামার সময় হিমবাহের গায়ে সৃষ্ট ফাটল হল ক্রেভাস। | 
| বিস্তৃতি | বার্গস্রুন্ড হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ থেকে হিমবাহের তলদেশ পর্যন্ত প্রসারিত হয়। | এটি হিমবাহের গা বরাবর অবস্থান করে। | 
| গঠন | এটি উল্লম্বভাবে নখের আকারে অবস্থান করে। | এটি সমান্তরাল ও আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে। | 
আদর্শ হিমবাহ তৈরির পদ্ধতিটি লেখো।
হিমবাহ তৈরির পদ্ধতিটি বেশ জটিল। কয়েকটি ধাপের মধ্যে দিয়ে এই হিমবাহ তৈরি হয়।
- ঊর্ধ্বপাতন (sublimation) – এই পদ্ধতিতে বরফ প্রত্যক্ষভাবে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়।
- পুনর্কেলাসীভবন (recrystallization) – ছোটো ছোটো কেলাস ভেঙে সম্মিলিত হয়ে বড়ো কেলাসে রূপান্তরিত হয়। এর মাধ্যমে তুষার থেকে বরফে পরিণত হয়।
- গলন (melting) – বরফ গলে জল এবং জলে জমে পুনরায় বরফে পরিগত হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমেই হিমবাহ গঠনের কাজ সম্পূর্ণ হতে থাকে।
- পুনঃশিলীভবন (regelation) – চাপের কারণে বরফ গলে জলে পরিণত হয় এবং চাপ হ্রাস পেয়ে আবার বরফ জমাট বাঁধে। এর ফলে বরফের অভ্যন্তরীণ গঠনের পরিবর্তন হয় যা হিমবাহ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
- সংবদ্ধতা (compactness) – অতিরিক্ত তুষারপাতের কারণে নীচের স্তর ওপরের স্তরের চাপে আরও সংঘবদ্ধ হয়ে কঠিন ও ঘন বরফের সৃষ্টি করে।
গ্রাবরেখা কী? শ্রেণিবিভাগ করো।
হিমবাহ যেসব তীক্ষ্ণ, কোণাকার ও অবাছাই ক্ষয়িত পদার্থ বহন করে সেগুলি হিমবাহের সামনে, ভেতরে, পাশে সঞ্চিত হয়। একেই গ্রাবরেখা বলে।
শ্রেণিবিভাগ – অবস্থান অনুযায়ী গ্রাবরেখা অনেকরকম হতে পারে।
- হিমবাহের গতিপথের দুপাশে যে গ্রাবরেখা থাকে, তাকে পার্শ্ব গ্রাবরেখা বলে।দুটি পার্শ্ব গ্রাবরেখা মিলে তৈরি হয় মধ্য গ্রাবরেখা।
- হিমবাহ যেখানে গলে যায় সেখানে যে গ্রাবরেখা তৈরি হয়, তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
- হিমবাহের তলায় বা নীচে যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তার নাম ভূমি গ্রাবরেখা।
- অনেকসময় গ্রাবরেখাগুলি বলয়ের আকারে জমা হয়, তাকে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে।
- একটি গ্রাবরেখা অন্য গ্রাবরেখার ওপর সঞ্চিত হলে, তাকে রোজেন গ্রাবরেখা বলে।
এ ছাড়া, অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা, স্তরায়িত গ্রাবরেখা এবং আবদ্ধ গ্রাবরেখা, তলদেশ গ্রাবরেখা ইত্যাদিও গঠিত হতে পারে।
নদী উপত্যকা ‘I’ বা ‘V’-আকৃতির, কিন্তু হিমবাহ উপত্যকা ‘U’ আকৃতির হয় কেন?
নদী উপত্যকার আকৃতি ‘I’ অথবা ‘V’ -এর মতো হয়। পার্বত্য অংশে নদীর ঢাল খুব বেশি থাকে বলে নদী প্রবলবেগে নীচের দিকে নামতে থাকে। সেজন্য নদীর নিম্নক্ষয় পার্শ্বক্ষয়ের থেকে বেশি হয়। এ ছাড়া আবহবিকার, ধস, জলপ্রবাহ প্রভৃতি কারণে নদী উপত্যকা ‘I’ বা ‘V’ -এর মতো দেখতে হয়।
কিন্তু পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ যখন খুব ধীরগতিতে নামে তখন অবঘর্ষ এবং উৎপাটন প্রক্রিয়ায় নিম্নক্ষয় এবং পার্শ্বক্ষয় সমানভাবেই হয়। তাই এই উপত্যকাগুলি ‘U’ -এর মতো হয়ে যায়।
পৃথিবীর বৃহত্তম সুপেয় জলের সঞ্চয় হিসেবে হিমবাহের গুরুত্ব কতখানি?
হিমবাহ কেবল একটি বরফের নদী নয়, সে যেমন ভূমিরূপের পরিবর্তন করে, তেমনি জলবায়ুর পরিবর্তনও করে। এসব বাদ দিয়েও বলা যায় হিমবাহ হল সুপেয় জলের জমাটবদ্ধ রূপ।
- পৃথিবীর মোট জলের 97.20 শতাংশ সমুদ্রজল। এই জল পানের অযোগ্য।
- বাকি 2.80 শতাংশ জল পানযোগ্য বা সুপেয়। এই জলের মাত্র 0.0001 ভাগ নদনদীতে, 0.9999 ভাগ ভৌমজল হিসেবে এবং বাকি 2.15 শতাংশ বরফ হিসেবে জমে রয়েছে। অর্থাৎ পৃথিবীতে যত পানীয় জলের সঞ্চয় রয়েছে তার 77 ভাগই হিমবাহ হিসেবে জমাট বেঁধে রয়েছে। এই বরফের 90 শতাংশ রয়েছে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে। এমনকি আমাদের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু নদীও হিমবাহ থেকেই সৃষ্ট। পানীয় জলের সংরক্ষণ করতে হলে অবশ্যই হিমবাহ সংরক্ষণে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
ফিয়র্ড ও ফিয়ার্ড -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ফিয়র্ড ও ফিয়ার্ড -এর পার্থক্যগুলি হল –
| বিষয় | ফিয়র্ড | ফিয়ার্ড | 
| ধারণা | মেরু অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিকট হিমবাহসৃষ্ট সুগভীর উপত্যকা সমুদ্রজলে ডুবে থাকলে, তাকে ফিয়র্ড বলে। | মেরু অঞ্চলের নিকট হিমবাহ সৃষ্ট অগভীর উপত্যকা সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হলে তাকে ফিয়ার্ড বলে। | 
| দৈর্ঘ্য | ফিয়র্ড খুব বড়ো, গভীর ও দীর্ঘ হয়। | ফিয়ার্ডের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কম হয়। | 
| ঢাল | ফিয়র্ডের পার্শ্বদেশ খুব খাড়া হয়। | এর দুই পার্শ্বদেশের ঢাল কম হয়। | 
রসে মতানে ভূমিরূপের প্রতিবাত ঢাল মসৃণ এবং অনুবাত ঢাল অমসৃণ হয় কেন?
পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের প্রবাহপথে কোনো কঠিন শিলাখণ্ড বা ঢিপি অবস্থান করলে ঢিপির প্রতিবাত ঢালে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্য হয়। এর ফলে ওই ঢিপির প্রতিবাত ঢালটি ক্রমশ মসৃণ হয়ে ওঠে। কিন্তু ঢিপির বিপরীত দিকে বা অনুবাত ঢালে হিমবাহ উৎপাটন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফাটলযুক্ত শিলাকে অপসারণ করে। এজন্য অনুবাত ঢালটি এবড়োখেবড়ো ও অমসৃণ হয়।
রসে মতানে ও ড্রামলিন -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
রসে মতানে ও ড্রামলিনের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
| বিষয় | রসে মতানে | ড্রামলিন | 
| ভূমিরূপের প্রকৃতি | হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে রসে মতানে গঠিত হয়। | হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয়ের ফলে ড্রামলিন তৈরি হয়। | 
| আকৃতি | ঢিপির মতো আকৃতির শিলাস্তূপের একদিক মসৃণ এবং অন্যদিক অমসৃণ হয়। | ড্রামলিন দেখতে ওলটানো চামচের মতো হয়। | 
| অবস্থান | উচ্চ পার্বত্য অংশে দেখা যায়। | পর্বতের পাদদেশে দেখা যায়। | 
| প্রকৃতি ও গঠন | এটি কঠিন শিলাখণ্ডের ওপর গড়ে ওঠে। | হিমবাহ ও জলধারাবাহিত কাদা, নুড়ি, পাথর সঞ্চিত হয়ে গড়ে ওঠে। | 
হিমসিঁড়ি কীভাবে গড়ে ওঠে?
সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে হিমবাহ যখন উপত্যকার মধ্য দিয়ে নীচের দিকে নেমে আসে তখন যদি উপত্যকাটির সমগ্র অংশে হিমবাহ সমানভাবে প্রবাহিত না হয় কিংবা যদি কঠিন ও কোমল শিলা পরপর অবস্থান করে, তাহলে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষয়কার্যের পার্থক্য দেখা যায়। এর ফলে উপত্যকায় সিঁড়ির মতো বহু ধাপের সৃষ্টি হয়। হিমবাহের বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে গড়ে-ওঠা এই সিঁড়ি বা ধাপগুলিকে বলা হয় হিমসিঁড়ি বা হিমসোপান।
ক্রেভাস এবং বার্গস্রুন্ড পর্বতারোহীর কাছে বিপজ্জনক কেন?
বার্গস্রুন্ড এবং ক্রেভাস উভয়েই বরফের ওপর সৃষ্ট ফাটল। এদেরকে ক্রেভাস অপেক্ষা বার্গস্রুন্ড অনেক বেশি গভীর ফাটল হওয়ায় তার নীচ পর্যন্ত দেখা যায় না। এইসব ফাটলের ওপর হালকা তুষার জমে থাকলে বোঝা যায় না এর নীচে এমন ফাটল রয়েছে। তাই পর্বতারোহীরা এইসব ফাটলগুলিকে খুব ভয় পায়। যে-কোনো কারণে ওই ফাটলে একবার পড়ে গেলে ফিরে আসা মুশকিল।
কেম ও বদ্বীপ -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
কেম ও বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
| বিষয় | কেম | বদ্বীপ | 
| গঠনকারী শক্তি | হিমবাহ ও জলধারা সঞ্চিত ত্রিকোণাকৃতি ভূমিরূপ। | নদী গঠিত ত্রিকোণাকৃতি ভূমিরূপ। | 
| গঠনস্থল | পর্বতের পাদদেশে কেম গঠিত হয়। | নদীর মোহানায় বদ্বীপ গঠিত হয়। | 
| দানার আকার | কেম গঠিত সঞ্চিত পদার্থের দানার আকার অপেক্ষাকৃত মোটা হয়। | বদ্বীপ অঞ্চলে সঞ্চিত হয় সূক্ষ্ম পলি ও কাদা। | 
| আয়তন | কেম আয়তনে ছোটো হয়। | বদ্বীপ সাধারণত বৃহদায়তন হয়। | 
আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” -এর “হিমবাহের বিভিন্ন কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
 





মন্তব্য করুন