আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ফসল রোপণের সময় অনুসারে ভারতের কৃষিজ ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো।
ফসল রোপণের সময় অনুসারে ভারতে উৎপাদিত কৃষিজ ফসল তিনটি ভাগে বিভক্ত। নীচে তা সারণির আকারে আলোচিত হল –
| কৃষিজ ফসল | রোপণের সময় | উদাহরণ |
| খরিফ শস্য | বর্ষার প্রারম্ভে অর্থাৎ জুন মাসে এইসব ফসল রোপণ করা হয় এবং শরতের শেষে অর্থাৎ নভেম্বর মাসে ফসল কাটা হয়। | আমন ধান, পাট, কার্পাস, আখ, জোয়ার, বাজরা, রাগি, ভুট্টা, চিনাবাদাম প্রভৃতি। |
| রবি শস্য | শীতের প্রারম্ভে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে এইসব ফসল রোপণ করা হয় এবং গ্রীষ্মের প্রারম্ভে অর্থাৎ মার্চ মাসে ফসল কাটা হয়। | গম, যব, ওট, সরষে, ডাল প্রভৃতি। |
| শস্য জায়িদ | এইসব ফসল গ্রীষ্মের প্রারম্ভে অর্থাৎ মার্চ মাসে চাষ করা হয় এবং বর্ষার প্রারম্ভে অর্থাৎ জুন মাসে সংগ্রহ করা হয়। | কুমড়ো, শশা, পটল, পুঁইশাক, নটেশাক, তরমুজ, ফুটি, কাঁকুড় প্রভৃতি। |
ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলের শ্রেণিবিভাগ করো।
ব্যবহারের প্রকৃতি অনুসারে ভারতে উৎপন্ন ফসলগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
- খাদ্য ফসল ও
- অর্থকরী ফসল।
খাদ্য ফসলগুলিকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- দানাশস্য, যেমন – ধান, গম প্রভৃতি।
- পানীয় ও ভেষজ ফসল, যেমন – চা, কফি, তামাক প্রভৃতি।
- অন্যান্য খাদ্য ফসল, যেমন – আখ, মশলা, ফল প্রভৃতি।
অন্যদিকে, অর্থকরী ফসলগুলিও অন্ততপক্ষে তিনটি ভাগে বিভক্ত। যথা –
- তৈলবীজ, যেমন – সরষে, তিল, চিনাবাদাম প্রভৃতি।
- তন্তু ফসল, যেমন – তুলো, পাট, শন প্রভৃতি এবং
- অন্যান্য ফসল, যেমন – রবার, তুঁত প্রভৃতি।

ধানের শ্রেণিবিভাগ করো।
সময় বা ঋতু অনুসারে ধান তিন প্রকার হয়। যেমন –
| ধানের নাম | সময় বা ঋতু |
| আউশ ধান | যে ধান গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয় এবং বর্ষাকালে সংগ্রহ করা হয়, তাকে আউশ ধান বলে। এই ধান বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ (এপ্রিল-মে) মাসে চাষ করা হয় ও শ্রাবণ-ভাদ্র (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাসে কাটা হয়। ‘আউশ’ শব্দটির অর্থ ‘আশু’ বা ‘শীঘ্র’। এই ধান খুব তাড়াতাড়ি পাকে। |
| আমন ধান | যে ধান বর্ষাকালে চাষ করা হয় এবং শীতকালে সংগ্রহ করা হয়, তাকে আমন ধান বলে। এই ধান আষাঢ় (জুন) মাসে চাষ করা হয় ও অগ্রহায়ণ-পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাসে কাটা হয়। অগ্রহায়ণ মাসে পাকে বলে আমন ধানকে ‘অঘ্রাণী’ বা ‘আঘ্রাণী’-ও বলে। |
| বোরো ধান | যে ধরনের ধান শীতকালে চাষ করা হয় ও গ্রীষ্মকালে সংগ্রহ করা হয়, তাকে বোরো ধান বলা হয়। এই ধান সাধারণত কার্তিক-অগ্রহায়ণ (নভেম্বর-ডিসেম্বর) মাসে চাষ করা হয় ও চৈত্র-বৈশাখ (এপ্রিল-মে) মাসে কাটা হয়। |
গমের শ্রেণিবিভাগ করো।
চাষের সময় অনুসারে গমকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় –
| গমের নাম | সময় বা ঋতু |
| শীতকালীন গম | যে গম শরৎকালে চাষ করা হয় এবং গ্রীষ্মের প্রারম্ভে কাটা হয়, তাকে শীতকালীন গম বলে। |
| বসন্ত সময় গম | যে গম বসন্তকালে চাষ করা হয় এবং গ্রীষ্মকালের শেষে কাটা হয়, তাকে বসন্তকালীন গম বলে। |
ভারতে সাধারণত শীতকালীন গমের চাষ করা হয়। তবে উত্তর ভারতের কোনো কোনো স্থানে যেমন – উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বসন্তকালীন গমও চাষ করা হয়।
ভারতে ধান চাষের সমস্যা এবং সেগুলির সমাধান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ভারতে ধান চাষের সমস্যা ও সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল –
| সমস্যা | সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা |
| ধানের স্বল্পমূল্য কৃষকদের ধান চাষে নিরুৎসাহিত করছে। | মহাজন বা বণিকদের এড়িয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য সরকারি সংস্থা গঠিত হয়েছে। |
| ভারতে হেক্টর প্রতি স্বল্প উৎপাদন হয়। হেক্টর প্রতি উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র 2416 কেজি (2013-2014)। | উচ্চফলনশীল বীজ, কীটনাশক ও সার ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। |
| ফসল সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। | সরকারিভাবে ফসল সংরক্ষণাগার বা গোডাউন তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। |
| কৃষিজোতগুলি খণ্ডিত ও বিক্ষিপ্ত হওয়ায় কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ কম। এর ফলে ফসল উৎপাদনও কম হয়। | খণ্ডিত কৃষিজমিতে সমবায় পদ্ধতিতে চাষ ও উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার (যেমন – ট্র্যাক্টর, হারভেস্টার প্রভৃতি) করে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। |
| জলসেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে বৃষ্টিবিহীন সময়ে ও স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। | অধিক সংখ্যক বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ বা ডিজেলচালিত মধ্যম গভীরতাসম্পন্ন নলকূপ স্থাপন করার জন্য সরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। |
ভারতে গম চাষের সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ভারতে গম চাষের সমস্যা ও সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল –
| সমস্যা | সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা |
| ভারতে হেক্টর প্রতি স্বল্প উৎপাদন হয়। হেক্টর প্রতি গম উৎপাদন গড়ে মাত্র 3075 কেজি (2013-2014)। | উচ্চফলনশীল বীজ, কীটনাশক ও সার ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। |
| গমের স্বল্পমূল্য কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করছে। | মহাজন বা বণিকদের এড়িয়ে ‘Food Corporation of India’ -র মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে গম কেনা হচ্ছে। |
| উপযুক্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রত্যেক বছরই প্রচুর পরিমাণ গম নষ্ট হয়। | উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণাগার তৈরি হয়েছে। |
| উন্নত যন্ত্রপাতি কম ব্যবহার করা হয়। | বাণিজ্যিকভাবে গম চাষ বৃদ্ধির জন্য যন্ত্রপাতির (যেমন – ট্র্যাক্টর, হারভেস্টার প্রভৃতি) ব্যবহার যাতে বৃদ্ধি পায়, সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি তরফে প্রত্যেক বছরই মূলধন বিনিয়োগ করা হচ্ছে। |
| জলসেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে বৃষ্টিবিহীন সময়ে ও স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। | বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ বা ডিজেলচালিত মধ্যম গভীরতাসম্পন্ন নলকূপ স্থাপন করার জন্য সরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। |
উত্তর ভারতে বেশি গম চাষ হয় কেন?
উত্তর ভারতে বেশি গম চাষের কারণগুলি হল –
- উত্তর ভারতের পাঞ্জাব সমভূমি, উচ্চ গঙ্গা সমভূমি ও মধ্য-গঙ্গা সমভূমি অঞ্চলে শীতকালীন উষ্ণতা 14°C-20°C থাকে, যা গম চাষের পক্ষে আদর্শ।
- উত্তর ভারতের গম চাষের এলাকাগুলিতে শীতকালে পশ্চিমি-ঝঞ্ঝার প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয় তা গম চাষের পক্ষে উপকারী। তা ছাড়া এখানে জলসেচ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটায় চাষের প্রয়োজনীয় জল জলসেচের মাধ্যমেও মেটানো যায়।
- উর্বর ভারী দোআঁশ ও কাদামাটি দিয়ে গঠিত পলল মৃত্তিকা উত্তর ভারতে গম চাষের পক্ষে অনুকূল।
- উত্তর ভারতের সমতল ভূপ্রকৃতিও গম চাষে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- বিহার ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত কৃষি শ্রমিকরা পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে গম চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভারতে চা চাষের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে কী জান আলোচনা করো।
ভারতে চা চাষের সমস্যা ও সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল –
| সমস্যা | সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা |
| অধিকাংশ চা বাগিচাই দীর্ঘদিনের। যেমন – উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো কোনো বাগিচার বয়স 100 বছরেরও বেশি। এ ছাড়া, বাগিচাগুলি সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জমির অভাব রয়েছে। | নতুন করে অব্যবহৃত জমিতে ছোটো ছোটো চা বাগিচা গড়ে তোলা হচ্ছে। |
| বাগিচার মালিকরা আর্থিক অসুবিধার কারণে বহু বাগিচা বন্ধ করে দিয়েছেন। | সমবায় পদ্ধতিতে শ্রমিকদের দ্বারা অথবা সরকারি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ওইসব বাগিচা চালুর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। |
| চা উৎপাদনের ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য চা উৎপাদনকারী দেশের থেকে বেশি। | চায়ের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করার জন্য শ্রমিকদের উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি, সৌরশক্তির ব্যবহার ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে। |
| তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় চায়ের বিক্রি আগের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে। | ভারতীয় চায়ের গুণমান আরও বৃদ্ধি করে এবং মূল্য হ্রাস করে আন্তর্জাতিক বাজারে চা রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। |
চায়ের শ্রেণিবিভাগ করো।
চা পাতাকে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য এর প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি অনুসারে চা-কে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন –
| চায়ের নাম | প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি |
| কালো চা | চায়ের পাতাগুলি গাছ থেকে তুলে প্রথমে রোদে শুকিয়ে নিয়ে পরে আবার যন্ত্রের সাহায্যে শুকিয়ে কালো করে নেওয়া হয়। এভাবে প্রস্তুত চা-কে কালো চা বলে। |
| সবুজ চা | চা গাছের কচি পাতা ও কুঁড়ি রোদে শুকিয়ে যে চা প্রস্তুত করা হয়, তাকে সবুজ চা বলে। ভারতে সবুজ চায়ের প্রচলন খুব কম। |
| সাদা চা | চা গাছের নবীন কুঁড়িগুলিকে শুকিয়ে নেওয়ার আগে গরম বাষ্প অথবা আগুন জ্বালিয়ে গরম করে যে হালকা গন্ধের চা প্রস্তুত করা হয়, তাকে সাদা চা বলে। |
| ওলং চা | এই ধরনের চা গাছের পাতা প্রথমে প্রখর সূর্যকিরণে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এরপর মেশিনে গরম হাওয়া দিয়ে আরও শুকিয়ে বাঁকিয়ে ও মুচড়িয়ে এই চা প্রস্তুত করা হয়। |
| ইস্টক চা | চা গাছের নিকৃষ্ট পাতা, চা পাতার ডাঁটি, গুঁড়ো চা, ভাতের মাড়, মশলা, মাখন ইত্যাদি একসঙ্গে মিশিয়ে চাপ দিয়ে ছোটো ছোটো আয়তাকার খণ্ডে পরিণত করে যে চা প্রস্তুত করা হয়, তাকে ইস্টক চা বলে। |
| পুয়ের চা | এই ধরনের চা উৎপাদনের জন্য প্রথমে চায়ের পাতা তুলে সূর্যকিরণে কিছুটা শুকিয়ে নেওয়া হয়। এরপর চা পাতাকে শুকনো ভাজা করে গুটিয়ে নিয়ে নানা আকৃতি প্রদান করা হয় ও আবার সূর্যালোকে শুকিয়ে নিয়ে পুয়ের চা প্রস্তুত হয়। চিনে এই চায়ের প্রচলন রয়েছে। |
কফির শ্রেণিবিভাগ করো।
কফি তিন ধরনের হয়। যেমন –
| কফির নাম | কফির বৈশিষ্ট্য |
| আরবীয় কফি | সর্বোৎকৃষ্ট এই কফির আদি বাসভূমি হল আরব উপদ্বীপের ইয়েমেন। আরবীয় কফি গাছ 9-12 মিটার লম্বা হয় এবং এর পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য 7 বছর সময় লাগে। |
| রোবাস্টা কফি | অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট মানের এই কফির আদি বাসভূমি হল পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকা। প্রায় 10 মিটার পর্যন্ত উঁচু এই কফি গাছের ফলগুলি পরিপক্ক হতে 10-11 মাস সময় লাগে। |
| লাইবেরীয় কফি | পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়ায় এই জাতীয় কফির চাষ হয়। তাই একে লাইবেরীয় কফি বলে। এই কফি গাছগুলি 20 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এক বিশেষ প্রজাতির লাইবেরীয় কফি হল ‘ব্যারাকো’। স্বাদে লাইবেরীয় কফি অন্যান্য ধরনের কফির তুলনায় অনেক নিরস। |
তুলোর শ্রেণিবিভাগ করো।
আঁশের দৈর্ঘ্য অনুসারে তুলো চার প্রকার। যেমন –
| তুলোর নাম | বৈশিষ্ট্য |
| অতিরিক্ত দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো | এই জাতীয় তুলো 35 মিমি ও তার বেশি দীর্ঘ হয়। সর্বোৎকৃষ্ট এই তুলো দিয়ে উন্নতমানের রিং -এ লাগানোর সুতো, পলিয়েস্টার তন্তুর সঙ্গে মিশিয়ে উচ্চ গুণমানের কাপড় প্রস্তুত করা হয়। |
| দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো | এই জাতীয় তুলোর আঁশ 30 মিমি থেকে 35 মিমি দৈর্ঘ্যের সামান্য কম লম্বা হয়। এই জাতীয় তুলোর আঁশগুলি মসৃণ, রেশমের মতো উজ্জ্বল এবং পশমের মতো সূক্ষ্ম হয়। এই তুলো ‘সাগরদ্বীপীয় তুলো’ নামেও পরিচিত। |
| মাঝারি আঁশযুক্ত তুলো | এই জাতীয় তুলোর আঁশ 25 মিমি থেকে 30 মিমি দৈর্ঘ্যের সামান্য কম লম্বা হয়। |
| ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত তুলো | এই জাতীয় তুলোর আঁশের দৈর্ঘ্য 25 মিমি-র কম হয়। ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত তুলো গুণগত মানে খুবই নিকৃষ্ট, আঁশ মোটা ও খসখসে হয়। |
ভারতে তুলো চাষের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভারতে তুলো চাষের সমস্যা ও সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল –
| সমস্যা | সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা |
| প্রধানত মাঝারি ও ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত তুলো জন্মায়, যা উন্নত মানের সুতিবস্ত্র উৎপাদনের অনুপযুক্ত। | বিদেশ থেকে উন্নত বীজ এনে এবং দেশের গবেষণাগারগুলিতে উন্নত বীজ তৈরি করে দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর চাষ বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। |
| হেক্টর প্রতি উৎপাদন অনেক কম। ভারতে তুলো উৎপাদনের পরিমাণ হেক্টর প্রতি মাত্র 532 কেজি। বল উইভিল পোকার উপদ্রব হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম হওয়ার একটি প্রধান কারণ। | উন্নত যন্ত্রপাতি, সার, কীটনাশক ও জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। |
| তুলো চাষে শ্রমিকদের মজুরি প্রদান, সার, কীটনাশক ও তুলোর বীজ কেনা, বিদ্যুৎবাবদ খরচ ইত্যাদির জন্য প্রচুর মূলধনের দরকার হয়। ভারতে সহজ শর্তে মূলধন পাওয়ার যথেষ্ট অসুবিধা লক্ষ করা যায়। | তুলো চাষে নিযুক্ত কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিকে নির্দেশ প্রদান করেছে। |
ভারতের প্রধান বাগিচা ফসল কী কী ও কোথায় উৎপন্ন হয়?
ভারতের প্রধান বাগিচা ফসল – ভারতের প্রধান বাগিচা ফসলগুলি হল –
- চা ও
- কফি।
উৎপাদন অঞ্চল –
- চা – পূর্ব ভারতের অসম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারতের শতকরা প্রায় 77.9 ভাগ চা এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও কেরলে সামান্য পরিমাণ শতকরা প্রায় 20.2 চা উৎপাদিত হয়। অসমের দরং, শিবসাগর, লখিমপুর ও কাছাড় জেলা অর্থাৎ সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ঢালু সমভূমি এবং তরাই অঞ্চলে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার পার্বত্য অঞ্চল, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার ডুয়ার্স অঞ্চল এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায় যথেষ্ট পরিমাণে চা উৎপন্ন হয়।
- কফি – দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক (72.3%), কেরল (19.9%) ও তামিলনাড়ু (5.0%) রাজ্য কফি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে। কর্ণাটকের চিকামাগালুর কোদাগু, হাসান, শিমোগা এবং মহীশূর জেলা; কেরলের পালাক্কাড়, ওয়াইনাড়, ইদুক্কি, কোল্লাম প্রভৃতি জেলা এবং তামিলনাড়ুর মাদুরাই, সালেম ও কোয়েম্বাটোর জেলায় কফি উৎপন্ন হয়।
দক্ষিণ ভারতে কফি উৎপাদন বেশি হয় কেন?
দক্ষিণ ভারতের দক্ষিণ কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের পার্বত্য অঞ্চল এবং তামিলনাড়ু ও কেরলের পার্বত্য অঞ্চলে কফি উৎপাদনের পরিমাণ খুব বেশি হওয়ার কারণগুলি হল –
- এই অঞ্চলের আবহাওয়া সারাবছরই উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে। উষ্ণতা গড়ে 20°C-30°C ও বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাত 150-250 সেমি পর্যন্ত হয়, যা কফি চাষের পক্ষে আদর্শ।
- এই অঞ্চলে কফি চাষের পক্ষে উপযুক্ত লাভাজাত উর্বর দোআঁশ মাটি দেখা যায়।
- এই অঞ্চলে পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি থাকায় পাহাড়ি ঢালের প্রায় 800-1600 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত কফির বাগিচাগুলি গড়ে উঠেছে।
এ ছাড়া পাহাড়ি ঢালে বৃষ্টির জল জমতে পারে না বলে কফির চাষ খুব ভালো হয়।
ভারতীয় কৃষিতে সবুজ বিপ্লব বলতে কী বোঝ? অথবা, সবুজ বিপ্লব কী?
স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী সময়ে ভারতে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে ছয় -এর দশকের শেষের দিক থেকে কৃষিকাজে অত্যন্ত আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয়। এই সময় উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দ্রব্যের প্রয়োগ, ট্র্যাক্টর, হারভেস্টার প্রভৃতি আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার, জলসেচ ব্যবস্থার ব্যবহার প্রভৃতি বৃদ্ধি পায়। এইসব ব্যবস্থা অবলম্বন করায় 1968 সাল থেকে 1978 সালের মধ্যে ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে, বিশেষত পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় গম উৎপাদনে এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে ধান উৎপাদনে যে অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে তাকেই সবুজ বিপ্লব আখ্যা দেওয়া হয়। যেমন – 1960-1961 সালে সমগ্র ভারতে যেখানে গমের উৎপাদন হয়েছিল 1 কোটি 10 লক্ষ টন, 1980-1981 সালে তা তিনগুণেরও বেশি বেড়ে হয় ও কোটি 63 লক্ষ টন।
ভারতীয় কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সুফল ও কুফল লেখো।
কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সুবিধা ও অসুবিধা-দুটোই পরিলক্ষিত হয়।
ভারতীয় কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সুফল –
- খাদ্যশস্যের ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি,
- কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি,
- কৃষিক্ষেত্রে উন্নত মানের কীটনাশক প্রয়োগের ফলে পোকামাকড়ের উপদ্রব হ্রাস পায়,
- জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি,
- বিদেশ থেকে খাদ্যশস্যের আমদানি বন্ধ হয় এবং দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ম্ভর হয়ে ওঠে।
ভারতীয় কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের কুফল –
- ক্রমাগত বর্ধিত হারে রাসায়নিক সার প্রয়োগে মাটির গুণমান কমে যায়,
- কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক-সহ নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে উদ্ভিদ-বন্ধু অনেক পাখি ও পোকামাকড় বিলুপ্ত হয়,
- দূষিত হয় ভূগর্ভস্থ জল,
- নতুন ধরনের সংকর বীজের ব্যবহারে হারিয়ে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ-জিন যার প্রভাব পড়েছে বীজ বৈচিত্র্যে।
শীতকালে ভারতে গম চাষ হয় কেন?
অথবা, গম নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর ফসল হলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতে কেন এত গমের উৎপাদন হয়?
গম ভারতের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। গম নাতিশীতোয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল হলেও, ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে শীতকালে প্রচুর গম উৎপাদন করা হয়। এর কারণগুলি হল –
- উষ্ণতা – গম চাষের জন্যে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা হল 14°C-20°C। ভারতে শীতকালে ওই ধরনের তাপমাত্রা দেখা যায়।
- জলের প্রাপ্যতা – সাধারণত বার্ষিক 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত গম চাষের পক্ষে আদর্শ। উত্তর-পশ্চিম ভারতে শীতকালে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে প্রায় 10 সেমি বৃষ্টিপাত হয়। এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত গম চাষের জন্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় ভারতের সর্বত্র জলসেচের সাহায্যে গমের চাষ করা হয়।
- রোদ ঝলমলে শীতল আবহাওয়া – গম চাষের প্রথম অবস্থায় আর্দ্র ও শীতল আবহাওয়া, শিষ বেরোনোর সময় শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া, গমের দানার পুষ্টির সময় হালকা বৃষ্টি এবং গম পাকার সময় রোদ ঝলমলে শুষ্ক ও শীতল আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শীতকালে এই ধরনের আবহাওয়া দেখা যায়।
- তুষারমুক্ত দিন – গম চাষের জন্য 110টি তুষারমুক্ত দিনের প্রয়োজন হয়। ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শীতকালে যথেষ্ট শীতল আবহাওয়া থাকলেও তুষারপাত হয় না। ফলে ভারতে শীতকালে গম চাষ যথেষ্ট সাফল্য লাভ করেছে।
ভারতীয় কৃষির তিনটি সমস্যা আলোচনা করো।
ভারতীয় কৃষি নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে তিনটি হল –
- হেক্টর প্রতি কম উৎপাদন – ভারতীয় কৃষিতে শস্য উৎপাদনের হার খুব কম। সীমিত জলসেচ, সার ও কীটনাশকের স্বল্প ব্যবহার, কৃষকের স্বপ্ন কৃষিজ্ঞান, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে অনীহা প্রভৃতি কারণে ভারতে হেক্টর প্রতি উৎপাদন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। ভারতে হেক্টর প্রতি 2416 কেজি (2013-2014) ধান উৎপাদন হয়।
- কৃষিজমির মালিকানা – ভারতের অধিকাংশ কৃষিজমি অতি অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে আছে। বেশিরভাগ কৃষক নয় ভূমিহীন, না হয় প্রান্তিক কৃষক। কৃষিজমি যদি কৃষকদের নিজস্ব না হয়, তবে ফসল উৎপাদনে গতি আসে না।
- প্রকৃতিনির্ভর কৃষি – ভারতের কৃষিকাজ মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। মৌসুমি বায়ু অনিয়মিত ও অনিশ্চিত হওয়ায় খরা বা বন্যার ফলে প্রায় প্রতিবছর ফসল বিনষ্ট হয়।
ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলিকে কীভাবে সমাধান করা যায়?
ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি নেওয়া যেতে পারে –
- উচ্চফলনশীল বীজের অধিক ব্যবহার – কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ভারতে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এ বিষয়ে ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদ (Indian Council of Agricultural Research) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় বীজ নিগম, ভারতের রাজ্য খামার নিগম, অনেকগুলি রাজ্য বীজ নিগম এবং শতাধিক বেসরকারি বীজ কোম্পানি এ কাজে যুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ভারতে প্রায় 500টি উচ্চফলনশীল ধান বীজ এবং 250টি উচ্চফলনশীল গম বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে।
- রাসায়নিক সারের ব্যবহার বৃদ্ধি – কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ভারতে রাসায়নিক সার হিসেবে নাইট্রোজেন, ফসফেট এবং পটাশ সার ব্যবহার করা হয়। ভারতে অনেকগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এই ধরনের রাসায়নিক সার উৎপাদন করে। তবে এর চাহিদা দেশীয় উৎপাদন অপেক্ষা বেশি হওয়ায় প্রচুর সার আমদানিও করা হয়। ভারতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনের হারও বাড়ছে।
- মৃত্তিকা সংরক্ষণ – এই কর্মসূচির অধীনে সমোন্নতি রেখা বরাবর চাষ, ধাপ চাষ, উন্নত কৃষিব্যবস্থার প্রয়োগ করে মৃত্তিকা ক্ষয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় মৃত্তিকা এবং জল সংরক্ষণ বোর্ড গঠিত হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি উদ্যোগে মৃত্তিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।
ভারতের কোথায় কোথায় চা উৎপন্ন হয়?
ভারতের চা উৎপাদক অঞ্চলসমূহ –
ভারতে চায়ের চাষ প্রধানত উত্তর-পূর্ব ভারত, দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে হয়ে থাকে। ভারতের মোট চা উৎপাদনের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি উৎপাদিত হয় অসম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। 2015-2016 সালের হিসাব অনুসারে ভারতের মোট চায়ের উৎপাদন 123.31 কোটি কেজি। চা উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয় (চিনের পরেই)। বিশ্বের মোট চা উৎপাদনের 22.68% (2016) ভারতে উৎপাদিত হয়।

| রাজ্য | উৎপাদক জেলা | উল্লেখযোগ্য তথ্য |
| অসম | দরং, গোয়ালপাড়া, কামরূপ, লিখিমপুর, ডিব্রুগড়, নাগাওঁ, শিবসাগর, কাছাড়, কার্বি আংলং | 1. ভারতের শীর্ষস্থানাধিকারী চা উৎপাদক রাজ্য। 2. 307.08 হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়। 3. 65.30 কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে (2015-2016)। |
| পশ্চিমবঙ্গ | দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর | 1. ভারতের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চা উৎপাদক রাজ্য। 2. 140.44 হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়। 3. 32.97 কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে (2015-2016)। |
| তামিলনাড়ু | কন্যাকুমারী, তিরুনেলভেলি, মাদুরাই, কোয়েম্বাটোর, নীলগিরি | 1. চা উৎপাদনে ভারতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। 2. 69.62 হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়। 3. 16.15 কোটি কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে (2015-2016)। |
| অন্যান্য | 1. কেরলের ওয়াইনাড়, ত্রিসুর, ইদুক্কি, কোট্টায়াম; 2. কর্ণাটকের কোদাগ; 3. হিমাচল প্রদেশের কাংড়া, মাণ্ডি; 4. উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন, তেহরি গাড়োয়াল, আলমোড়া; 5. মেঘালয়; 6. ত্রিপুরার কিছু অঞ্চল | 1. কেরলে প্রায় 35.01 হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়ে থাকে। 2. কেরলে উৎপাদিত চা -এর পরিমাণ 5.66 কোটি কেজি (2015-2016)। |
ভারতে কৃষিজ ফসলের স্বল্প উৎপাদনশীলতার কারণ কী?
স্বল্প উৎপাদনশীলতা ভারতীয় কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর কারণ –
- ছোটো আয়তনের কৃষিজোত – ভারতের অধিকাংশ কৃষিজোত আয়তনে ছোটো। সেজন্য ভারতে কৃষিযন্ত্রপাতির সীমিত ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
- উচ্চফলনশীল বীজের সীমিত ব্যবহার – ভারতীয় কৃষিতে এখনও উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার যথেষ্ট কম। এই কারণে হেক্টর প্রতি উৎপাদনের হারও কম।
- কীটনাশক ও সারের সীমিত ব্যবহার – ভারতীয় কৃষিতে কীটনাশক ও সারের ব্যবহার অত্যন্ত কম। এর ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বেশ কম।
- জলসেচের অসুবিধা – ভারতে সব কৃষিজমি এখনও জলসেচের আওতায় আসেনি। এই অসুবিধার জন্য প্রধানত বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করে ভারতে কৃষিকাজ হয়ে থাকে।
- জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি – ভারতীয় কৃষকরা নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে চাষ-আবাদ করে। এতে উৎপাদন স্বল্প হয়। ফলে উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ খুব কম হয় বা থাকে না। তাই এ ধরনের কৃষি থেকে কৃষকরা বিশেষ লাভবান হয় না।
অসম চা চাষে উন্নত কেন?
অসমে ভারতের সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদিত হয়। চা চাষে অসমের উন্নতির কারণগুলি হল –
- অনুকূল জলবায়ু – চা ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের কৃষিজ ফসল। এই রাজ্যে বছরে মোট 200 সেমি বৃষ্টিপাত হয় এবং 20°C-30°C তাপমাত্রা বিরাজ করে, যা চা উৎপাদনে যথেষ্ট সহায়ক। এ ছাড়া এই অঞ্চলে প্রতি মাসেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
- ঢালু ভূমিভাগ – এই রাজ্যের বহু স্থানের ভূমিভাগ উঁচুনীচু ও ঢালু। এই ধরনের চালু জমি চা চাষের উপযোগী।
- উপযুক্ত মৃত্তিকা – অসমের মাটি অম্লধর্মী পলিমাটি। এই মাটি চা চাষের পক্ষে আদর্শ।
- অন্যান্য কারণ – বিনিয়োগকারীরা অসমের চা বাগিচাগুলিতে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া, গুয়াহাটি চা নিলাম কেন্দ্র, নিকটবর্তী কলকাতা বন্দরের সুবিধা, উন্নত পরিকাঠামো প্রভৃতি অসমে চা চাষের উন্নতি ঘটিয়েছে।
ভারতে বাণিজ্যিক কৃষির তুলনায় জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষির প্রাধান্য বেশি কেন?
জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষিব্যবস্থা হল শুধু নিজেদের বা স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য কৃষিকাজ করা। ভারতে এই ধরনের কৃষিপদ্ধতি বেশি প্রচলিত। এর কারণ –
- বিপুল জনসংখ্যার চাপ – জমির ওপর জনসংখ্যার বিপুল চাপ থাকায় কৃষির সম্প্রসারণের জন্যে প্রয়োজনীয় জমি অথবা নতুন কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার জমি পাওয়া যায় না।
- ক্ষুদ্রায়তনের জমি – জমিগুলি ছোটো বা ক্ষুদ্র আয়তনের হওয়ায় বাণিজ্যিক প্রয়োজনে প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপাদন করা হয় না।
- জমির মালিকানা – জমিগুলি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। সমবায় প্রথায় চাষ প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে।
- ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্য – কৃষক কেবল খাদ্যশস্য উৎপাদনের দিকে নজর দেয়, অর্থকরী বা বাণিজ্যিক ফসল উৎপাদনে আগ্রহ কম।
- মূলধনের অভাব – কৃষকদের মধ্যে প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকের সংখ্যা বেশি। ফলে এই শ্রেণির কৃষকদের হাতে কৃষিতে বিনিয়োগ করার মতো মূলধনের অভাব রয়েছে। এই সমস্যাগুলির জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে মূলধন বিনিয়োগ করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কৃষিকাজ করা হয় না। তাই ভারতে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষির প্রাধান্য বেশি।
ভারতের কৃষির গুরুত্ব লেখো।
ভারতের কৃষির গুরুত্বগুলি নিম্নরূপ –
- কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র – কৃষি ভারতের কর্মসংস্থানের প্রধানতম ক্ষেত্র। কর্মসংস্থানের সুযোগের দিক থেকে এককভাবে কৃষিক্ষেত্রের অবদান সবচেয়ে বেশি।
- খাদ্যের উৎস – ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্যের জোগান দেয় ভারতীয় কৃষি।
- জাতীয় আয়ের উৎস – কৃষি ভারতের জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।
- শিল্পে কাঁচামালের জোগান – চা, কফি, সুতিবস্ত্র বয়ন, পাটবয়ন, চিনি, ভোজ্য তেল, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল কৃষি থেকেই পাওয়া যায়। কৃষিজ কাঁচামাল জোগানের ওপর এই শিল্পগুলির উন্নতি ও ক্রমবিকাশ নির্ভর করে।
- বিদেশি মুদ্রা আয়ের উৎস – ভারত পাটজাত সামগ্রী, চা, কফি, চিনি, কাজুবাদাম, তামাক প্রভৃতি কৃষিজাত সামগ্রী রপ্তানি করে বিদেশি মুদ্রা আয় করে।
- ব্যাবসা ও পরিবহণ ব্যবস্থার প্রসার – কৃষি ভারতের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যাবসাবাণিজ্য ও পরিবহণ ব্যবস্থার প্রসারে সাহায্য করে। কৃষিজ সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় এবং রেলপথ ও সড়কপথে খাদ্যশস্য ও শিল্পের কাঁচামাল পরিবহণ করা হয়।
- অন্যান্য – কৃষি শিল্পজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টি এবং সরকারি আয়ের একটি প্রধান উৎস হল ভারতীয় কৃষি।
তন্তু ফসল ও বাগিচা ফসলের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
তন্তু ফসল ও বাগিচা ফসলের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
| বিষয় | তন্তু ফসল | বাগিচা ফসল |
| ব্যবহার | এই ধরনের ফসল থেকে যে তন্তু পাওয়া যায় তা দিয়ে দড়ি, কাপড়, কাগজ ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়। | এই ধরনের ফসল সাধারণত ফল, পানীয় এবং মশলারূপে ব্যবহার করা হয়। |
| ফসল প্রাপ্তি | এই জাতীয় ফসল একবার রোপণ করলে মাত্র একবারই ফসল পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর ফসল পাওয়ার জন্য নতুন করে চারাগাছ রোপণ করতে হয়। যেমন – পাট, তুলো, শন ও মেস্তা। | এই জাতীয় ফসলের গাছ একবার রোপণ করলে বহুবছর তা থেকে ফসল পাওয়া যায়। যেমন – চা, কফি, রবার, ফল ও মশলা। |
| ফসলের সঞ্চয় | এই ধরনের ফসল দীর্ঘদিন সঞ্চয় করা যায়। | এই ধরনের ফসলের অধিকাংশই দীর্ঘদিন সঞ্চয় করা যায় না। |
খরিফ শস্য ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
খরিফ শস্য ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
| পার্থক্যের বিষয় | খরিফ শস্য | রবি শস্য |
| চাষের মরশুম | জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে যেসব শস্যের চাষ হয়, সেগুলিকে বলে খরিফ শস্য। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ খরিফ শস্যের চাষ শুরু হয়। উদাহরণ – ধান, আখ, তুলো, ভুট্টা প্রভৃতি। | অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে যেসব শস্যের চাষ হয়, সেগুলিকে বলে রবি শস্য। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকালীন সময়ে অধিকাংশ রবি শস্যের চাষ আরম্ভ হয়। উদাহরণ – গম, সরষে, ছোলা, যব প্রভৃতি। |
| ফসল কাটার সময় | শীতের শুষ্ক দিনে এইসব শস্য কাটা হয়। | এইসব শস্য কাটা হয় বসন্তকালে। |
ধাপচাষ ও ফালিচাষের মধ্যে পার্থক্য করো।
ধাপচাষ ও ফালিচাষের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
| পার্থক্যের বিষয় | ধাপচাষ | ফালিচাষ |
| ধারণা | পার্বত্য অঞ্চলের ঢালু অংশে ছোটো ছোটো সিঁড়ি বা ধাপ কেটে যে চাষ করা হয়, তাকে ধাপচাষ বলে। | অনেক সময় ভূমির ঢালের আড়াআড়িভাবে লম্বা ফালি তৈরি করে সেই ফালির মধ্যে শস্য রোপণ করে যে চাষ-আবাদ করা হয়, তাকে ফালিচাষ বলে। |
| চাষের প্রকৃতি | এই ধরনের চাষের ক্ষেত্রে পাহাড়ের ঢালে ধাপ তৈরি করে শস্য চাষ করা হয়। | এই ধরনের চাষের ক্ষেত্রে জমিতে আড়াআড়িভাবে লম্বা ফালি তৈরি করে শস্য চাষ করা হয়। |
| অঞ্চল | উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের ঢালে এই ধরনের চাষ করা হয়। | পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলে এই ধরনের চাষ করা হয়। |
পাঞ্জাব, হরিয়ানা রাজ্যে কৃষি উন্নতির প্রধান তিনটি কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
পাঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষিসমৃদ্ধির কারণসমূহ –
ভারতের কৃষিক্ষেত্রে দুটি বিশেষ অঞ্চল তথা রাজ্য পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য নাম। ভারতের এই দুটি অঞ্চলে কৃষি উন্নতির কারণ হল-
- মাটি – এই অঞ্চলের ভূমিভাগ মূলত সিন্ধুর পাঁচটি উপনদীর পলি সঞ্চয়ের ফলে গঠিত। সুতরাং নদীবাহিত পলিমাটি হওয়ার জন্য এখান মাটি উর্বর। আবার বহু জায়গায় মাটিতে বালির ভাগ বেশি হলেও এর মধ্যে নানা খনিজ মৌল বেশি থাকায় ফসল উৎপাদনের হার খুব বেশি।
- জলসেচ – ভারতের সর্ববৃহৎ জলসেচ প্রকল্পটি এই দুই রাজ্যের মধ্যে দিয়ে গেছে। ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনার মাধ্যমে বিস্তৃত জমিতে জলসেচ করা যায়। সারাবছর ধরে জলসেচ করা সম্ভব হয় বলে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় বছরে তিন-চার বার চাষ হয়।
- উচ্চফলনশীল বীজ – ড. বোরলগ -এর নেতৃত্বে এই অঞ্চলে প্রথম উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার শুরু হয়। ধান, গম, তুলো ও অন্যান্য শস্যের ক্ষেত্রে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার এই অঞ্চলকে কৃষি উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছে।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন