মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ – ভারতের ভূপ্রকৃতি – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ - ভারতের ভূপ্রকৃতি - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানবজীবনের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

ভারতের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ মানবজীবনের ওপর গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।

  1. এই দেশের উত্তরে হিমালয় পর্বত অবস্থিত হওয়ায় উত্তরের শীতল সাইবেরীয় বাতাস যেমন ভারতে প্রবেশ করতে পারে না তেমনই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
  2. তিনদিকে সাগর দিয়ে ঘেরা উপদ্বীপ ও উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করে।
  3. বিভিন্ন গিরিপথ বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।
  4. ক্রান্তীয় জলবায়ুর জন্য এই দেশ কৃষিসমৃদ্ধ।
  5. বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তীয় ফসল যেমন – ধান, পাট, চা, কফি, মশলা প্রভৃতি এদেশের উর্বর মৃত্তিকায় উৎপন্ন হয়। প্রচুর বৃষ্টি, নদীগুলির অকৃপণ জলধারা, খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য, বনজ সম্পদের ভান্ডার এদেশের উন্নতির সহায়ক হয়েছে।
  6. এ ছাড়া, উর্বর সমতলভূমি যেমন কৃষির উন্নতি ঘটিয়েছে তেমনি নিবিড় ও সহজ যোগাযোগ (সড়ক, রেল) ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও সাহায্য করেছে। এসব থেকে বলা যায় যে, ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জনজীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পেরেছে।

হিমালয়ের সর্বদক্ষিণের পর্বতশ্রেণিটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

হিমালয়ের সর্বদক্ষিণের পর্বতশ্রেণিটির নাম শিবালিক বা বহিঃহিমালয়। প্রায় 30 লক্ষ বছর আগে হিমালয়ে তৃতীয়বার প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় টেথিস, হিমাদ্রি ও হিমাচল-তিনটি পর্বতশ্রেণি আরও উঁচু হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় হিম যুগ। বড়ো বড়ো হিমবাহ হিমালয়কে ভীষণভাবে ক্ষয় করতে শুরু করে। এর ফলে ক্ষয়িত পাথর, কাঁকর, নুড়ি ইত্যাদি স্তূপাকারে পর্বতের পাদদেশে জমা হতে থাকে। এরপর প্রায় 10 লক্ষ বছর আগে চতুর্থবার প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় এগুলিই (শিলাচূর্ণ) ওপরে উঠে শিবালিক পর্বতশ্রেণি সৃষ্টি করে। এই পর্বতশ্রেণিটি গড়ে 600 মিটার থেকে 1500 মিটার উঁচু এবং 10 কিমি থেকে 50 কিমি চওড়া। শিবালিকের দক্ষিণ ঢাল খাড়া এবং উত্তর ঢাল মৃদু। পশ্চিম হিমালয়ের জম্মু পাহাড়, মুসৌরি পাহাড় প্রভৃতি শিবালিক পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত।

লাদাখ পর্বতশ্রেণি ও লাদাখ মালভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

লাদাখ পর্বতশ্রেণি – কাশ্মীরে হিমাদ্রি বা হিমগিরি বা প্রধান হিমালয়ের উত্তরে প্রায় 350 কিমি দীর্ঘ যে পর্বতশ্রেণিটি আছে তার নাম লাদাখ পর্বতশ্রেণি। লাদাখ মালভূমির দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিমে বিস্তৃত এই পর্বতশ্রেণিতে অনেকগুলি 6000 মিটারেরও বেশি উঁচু ক্ষয়িয় পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়। হিমালয় পর্বতশ্রেণি সৃষ্টির সময় টেথিস সাগরে সঞ্চিত পলি থেকে লাদাখ পর্বতশ্রেণিটিও সৃষ্টি হয়েছিল। হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে এই পর্বতশ্রেণি ভীষণভাবে ক্ষয়িত ও ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

লাদাখ মালভূমি – লাদাখ পর্বতশ্রেণির উত্তর-পূর্বে লাদাখ মালভূমি অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা 4300 মিটারেরও বেশি। এটি ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি।

কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম দিকে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। টেথিস সাগরে সঞ্চিত পলি থেকে হিমালয় ও লাদাখ পর্বতশ্রেণি সৃষ্টির সময় এই কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিরও উত্থান ঘটেছিল। এই পর্বতশ্রেণিটি প্রায় 400 কিমি দীর্ঘ। এখানে কতকগুলি সুউচ্চ শৃঙ্গ আছে, যেমন – গডউইন অস্টিন বা K2 (8611 মিটার, ভারতের সর্বোচ্চ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ), গ্যাসের ব্রুম-I বা হিডনপিক, ব্রডপিক প্রভৃতি। এখানে অনেকগুলি হিমবাহ আছে, যেমন – সিয়াচেন, হিসপার, বালটোরা, রিমো প্রভৃতি। এগুলির মধ্যে সিয়াচেন ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ (76 কিমি)। কারাকোরামের কোনো কোনো অংশে সারাবছর বরফ জমে থাকে বলে এই পর্বতকে ‘বসুধার ধবলশীর্ষ’ বলা হয়।

উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমির গুরুত্ব কী?

পাটকই, নাগা, লুসাই, কোহিমা, মিশমি প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমি গঠিত। এই অংশের বিশেষ গুরুত্ব আছে, যেমন –

  1. বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ – এখানকার পার্বত্য অঞ্চল অরণ্য সম্পদে সমৃদ্ধ।
  2. প্রতিরক্ষায় সাহায্যকারী – প্রাচীরের মতো বিস্তৃত থেকে এখানকার পর্বতগুলি দেশের উত্তর-পূর্ব সীমায় প্রতিরক্ষার কাজে সহায়তা করে।
  3. জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে অনুকূল – এখানকার পার্বত্য নদীগুলি খরস্রোতা, তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী।
  4. কৃষিজ সম্পদে সমৃদ্ধ – পাহাড়ের ঢালে চা, রবার প্রভৃতি বাগিচা ফসল চাষ করা হয়।
  5. পর্যটন শিল্পের অনুকূল – প্রাকৃতিক শোভার কারণে এই অঞ্চলটি পর্যটকদের কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয়। এখানকার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত লোকটাক হ্রদ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। তাই এখানে পর্যটন শিল্প বিকাশ লাভ করেছে।

উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমির উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে?

উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী স্থানে উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমি অবস্থিত। এই সমভূমির উৎপত্তি লাভের অনুমিত কারণ হল –

  1. ভূতাত্ত্বিকরা মনে করেন, অনেক আগে এখানে এক সুবিস্তৃত দ্রোণি (trough) ছিল।
  2. হিমালয় পর্বতের উত্থানের সময় দক্ষিণের গন্ডোয়ানাল্যান্ড বা দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তরাংশ প্রবল চাপে অর্ধচন্দ্রাকারে বসে গিয়ে বা অবনমিত হয়ে ওই দ্রোণি বা পরিখার সৃষ্টি হয়।
  3. পরবর্তীকালে উত্তরের হিমালয় পর্বতমালা এবং দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চল থেকে আসা নদীগুলি বহু যুগ ধরে পলি বয়ে এনে ওই অবনমিত অংশে জমা করায় কালক্রমে এই বিশাল সমভূমির উৎপত্তি হয়েছে।

গঙ্গা সমভূমিকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়? বিভাগগুলির অবস্থান উল্লেখ করো।

গঙ্গা সমভূমির বিভাগ – গঙ্গা সমভূমির ভূমিরূপ সমতল হলেও এখানকার বিভিন্ন অংশে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও ভূপ্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে গঙ্গা সমভূমিকে তিনটি ক্ষুদ্রতর বিভাগে ভাগ করা যায় –

  1. উচ্চগঙ্গা সমভূমি,
  2. মধ্যগঙ্গা সমভূমি এবং
  3. নিম্নগঙ্গা সমভূমি।

বিভাগগুলির অবস্থান –

বিভাগঅবস্থান
উচ্চগঙ্গা সমভূমিপশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বদিকে গঙ্গা-যমুনার মিলনস্থল এলাহাবাদ পর্যন্ত অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশ সমতল এলাকা নিয়ে এই বিভাগটি গঠিত।
মধ্যগঙ্গা সমভূমিপশ্চিমে এলাহাবাদ থেকে পূর্বে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত মধ্যগঙ্গা সমভূমি বিস্তৃত। সুতরাং, উত্তরপ্রদেশের সমগ্র পূর্বভাগের সমতলভূমি এবং বিহারের অধিকাংশ অঞ্চল এই বিভাগের অন্তর্গত।
নিম্নগঙ্গা সমভূমিদার্জিলিং জেলার পার্বত্য এলাকা, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল এবং পুরুলিয়া জেলা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বাকি অঞ্চল নিম্নগঙ্গা সমভূমির অন্তর্গত।

মেঘালয় মালভূমির ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

অসম রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত প্রাচীন শিলা দ্বারা গঠিত এই মালভূমিটি বহু কোটি বছর আগে প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ছোটোনাগপুর মালভূমি থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই দুই মালভূমির মাঝখানে অবনমিত অংশে পরবর্তীকালে গঙ্গা বদ্বীপের সৃষ্টি হয়। মেঘালয় মালভূমির উল্লেখযোগ্য পাহাড়গুলি হল পূর্বাংশের মিকির পাহাড়, পশ্চিমাংশের গারো পাহাড় এবং মধ্যাংশের খাসি-জয়ন্তিয়া পাহাড়। মধ্যভাগে অবস্থিত শিলং-চেরাপুঞ্জি এলাকা এই মালভূমির সবচেয়ে উঁচু অংশ, গড় উচ্চতা প্রায় 1500 মিটার। এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম শিলং পাহাড় (1966 মিটার)। এই মালভূমিতে অনেক চুনাপাথরের গুহা দেখা যায়।

মেঘালয় মালভূমির ভূপ্রকৃতি

কর্ণাটক মালভূমি সম্পর্কে কী জান?

দাক্ষিপাত্য মালভূমির দক্ষিণাংশের যে এলাকাটি কর্ণাটক রাজ্যের অন্তর্গত তাকে বলা হয় কর্ণাটক মালভূমি। এই অঞ্চলটি প্রধানত গ্র্যানাইট ও নিস পাথরে গঠিত এবং এখানকার গড় উচ্চতা 600 মিটার থেকে 900 মিটার। কর্ণাটক মালভূমির দুটি অংশ –

  1. মালনাদ অঞ্চল – কানাড়ি ভাষায় মালনাদ কথাটির অর্থ পাহাড়ি দেশ। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্বদিকে অবস্থিত এবং উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে বিস্তৃত প্রশন্ত পাহাড়ি অঞ্চলকে মালনাদ বলা হয়। এই অঞ্চলটি কর্ণাটক মালভূমির অপেক্ষাকৃত উঁচু অংশ। এখানকার পাহাড়গুলির চূড়া গোলাকার। এখানকার পাহাড়গুলির মধ্যে বাবাবুদান উল্লেখযোগ্য। এখানকার মাটি সাধারণত লাল রং -এর।
  2. ময়দান অঞ্চল – মালনাদের পূর্বে অপেক্ষাকৃত নীচু ও তরঙ্গায়িত ভূমিকে ময়দান বলা হয়। এখানকার মাটির রং লাল।

ডেকান ট্র্যাপ বলতে কী বোঝ?

অথবা, দাক্ষিণাত্যের লাভা মালভূমি সম্পর্কে যা জানো সংক্ষেপে লেখো।

দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশ ডেকান ট্র্যাপ বা লাভা মালভূমি নামে পরিচিত। এই অঞ্চলটি লাভা-শিলা দ্বারা গঠিত। ‘ডেকান’ -এর অর্থ দাক্ষিণাত্য এবং ‘ট্র্যাপ’ বলতে বোঝায় ধাপ বা সিঁড়ি। সমগ্র মালভূমিটি পশ্চিমদিক থেকে পূর্বদিকে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নেমে গেছে। প্রায় 6 কোটি থেকে 13 কোটি বছর আগে ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত তরল পদার্থ বা ম্যাগমা কোনো বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে (বিদার অগ্ন্যুদগম) ভূপৃষ্ঠের কোনো ফাটলের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে এসে লাভা-প্রবাহরূপে এই অঞ্চলটিকে ঢেকে ফেলে। তরল লাভা জমাট বেঁধে তৈরি হয়েছে বলে এই অঞ্চলটি সাধারণভাবে সমতল এবং পর্বতের চূড়া বা পাহাড়ের শীর্ষভাগগুলি চ্যাপটা প্রকৃতির হয়। দীর্ঘদিন ধরে নদী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কাজের ফলে ডেকান ট্র্যাপের বিভিন্ন অংশ ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

ভারতের উপকূলের সমভূমির গুরুত্ব কী?

ভারতের সুদীর্ঘ উপকূলীয় সমভূমি সংকীর্ণ হলেও তার গুরুত্ব অপরিসীম –

  1. কৃষি উৎপাদনে গুরুত্ব – উপকূলের উর্বর সমভূমিতে প্রচুর পরিমাণে ধান, আখ, নারকেল, বিভিন্ন প্রকার মশলা প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
  2. বাণিজ্যিক গুরুত্ব – মুম্বাই, চেন্নাই, মার্মাগাও, কোচিন বা কোচি প্রভৃতি বন্দরের মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ ব্যাবসাবাণিজ্য সম্পন্ন হয়।
  3. অর্থনৈতিক গুরুত্ব –
    • পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশে সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপাদন করা হয়। 
    • পশ্চিম উপকূলে খনিজ তেল উত্তোলন করা হয়। পূর্ব উপকূলের মহীসোপান অঞ্চলেও খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
    • মালাবার উপকূলীয় সমভূমি থেকে ইলমেনাইট, মোনাজাইট প্রভৃতি খনিজ দ্রব্য আহরণ করা হয়।
  4. অন্যান্য গুরুত্ব –
    • অনুকূল পরিবেশের জন্য সমগ্র উপকূল অঞ্চলে ঘন লোকবসতি দেখা যায়।
    • এই উপকূলীয় ভূমিতে মুম্বাই ও চেন্নাই-সহ অনেক শহর ও নগর গড়ে উঠেছে।
    • সমতলভূমিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব উন্নত যা নগরায়ণে সাহায্য করেছে।

ভারতের প্রধান প্রাকৃতিক বিভাগগুলি কী কী?

ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতকে তিনটি প্রধান প্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল –

  1. পার্বত্য অঞ্চল,
  2. মালভূমি অঞ্চল এবং
  3. সমভূমি অঞ্চল।

ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতকে পাঁচটি প্রধান প্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল –

  1. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল,
  2. উত্তরের সমভূমি অঞ্চল,
  3. উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল,
  4. উপকূলের সমভূমি অঞ্চল এবং
  5. দ্বীপ অঞ্চল।

ভারতের মরুস্থলীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ভারতের মরুস্থলীর অবস্থান – রাজস্থান সমভূমির একেবারে পশ্চিমে বালি, বালিয়াড়ি, পাথর প্রভৃতি দ্বারা গঠিত বৃষ্টিহীন অংশকে বলা হয় মরুস্থলী।

ভারতের মরুস্থলীর ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

  1. পরিপূর্ণভাবে বালুময় এই অঞ্চলটি পূর্বে গড়ে 350 মিটার ও পশ্চিমে 150 মিটার উঁচু।
  2. বহু সিফ ও বারখান বালিয়াড়ি এখানে দেখা যায়।
  3. অনেক ছোটো ছোটো লবণাক্ত হ্রদ বা ধান্দ বা প্লায়া (যেমন – দিদওয়ানা, কুচমান, সারগল) এবং অনেক বড়ো বড়ো লবণাক্ত হ্রদ বা বোলসন (যেমন – সম্বর) এখানে দেখা যায়।
  4. এই অঞ্চলে অনেক চলমান বালিয়াড়ি বা ধ্রিয়ান দেখা যায়।
  5. জয়সলমীরের কাছের সমভূমিতে কিছু ছোটো ছোটো পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়।
  6. সুবিস্তৃত বালুকাময় ভূমির মাঝে মাঝে মরূদ্যান দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে খেজুর বা পামজাতীয় গাছের চাষ হয়।

ভারতের মরুস্থলীর জলবায়ু – এখানকার জলবায়ু খুবই চরম প্রকৃতির এবং গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 12 সেমির কম। এখানকার গড় বার্ষিক উষ্ণতা প্রায় 40°C। রাতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপবিকিরণ করে শীতল হয়ে যাওয়ায় এখানে দৈনিক ও বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর সব থেকে বেশি।

মধ্য ভারতের উচ্চভূমির অবস্থান ও ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।

মধ্য ভারতের উচ্চভূমির অবস্থান – পশ্চিমে আরাবল্লি, দক্ষিণে নর্মদা নদী ও দাক্ষিণাত্যের মালভূমি, পূর্বে ‘পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি’ এবং উত্তরে ‘উত্তর ভারতের সমভূমি’র মধ্যবর্তী স্থানে যে উচ্চভূমি অঞ্চলটি অবস্থিত, তাকে বলা হয় মধ্যভারতের উচ্চভূমি। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের উচ্চভূমি নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত।

মধ্য ভারতের উচ্চভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

  1. এই উচ্চভূমির পশ্চিমাংশে আরাবল্লি পর্বত অবস্থিত। আরাবল্লি ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত। বহুযুগ ধরে ক্ষয় হওয়ার ফলে এর উচ্চতা অনেক কমে গেছে। গুরুশিখর (1722 মিটার) ও মাউন্ট আবু (1158 মিটার) এর দুটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ।
  2. আরাবল্লি পর্বতের পূর্বে অবস্থিত রাজস্থান মালভূমি প্রধানত একটি সমপ্রায়ভূমি। এর দক্ষিণে রয়েছে মধ্যভারতের পাথর অঞ্চল।
  3. এই উচ্চভূমির প্রধান পর্বতমালার নাম বিন্ধ্য পর্বত (1050 কিমি দীর্ঘ)। পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত বিন্ধ্য পর্বতের গড় উচ্চতা 550 মিটার এবং এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম মানপুর (881 মিটার)। বিন্ধ্য পর্বত থেকে চম্বল ও মাহী নদীর উৎপত্তি হয়েছে।
  4. বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে নর্মদা নদী কোথাও উন্মুক্ত উপত্যকা, আবার কোথাও গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয়েছে।
  5. বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে অবস্থিত মালব মালভূমি এবং এর উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত বুন্দেলখণ্ড মালভূমি মাহী, নর্মদা ও অন্যান্য ছোটো ছোটো নদী দ্বারা ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে মেসা (mesa) ভূভাগের সৃষ্টি করেছে।
  6. বিন্ধ্য পর্বতের পূর্বাংশের নাম রেওয়া মালভূমি।
মধ্য এবং পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি

ভারতীয় জনজীবনে উত্তর ভারতের সমভূমির প্রভাব আলোচনা করো।

ভারতীয় জনজীবনে উত্তর ভারতের সমভূমির প্রভাব – ভারতীয় জনজীবনে উত্তর ভারতের সমভূমির প্রভাব অপরিসীম।

  1. কৃষি উৎপাদনে – পশ্চিমাংশের মরুস্থলী ছাড়া সমভূমির বাকি অংশ অত্যন্ত উর্বর এবং কৃষিসমৃদ্ধ। এখানে ধান, পাট, আখ, গম, তুলো, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি শস্য প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।
  2. শিল্পস্থাপনে – যোগাযোগের সুবিধা, স্থানীয় কৃষিজ কাঁচামাল, সুলভ শ্রমিক প্রভৃতি অনুকূল অবস্থার জন্য এখানে অনেক শিল্পও গড়ে উঠেছে, যেমন – চিনি শিল্প, পাট শিল্প, কার্পাসবয়ন শিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, রাসায়নিক শিল্প, চর্ম শিল্প প্রভৃতি।
  3. নগরায়ণে – সমতল ভূমিরূপ, অনুকূল জলবায়ু, জীবিকা সংস্থানের সুবিধা, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা প্রভৃতি কারণে এই অংশ ভারতের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল। এই সমভূমি অঞ্চলের প্রধান নগরগুলি হল – চণ্ডীগড়, অমৃতসর, দিল্লি, আগ্রা, লখনউ, এলাহাবাদ, বারাণসী, কলকাতা, পাটনা প্রভৃতি।
  4. অন্যান্য কাজকর্মে – ভূমি সমতল বলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। পশ্চিমের মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলের লবণাক্ত হ্রদগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপন্ন হয়।

পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি বলতে কী বোঝ? এই উচ্চভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।

পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি – ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুর মালভূমি, ছত্তিশগড় রাজ্যের বাঘেলখণ্ড মালভূমি ও সমতলক্ষেত্র-সহ মহানদী অববাহিকা এবং ওডিশার দণ্ডকারণ্য অঞ্চলকে একসঙ্গে বলা হয় পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি।

পূর্ব ভারতের উচ্চভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

  1. বহু যুগ ধরে ক্ষয় হওয়ার ফলে এখানকার উচ্চতা বেশ কমে গেছে (গড়ে 700 মিটার উঁচু)। এই অংশে অনেক সমপ্রায়ভূমি (peneplain) দেখা যায়।
  2. ছোটোনাগপুর মালভূমির সর্বাপেক্ষা উঁচু অংশ পশ্চিমের পাট অঞ্চল (গড় উচ্চতা 1000 মিটারের বেশি)। রাঁচি মালভূমি পাট অঞ্চলের পূর্বদিকে অবস্থিত। রাঁচি মালভূমির উত্তরদিক দিয়ে দামোদর নদ প্রবাহিত হয়েছে। এই নদের উত্তরে আছে হাজারিবাগ মালভূমি। ছোটোনাগপুর মালভূমির উত্তর-পূর্ব কোণে রাজমহল পাহাড় অবস্থিত। ছোটোনাগপুরের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল পরেশনাথ (1366 মিটার)।
  3. বাঘেলখণ্ড মালভূমির দক্ষিণে মহানদী অববাহিকার মধ্যভাগের নাম ছত্তিশগড় সমতলক্ষেত্র।
  4. এই সমতলক্ষেত্রের দক্ষিণে বন্ধুর ও ব্যবচ্ছিন্ন দণ্ডকারণ্য পাহাড়িয়া অঞ্চল অবস্থিত। এই মালভূমির সর্বোচ্চ অংশ হল কোরাপুট।
  5. রাঁচি মালভূমির দক্ষিণে ওডিশার গড়জাত অঞ্চল অবস্থিত, এখানে কতকগুলি পাহাড় আছে, যেমন – বোনাই, কেওনঝড়, সিমলিপাল প্রভৃতি।

ভারতীয় জনজীবনে উপদ্বীপীয় মালভূমির গুরুত্ব আলোচনা করো।

ভারতীয় জনজীবনে উপদ্বীপীয় মালভূমির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন –

  1. মালভূমির বিভিন্ন অংশে আকরিক লোহা, কয়লা, চুনাপাথর, তামা, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি খনিজ দ্রব্য উত্তোলন করা হয়।
  2. মালভূমির নদী উপত্যকাগুলিতে প্রচুর পরিমাণে তুলো (রেগুর মৃত্তিকা অঞ্চল), ধান (কৃষ্ণা, গোদাবরী, কাবেরী অববাহিকা ও খান্দেশ সমভূমি), বাদাম (কর্ণাটকের ময়দান), পিঁয়াজ, আখ (মহারাষ্ট্র সমভূমি), কমলালেবু (নাগপুর সমতলভূমি), আঙুর (কর্ণাটকের ময়দান) প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
  3. কৃষিজ ও খনিজ কাঁচামাল সংগ্রহের সুবিধা থাকায় এখানে অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে।
  4. মালভূমি অঞ্চলের নদীগুলি সেচকার্য এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী। 
  5. এই মালভূমির বিভিন্ন অংশ অরণ্য সম্পদে সমৃদ্ধ।
  6. মনোরম প্রাকৃতিক শোভার জন্য এখানে অনেক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যেমন – আরাবল্লির মাউন্ট আবু, ছোটোনাগপুরের নেতারহাট, মহাদেব পাহাড়ের পাঁচমারি, তামিলনাড়ুর উদাগামণ্ডলম (উটি), কেরলের মুন্নার প্রভৃতি।

ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল সমভূমির শ্রেণিবিভাগ করো।

পূর্ব উপকূল সমভূমি – পূর্ব উপকূলের সমভূমিকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়-

  1. উত্তর সরকার উপকূল এবং
  2. করমণ্ডল উপকূল।

আবার রাজ্য অনুসারে পূর্ব উপকূলের সমভূমিকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায় –

  1. ওডিশা বা উৎকল উপকূল সমভূমি,
  2. অন্ধ্র উপকূল সমভূমি,
  3. তামিলনাড়ু উপকূল সমভূমি।

পশ্চিম উপকূল সমভূমি – পশ্চিম উপকূলের সমভূমিকে চারটি অংশে ভাগ করা হয় –

  1. গুজরাত উপকূলীয় সমভূমি,
  2. কোঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি,
  3. কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি এবং
  4. মালাবার উপকূলীয় সমভূমি।

ভারতের উপকূল সমভূমিকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়? যে-কোনো একটি বিভাগের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ভারতের উপকূল সমভূমির বিভাগ – অবস্থানের পার্থক্য অনুসারে ভারতের উপকূল সমভূমিকে দুটি অংশে ভাগ করা যায় –

  1. পূর্ব উপকূলের সমভূমি এবং
  2. পশ্চিম উপকূলের সমভূমি।

পূর্ব উপকূলের সমভূমির ভূপ্রকৃতি –

  • অবস্থান ও বিস্তার – উত্তরে সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত পূর্ব উপকূলের সমভূমি বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য প্রায় 1500 কিমি এবং বিস্তার গড়ে 100 কিমি।
  • বৈশিষ্ট্য –
    • এই সমভূমিটি প্রশস্ত। মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরীর বদ্বীপসমূহ এই সমভূমির প্রায় এক-চতুর্থাংশ স্থান গঠন করেছে।
    • পূর্ব উপকূলের সমভূমিতে বালিয়াড়ি, লেগুন বা উপহ্রদ ও জলাভূমি দেখা যায়। বালিয়াড়িগুলি সাধারণভাবে 1 কিলোমিটার থেকে 4 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং 60 মিটার থেকে 65 মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।
    • পূর্ব উপকূলের সমভূমিতে দীর্ঘ পুরোদেশীয় বাঁধ বা spit দেখা যায়। এর পিছনে থাকে উপহ্রদ। এগুলি সমুদ্রের সঙ্গে শীর্ণ যোজক দ্বারা যুক্ত থাকে, যেমন – ওডিশা উপকূলের চিলকা, অন্ধ্র উপকূলের কোলেরু এবং পুলিকট হ্রদ।
    • এ ছাড়া, পূর্ব উপকূলে কয়েকটি উচ্চভূমি বা টিলাও দেখা যায়।
পূর্ব উপকূলের সমভূমি

সমভূমি ও মালভূমির গুরুত্বের তুলনা করো।

আমাদের জীবনে সমভূমি ও মালভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। এই দুটির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল –

তুলনার বিষয়সমভূমিমালভূমি
সম্পদের প্রাপ্যতাসমভূমি সাধারণত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয় না। তবে খনিজ তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়।মালভূমি লোহা, কয়লা প্রভৃতি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ।
কৃষিকাজনদী, জলাশয় সহজলভ্য বলে সমভূমি কৃষিকাজে খুবই উন্নত হয়।মালভূমি কৃষিকাজে খুব একটা উন্নত নয়। জলসেচের ব্যবস্থা করলে কিছুটা কৃষিকাজ করা যায়।
পরিবহণ ব্যবস্থাসমভূমিতে সহজেই রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।মালভূমিতে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যথেষ্ট কঠিন।
জনবসতিসমভূমি অঞ্চল সাধারণত খুবই ঘনবসতিপূর্ণ হয়।প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে মালভূমি অঞ্চলে জনবসতির ঘনত্ব কম হয়। 

ভারতের দ্বীপসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

অবস্থান অনুসারে ভারতের দ্বীপগুলি দুটি ভাগে বিভক্ত –

  1. বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জ, 
  2. আরব সাগরের দ্বীপপুঞ্জ।

বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জ – বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দ্বীপগুলির মধ্যে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রধান। এই দ্বীপগুলি প্রকৃতপক্ষে নিমজ্জ মান পর্বতের উত্থিত অংশ। এজন্য দ্বীপের বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্তভাবে ছোটো ছোটো পাহাড় দেখা যায়। এইসব পাহাড়ের উচ্চতা গড়ে 400 মিটার থেকে 500 মিটার। এগুলির মধ্যে দক্ষিণ আন্দামানের মাউন্ট হ্যারিয়েট একটি উল্লেখযোগ্য পাহাড়। এর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল স্যাডল পিক্ (732 মিটার)। ব্যারেন ও নারকোন্ডাম নামে এখানে দুটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি আছে। ব্যারেন আগ্নেয়গিরি থেকে 1991 সাল, 1995 সাল এবং 2006 সালে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। ওডিশা উপকূলে আছে হুইলার ও স্টর্ক দ্বীপ। করমণ্ডল উপকূলসংলগ্ন অংশের দক্ষিণে রয়েছে শ্রীহরিকোটা দ্বীপ ও পাম্বান দ্বীপ।

আরব সাগরের দ্বীপপুঞ্জ – আরব সাগরে অবস্থিত দ্বীপগুলি হল আমিনদিভি, লাক্ষা ও মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ। এদের একসঙ্গে বলা হয় লাক্ষাদ্বীপ। এগুলি প্রবাল গঠিত দ্বীপ। সমুদ্রের বুকে অগণিত প্রবাল কীটের দেহ জমা হয়ে দ্বীপগুলির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া উপকূল অংশে রয়েছে দিউ (কাথিয়াবাড় উপকূল), সিন্ধুদূর্গ (মহারাষ্ট্র), ভাইপিন, ওয়েলিংটন (কেরল) প্রভৃতি দ্বীপ।

কচ্ছের রান কী? এর ভৌগোলিক অবস্থান উল্লেখ করো।

কচ্ছের রান – গুজরাতের কচ্ছ উপদ্বীপকে পূর্ব ও উত্তরদিক থেকে যে বিস্তীর্ণ লবণাক্ত ও কর্দমাক্ত জলাভূমি বেষ্টন করে আছে, তাকে বলা হয় কচ্ছের রান (‘রান’ শব্দের অর্থ-কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত নিম্নভূমি)।

কচ্ছের রানের ভৌগোলিক অবস্থান – কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উত্তরে কচ্ছ উপদ্বীপ অবস্থিত। এই কচ্ছ উপদ্বীপের উত্তর ও পূর্বাংশে রান অঞ্চল অবস্থিত। এর মধ্যে উত্তরের বড়ো অংশটিকে বলা হয় বড়ো রান এবং দক্ষিণের ছোটো অংশটিকে বলা হয় ছোটো রান। বড়ো রানের পশ্চিমপ্রান্ত আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত এবং ছোটো রান পশ্চিমদিকে কচ্ছ উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত।

কচ্ছের রান ভারতের কোন্ রাজ্যে অবস্থিত এবং তার ভূমিরূপ কেমন?

কচ্ছের রানের অবস্থান – কচ্ছের রান ভারতের গুজরাত রাজ্যে অবস্থিত।

কচ্ছের রানের ভূমিরূপ – কচ্ছের রান হল এক বিস্তীর্ণ অগভীর লবণাক্ত জলাভূমি। এর উত্তরভাগের নাম বৃহৎ রান এবং দক্ষিণভাগের নাম ক্ষুদ্র রান। রান -এর মধ্যে মাঝে মাঝে দু-একটি টিলাও দেখা যায়, যেমন – ওসম, বরদা প্রভৃতি। এই অঞ্চলটি 70505.22 বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। এই অঞ্চলটির উত্তরদিক থেকে লুনি নদী প্রবাহিত হয়েছে। একদিকে উত্তপ্ত মরুভূমি, অপর দিকে সমুদ্রের মধ্যবর্তী স্থানে এই অঞ্চলটি অবস্থান করছে। এই ব্যতিক্রমী অবস্থানের জন্যই ভূমিরূপগত দিক থেকে এই অঞ্চলটি খুবই উল্লেখযোগ্য। কোনো এক সময় কচ্ছের রান অঞ্চলটি আরব সাগরের একটি প্রসারিত অগভীর অংশ ছিল। বর্তমানে এখানে বর্ষাকালে লবণাক্ত জলাভূমি সৃষ্টি হলেও গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলটি সম্পূর্ণ শুষ্ক, উদ্ভিদহীন ও সাদা লবণে ঢাকা বালুকাময় প্রান্তরে (সমভূমি অঞ্চলে) রূপান্তরিত হয়।

থর মরুভূমি সৃষ্টির কারণগুলি লেখো।

থর বা রাজস্থানের মরুভূমি ভারতের একমাত্র মরুভূমি। এটি সৃষ্টির কতকগুলি কারণ রয়েছে –

  1. আরাবল্লি পর্বতের অবস্থান – থর মরুভূমির পূর্বদিকে আরাবল্লি পর্বত উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত হওয়ায় আরবসাগর থেকে আগত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখানে সেভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় না। তাই বৃষ্টি ঘটাতে পারে না।
  2. বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ – দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার অবশিষ্টাংশ যখন এই অঞ্চলে প্রবেশ করে তখন তাতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ খুব কমে যায়।
  3. আয়ন বায়ুর প্রবাহপথ – গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উষ্ণ ও শুক আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। যে কারণে এখানে বৃষ্টিপাত তেমন হয় না। দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার জন্যই এখানে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।

জনজীবনে মরুভূমির প্রভাব কতখানি?

জনজীবনে মরুভূমির প্রভাব –

  1. মরু অঞ্চলের জলবায়ু উষ্ণ, শুষ্ক এবং চরমভাবাপন্ন বলে এই অঞ্চল প্রায় বসতিহীন।
  2. এখানকার বিভিন্ন স্থানে খনিজ তেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে নানা জায়গা থেকে নুন, জিপসাম প্রভৃতি পাওয়া যায় বলে শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
  3. রাজস্থানের বাগার অঞ্চলে রাজস্থান খাল বা ইন্দিরা গান্ধি খালের সাহায্যে জলসেচ করা হচ্ছে, এতে কৃষিক্ষেতের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
  4. মরু অঞ্চলে প্রচুর সূর্যালোক পাওয়া যায় তাই একে কাজে লাগিয়ে কৃষি এবং শিল্পের উন্নতি ঘটানো হচ্ছে।

ভারতের দ্বীপ অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্ব লেখো।

ভারতের দ্বীপ অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্ব যথেষ্ট –

  1. কাষ্ঠ শিল্পের বিকাশ – দ্বীপ অঞ্চলে ঘন বনভূমি থাকায় সেখানে কাঠ শিল্পের উন্নতি হয়েছে।
  2. কুটির শিল্পের প্রসার – শঙ্খ শিল্প, দিয়াশলাই শিল্প, প্লাইউড কারখানা প্রভৃতি কুটির শিল্পের প্রসার দ্বীপগুলিতে হয়েছে।
  3. মাছ শিকার – ভারতের দ্বীপ অঞ্চল মাছ ধরা ও সং গ্রহের আদর্শ জায়গা। তাই অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা মাছ সংগ্রহ ও বিক্রি।
  4. পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন – ভারতীয় দ্বীপভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেশবিদেশের বহু পর্যটককে আকর্ষণ করে।

গাঙ্গেয় সমভূমির বৈশিষ্ট্য লেখো।

গাঙ্গেয় সমভূমির সৃষ্টি গঙ্গা নদীর দ্বারা। গঙ্গা এবং তার অসংখ্য উপনদী ও শাখানদী পলি সঞ্চয় করে ভারতের বৃহত্তম গাঙ্গেয় সমভূমিটি তৈরি করেছে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

  1. আয়তন – এই সমভূমিটি প্রায় 357000 বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত।
  2. গভীরতা – গাঙ্গেয় সমভূমির গভীরতা উত্তর দিকে 6000-8000 মিটার, অন্যদিকে দক্ষিণ ভাগে এই গভীরতা কম।
  3. মাটির বৈশিষ্ট্য – গাঙ্গেয় সমভূমিতে কোথাও প্রাচীন পলিমাটি, কোথাও নবীন পলিমাটি রয়েছে। প্রাচীন পলিগঠিত অঞ্চলকে ভাঙ্গর বলে, আর নবীন পলিগঠিত অঞ্চল খাদার নামে পরিচিত।
  4. ভূমিরূপ – উত্তর ভারতের সমভূমির ভূবৈচিত্র্য একঘেঁয়ে। কেবল সমতল, তবে ওই অংশেই নদীর অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, স্বাভাবিক বাঁধ, প্লাবনভূমি ও নানা ধরনের ভূমিরূপ চোখে পড়ে।

পশ্চিম উপকূলের সমভূমির শ্রেণিবিভাগ করো।

পশ্চিম উপকূলের সমভূমি চার ভাগে বিভক্ত। যথা –

  1. গুজরাত উপকূলীয় সমভূমি – এই অঞ্চলটি গুজরাতের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের উত্তরসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  2. কোঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি – মহারাষ্ট্রের উত্তর প্রান্ত থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এই উপকূল ভগ্ন ও সংকীর্ণ।
  3. কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি – গোয়ার দক্ষিণাংশ থেকে কান্নানোর পর্যন্ত বিস্তৃত এই অংশও ভগ্ন ও সংকীর্ণ।
  4. মালাবার উপকূলীয় সমভূমি – কান্নানোর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত এই অঞ্চলটি বিস্তৃত।

পূর্ব উপকূলকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

পূর্ব উপকূলের সমভূমিকে দুটি অংশে ভাগ করা যায় –

  1. উত্তরে সুবর্ণরেখা নদী থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত উত্তর সরকার উপকূল এবং
  2. উত্তরে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপের দক্ষিণাংশ থেকে শুরু করে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত করমণ্ডল উপকূল। রাজ্য অনুসারে পূর্ব উপকূলের সমভূমিকে আবার তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায় –
    • ওডিশা বা উৎকল উপকূল সমভূমি,
    • অন্ধ্র উপকূল সমভূমি এবং
    • তামিলনাড়ু উপকূল সমভূমি।

তরাই অঞ্চল কীভাবে গড়ে উঠেছে?

হিমালয়ের পাদদেশে নুড়ি ও বালিপূর্ণ যে ভাবর অঞ্চল আছে তার ঠিক দক্ষিণে তরাই অঞ্চল অবস্থিত। এখানকার ভূমিতেও যথেষ্ট পরিমাণে নুড়ি ও বালি মিশে থাকে। উত্তরের ভাবর অঞ্চলে যেসব নদী নুড়ি-কাঁকর স্তূপের মধ্যে হারিয়ে যায় সেগুলি তরাই অঞ্চলে ফল্গুধারার মতো আত্মপ্রকাশ করে। এজন্য এখানে বহু জলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে এবং নদীগুলিতেও বন্যার প্রকোপ দেখা যায়। সমগ্র তরাই অঞ্চলেই গভীর বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে।

কোঙ্কন সমভূমির পরিচয় দাও।

ভারতের আরব সাগরীয় উপকূলভূমি বরাবর মহারাষ্ট্রের উত্তরসীমা অর্থাৎ সুরাতের কিছুটা দক্ষিণ থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে বলে কোঙ্কন সমভূমি। এই সমভূমি প্রায় 500 কিমি দীর্ঘ, তবে খুব সংকীর্ণ, প্রস্তরময় এবং ভগ্ন। উপকূলের কোনো কোনো এলাকা বালিময় এবং চুনাপাথর দ্বারা গঠিত। কোঙ্কন উপকূল ধান চাষের জন্য বিখ্যাত।

মালাবার উপকূলীয় সমভূমি কোনটি?

আরব সাগর-সংলগ্ন ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমির দক্ষিণাংশের নাম মালাবার উপকূলীয় সমভূমি। কান্নানোর থেকে একেবারে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত মালাবার সমভূমি প্রায় 500 কিমি দীর্ঘ এবং এটি কেরল রাজ্যের অন্তর্গত। মালাবার সমভূমি গড়ে প্রায় 25 কিমি চওড়া। এখানে অনেক উপহ্রদ বা লেগুন দেখা যায়। এগুলিকে ব্যাকওয়াটার (backwater) বা কয়াল বলে। ভেমবানাদ কয়াল, অষ্টমুদি কয়াল হল এই ধরনের দুটি উপহ্রদ।

করমণ্ডল উপকূল কোথায় অবস্থিত?

ভারতের পূর্ব উপকূলের দক্ষিণাংশের নাম করমণ্ডল উপকূল। বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন অন্ধ্র উপকূলের দক্ষিণাংশ ও সমগ্র তামিলনাড়ুর উপকূল নিয়ে গঠিত এই করমণ্ডল উপকূলের প্রকৃত বিস্তৃতি উত্তরে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপের দক্ষিণ সীমা থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত।

উত্তর সরকার উপকূল কোনটি?

বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন ভারতের পূর্ব উপকূলের উত্তরাংশের নাম উত্তর সরকার উপকূল। উত্তরে সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ পর্যন্ত উত্তর সরকার উপকূলের বিস্তৃতি। অর্থাৎ সমগ্র ওডিশা উপকূল এবং অন্ধ্র উপকূলের উত্তরাংশ নিয়ে উত্তর সরকার উপকূল গঠিত। এই উপকূলেই আছে বিখ্যাত চিলকা ও কোলেরু হ্রদ এবং মহানদী, গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ।

পূর্ব উপকূল অপেক্ষা পশ্চিম উপকূল বেশি ভগ্ন কেন?

ভারতের পশ্চিম উপকূলভাগ গঠিত হয়েছে ভূ-আন্দোলনের প্রভাবে। পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম অংশটি বারবার উত্থিত এবং নিমজ্জিত হয়ে এই পশ্চিম উপকূল গড়ে উঠেছে, তাই এটি ভগ্ন। কিন্তু পূর্ব উপকূল সঞ্চয়কার্যের ফলে গড়ে উঠেছে বলে এটি সমতল এবং ধীরে ধীরে সমুদ্রের ধারে নেমে গেছে।

কাশ্মীর উপত্যকাকে ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন’ বলে কেন?

কাশ্মীর উপত্যকার প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য অসাধারণ এবং অনুপম। তুষারাবৃত সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, হ্রদ, গিরিপথের অবস্থান, মনোরম জলবায়ু এসবের কারণে এই উপত্যকাকে প্রাচ্যের নন্দনকানন বা ভূস্বর্গ বলে।

উত্তর ভারতের সমভূমি কীভাবে তৈরি হয়েছে?

ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন, টার্শিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বতের উত্থানের সময় প্রবল ভূ-আন্দোলনের ফলে গন্ডোয়ানা ল্যান্ডের উত্তর দিক নীচু হয়ে গভীর নিম্নভূমি তৈরি করে। পরে ওই নিম্নভূমিতে হিমালয় থেকে বয়ে আসা নদীগুলি পলি ভরাট করে নিম্নসমভূমি তৈরি করেছে।

মালনাদ ও ময়দানের পার্থক্য লেখো।

মালনাদ ও ময়দানের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়মালনাদময়দান
অবস্থানকর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমের অংশ মালনাদ নামে পরিচিত।কর্ণাটক মালভূমির পূর্বদিক ময়দান নামে পরিচিত।
অর্থমালনাদ শব্দের অর্থ পাহাড়ি দেশ।ময়দান কথার অর্থ নাতিউচ্চ ভূমিভাগ।
প্রকৃতিমালনাদ একধরনের ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি।ময়দান একধরনের সমপ্রায় সমভূমি।

কচ্ছ উপদ্বীপ এবং কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের পার্থক্য লেখো।

কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়কচ্ছ উপদ্বীপকাথিয়াবাড় উপদ্বীপ
অবস্থানকচ্ছ উপসাগরের উত্তরে কচ্ছ উপদ্বীপটি গড়ে উঠেছে।উত্তরে কচ্ছ উপসাগর, দক্ষিণ-পূর্বে খাম্বাত উপসাগর এবং পশ্চিমে আরব সাগরের মাঝে কাথিয়াবাড় উপদ্বীপটি অবস্থিত।
গঠনকচ্ছ উপদ্বীপ মূলত বেলেপাথর দিয়ে গঠিত।কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ আদর্শ লাভা দ্বারা গঠিত ভূমি ভাগ।
জলাভূমিকচ্ছ উপদ্বীপে ভারতের অন্যতম রান বা জলাভূমি তৈরি হয়েছে।কাথিয়াবাড়ে এমন ভূমিরূপ নেই।

ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদারের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়ভাঙ্গরখাদার
প্রকৃতিপ্রাচীন পলি গঠিত অঞ্চল ভাঙ্গর নামে পরিচিত।নবীন পলি দিয়ে গঠিত ভূমিভাগ খাদার নামে পরিচিত।
উর্বরতাএটি প্রাচীন বলে উর্বরতা খাদার থেকে কম।এই মাটির উর্বরতা বেশি।
প্লাবনভাঙ্গর অঞ্চল উঁচু বলে এখানে প্রতি বছর প্লাবন হয় না।এটি নীচু ভূমি বলে প্রায় প্রতিবছরই প্লাবিত হয়।
মাটি ক্ষয়প্রাচীন পলি গঠিত ভাঙ্গরের মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।এই অঞ্চলে প্রতিবছর নতুন নতুন মাটি সঞ্চিত হয়।

ভারতের পূর্বঘাট পর্বত এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের তুলনা করো।

পূর্বঘাট এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়পূর্বঘাট পর্বতপশ্চিমঘাট পর্বত
অবস্থানপূর্ব উপকূলে মহানদী নদীর অববাহিকায় দক্ষিণ সীমা থেকে ভাইগাই নদীর অববাহিকা পর্যন্ত।পশ্চিম উপকূলে তাপ্তী নদীর অববাহিকা থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত।
প্রকৃতিএটি একটি ক্ষয়জাত পর্বতমালা।এটি তির্যক চ্যুতির স্তূপ পর্বত।
উচ্চতাপূর্বঘাট পর্বতের গড় উচ্চতা 600 মিটার।এর গড় উচ্চতা প্রায় 900 মিটার।
জলবিভাজিকাপূর্বঘাট পর্বত কোনো জলবিভাজিকা হিসেবে অবস্থান করে না।এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জলবিভাজিকা।

ভাবর ও তরাই -এর পার্থক্য লেখো।

ভাবর ও তরাই -এর পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়ভাবরতরাই
অবস্থানসিন্ধু থেকে তিস্তা পর্যন্ত শিবালিক পর্বতের পাদদেশের ভূমি ভাবর নামে পরিচিত।ভাবরের দক্ষিণ অংশ তরাই নামে পরিচিত।
গঠনছোটো ছোটো নুড়ি পাথর দিয়ে এই অংশটি তৈরি হয়েছে।প্রধানত বালি, কাদা, পলি দিয়ে তরাই ভূমি গঠিত হয়েছে।
উর্বরতামাটিতে নুড়ি, পাথর থাকে বলে এটি অনুর্বর মাটি, চাষবাস খুব ভালো হয় না।এই মাটি চাষের জন্য যথেষ্ট উর্বর।
বিস্তারভাবরের গড় বিস্তার 8-16 কিমি।এর গড় বিস্তার 20-30 কিমি।

পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের পার্থক্য লেখো।

পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়পূর্ব হিমালয়পশ্চিম হিমালয়
উচ্চতা ও বিস্তারপূর্ব হিমালয়ের উচ্চতা ও বিস্তার পশ্চিম হিমালয়ের তুলনায় কম।পশ্চিম হিমালয় অনেক বেশি উঁচু ও বিস্তৃত।
গিরিশৃঙ্গ ও হিমবাহপূর্ব হিমালয়ে গিরিশৃঙ্গ এবং হিমবাহের সংখ্যা খুব কম।শৃঙ্গগুলি খুব উঁচু উঁচু এবং হিমবাহের পরিমাণ কম।
ঢালপূর্ব হিমালয় বেশি ঢালবিশিষ্ট ও খাড়া।পশ্চিম হিমালয়ের ঢাল কম এবং কম খাড়া।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Geography Suggestion 2026 Wbbse – শুদ্ধ ও অশুদ্ধ

Madhyamik Geography MCQ Suggestion 2026 Wbbse

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse (Marks 4)

Madhyamik History Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)