আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক (দশম শ্রেণীর) ভূগোল বইয়ের সপ্তম অধ্যায়, “উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র” এর “বিষয়সংক্ষেপ” নিয়ে আলোচনা করব। যা এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সংক্ষিপ্ত বিবেচনা আপনাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করতে সাহায্য করবে।

পৃথিবী থেকে মহাকাশে প্রেরিত উপগ্রহের সাহায্যে পৃথিবীর যে চিত্র সংগৃহীত হয়, তাকে উপগ্রহ চিত্র বলে। অন্যদিকে ভূপৃষ্ঠের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে জরিপ কার্যের মাধ্যমে সংগৃহীত প্রাথমিক রাশিতথ্যের ভিত্তিতে যে মানচিত্র প্রকাশ করা হয়, তার নাম ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র।
ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ সমগ্র দেশকে স্কেল অনুসারে তিনটি স্তরে ভাগ করেছে। এগুলি হল –
- বৃহৎ স্কেলে বিভাগ – ভারতীয় উপমহাদেশকে প্রথম পর্যায় 4° অক্ষরেখা এবং 4° দ্রাঘিমারেখার ভিত্তিতে 135টি গ্রিডে ভাগ করা হয়েছে। এই মানচিত্রের স্কেল হল 1 সেমিতে 10 কিমি। এই মানচিত্রগুলিকে মিলিয়ন শিট বলে।
- মাঝারি স্কেলে বিভাগ – দ্বিতীয় পর্যায়ে 4° × 4° -এর প্রত্যেকটি গ্রিডকে 1° × 1° হিসেবে সমান 16টি গ্রিডে ভাগ করে ইংরেজি অক্ষর A থেকে P পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়। এইসব মানচিত্রের স্কেল হয় 1 সেমিতে 2.5 কিমি। এদের ডিগ্রি শিট বলে।
- ক্ষুদ্র স্কেলে বিভাগ – তৃতীয় পর্যায়ে প্রতিটি 1° × 1° শিটকে 15′ × 15′ হিসেবে সমান 16টি ভাগে ভাগ করে 1 থেকে 16 পর্যন্ত ক্রমিক সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এগুলি ইঞ্চি শিট নামে পরিচিত। এই মানচিত্রের স্কেল হয় 1 সেমিতে 2 কিমি।
পৃথিবী থেকে মহাকাশে প্রেরিত উপগ্রহগুলি দুই ধরনের হয় –
- জিওস্টেশনারি (Geostationary) উপগ্রহ এবং
- সান সিনক্রোনাস (Sun-synchronous) উপগ্রহ।
এরমধ্যে জিওস্টেশনারি উপগ্রহগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 36000 কিমি উচ্চতায় নিরক্ষরেখা বরাবর অবস্থান করে। এই উপগ্রহগুলি পৃথিবীর গতিতে ঘোরে বলে একটি নির্দিষ্ট দ্রাঘিমা রেখায় স্থির থাকে। অর্থাৎ এগুলি একটি জায়গায় স্থির হয়ে রয়েছে বলে মনে হয়। আর এজন্যই এদের জিওস্টেশনারি (Geostationary) বা ভূসমলয় উপগ্রহ বলে। ইনস্যাট-1A, 1B প্রভৃতি এইজাতীয় ভারতীয় উপগ্রহ। অন্যদিকে সান সিনক্রোনাস উপগ্রহগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 700-900 কিমি উচ্চতায় অবস্থান করে। এগুলি পৃথিবী ও সূর্যের পারস্পরিক অবস্থান অনুসারে পৃথিবীকে পরিক্রমণ করে বলে এদের সান সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলে। যেমন – 1RS-1A, 1B, 1C, 1D প্রভৃতি এই জাতীয় ভারতের উপগ্রহ।
উপগ্রহ চিত্র তোলার বিভিন্ন পর্যায়গুলি হল –
- প্রতিফলিত বা বিকিরিত সৌররশ্মি গ্রহণ – প্রথমে উপগ্রহে থাকা সেন্সরগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত বা বিকিরিত সৌররশ্মি নির্দিষ্ট কোড বা সংকেতের মাধ্যমে জমা করে।
- ভূপৃষ্ঠে তথ্য প্রেরণ – এরপর সংগৃহীত তথ্যগুলি ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত উপগ্রহ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
- সংশোধন – এরপর সংগৃহীত তথ্যগুলির মধ্যে (মেঘ বা তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের বাধা ইত্যাদির জন্য) যেসব ভুলত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা থাকে সেগুলি সংশোধন করে নেওয়া হয়।
- চিত্রায়ণ – সংশোধিত তথ্যগুলিকে নির্দিষ্ট স্কেল ও রঙের সাহায্যে উপগ্রহ চিত্র হিসেবে প্রকাশ করা হয়। এগুলি কাগজে ছাপা মানচিত্র হিসেবে প্রকাশিত হলে, তাকে হার্ড কপি (Hard copy) এবং কম্পিউটারে ব্যবহারের উপযোগী করে CD -তে পাওয়া গেলে, তাকে সফট কপি (Soft copy) বলে।
উপগ্রহ চিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- উপগ্রহ চিত্র হল উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যম মহাকাশ থেকে নেওয়া ভূপৃষ্ঠের মানচিত্র তথা ছবি। এই চিত্র নির্দিষ্ট স্কেলে তৈরি করা হয়।
- চিত্রের মধ্যে অক্ষাংশ, দ্রাঘিমা, প্রকাশনার তারিখ, সময় ইত্যাদির উল্লেখ থাকে।
- এই চিত্র ডিজিট্যাল পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যায়।
- চিত্রের মধ্যে মাটি, জল, উদ্ভিদ, বসতি প্রভৃতি ভূপৃষ্ঠের বৈচিত্র্য বোঝানোর জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি রং, যেমন – লাল, নীল, সাদা প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।
একটি উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে একইসঙ্গে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের (30 হাজার বর্গকিমি পর্যন্ত) তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া ভূপ্রকৃতি-সংক্রান্ত তথ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সংক্রান্ত তথ্য, সমসাময়িক তথ্য, ভূমি ব্যবহার ও ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন, নগরের বিস্তার, বনভূমির অবস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার তথ্য উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে জানা যায়।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক (দশম শ্রেণীর) ভূগোল বইয়ের সপ্তম অধ্যায়, “উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র” এর “বিষয়সংক্ষেপ” নিয়ে আলোচনা করেছি। যা এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু অধ্যয়নের সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সহায়তার প্রয়োজন হয়, নিচে মন্তব্য করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।
মন্তব্য করুন